ফিচার I নারিন্দা সমাধিসৌধ
ইতিহাসের গভীর পাঠ নিয়ে, রাজধানীতে শায়িত রয়েছে এক সমাধিস্তম্ভ। একে পুরোনো রূপে ফিরিয়ে আনতে চলছে সংস্কার। বিস্তারিত আল মারুফ রাসেলের লেখায়
ঢাকার বুকে চুপচাপ শুয়ে আছেন কলম্বো সাহেব। শহরটির ইতিহাস, ঐতিহ্য সব মুছতে মুছতে, কোনোভাবে বেঁচে গেছে নারিন্দা এলাকার বলধা গার্ডেন আর পাশের এক টুকরো খ্রিস্টান কবরস্থান। এখানেই কলম্বো সাহেবের চমৎকার সমাধিসৌধ। ‘ঐতিহাসিক’ ঢাকা শহরে হাতে গোনা যে কটি সমাধিস্থাপত্য আছে, আর নির্মাণের সময়ের নকশা বহন করছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম এই কলম্বো সাহেবের কবর।

কলম্বো সাহেবের কবর; ২০২০
এই সমাধিসৌধ একটি বর্গাকার ভিত্তির ওপর অষ্টভুজ কাঠামো নিয়ে দাঁড়িয়ে। গম্বুজসহ কাঠামোটি প্রায় তিনতলা উঁচু। ভেতরে মোট তিনটি সমাধি দেখা যায়। কোনো সমাধিফলক না থাকলেও ধারণা করা হয়, এটি কলম্বো সাহেব ও তার পরিবারের সদস্যদেরই হবে। সমাধিসৌধটি বিভিন্ন স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ দেখায়। নিচের কাঠামোটি মোগল স্থাপত্য অনুসরণ করছে, যার চারদিকেই খোলা খিলান আকৃতির প্রবেশপথ রয়েছে। সুন্দরভাবে দ্বিতীয় অংশটি গোথিক বৈশিষ্ট্য দেখায় আর ওপরের গম্বুজে ফরাসি আড়ম্বরপূর্ণ বারোক ঘরানার ছোঁয়া রয়েছে।

প্রফেসর ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ
এই সমাধিসৌধ নিয়ে প্রথম লিখেছিলেন বিশপ হেবার, তিনি ১৮২৪ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় এসেছিলেন। তার নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম ছিল একটি গির্জা ও তার লাগোয়া সমাধিক্ষেত্রকে পবিত্রকরণ। এই সমাধিক্ষেত্র নিয়ে তার লেখনী, ‘সন্ধ্যায় আমি সমাধিক্ষেত্রটি পবিত্র করলাম। একটি জংলা ও বিষণ্ন স্থান, একটি উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা, একটি পুরাতন মুসলিম ঘরানার প্রবেশপথসহ শহরের বর্তমান জনবসতিপূর্ণ অংশ থেকে প্রায় এক মাইল দূরে; কিন্তু ধ্বংসস্তূপ ও জঙ্গলে ঘেরা। তবে এটি বিশাল এবং তা হওয়ারই কথা; ঢাকার বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির সময়ে নির্মিত কয়েকটি সমাধি আর তারও আগের অনেক সমাধি রয়েছে, যদিও ইউরোপীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা এখনকার তুলনায় উল্লেখযোগ্য ছিল।…কিছু সমাধি বেশ সুন্দর; বিশেষত, মুসলিম সাধকদের সমাধির ওপর নির্মিত ভবনগুলোর মতো, একটি উঁচু অষ্টভুজাকৃতির গোথিক মিনার রয়েছে, একই ঢঙে একটি গম্বুজ ও আটটি জানালায় বিস্তৃত ট্রেজারির ভেতরে একই রকম তিনটি স্ল্যাব রয়েছে এবং সমাধিস্থলের বুড়ো দারোয়ান বলেছেন, এটি ছিল জনৈক “কলম্বো সাহেব, কোম্পানি কা নাওকার”-এর। তিনি কে হতে পারেন, আমি জানি না; “তার নামটি ইংরেজদের মতো না শোনালেও, যেহেতু কোনো শিলালিপি নেই, তাই দারোয়ানের বলা শব্দটিই আমার একমাত্র সূত্র।”’
