কুন্তলকাহন I স্ক্যাল্প সোয়েট
গ্রীষ্মে নিদারুণ এক অস্বস্তির নাম। নাস্তানাবুদ করতে সিদ্ধহস্ত। সহজ সমাধান খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা
‘মাথা ঠান্ডা থাকলে সব সম্ভব’—প্রচলিত এক বাক্য। মাথা শুধু যে রাগেই গরম হয়, তা কিন্তু নয়; সূর্যের প্রখর তাপেও মাথার তালুর তাপমাত্রা বাড়ে। সে থেকে হয় ঘাম। চুলের গোড়ায় জমতে থাকে। সেখান থেকে সূচনা ঘটে নানা সমস্যার। যেমন চুল চিটচিটে থেকে শুরু হয়ে স্ক্যাল্প ফাঙ্গাল ইনফেকশন, এমনকি চুল ঝরে যাওয়া অবধি হতে পারে। এত কঠিন শত্রুকে পরাস্ত করার টোটকা খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, খুব একটা শক্ত কিছু না। সহজ সূত্রেই পাওয়া যাবে সমাধান।
চুলের ধরনের কথা তো সর্বজনবিদিত। স্ক্যাল্পের ত্বকের প্রকারভেদও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ত্বক আর চুল—এই দুয়ের অবস্থা জানলে বিশেষ যত্নের দিকে মনোযোগ দেওয়া যায় সহজে।
তৈলাক্ত স্ক্যাল্প
সপ্তাহে অন্তত তিনবার শ্যাম্পু করা যেতে পারে। মাইল্ড ক্ল্যারিফাইয়িং শ্যাম্পু এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। তাই টি ট্রি অথবা নিম এক্সট্র্যাক্ট সমৃদ্ধ শ্যাম্পু বেছে নেওয়া যায়। আর তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে জোজোবা অয়েল রাখা যেতে পারে। আফটার শাওয়ার কেয়ারে ব্যবহার করা যেতে পারে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার।
শুষ্ক স্ক্যাল্প
মানেই যে ঘামহীন, তা কিন্তু মোটেই নয়। ঘাম হতেই পারে। অতিরিক্ত গরমের পাশাপাশি স্ট্রেসও এর অন্যতম কারণ। সাত দিনে অন্তত তিন দিন চুলে ময়শ্চারাইজিং শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে। আরগান অয়েল ও শিয়া বাটার যুক্ত শ্যাম্পু রাখা যায় তালিকায়। নারকেল ও জলপাই তেল মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে তালুতে।
কম্বিনেশন স্ক্যাল্প
না তেলতেলে না শুকনো খটখটে, বরং সব মিলিয়েই কম্বিনেশন স্ক্যাল্প। এমন চুলে পি এইচ ব্যালান্সড শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো। কন্ডিশনার ব্যবহার করা যায়, তবে চুলের নিচের অংশে। চুলের ডগায় সেরাম ব্যবহারে নিয়মিত হওয়া যেতে পারে।
এ তো গেল চুলের ধরন অনুযায়ী যত্নের পরামর্শ। এসবের বাইরে সব রকমের চুলের জন্যও আছে সহজ সমাধান।
জলে জয়
নিয়ম করে মাথার তালু পরিষ্কার করলে ধুলোবালি পরিষ্কার হয়ে যায়। নয়তো চুলের গোড়ায় জমে থাকলে দুর্বল হয় চুল। সপ্তাহে দু-তিনবার সালফেটবিহীন মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল থেকে ঝেড়ে ফেলা যাবে এসব জঞ্জাল। আর মাথার ত্বক দিনে অন্তত একবার শুধু পানি ব্যবহারে ধুয়ে নিলে ঘাম জমতে পারবে না।
তেলে তাজা
বাজারে এখন হরেক রকম তেলের পসরা। সেখান থেকে কোন তেল হবে কাজের, স্ক্যাল্পকে রাখবে সোয়েট ফ্রি, জানা চাই সেটাও। তেলের টেক্সচারের দিকে নজর রেখে তবেই নিতে হবে সিদ্ধান্ত। এ সময়ে হালকা তেল ব্যবহারে স্ক্যাল্প ঘামবে কম। বেছে নেওয়া যেতে পারে টি ট্রি অয়েল অথবা জোজোবা অয়েল। নারকেল তেল খানিকটা ঘন হওয়ায় এ সময়ে বোতলে তুলে রাখাই সমীচীন। নয়তো মাথার তালু হতে পারে ঘেমে একাকার!
