skip to Main Content

যাপনচিত্র I সৌভাগ্য সন্নিবেশ

সাদিয়া আয়মান। অভিনেত্রী ও মডেল। সিনেমা, ওয়েব ফিল্ম ও বিজ্ঞাপনে হালের বেশ চেনা মুখ

বেড়ে উঠেছেন বরিশালে। মিডিয়ায় পথচলা খুব বেশি দিনের নয়। এই অল্প সময়ে পেয়েছেন খ্যাতি। প্রথম কাজ ইমরুল রাফাতের নির্দেশনায় নাটক ‘টু বি ওয়াইফ’। এর আগে মিডিয়া ঘিরে তার ধারণা কিংবা আগ্রহ ছিল না, এমনটাই জানালেন। প্রথম কাজের মাস তিনেকের মধ্যে করেছেন বিজ্ঞাপনে অভিনয়। এরপর তাকে দেখা গেছে মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত নাটক ‘ফুলের নামে নাম’, গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত মুভি ‘কাজলরেখা’ ও শিহাব শাহীন পরিচালিত ওয়েব ফিল্ম ‘মায়া শালিক’ প্রভৃতিতে। শেষোক্তটিতে সারা চরিত্রে তার অভিনয় বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ক্যারিয়ারের শুরুতে নামকরা পরিচালকদের সঙ্গে হিট সব কাজ করা সৌভাগ্য বলতেই হবে। ‘সাদিয়া’ নামের অর্থ সৌভাগ্যবতী। অবসর দিন যেন তার খুশির দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে কফি পান করেন। আলু, পাখি ও টোটো নামে তিনটি পোষা বিড়াল আছে তার; টোটোকে গুলশান থেকে রেসকিউ করেছেন সম্প্রতি। দিনের শুরুতে পোষা বিড়ালদের সঙ্গে খানিকটা সময় কাটিয়ে নিতে ভালোবাসেন সাদিয়া আয়মান। এমন দিনে নিজের ও পরিবারের জন্য রান্না করতেও ভালো লাগে তার। ২০১৯ সালে ঢাকায় আসার পর অনলাইন কনটেন্ট দেখে রান্না শেখা শুরু। অনেকটা নিরীক্ষা হিসেবে। কাছের মানুষদের মতে, তার রান্না করা বিভিন্ন বাঙালি খাবার যেমন ভাত, সাদা পোলাও, রোস্ট, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, সবজি বিশেষভাবে ভালো হয়। নিজে খেতে পছন্দ করেন ভাতের সঙ্গে বিভিন্ন পদের ভর্তা, ভাজা মাছ ও সবজি।
অবসরের দিনে ১০-১১টায় ঘুম থেকে ওঠেন, তবে জিমে গেলে আধঘণ্টা আগেই বিছানা ছাড়েন। বাসা ছাড়েন সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। আবাস উত্তরায়; জিমের অবস্থান বেশ দূরে হওয়ায় সময় হাতে নিয়েই বের হন। ওয়ার্কআউটের শক্তি সঞ্চারে বেছে নেন ডিম সেদ্ধ, কলা, ব্ল্যাক কফি, নাটসের মতো খাবার। জিমে সময় দেন ৩-৪ ঘণ্টা; তবে মাঝখানে কয়েক দফা বিরতিসহকারে। প্রথমে কার্ডিও করেন, বিশেষ করে ডাম্বেল দিয়ে ফুল বডি কার্ডিওতে বিশেষ গুরুত্ব দেন; এরপর ওয়েট লিফটিং। টানা শুটিং শিডিউল নেওয়ার পক্ষপাতী নন সাদিয়া; বরং মাঝখানে কয়েক দিন বিরতি নেন। ওয়ার্কআউট করেন মূলত এমন বিরতির দিনগুলোতেই। লাঞ্চের সময় জিমে থাকেন বলে এ বেলার আহার সারেন বাসায় ফিরে। দিনে একবার তার ভাত খাওয়া চাই-ই চাই! কঠোর ডায়েট প্ল্যানিং মানতে গিয়ে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মোটেই পক্ষপাতী তিনি নন।
নিজেকে অ্যাম্বিভার্ট অর্থাৎ ইন্ট্রোভার্ট ও এক্সট্রোভার্টের মাঝামাঝি দাবি করেন। তিনি বন্ধুসুলভ; মানুষের সঙ্গে মিশতে ভালোবাসেন। থমথমে বা নেতিবাচক পরিবেশ দেখলে সেখান থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। কাজের ক্ষেত্র এবং এর বাইরে তার একটি বন্ধুমহল রয়েছে। কাছের বন্ধু তালিকায় আছেন ইমা, তারিফ, শোভন, সোহাম, আসিফ, তামিম ও গায়ক অ্যাঞ্জেল নূর। কর্মব্যস্ত জীবনে খানিকটা সময় পেলে এদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়াটা উপভোগ করেন।
