skip to Main Content

ফিচার I সুপারফুড সবিস্তার

ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এবং অন্যান্য খাবারের তুলনায় বেশি পুষ্টিগুণ সরবরাহকারী খাবার। খাদ্যতালিকায় এর অন্তর্ভুক্তি সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে। এমনকি করতে পারে কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধও

পুষ্টির দিক থেকে বলতে গেলে সুপারফুড বলে কিছু নেই। খাদ্যপ্রবণতা ও পণ্য বিক্রির ওপর প্রভাব ফেলার জন্য বিপণনের উদ্দেশ্যে এই শব্দ তৈরি করা হয়েছিল। খাদ্যশিল্প পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবারগুলোকে সুপারফুড লেবেল দেয়। স্বাস্থ্যের ওপর এসব খাবারের ইতিবাচক প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করা হয়। যদিও অনেক খাবারকেই সুপারফুড বলা যেতে পারে। তবে এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, এমন কোনো খাবার নেই, যা সুস্বাস্থ্য বা রোগ প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। সুপারফুড শব্দটি যেহেতু বেশ জনপ্রিয়, তাই এসব স্বাস্থ্যকর বিকল্প সম্পর্কে জানা থাকলে উপকার মেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
সবুজ শাকসবজি
গাঢ় সবুজ শাকসবজি ফোলেট, জিংক, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন সি, ফাইবারসহ নানা পুষ্টির চমৎকার উৎস। সবুজ শাকসবজি হৃদ্‌রোগ, টাইপ টু ডায়াবেটিসসহ বেশ কিছু দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকি কমানোর সম্ভাবনা রাখে। এগুলোতে ক্যারোটিনয়েড নামের উচ্চ মাত্রার প্রদাহবিরোধী যৌগও রয়েছে, যা নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক। কিছু সুপরিচিত শাকসবজির মধ্যে রয়েছে কেল, সুইস চার্ড, কলার্ড গ্রিনস, টার্নিপ গ্রিনস ও পালংশাক। কিছু সবুজ শাকসবজির স্বাদ তিক্ত হয় এবং সবাই এগুলো পছন্দ করে না। সে ক্ষেত্রে পছন্দের স্যুপ, স্যালাদ, স্মুদি, ফ্রাই ও তরকারিতে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করে চাইলে সৃজনশীলতার পরিচয় দেওয়া যেতে পারে।
বেরি
ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পুষ্টিকর পাওয়ারহাউস। বেরির শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা হৃদ্‌রোগ, ক্যানসার ও অন্যান্য প্রদাহজনক অবস্থার ঝুঁকি হ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি বেরি খেলে বিভিন্ন হজমজনিত রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কার্যকর হতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ বেরিগুলোর মধ্যে রয়েছে রাস্পবেরি, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি ও ক্র্যানবেরি। সকালের নাশতা, ডেজার্ট, স্যালাদ অথবা স্মুদিতে এগুলো উপভোগ করা যেতে পারে। বেরির স্বাস্থ্য উপকারিতা রন্ধনসম্পর্কীয় ব্যবহারের মতোই বহুমুখী।
গ্রিন টি
মূলত চীন থেকে আসা একটি হালকা ক্যাফিনেটেড পানীয়, যার বিস্তৃত ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনলিক যৌগে সমৃদ্ধ, যার শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী প্রভাব রয়েছে। গ্রিন টিতে সবচেয়ে প্রচলিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর অন্যতম হলো ক্যাটেচিন এপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট বা ইজিসিজিআই। এটি সম্ভবত গ্রিন টিকে এমন এক পানীয়তে পরিণত করে, যা হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসারসহ দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে সুরক্ষার ক্ষমতা দেয়। গবেষণা আরও ইঙ্গিত দেয়, গ্রিন টিতে থাকা ক্যাটেচিন ও ক্যাফিনের সংমিশ্রণ একে ওজন কমানোর জন্য একটি কার্যকর হাতিয়ার করে তুলতে পারে।
ডিম
উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে ডিম ঐতিহাসিকভাবে পুষ্টি জগতে একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এটি এখনো স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোর অন্যতম হিসেবে গণ্য। আস্ত ডিম অনেক পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ; যার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি, কোলিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন এ, আয়রন ও ফসফরাস। এতে উচ্চমানের প্রোটিনও থাকে। ডিমে জিয়াক্সানথিন ও লুটেইন নামে দুটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা দৃষ্টিশক্তি ও চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক। ডিম খাওয়ার সঙ্গে উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ে আশঙ্কার যোগসূত্র থাকা সত্ত্বেও গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ৬ থেকে ১২টি পর্যন্ত ডিম খেলে হৃদ্‌রোগ বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। আসলে ডিম খাওয়া কিছু মানুষের মধ্যে ‘ভালো’ এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখে। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
