skip to Main Content

ত্বকতত্ত্ব I চর্চায় চর্বি

কারণ, প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এ সুরক্ষা স্তর নিশ্চিত করে ত্বকের সুস্থতা। ব্যালেন্সিং ব্যারিয়ারই মূলসূত্র। তারই খোলাসা করার চেষ্টা

শিশিরসিক্ত, উজ্জ্বল, আর্দ্রতায় পরিপূর্ণ চেহারা সংকেত দেয় সুস্থ ত্বকের। তাই ত্বক যদি শুষ্ক, বলিরেখাযুক্ত, র‌্যাশ আর অস্বস্তিতে নাজেহাল দেখায়, তাহলে সমস্যাটা ত্বকের সুরক্ষা স্তরে হতেই পারে। ভাগ্যেরও নির্মম পরিহাস। এ স্তরের গাঁথুনি যে উপাদানে তৈরি, সেই লিপিডও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, ক্ষয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে একে আরও শক্তিশালী করার উপায় জানা থাকলে মন্দ হয় না কিন্তু।
লিপিড কী
বিল্ডিং ব্লকসদৃশ বস্তু, যা ত্বককোষগুলো ধরে রাখে। তেলতেলে মোমের মতো অনুভূত হওয়া এপিডারমাল লিপিডের কাজ মূলত সিমেন্টের মতো এক কোষকে অন্যটার সঙ্গে জুড়ে রাখা। ত্বকের ডার্মিসের সবচেয়ে বাইরের স্তরে মেলে তিন ধরনের লিপিড—সেরামাইড, কোলেস্টেরল আর ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এগুলো ত্বকের পৃষ্ঠের নিচে একদম টপ লেয়ারে প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে; যা আর্দ্রতা আটকে রাখতে সহায়ক এবং প্রতিরোধ করে শুষ্কতা আর অস্বস্তি। কোলেস্টেরলের পানি ধরে রাখার ক্ষমতা চমৎকার, যা ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষায় দারুণ সহায়তা করে। ফ্যাটি অ্যাসিড সাহায্য করে লিপিডের ভারসাম্য বজায় রাখতে, যা প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের মেরামতের প্রক্রিয়াকে ঝঞ্ঝাহীন করে তোলে। এগুলোর মধ্যে সেরামাইড সবচেয়ে পরিচিত উপাদান। গুরুত্বপূর্ণও বটে। ত্বকের প্রতিরক্ষা স্তরের কার্যক্রম আর আর্দ্রতার লেভেল বজায় রাখার জন্য। তাই তো বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ত্বকচর্চার নিয়মিত রুটিনে সেরামাইড, কোলেস্টেরল আর ফ্যাটি অ্যাসিডের সংযুক্তি। বলিরেখা, শুষ্কতা আর অস্বস্তি রোধে। ত্বকের কার্যকর প্রতিরক্ষামূলক স্তর কাজ করে ‘স্কিনস ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্স’ অর্থাৎ প্রাথমিক সুরক্ষা সীমানা হিসেবে। যা পণ্যে থাকা ভালো উপাদানগুলো ত্বকে শুষে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। পাশাপাশি ফ্রি র‌্যাডিক্যাল, অক্সিডেন্ট, ধুলা, জীবাণু আর দূষণ থেকে দূরে রাখে ত্বক।
ত্বকে থাকা লিপিড কিন্তু খুব দ্রুত হ্রাস পায়। অযত্নে থাকলে তাই ত্বকে ফ্লেকি প্যাচ আর হালকা লালচে ভাব দেখা দিতে পারে। তা থেকে হতে পারে প্রদাহ। বাড়তে পারে ব্রেকআউট আর স্পর্শকাতরতা। ত্বকের প্রতিরক্ষা স্তর বিপদগ্রস্ত হলে দেখা দিতে পারে একজিমা, অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসের মতো সমস্যা। এ ছাড়া ত্বককোষের মধ্যবর্তী স্থানগুলোতে ফাঁকের সৃষ্টি হলে অ্যাকনে আর প্রদাহ সৃষ্টিকারী মলিকিউলগুলো নড়াচড়ার সুযোগ পায়। ফলাফল—সৃষ্টি হয় ত্বক সমস্যা।
ক্ষতির অন্তরালে