অবসর সময়ে বই পড়তে, সিনেমা ও টিভি সিরিজ দেখতে ভালো লাগে তার। হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের পোকা তিনি। বর্তমানে মুগ্ধ হয়ে পড়ছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শাহাদুজ্জামানের বই। সিনেমা ও টিভি সিরিজ দেখেন হরদম। পছন্দের অভিনেত্রী জয়া আহসান, অপি করিম, শীলা আহমেদ, মেরিন স্ট্রিপ, জুলিয়া রবার্টস ও কেট উইন্সলেট; অভিনেতা জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী ও ব্র্যাড পিট। পছন্দের সিনেমার তালিকায় আছে দ্য আওয়ারস, মিট জো ব্ল্যাক, টাইটানিক, রাজি (হিন্দি), নটিং হিল, প্রিটি ওম্যান, লিটেল ওম্যান, ইট অ্যান্ডস উইদ আস।
ড্রেসআপে পরিবেশ ও পরিস্থিতি মাথায় রাখেন। সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করেন টি-শার্ট ও জিনসে। সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ির পাশাপাশি ফ্লোরাল ফ্রগ পরাও বিশেষ পছন্দ তার। পরিধেয়ের ক্ষেত্রে হোয়াইট, সফট পিংক, রয়্যাল ব্লু ও প্যাস্টেলের মতো হালকা রঙের পাশাপাশি মেরুন, রেড, ট্যাঞ্জারিন, বটল গ্রিন, মাস্টার্ড ইয়েলোর মতো ভাইব্র্যান্ট রং পছন্দ করেন। কিছু ভাইব মিনিমালিস্টিক মেকআপে দেখা যায় বেশি; খুব বেশি ফাউন্ডেশন বা মেকআপ এড়িয়ে চলেন। তার চুল মাঝারি লম্বা, কাঁধ পর্যন্ত। তবে তার গো টু গো হেয়ারস্টাইল হচ্ছে ভলিউম লং লেয়ার্ড হেয়ার কাট।
এই অভিনেত্রী ভ্রমণপিয়াসি। গেল বছর থেকে নানা দেশে পা পড়েছে তার। প্রথম বিদেশ ভ্রমণ নেপালে; তাই দেশটির প্রতি আলাদা আবেগ কাজ করে। এ ছাড়া ঘুরেছেন থাইল্যান্ডের ফুকেট, পাতায়া ও ব্যাংকক; মালয়েশিয়ার লাংকাউই ও ক্যামেরন হাইল্যান্ডস; ফ্রান্সের প্যারিস; নেদারল্যান্ডসের রটারডাম ও আমস্টারডাম এবং বেলজিয়ামের ব্রাসেলস ও ব্রুজসে। এসব জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্মৃতি তাকে তাড়িত করে। এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আই লেফট মাই হার্ট দেয়ার।’
তার হোম ইন্টেরিয়র ক্লাসি, সিম্পল ও মিনিমালিস্টিক। কিছুটা ইউরোপিয়ান ভিন্টেজ ভাইব তাতে। শোপিস, ফার্নিচার ঘিরে কোনো মেমরি থাকলে তা বাড়তি ভালো লাগার কারণ হয়ে তার মনে দোলা দেয়। উজ্জ্বল সাদা লাইটের বদলে ওয়ার্ম লাইট চোখে আরামের অনুভূতি দেয় তাকে; তবে তার বাসায় দুই ধরনের লাইটই শোভা পায়। কালার কনট্রাস্ট ও কালার প্যালেট মাথায় রেখে সবকিছু সাজিয়েছেন। সফট কালারে স্নিগ্ধতা অনুভব করেন; তাই বেছে নেন এ ধরনের রং।
ব্যাগ, পারফিউম, ঘড়ি, সানগ্লাস ও হ্যাটের প্রতি বিশেষ টান রয়েছে তার। অ্যাল্ডো, কোচ, মাইকেল কোরস ও ক্যাট স্পেডের ব্যাগ রয়েছে সংগ্রহে। ভিক্টোরিয়া সিক্রেট, টেড বেকার ও গুড গার্ল পছন্দের পারফিউম ব্র্যান্ড। আছে স্ট্র হ্যাট, কাউ বয় হ্যাট, বাস্কেট হ্যাটের সংগ্রহ। সাদিয়া আয়মানের ভাষ্য, ‘ফ্যাশন আমাদের ব্যক্তিসত্তার প্রতিনিধিত্ব করে। ব্যাপারটি এমন নয় যে এর জন্য ট্রেন্ডে গা ভাসাতে কিংবা সেলিব্রিটিদের অনুসরণ করতে হবে। মূলত আমি যা পরব, যেভাবে পরব, তা-ই আমার প্রতিনিধিত্ব করবে।’ জীবনদর্শন সম্পর্কে জানালেন, জীবনকে জটিল বা কঠিনভাবে নেওয়ার কিছু নেই; বরং সিমপ্লিসিটিকেই প্রাধান্য দেওয়া শ্রেয়। যতটা বিনয়ী থাকা যায়, ততই মঙ্গল—অনুভব করেন। জোর দিয়ে বললেন, ‘মনে রাখা চাই, ফরগেট হোয়াট ইউ ফিল, রিমেম্বার হোয়াট ইউ ডিজার্ভ।’

 ফুয়াদ রূহানী খান
লোকেশন: হলিডে ইন ঢাকা সিটি সেন্টার
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top