skip to Main Content

ত্বকতত্ত্ব I প্রয়োজন পুনরাবৃত্তি

এক বেলা এক পরত সানস্ক্রিন মেখেই যারা ভাবছেন, বিউটি গেম সেট; তাদের এখনই সচেতনতা জরুরি। নয়তো পরে পস্তানো ছাড়া উপায় থাকবে না

সানস্ক্রিন। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি (ইউভি) রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষার অন্যতম কার্যকর উপায়। নিয়মিত ব্যবহারে এটি সানবার্ন, বলিরেখা, বয়সের দাগ এমনকি ত্বকের ক্যানসারের মতো গুরুতর সমস্যার ঝুঁকি কমিয়ে আনে। তবে উপকারিতা সম্পর্কে জানা থাকলেও অনেক সময় সঠিক নিয়মে বা প্রয়োজন অনুযায়ী এটি ব্যবহার করা হয় না। বিশেষ করে, সানস্ক্রিন পুনরায় ব্যবহারের সময় ও পরিমাণ নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি থাকে। যেমন যদি সারা দিন পুলে বা সমুদ্রে থাকা হয়, তাহলে কত ঘন ঘন সানস্ক্রিন মাখা দরকার? আবার, যদি সারা দিন অফিসেই সময় কাটে, তখন কি আদৌ পুনরায় মাখার প্রয়োজন আছে?
রোদ থেকে ত্বক রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সূর্যের সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। তবে বাস্তব জীবনে সেটা সব সময় সম্ভব নয়। কাজের প্রয়োজনে হোক বা অবসর সময় কাটাতে, বাইরে যাওয়ার বিকল্প নেই। এমনকি ঘরের ভেতর থাকলেও যদি জানালার পাশে বসা হয় কিংবা প্রাকৃতিক আলোয় ঘর আলোকিত থাকে, তাহলেও ইউভি রশ্মির ক্ষতি থেকে পুরোপুরি নিরাপদ নন কেউই।
বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার, সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সময়কে বলা হয় ইউভি পাওয়ার আওয়ার। এই সময়ে সূর্যের ইউভি রশ্মি সবচেয়ে তীব্র এবং ত্বকের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাবও বেশি। এই কারণে, শুধু বাইরে থাকলেই নয়, বরং দিনভর সঠিকভাবে সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে:
 ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি কমে;
 বলিরেখা, রোদে পোড়া দাগ, বয়সজনিত কালো ছোপের মতো সৌন্দর্যহানিকর সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়;
 দীর্ঘ মেয়াদে ত্বক হয়ে ওঠে আরও সুস্থ ও তরতাজা।
অনেকে মনে করেন, একবার সানস্ক্রিন মাখলেই সারা দিন রোদ থেকে সুরক্ষিত থাকা যাবে। কিন্তু বাস্তবে সানস্ক্রিন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কার্যকর থাকে। এ ছাড়া ঘাম, পানি বা তোয়ালে দিয়ে মুছলে তা ত্বক থেকে উঠে যায় এবং কার্যকারিতা হ্রাস পায়। সূর্যের দুটি প্রধান রশ্মি—ইউভি-এ এবং ইউভি-বি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ত্বকে পৌঁছায়। ইউভি-বি রশ্মি ত্বকে জ্বালাপোড়া, সানবার্ন এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়; অন্যদিকে ইউভি-এ রশ্মি অপেক্ষাকৃত কম তীব্র হলেও এটি বলিরেখা, বয়সজনিত দাগ এবং ত্বকের দ্রুত বার্ধক্যের জন্য দায়ী। এটি মেঘ বা জানালার কাচ ভেদ করেও ত্বকে পৌঁছাতে পারে। এফডিএ-র ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এসপিএফ নির্দেশ করে—রোদে পোড়ার জন্য ত্বকে যতটা ইউভি-বি রশ্মি লাগবে, সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে তার তুলনায় কত গুণ বেশি ইউভি-বি রশ্মি সহ্য করা যাবে, পোড়ার লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগপর্যন্ত। উদাহরণস্বরূপ, এসপিএফ ৩৫ মানে হলো, সাধারণ অবস্থার চেয়ে ৩৫ গুণ বেশি ইউভি-বি রশ্মি সহ্য করা সম্ভব, ত্বকে সানবার্নের লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগে। এই কারণে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ডার্মাটোলজি পরামর্শ দেয়, অন্তত এসপিএফ ৩০ মাত্রার একটি ব্রড স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত; যা ইউভি-এ এবং ইউভি-বি উভয় ধরনের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
সানস্ক্রিন পুনরায় ব্যবহারের সময় নির্ধারণে কিছু বিষয় বিবেচ্য:
 ত্বকের ধরন;
 কতক্ষণ বাইরে থাকা হয়;
 দিনের কোন সময় বাইরে থাকা হয়;
 ঘাম বা পানির সংস্পর্শে আসা হয়নি;
 কতটা সানস্ক্রিন মাখা হচ্ছে।
