skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I স্ক্যাপারেল্লি ইফেক্ট

একদম আনকোরা নকশা। মোটিফে চোখ, ঠোঁট থেকে হৃদ্যন্ত্র! খোঁজতল্লাশে জানা যায় মানবদেহ ঘিরে শিল্পী এলসা স্ক্যাপারেল্লির আগ্রহের গল্প। সৃষ্টি তাকে অক্ষয় করেছে। তাই সত্তরের দশকে যার জীবনাবসান, আজও তিনি প্রাসঙ্গিক। লিখেছেন সারাহ্ দীনা

এলসা স্ক্যাপারেল্লি। ১৮৯০ থেকে ১৯৭৩ তার জীবনের দৈর্ঘ্য। কিন্তু এই ২০২৫ সালেও দারুণ প্রাসঙ্গিক। কীভাবে? তার সৃষ্টির কারণে। ইতালির রোমে জন্ম। ছিলেন সমাজকর্মী। সেখান থেকে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন শিল্পী। ফ্যাশন নিয়ে যার ছিল বেশ আগ্রহ। সূচনায় পোশাক নকশাতেই দিয়েছিলেন মন। নিটওয়্যার ছিল প্রথম অধ্যায়ে। তারপরে সেখানে জুড়ে যায় অন্য পাতা। অলংকার। প্রথম থেকে তার কাজে অনন্যতার ছাপ স্পষ্ট। মানবদেহ বিশেষভাবে জায়গা করে নেয় তার নকশায়; যা তাকে একদম ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছে। সুন্দরতার সঙ্গে বিস্ময় মিশ্রিত উপস্থাপনে মুগ্ধতা বিলিয়েছে। এমন ভিন্নধারার নকশায় আগ্রহের পেছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, তার শৈশবের স্মৃতি ছিল সমৃদ্ধ। আবার একই সঙ্গে বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন দিগ্বিজয়ী শিল্পী সালভাদর দালি এবং ম্যান রে-কে। দুজনই তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
১৯৩০ সালে গয়না গল্পে মনোযোগ দেন এই শিল্পী। প্রথম দিককার উদ্দেশ্য ছিল তার ফ্যাশন স্টেটমেন্টকে আরও অর্থবহুল করে তোলা। তখন উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতেন গ্লাস, রেসিন ও রাইনস্টোন। মোটিফে ছিল প্রকৃতিপ্রেম। যেখানে মানবদেহ বিশেষভাবে জায়গা করে নিয়েছিল। ১৯৫৪ সালে জুয়েলারি স্টুডিওর সমাপ্তি টানেন তিনি। তাই বলে থেমে যায়নি স্ক্যাপারেল্লির নান্দনিক এই কর্মযজ্ঞ। কালেকটেবল জুয়েলারি হিসেবে তখন প্রাসঙ্গিক ছিল, এখনো আছে। এর কারণ খুঁজতে গেলে পাওয়া যায় ফ্যাশনে পরিবর্তনের হাওয়ার ভূমিকার সক্রিয়তার গল্প। মিনিমালিজমের উজানে ভাটির টান কয়েক বছর ধরে। সেখানে জায়গা নিচ্ছে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ম্যাক্সিমালিজম। ম্যাজিক্যাল বোল্ড ডিজাইনে আগ্রহ ঊর্ধ্বমুখী। আর এ বছর এতে সঙ্গত দিয়েছে ফ্যান্টাসির প্রতি আগ্রহ। অনেকে প্রচলিতের থেকে সম্পূর্ণ ঘুরে গিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন ভিন্নতায়।
একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে। অনেকে এখন কতুর ইন্সপায়ার্ড গয়নায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন। নান্দনিক নকশায় সবার চেয়ে আলাদা হয়ে ওঠার আগ্রহও এখানে কাজ করেছে। স্ক্যাপারেল্লির বর্তমান ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ড্যানিয়েল রোজবেরি নতুন করে ফিরিয়ে এনেছেন সারিয়েল জুয়েলারি। উপস্থাপন করেছেন আভাঁ গার্দ রানওয়েতে। যেখানে সোনালি ফেস মাস্ক, কানের গঠনগত নকশার কাফ, চোখের মতো দেখতে এমন ব্রোচ তৈরি করা হয়েছে। হালের ভাইরাল কনটেন্ট হিসেবে টিকটক আর ইনস্টাগ্রামে করেছে বাজিমাত। জেনডায়া, বিয়ন্সে আর লেডি গাগাকেও পাওয়া গেছে স্ক্যাপারেল্লির অলংকারে। আবার মিলেনিয়াল আর জেনারেশন জেড—দুয়েরই কতুর জুয়েলারি অ্যাসথেটিকে রয়েছে আগ্রহ। তাতেও বেড়েছে এর চাহিদা। কারণ, আনকোরা এমন কতুর নিয়েই তো স্ক্যাপারেল্লির ভাবনা।