ফুরফুরে বাতাসে
টাইট করে চুল বাঁধলে, স্কার্ফ বা হিজাবে মাথা ঢাকলে তালুতে ঘাম বাড়তে পারে। এমন হলে দিনের অন্তত কিছু সময় চুল খুলে রাখলে বাতাস তালুতে পৌঁছাতে পারবে। তাতে ঘাম কমে আসবে। চুল চিটচিটে হবে না। হিজাব ও স্কার্ফ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্রিদেবল ফ্যাব্রিক বেছে নিলে ঘাম থেকে মুক্তির পথে বেশ খানিকটা আগানো যাবে। আবার চুল ধোয়ার পরে ভালোভাবে শুকিয়ে নেওয়া জরুরি। মনে রাখা শ্রেয়, ভেজা চুলে সমস্যা বাড়ে।
স্ক্যাল্প ডিটক্স
সপ্তাহে অন্তত একবার লেবুর রসের সঙ্গে পানি মিশিয়ে স্ক্যাল্পে মাসাজ করলে সহজে পরিষ্কার করা যাবে জমে থাকা তেল আর ময়লা। এ ছাড়া অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের সঙ্গে পানি মিশিয়ে ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যাবে।
ডায়েটে রয়েসয়ে
খাবারের কারণেও স্ক্যাল্প সোয়েটের আগ্রাসন বাড়তে পারে। তাই সেখানেও থাকা চাই সচেতন। মেনু নির্বাচন করতে হবে বুঝে শুনে। অতিরিক্ত মসলাদার খাবার এড়িয়ে যাওয়াই মঙ্গল। ক্যাফেইন গ্রহণে মানতে হবে নিয়ম। প্রয়োজনে সাক্ষাৎ করা চাই পুষ্টিবিদের সঙ্গে। চিনিযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব গ্রহণ না করলেই ভালো। শরীর ঠান্ডা থাকে এমন সবজি, শাক রাখা যেতে পারে। শেষ পাতে ভারী খাবার বাদ দিয়ে খেতে হবে স্যালাদ। তাজা রঙিন ফলে ভিটামিন যেমন পাওয়া যাবে, তেমনি মিলবে খনিজ পদার্থ। শরীর ঠান্ডা থাকবে।
মন ভালো তো সব ভালো
মনের সঙ্গে মস্তিষ্কের সম্পর্ক আছে, সে তো বলাই বাহুল্য। মন ভালো থাকলে মাথার তালুর ঘামও থাকবে নিয়ন্ত্রণে। এ জন্য স্ট্রেসের লাগাম টেনে ধরা চাই সবার আগে। নিয়মিত মেডিটেশন সাহায্য করবে মনকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাখতে। এর সঙ্গে সঙ্গে হালকা শরীরচর্চা করে নিলেই সই।
যাপিত জীবন
নিত্যদিনের বিভিন্ন কাজেও সচেতন থাকা জরুরি। পিলো কাভার নিয়মিত পরিষ্কার রাখতেই হবে। ফ্যাব্রিকে কটন ব্যবহার না করে সিল্ক ব্যবহারে চুল ও স্ক্যাল্প পাবে মসৃণ সারফেস। আবার হিজাব অথবা স্কার্ফ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও মনে রাখা যেতে পারে এই পরামর্শ। তাতে সমাধান যেমন হবে, তেমনি স্বস্তিও মিলবে।
সারাহ্ দীনা
মডেল: তৌহিদা ফাতিমা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: মাইক্লো
ছবি: কৌশিক ইকবাল