এর প্রায় ৮০ বছর পরে, ১৯০৬ সালে এফ বি ব্র্যাডলি বার্ট এই সমাধির উল্লেখ করেছেন, ‘…আরও অদ্ভুত হলো সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর স্মৃতিস্তম্ভটি, যার নিচে কে শুয়ে আছে, সেটা বলার জন্য কোনো শিলালিপি নেই। আটটি জানালাসহ নামহীন একটি উঁচু অষ্টভুজ গোথিক টাওয়ার, পুরোটা একই ঢঙে একটি গম্বুজ দিয়ে ঘেরা, পুরো কবরস্থানের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে এবং ঈর্ষান্বিতভাবে ভেতরে থাকা তিনটি কবরের ওপর নজরদারি করে। কেবল অস্পষ্ট লোকগাথা টিকে আছে যে, এটি “কোম্পানির একজন সেবক কলম্বো সাহেবের” সমাধি; কিন্তু সুলভ সমস্ত উৎসের মধ্যে খোঁজ করে কোম্পানির ইতিহাসে এমন কোনো নাম পাওয়া যায়নি। এমনকি অনেক আগে, ১৮২৪ সালে বিশপ হেবার, যিনি সে বছরের ১০ জুলাই কবরস্থানটি পবিত্র করেছিলেন, তৎকালীন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এটা সম্পর্কে আর কোনো তথ্য পেতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। নির্বাক ও চিত্তাকর্ষক, সুউচ্চ সমাধিটি তার গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছে।’

জোহান যোফানির আঁকা নাগাপন ঘাট; ১৭৮৭
তবে এই দুই সময়ের মাঝে, ১৮৭৫ সালে একজন নাম না জানা আলোকচিত্রী তুলে ফেলেন এই সমাধিসৌধের ছবি। ব্রিটিশ লাইব্রেরির অনলাইন গ্যালারির সুবাদে সেই ছবি আমাদের অনেকের দেখা হয়ে গেছে। তবে এটা নিয়ে সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে ২০১১ সাল নাগাদ। বহুদিন ধরে উত্তর ভারতের এক সমাধির পেইন্টিং ভেবে ও রবার্ট হোমের আঁকা বলে পরিচিতি পাওয়া এক ছবিকে চার্লস গ্রেগ তুলে ধরেন ঢাকার নারিন্দা সিমেট্রির সমাধিস্থাপত্য হিসেবে। শিল্প-ইতিহাসবিদ, লেখক, সংগ্রাহক ও চিত্রসমালোচক চার্লস গ্রেগ এটাকে একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন জার্মান চিত্রশিল্পী জোহান যোফানির ১৭৮৭ সালে ঢাকা সফরের সময়ে আঁকা ছবি হিসেবে। শুধু তা-ই নয়, ১৭৬৯ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করা তার পূর্বপুরুষ ক্যাপ্টেন টমাস বর্থউইকও শায়িত আছেন নারিন্দায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এই কবরের আর কলম্বো সাহেবের কুল-ঠিকুজি বের করতে উঠেপড়ে লেগেছেন অনেকে। তবে আমাদের এখানে তথ্যের অপ্রতুলতার কারণে খুব একটা উপসংহারে আসতে পারেননি কেউই। অবশ্য ব্রিটিশ লেখিকা ও নবাবী লখনৌ-গবেষক রোজি লুএলেন-জোন্স এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তার লেখা থেকে জানা যায়, ক্যালকাটা হিস্ট্রিক্যাল সোসাইটির জার্নাল বেঙ্গল পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্টের