একসময় সহজে বলে দেওয়া যেত, মানুষ সৌন্দর্যপিয়াসি। কিন্তু এখনকার হিসাব এতটা সহজ নয়। মানুষ এখন বুদ্ধির প্রেমেও পড়ে। অনেকে নিজেকে আবিষ্কার করেন সেপিওসেক্সুয়াল হিসেবে। যাদের প্রেম হয় বুদ্ধিমত্তা ঘিরে। এই চাহিদা শুধু প্রেমের ক্ষেত্রে নয়; গয়না বেছে নেওয়ার বেলাতেও দেখা যাচ্ছে। আর সেখানেই স্ক্যাপারেল্লির মুনশিয়ানা। ব্যক্তিত্ব, দর্শন ও আবেগের সংমিশ্রণ সেখানে। ওয়ার্ক অব আর্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে পিস অব জুয়েলারি। চাংকি অ্যান্ড বোল্ড ডিজাইনে আকৃষ্ট হচ্ছেন ফ্যাশনিস্তারা। আবার ভিনটেজের প্রতিও আগ্রহ বেড়েছে। পুরোনো দিনের গন্ধ খুঁজে বেড়ান অনেকে। সেখান থেকেও আগ্রহের পারদ তুঙ্গে চড়েছে। একই সঙ্গে ক্রেতা আগ্রহেও পরিবর্তন এসেছে। মিলেনিয়াল আর জেনারেশন জেডদের জীবনযাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নেটওয়ার্কিং অপরিহার্য হয়ে ওঠার পর থেকে নিজেকে অন্যের সামনে প্রকাশের আগ্রহ বাড়তে দেখা গেছে। স্ক্যাপারেল্লির গয়নার যে সেই আগ্রহ সামাল দেওয়ার সক্ষমতা আছে, তা বলাই বাহুল্য।
তারকারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সে কেমন? অস্কারের দরবারে আরিয়ানা গ্র্যান্ডের দুটি পোশাকেই দেখা গেছে জুয়েলারি লিংকড ডিজাইন। যার লেবেলে স্ক্যাপারেল্লিরই নাম। চ্যাপলিন অ্যাওয়ার্ড গালাতে ডুয়া লিপা অ্যানাটমিক্যাল জুয়েলারি পরেছিলেন; যা স্ক্যাপারেল্লির অতি বিশেষ আয়োজন।
স্ক্যাপারেল্লি মোটিফ
এলসা স্ক্যাপারেল্লি প্রথম থেকে শেষ কাজ করেছেন ভিন্ন রকম মোটিফ নিয়ে। দেখার চোখ ছিল তার। যে দেহে একজন মানুষের সারা জীবন কাটে, তাতেই নজরদারি কম বেশির ভাগের। স্ক্যাপারেল্লি সেই আট কুঠুরি নয় দরজার ঠিকানাতেই খুঁজে পেয়েছিলেন শিল্প। দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে প্রাণিত হয়ে মোটিফ তৈরি করেছিলেন। এর মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটির তালিকা থাকছে এখানে।
দ্য আই
দালির পরাবাস্তবতা থেকে নেওয়া হয়েছে চোখের এই মোটিফ। ব্রোচ, কানের দুল, ফেস জুয়েলারিতে এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।
দ্য অ্যানাটমিক্যাল হার্ট
ভালোবাসা বোঝানোর জন্য আঁকা হৃদয়চিহ্ন নয়; স্ক্যাপারেল্লির নকশায় ফুটে ওঠে একদম বাস্তব মানবদেহের হৃদ্যন্ত্র। যেখানে আর্টারি, ভেইন—সবই দৃশ্যমান। এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয় আবেগ, জীবন ও ভঙ্গুরতা। নেকলেস, মেটাল ব্রেস্টপ্লেটে দেখা যায়।
লাং ও রিব
মানবদেহ নিয়ে কাজের প্রতি স্ক্যাপারেল্লির বেশ উৎসাহ ছিল। লাং, রিব কেস আর করসেট বোনের মতো দেখতে গয়না তৈরিতে তার ছিল আগ্রহ। জানা যায়, জীবন, শ্বাসপ্রশ্বাস, বেঁচে থাকাকে প্রকাশ করে এই দুই মোটিফ।
ফেশিয়াল ফিচার
চোখ, নাক, মুখ ও কান—এই চার মোটিফ স্ক্যাপারেল্লির কাজে দৃশ্যমান। সোনার তৈরি কানের দুল আর নেকলেসে ব্যবহৃত হয় বেশি। এই চারে মানবদেহের কার্যক্রমের ইঙ্গিত মেলে। এসবের বাইরে হাঁস, জ্যোতির্বিজ্ঞানের নানান মোটিফ; যেমন চাঁদ-সূর্যও দেখা যায়।
এলসা স্ক্যাপারেল্লি পার্থিব মায়া কাটিয়েছেন। কিন্তু তার সৃষ্টি তাকে করেছে অমর। স্টেটমেন্ট জুয়েলারিতে তার মুনশিয়ানা আজও চর্চিত।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top