লেগুম
এটি মটর পরিবারের উদ্ভিদ অথবা সেগুলোর ফল বা বীজ। সাধারণভাবে লেগুম বলতে এমন গাছকে বোঝায়, যা শুঁটি জাতীয় ফল ধারণ করে; মটর, শিম, মসুর ডাল ইত্যাদি যার অন্তর্ভুক্ত। এগুলো সাধারণত মানুষ ও পশু—উভয়ের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখার কারণে লেগুম পেয়েছে সুপারফুডের তকমা। এটি ভিটামিন বি, বিভিন্ন খনিজ, প্রোটিন ও ফাইবারের সমৃদ্ধ উৎস। গবেষণায় দেখা যায়, টাইপ টু ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং কোলেস্টেরল হ্রাসের মতো অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা এনে দেয় এই খাবার। তা ছাড়া নিয়মিত লেগুম খাওয়া ক্ষুধা কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করতে পারে।
কেফির ও টক দই
কেফির একটি গাঁজানো পানীয়, যা সাধারণত দুধ থেকে তৈরি হয়। এতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি, পটাশিয়াম ও প্রোবায়োটিক থাকে। কেফির টক দইয়ের মতোই; কিন্তু এর ঘনত্ব পাতলা এবং সাধারণত টক দইয়ের চেয়ে বেশি প্রোবায়োটিক স্ট্রেন সমৃদ্ধ। কেফিরের মতো গাঁজানো প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবারের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে কোলেস্টেরল হ্রাস, রক্তচাপ হ্রাস, হজমশক্তি উন্নত করা ও প্রদাহবিরোধী প্রভাব রাখা। যদিও কেফির ঐতিহ্যগতভাবে গরুর দুধ থেকে তৈরি করা হয়, তবে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ল্যাকটোজ গাঁজন করার কারণে ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতাযুক্ত ব্যক্তিরা সাধারণত এটি হজম করতে পারে।
রসুন
একটি উদ্ভিদজাত খাদ্য। ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, সেলেনিয়াম ও ফাইবারের চমৎকার উৎস। রসুন তার স্বতন্ত্র স্বাদের কারণে একটি জনপ্রিয় রন্ধনসম্পর্কীয় উপাদান, তবে এটি বহু শতাব্দী ধরে এর ঔষধি উপকারিতার জন্যও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গবেষণা বলছে, রসুন কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ কমাতে কার্যকর হতে পারে; সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক। তা ছাড়া এতে থাকা সালফারযুক্ত যৌগগুলো নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
অলিভ অয়েল
জলপাই গাছের ফল থেকে নিষ্কাশিত একটি প্রাকৃতিক তেল এবং ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যের অন্যতম প্রধান উপাদান। স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় উপকার পাওয়া যায় এর উচ্চ মাত্রার মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ও পলিফেনলিক যৌগ থেকে। খাদ্যতালিকায় অলিভ অয়েল যোগ করলে প্রদাহ, হৃদ্‌রোগ ও ডায়াবেটিসের মতো কিছু অসুস্থতার ঝুঁকি কমতে পারে। এতে ভিটামিন ই ও কে-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও রয়েছে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে কোষের ক্ষতির বিপরীতে সুরক্ষা দিতে পারে।
আদা
চীনের একটি ফুলের গাছের গোড়া থেকে আসে। এটি রান্নার স্বাদ বৃদ্ধিকারী এবং বহুমুখী ঔষধি প্রভাব উভয়ের জন্যই ব্যবহৃত হয়। আদার মূলে জিঞ্জেরলের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা এই খাবারের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণ। আদা বমি বমি ভাব নিয়ন্ত্রণে এবং তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত অবস্থার ব্যথা কমাতে কার্যকর হতে পারে। এটি হৃদ্‌রোগ, ডিমেনশিয়া এবং কিছু নির্দিষ্ট ক্যানসারের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক। আদা তাজা, তেল বা রস হিসেবে এবং শুকনো বা গুঁড়া আকারে পাওয়া যায়। এটি স্যুপ, স্টির-ফ্রাই, সস ও চায়ে মিশ্রণ করা সহজ।
এ ছাড়া হলুদ, স্যামন ফিশ, অ্যাভোকাডো, মিষ্টি আলু, মাশরুম, সামুদ্রিক শৈবালের মতো খাবারেরও চাহিদা আছে সুপারফুড হিসেবে। খাদ্য ও পুষ্টির মাধ্যমে সর্বোত্তম স্বাস্থ্য অর্জন করা সাম্প্রতিকতম একটি খাদ্যপ্রবণতা। তবে একটি বা দুটি খাবারে মনোযোগ আটকে রাখার চেয়ে এটি বেশি কিছু; বরং প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সবচেয়ে ভালোভাবে সমর্থিত।

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top