সম্পাদক ও কলকাতার প্রধান যাজক ওয়াল্টার কে ফার্মিঙ্গার ১৯১৭ সালে নারিন্দা সমাধিক্ষেত্র ঘুরে ৩০টি সমাধিফলকের নকল তৈরি করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে একটি ছিল হেবারের উল্লেখ করা গোথিক মিনারের ভেতরের, যেখানে লেখা ছিল—‘এখানে, ১৭৫৫ সালের ১৬ নভেম্বর, প্রায় ৪৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করা ঢাকার ইংরেজ কুঠির (ফ্যাক্টরি) প্রধান নিকোলাস ক্লেরেমবল্টকে সমাহিত করা হয়েছে।’

কলম্বো সাহেবের কবর; ২০২৫
বাংলায় ইংরেজ কোম্পানি নিয়ে বিস্তর লেখালেখি করা গবেষক উইলিয়াম ফস্টার লিখেছেন ক্লেরেমবল্টকে নিয়ে, ‘ক্লেরেমবল্ট লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী একটি হিউগেনট পরিবারের সন্তান ছিলেন। তিনি অন্তত ১৭৪৪ সালের আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকরিতে যোগ দেননি, সে বছরের ২৫ জানুয়ারি তাকে বার্ষিক ১৫ পাউন্ডে কুঠিয়াল (ফ্যাক্টর) হিসেবে বাংলায় যাওয়ার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তার জামানত হিসেবে ছিলেন দুই ব্যবসায়ী বেঞ্জামিন লঙ্গুয়েট ও হেনরি গিনো। ১৭৪৪ সালের ২৫ নভেম্বর তিনি ঢাকায় নিযুক্ত হন। ১৭৪৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি টমাস ফেস্কের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করে কুঠি-প্রধান হন। ১৭৫২ বা তার পরের বছর বার্ষিক বেতন ১৫ পাউন্ড থেকে ৩০ পাউন্ডে উন্নীত হওয়ার পরপরই তা আবারও বেড়ে ৪০ পাউন্ডে উন্নীত হয়; বাট্টা ও ভাতাসহ তিনি বার্ষিক প্রায় ৪,০০০ রুপি পেতেন। ১৭৫৩ সালের ১৫ নভেম্বর ঢাকা কনসালটেশনে তার মৃত্যুর কথা লিপিবদ্ধ আছে, “এ মাসের পঞ্চদশ দিনে, কুঠি-প্রধান নিকোলাস ক্লেরেমবল্ট প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জীবনত্যাগ করেন।”’
ফার্মিঙ্গার ও ফস্টারের সাল ও তারিখ খানিকটা এদিক-সেদিক হলেও ফস্টারের লেখনীকেই সঠিক বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে; কারণ, ১৬০ বছর আগেকার ক্ষয়ে আসা সমাধিফলক থেকে ফার্মিঙ্গারের ১৫-কে ১৬ ও ১৭৫৩-কে ১৭৫৫ মনে করা অসম্ভব নয়। তবে একটা ব্যাপারে রোজি নিশ্চিত মত দিয়েছেন, ‘ক্লেরেমবল্ট’ স্থানীয় উচ্চারণে ‘ক্লের-আম-বো>কলম্বো’ হয়েছে। এই মত দেওয়ার পর তিনি অবশ্য আবারও দুটো প্রশ্ন সামনে এনেছেন: ১. নিকোলাস ক্লেরেমবল্টের সমাধিফলক কীভাবে গোথিক মিনারে ঠাঁই করে নিলো? ২. এই সমাধিসৌধে আসলেই কে বা কারা শায়িত? প্রথমটির উত্তর সহজ। নতুন সমাধির জায়গা করে দিতে প্রায়ই সমাধিফলক-সংলগ্ন গির্জা বা অন্য সমাধি সমাধিক্ষেত্রের দেয়ালে ঠাঁই করে নেয়; যেমনটা আমরা দেখি তেজগাঁও জপমালা রানির গির্জা বা আর্মেনিয়ান গির্জাতেও। কিন্তু দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর! এ ক্ষেত্রে রোজি অন্য; তবে অনেক বেশি যৌক্তিক এক আঙ্গিক দেখাচ্ছেন আমাদের। কাঠামোগতভাবে এই স্থাপনা দেখে ধারণা করা হয়, এটা সপ্তদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে তৈরি, যখন ঢাকায় ইউরোপীয় তিন দেশের বাণিজ্য কুঠি তৈরি হয়ে গেছে নবাব শায়িস্তা খানের বদান্যতায়। রোজি বলছেন, ‘অনিবার্যভাবে ঢাকার তিনটি ইউরোপীয় কুঠির কর্মীদের মৃত্যু ঘটেছিল এবং এর ফলে একটি খ্রিস্টান সমাধিস্থলের প্রয়োজন দেখা দেয়। সদরঘাটের এক মাইল উত্তরে, তখন শহর থেকে অনেক দূরে, বাংলার নবাব (শায়িস্তা খান) এ কাজের জন্য একটি এলাকা বরাদ্দ করেছিলেন। নারিন্দা কবরস্থান সব সময় প্রোটেস্ট্যান্ট বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত; তাই এখানে সম্ভবত ইংরেজ ও ডাচ কুঠির কর্মীরা শেষ আশ্রয় পেতেন। অন্যদিকে রোমান ক্যাথলিক ফরাসিদের জন্য তাদের নিজেদের সমাধিক্ষেত্র ছিল।…অনেক ইংরেজ বা ডাচ ব্যবসায়ী ভারতে মৃত্যুবরণের ভাবনায় সুরম্য সমাধি নির্মাণের মতো যথেষ্ট ধনী হলেও কোম্পানির কর্মীদের জন্য বরাদ্দ বেতনে খুব কম বিদেশিই এখানে তাদের সমাধির পরিকল্পনা করতে পেরেছিলেন; যে কারণে তারা দেশে ফিরে যেতে চাইতেন। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য মৃত ইউরোপীয়ের বন্ধু বা আত্মীয়স্বজন তাকে সম্মান জানাতে দুর্দান্ত সমাধি তৈরি করতেন।…আমার ধারণা, আগে ভুলবশত, কলম্বো সাহেবের কবর বলে পরিচিত এই সমাধি বাংলার কোনো নবাব, সম্ভবত শায়িস্তা খানের নির্দেশে নির্মিত হয়েছিল, একজন ইংরেজ বা ডাচ ব্যক্তির স্মরণে—যিনি বিশেষভাবে তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন—একজন ব্যবসায়ী হিসেবে নয়; বরং সম্ভবত চট্টগ্রাম দখলের সময়ে একজন সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে।’

কলম্বো সাহেবের কবরের চলছে সংস্কার; মার্চ ২০২৫
তিনি শেষ করেছেন এই বলে, ইন্ডিয়া অফিসের ইংরেজদের ও নেদারল্যান্ডসের ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নথিপত্র আরও একটু জোর দিয়ে ঘাঁটলেই হয়তো কলম্বো সাহেবের সমাধি রহস্যের সমাধান মিলে যাবে।
ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া হলো অনেক! এতক্ষণ ধরে কলম্বো সাহেব, বা রোজি লুএলেন-জোন্সের প্রস্তাবিত নাম নারিন্দা সমাধিসৌধের পরিচিতিমূলক বর্ণনার কারণ, এই স্থাপনা আবারও হারানো রূপ, জৌলুশ ফিরে পাচ্ছে। আর এ কাজ করছেন বাংলাদেশের সংরক্ষণবাদী স্থাপত্যের পথিকৃৎ, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ডিজাইনের ডিন ও স্থাপত্য বিভাগের প্রফেসর ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ, যার হাত ধরে এর আগে নিমতলী দেউড়ি, দোলেশ্বর হানাফিয়া