মেডিকেল অ্যাসথেটিশিয়ান অ্যানি ক্রিস্টেনসনের মতে, ত্বকের রঙের ওপর সূর্যের প্রভাব বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন একজন ফর্সা ব্যক্তি মাত্র ১৫ মিনিট রোদে থাকলেই ত্বকে পোড়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেখানে গাঢ় ত্বকের কেউ ৩০ মিনিট পর্যন্ত রোদে থেকেও পোড়েন না। পাশাপাশি দিনের সময় অনুযায়ী ইউভি রশ্মির মাত্রাও বিভিন্ন হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, সকাল ৭টায় এক ঘণ্টা হাঁটার সময় যে পরিমাণ ইউভি রশ্মি ত্বকে পড়ে, দুপুর ১২টায় মাত্র ১৫ মিনিট হাঁটলেই একই মাত্রার রশ্মি ত্বকে পৌঁছায়। ফলে সূর্যের প্রভাব শুধু ত্বকের ধরন নয়; সময় আর পরিবেশভেদেও পরিবর্তিত হয়। এ জন্য কেউ যদি অফিসে কিংবা দিনের বেশির ভাগ সময় ঘরে থাকেন, তবে সানস্ক্রিন পুনরায় ব্যবহারের প্রয়োজন তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু ছুটির দিনে কেউ যদি পুলে বা বাইরে রোদে দীর্ঘ সময় কাটান, তবে রোদের প্রভাব মোকাবিলায় ঘন ঘন সানস্ক্রিন রিঅ্যাপলিকেশন অত্যন্ত জরুরি।
সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি ২ ঘণ্টা পর পুনরায় সানস্ক্রিন মাখানো উচিত। তবে এটি নির্ভর করে ব্যক্তি কোথায় এবং কী করছেন, তার ওপর। ঘরের ভেতরে থাকলে, তেমন না ঘামলে বা তোয়ালে দিয়ে বারবার মুখ না মুছলে, ঘন ঘন রিঅ্যাপলিকেশনের প্রয়োজন নেই। তবে যদি জানালার পাশে বসে থাকা কিংবা প্রাকৃতিক আলোয় কাজ করতে হয়, তাহলে প্রতি ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পর পুনরায় মাখানো বাঞ্ছনীয়। ঘরের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে—হোক তা শুধুই গাড়ি চালানো কিংবা কয়েক মিনিটের হাঁটা—বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন আবার মেখে নেওয়া চাই। আর যদি দীর্ঘ সময় রোদে থাকা, সাঁতার কাটা, তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছতে হয়, তাহলে ৪০ থেকে ৮০ মিনিট পরপর সানস্ক্রিন পুনরায় ব্যবহার করা জরুরি। অনেকে উচ্চ এসপিএফ সানস্ক্রিন ব্যবহার করে মনে করেন, বেশি সময় রোদে থাকলেও সমস্যা নেই; কিন্তু এই আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ, কোনো সানস্ক্রিনই দীর্ঘ সময় ধরে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারে না। সঠিক ব্যবহারের পাশাপাশি সময়মতো পুনরায় প্রয়োগই রোদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে কার্যকরভাবে রক্ষা করতে পারে।
সানস্ক্রিন পুনরায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথমবার ব্যবহারের মতোই নিয়ম মেনে চলা জরুরি। প্রথমে সঠিক পরিমাণে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অনেক সময় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম পরিমাণে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা হয়; ফলে পর্যাপ্ত সুরক্ষা মেলে না। বাইরে যাওয়ার ১৫ থেকে ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ত্বকে মেখে নেওয়া উচিত, যাতে এটি ভালোভাবে শোষিত হয়ে কাজ শুরু করতে পারে।
যারা মেকআপ ব্যবহার করেন, তাদের জন্য পুনরায় সানস্ক্রিন মাখা কিছুটা ঝামেলাপূর্ণ মনে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পাউডার সানস্ক্রিনের পক্ষে একটি ভালো সমাধান হওয়া সম্ভব। এগুলো সাধারণত লুজ পাউডার, প্রেসড পাউডার বা ব্রাশসহ একীভূত ফর্মে আসে, যা মেকআপের ওপর দিয়েও সহজে ব্যবহার করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, পাউডার সানস্ক্রিন সঠিকভাবে কাজ করতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করতে হয় এবং প্রয়োজনে একাধিকবার প্রয়োগ করতে হতে পারে। অনেকে বিবি ক্রিম, সিসি ক্রিম বা ফাউন্ডেশনে থাকা এসপিএফ দিয়ে সুরক্ষিত আছেন বলে মনে করেন; অথচ এসব প্রসাধনীতে এসপিএফ থাকলেও তা কখনো একমাত্র সানস্ক্রিন হিসেবে বিবেচ্য নয়। কারণ, এগুলো সাধারণত প্রয়োজনের তুলনায় কম ব্যবহার করা হয় এবং সব সময় পুরো মুখে সমানভাবে মাখা হয় না। বাড়তি সুরক্ষার জন্য, এখন বাজারে এসপিএফ যুক্ত নানা ধরনের সুরক্ষামূলক পোশাক পাওয়া যাচ্ছে; যেমন জামা, গ্লাভস, স্কার্ফ, হ্যাট ইত্যাদি। যাদের প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হয়, তাদের জন্য এসপিএফ গ্লাভস খুব কার্যকর হতে পারে। কারণ, ড্রাইভিংয়ের সময় হাত রোদের সরাসরি সংস্পর্শে আসে।
সানস্ক্রিন পুনরায় ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে এমন প্রোডাক্ট বেছে নেওয়া যেতে পারে, যা ত্বকে আরামদায়ক অনুভূতি দেয়, ব্যবহার করতে ভালো লাগে। মুখ ও শরীরের জন্য আলাদা ফর্মুলার সানস্ক্রিন বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, মুখে ব্যবহারের জন্য হালকা ও নন-গ্রিসি ফিনিশ দরকার পড়ে। সব সময় একটি ছোট টিউব বা পকেট সাইজ সানস্ক্রিন সঙ্গে রাখা যেতে পারে, যাতে প্রয়োজনে সহজে রি-অ্যাপ্লাই করে নেওয়া যায়। মেকআপ করা থাকলে সঙ্গে পাউডার সানস্ক্রিন রাখাও উপকারী।

 শিরীন অন্যা
মডেল: বুশরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top