skip to Main Content
দেশ আর্ট গ্যালারির প্রত্যাবর্তন

এই জনপদের সংগ্রামী ঐতিহ্যের সঙ্গে দেশ আর্ট গ্যালারি’র যোগ নিবিড়। ১৯৬৯ সালে এ দেশের মানুষের স্বাধিকারের লড়াই এক প্রবল গতিবেগ লাভ করে। সে সময় জনগণের মুক্তির স্পৃহার স্বরূপ প্রকাশ পায় বহুবিধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। তৎকালীন গণঅভ্যুত্থানের বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষার সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় এই আর্ট গ্যালারি। গ্যালারির নাম ‘দেশ’ হওয়ায় এটি অনুমিত যে এর মধ্যে নিহিত আছে স্বদেশ প্রেমের চিন্তাবীজ।

শিল্পপ্রেমী ব্যক্তিত্ব ইউসুফ সাঈদের উদ্যোগে ১৯৬৯ সালে দেশ আর্ট গ্যালারির যাত্রা শুরু। এ দেশের গুরু গ্রাহ্য পেইন্টারদের কাজের পাশাপাশি নতুন শিল্পীদের কাজের প্রদর্শন ও বিক্রির মধ্য দিয়ে মানুষের শিল্পরুচি প্রসারণে দেশ আর্ট গ্যালারি তখন থেকেই অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে।

নানাবিধ প্রতিকূলতার কারণে এই আর্ট গ্যালারির কর্মকাণ্ড বহুদিন স্থিমিত হয়ে পড়েছিল। গ্যালারি সংশ্লিষ্টজনের পরিবারের উদ্যোগে আবার এ প্রতিষ্ঠান নবজন্ম লাভ করল। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিসূত্রে জানা যায়, এ উপলক্ষে শনিবার (৯ আগস্ট ২০২৫) সকালে রাজধানীর বারিধারার ১২ নং সড়কে অবস্থিত দেশ আর্ট গ্যালারি পরিণত হয় শিল্পতীর্থে। গ্যালারি পরিচালনার সামনের সারির ব্যক্তিত্ব শিল্পজন সাবিনা জোহা খান উপস্থিত সুধীজনের উদ্দেশ্যে বলেন, ‍’আমার বাবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শহীদ ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা। ৬৯-এর ছাত্র-আন্দোলনে পাকিস্তান আর্মির গুলিতে যিনি শহীদ হন। এ কারণে এ কথা বলা অসঙ্গত নয় যে, শহীদ শামসুজ্জোহার ঐতিহাসিক আত্মদানের সঙ্গে যোগ রয়েছে দেশ আর্ট গ্যালারির ইতিহাস। আমি ছোটবেলা থেকেই দেখেছি পরিবারের সদস্যদের শিল্পের সঙ্গে বসবাস। দেশ আর্ট গ্যালারির আদি কর্ণধার আমার খালু ইউসুফ সাঈদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমি গ্যালারিটির পুনর্জন্মের উদ্যোগ নিয়েছি। এর জন্য শিল্পের সঙ্গে পথচলার নতুন ও আগের ঐতিহ্যবাহী শেকড় তাৎপর্যবহ ও স্মরণীয় করে রাখার জন্য বর্তমান এই প্রদর্শনী সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে।’

এই উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে দুটি ভাগ আছে। দেশবরেণ্য শিল্পী জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, এস এম সুলতান– এই গুরু শিল্পীদের দুর্লভ শিল্পকর্মের ধারাবাহিকতায় উপস্থাপন করা হয়েছে পঞ্চাশের দশকের অগ্রগণ্য শিল্পী ঐতিহ্য। এর পাশাপাশি থাকছে সমকালীন শিল্পীদের কাজ।

বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী উপস্থিত ছিলেন এ আয়োজনে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্মের ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগ আছে ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের। এই দেশ আর্ট গ্যালারি তাই বাংলাদেশের চেতনাবাহী একটি শিল্পতীর্থ। এখানের শিল্পকর্ম এই বাংলাকে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করবে। একইসঙ্গে ঐতিহ্য ও আধুনিকতা এই দুইয়ের ধারক হতে চলেছে দেশ আর্ট গ্যালারি।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী গৌতম চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘চিত্রকলা সব সময় প্রকাশের উপলক্ষ খুঁজে থাকে। এই গ্যালারি তাই শিল্পজনদের পদচারণায় মুখর থাকবে সারা বছর। শিল্পীদের নিত্য নতুন কাজের সুবাদে এটি শিল্পজনদের নিজেদের অঞ্চল হয়ে উঠবে।’

শিল্পী কনকচাঁপা চাকমা অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে বলেন, ‘দূতাবাস এলাকায় অবস্থিত এ গ্যালারি শিল্পের বাজার বিস্তারে সময় উপযোগী ভূমিকা রাখবে। শহরে যখন ট্র্যাফিক জ্যামের কারণে পর্যটকদের বিঘ্ন ঘটে চলাচলে; এ এলাকার একটি গ্যালারি তখন তাদের উপযুক্ত চাহিদা পূরণে কার্যকর হবে। আমি এই গ্যালারির জন্য আগাম সুবার্তা জানিয়ে রাখতে চাই।’

সব মিলিয়ে নতুন ও আগের শিল্পীদের কাজের নান্দনিকতায় ফিরেছে দেশ আর্ট গ্যালারি। নবীনের সঙ্গে যোগ হয়েছে গর্বের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার। শিল্পের পথচলায় এভাবেই সমকালে নিজেদের দৃপ্ত পদছাপ রাখতে চলেছে দেশ আর্ট গ্যালারি। শিল্পবোদ্ধাদের জন্য এ এক আনন্দের ক্ষণ। শনিবার দেশ গ্যালারি পুনরাবির্ভাব উপলক্ষে আয়োজিত এ মিলনমেলা তাই মুখরিত ছিল পুরোমাত্রায় শিল্পের জয়ধ্বনিতে।

  • ক্যানভাস অনলাইন
    ছবি: দেশ আর্ট গ্যালারি’র সৌজন্যে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top