পরিবেশগত নানা কারণ যেমন শুষ্ক তাপ, আর্দ্রতার অভাব আর বায়ুদূষণের দরুণ ত্বকে মজুত থাকা লিপিড ক্ষয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ব্যক্তিসৃষ্ট নানা ভুল; যেমন বেশি তাপে থাকা কিংবা অতিরিক্ত এক্সফোলিয়েশনও ত্বকের সুরক্ষা স্তরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এমন অনেক ত্বকচর্চার প্রক্রিয়া আছে, যা খালি চোখে ত্বকের জন্য উপকারী মনে হলেও এর মধ্যে অনেকগুলো আসলে প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা স্তরের ক্ষতির জন্য দায়ী। সবচেয়ে সহজ উদাহরণ ওভার ক্লিনজিং। ত্বককে জরুরতের বেশি পরিষ্কার করাকে এ ক্ষেত্রে প্রধান শত্রুর তকমা দিয়েছেন ডার্মাটোলজিস্টরা। ঝকঝকে-তকতকে ত্বকের আশায় অত্যধিক অ্যাসট্রিনজেন্টের ব্যবহার (বিশেষ করে তেলতেলে ব্রণযুক্ত ত্বকে) ধুলা ময়লা, মেকআপের সঙ্গে তুলে নিয়ে আসতে পারে সুরক্ষায় নিয়োজিত তৈলাক্ত স্তর। মাইক্রোনিডলিংয়ের মতো আগ্রাসী অ্যাট হোম ট্রিটমেন্ট, ফিজিক্যাল অ্যাবরেইসিভ স্ক্রাব, কেমিক্যাল পিল আর শক্তিশালী রেটিনলও এই সুরক্ষা স্তর ভেঙে চুরমার করে দিতে পারে। এমনকি গরম পানিতে গোসল আর মুখ ধোয়ার মতো সাধারণ ব্যাপারও লিপিডের স্পর্শকাতর সুরক্ষা দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ ছাড়া ত্বকের এই স্তর পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাটে পরিপূর্ণ না থাকলে আর্দ্রতা বাষ্পীভূত হয়ে যায় বায়ুমণ্ডলে। সৃষ্টি হয় ট্রান্সএপিডারমাল ওয়াটার লস। ডিহাইড্রেটেড এই ত্বকে সংবেদনশীলতা বাড়ে; দেখা দেয় ফ্লেকিং আর পিলিং।
চর্চায় লিপিডের যোগ
সেরামাইডের সেরা ব্যাপারটা কী? এর ওভারডুয়িং অসম্ভব। সেরামাইডের ত্বককে আর্দ্রতায় পরিপূর্ণ করে রাখার গুণাবলি যদি রূপরুটিনে যোগ করা যায়, তাহলে তো কথাই নেই। এ ক্ষেত্রে নারকেলের নির্যাসে তৈরি সেরামাইড মাস্ক ত্বকের লিপিডকে বাড়তি সুরক্ষা দেবে। সেই সঙ্গে নারকেলের পানিতে থাকা লরিক অ্যাসিড চটজলদি উজ্জ্বলতা যোগ করবে চেহারায়। মাস্কের বদলে সেরাম ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ হলে ভালো ব্র্যান্ডের ইনটেনসিভ হাইড্রেশন সেরাম ব্যবহার করা যেতে পারে। তাতে আনারস থেকে নির্যাসিত সেরামাইডের উপস্থিতি থাকলে সবচেয়ে ভালো। এটি ত্বকের চকচকে ভাব বজায় রাখবে। সেরামে সোডিয়াম হায়ালুরনেট আর ভিটামিন বি৫-এর উপস্থিতি আছে কি না দেখে নেওয়া যেতে পারে। এগুলো ত্বককে পরিপুষ্ট রাখতে যেমন কার্যকর, তেমনি দিতে পারে চমৎকার স্কিন টেক্সচার। এ ছাড়া লিপিড কমপ্লেক্সযুক্ত সেরামগুলো দিয়েও চলতে পারে ত্বকচর্চা। এগুলো অসম্ভব শুষ্ক, পরিণত ত্বকের একদম ভেতর অব্দি আর্দ্রতা পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে। সারাবে চুলকানি, অমসৃণতা আর অস্বস্তি। বলিরেখা আর সূক্ষ্মরেখা যাদের প্রধান সমস্যা, তাদের জন্য কোলেস্টেরল যুক্ত ইয়ুথ রিস্টোরিং সেরামাইড সেরাম দারুণ কাজের। এগুলো আর্দ্রতার জোগান দেওয়ার পাশাপাশি ত্বকের টেক্সচার উন্নত করে দূর করবে বলিরেখা আর সূক্ষ্মরেখা। আরামদায়ক এ সেরামগুলো ত্বকের ওপর সুরক্ষা স্তর তো তৈরি করেই, দ্রুত শুষেও নিতে পারে। রেটিনল আর সেরামাইড সমৃদ্ধ ফার্মিং ময়শ্চারাইজার ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার নানান চিহ্ন প্রতিরোধে পারফেক্ট। আর যাদের প্রতিদিনের আর্দ্রতা প্রয়োজন, তারা সেরামাইডে তৈরি ভারী জেল ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসে। প্রদাহে আক্রান্ত ত্বকেও ব্যবহার উপযোগী এগুলো। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আর্দ্রতার জোগান নিশ্চিত করে।

 বিউটি ডেস্ক
মডেল: কণিকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: নাইমুল ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top