মসজিদ, মিঠামইনের কাছারিবাড়ি, আলফাডাঙ্গা বুরাইচ মৌলভীবাড়ি, ঢাকা গেট, সোনারগাঁ বড় সর্দারবাড়ি, লালবাগ কেল্লার হাম্মামখানা, পুরান ঢাকার লালকুঠি ইত্যাদি আগের রূপ ফিরে পেয়েছে ও পাচ্ছে। তিনি বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন সংরক্ষণমূলক কাজের জন্য। এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর সিমেট্রিজ ইন সাউথ এশিয়া (বাকসা); সহযোগিতা করছে ক্রিশ্চিয়ান বারিয়ালস বোর্ড অব ঢাকা।
এই সংস্কারকাজের ব্যাপারে প্রফেসর ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী এই স্থাপনা। এত গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধ্বংস ও হারিয়ে যেতে দেওয়া যায় না।’
তিনি জানান, এই সংস্কারকাজের মূল প্রতিবন্ধকতা ছিল এর গায়ে গজিয়ে ওঠা বট-অশ্বত্থের শিকড়। এতটা গভীরে এগুলোর শিকড় চলে গিয়েছিল, সেগুলো ছাড়াতেই বহুদিন লেগে গেছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো এর নির্মাণ উপকরণ। সুরকির (ইটের গুঁড়া ও চুনের মিশ্রণ) কাজ জানা বেশ কিছু রাজমিস্ত্রিকে তিনি পেয়েছেন আগেকার কাজগুলো করার সময়ে; নতুন মিস্ত্রি তৈরিও হয়েছে কাজ করতে করতে। এটা যেমন একদিকে আশাজাগানিয়া, অন্যদিকে খানিকটা সমস্যারও; কারণ, এরা নিয়মিত কাজ না পেলে হারিয়ে যাবেন বিস্মৃতির অতলে।
নারিন্দার এই সমাধিক্ষেত্র নিয়ে আর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে প্রফেসর সাঈদ বললেন, ‘এটা খুব ছোট একটা কাজ দিয়ে শুরু হলো, আমার তো ইচ্ছা আছে গোটা সমাধিক্ষেত্র নিয়ে কাজ করার। পুরোটা নিয়ে বড় পরিকল্পনা রয়েছে। দেখা যাক কত দূর এগোয়!’
নারিন্দা খ্রিস্টান কবরস্থানে মার্চ মাসের শেষে গিয়ে দেখা গেল, একদল রাজমিস্ত্রি কাজ করছে স্থাপনাজুড়ে। কেউ ভেতরের অংশে কাজ করছেন, কেউ বাইরের দিকে। আবার কয়েকজন মিলে চুনের সঙ্গে মেশাচ্ছেন ইটের গুঁড়া। এরা সবাই নওগাঁর পাহাড়পুর এলাকার। তারাই জানালেন, হয়তো চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাস নাগাদ শেষ হবে পুরো কাজ। ঝাঁ-চকচকে চেহারায় ফিরবে মোগল ঢাকার খ্রিস্টান সমাধিসৌধ।
বলে রাখা ভালো, এপ্রিল মাসের শেষ নাগাদ হাত লাগানো হয়েছে মুসলিম ঘরানার সেই প্রবেশ তোরণেও।
তথ্যসূত্র:
হেবার, বিশপ; ন্যারেটিভ অব আ জার্নি থ্রু দ্য আপার প্রভিন্সেস অব ইন্ডিয়া, ফ্রম ক্যালকাটা টু বম্বে; ১৮২৪-৫, লন্ডন ১৮২৭। বার্ট, ব্র্যাডলি এফ বি; রোমান্স অব অ্যান ইস্টার্ন ক্যাপিটাল; লন্ডন ১৯০৬। ফস্টার, উইলিয়াম; ইংলিশ ফ্যাক্টরিস ইন ইন্ডিয়া সিরিজ। ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর সিমেট্রিজ ইন সাউথ এশিয়া (বাকসা)-এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট
ছবি ও চিত্রকর্ম: লেখক ও সংগ্রহ
