skip to Main Content

কুন্তলকাহন I মাস্ক  VS ডিপ কন্ডিশনার

নাকি একসঙ্গে দুটোই? কী করে পরিচর্যার প্রতিদিনকার রুটিনে এগুলোর অন্তর্ভুক্তি পাল্টে দিতে পারে চুলের বেহাল দশা, জানাচ্ছেন রত্না রহিমা

অনেকের হয়তো জানা নেই, বিশ্বজুড়ে সৌন্দর্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পণ্য রয়েছে চুলের জন্য। এত বেশি পণ্য যে কোনটা রেখে ভোক্তারা কোনটা ব্যবহার করবেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। চুলের সমস্যারও কিন্তু শেষ নেই। ভঙ্গুর চুল, ফাটা ভাব, আর্দ্রতার অভাব, খুশকি, চুল পড়ে যাওয়া কিংবা মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের দুর্বলতা ইত্যাদি নানা কিছু নিয়ে উদ্বেগবোধ করেন না, এমন মানুষ কম। সে ক্ষেত্রে কোন চুলের যত্নের পণ্য কার জন্য সঠিক, তা খুঁজে বের করা মুশকিল। তবে সৌন্দর্যবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তালিকাভুক্ত সব সাধারণ সমস্যা মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে, এমন দুটি কমন পণ্য হলো হেয়ার মাস্ক ও ডিপ কন্ডিশনার। অবশ্য সেখানেও প্রশ্ন হচ্ছে, কোনটি ব্যবহার করা হবে? এই দুটি পণ্যের পার্থক্য সম্পর্কে বিভ্রান্তি রয়েছে অনেকের মধ্যে। হেয়ারস্টাইলিস্টরা সেটি দূর করার জন্য প্রতিটি ফর্মুলা কীভাবে কাজ করে এবং কোন রুটিনে ব্যবহার করা যেতে পারে, তা সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। যা জানা খুব জরুরি। কারণ, জানা থাকলে চুল যখন সমস্যায় ফেলবে, তখন সঠিক পণ্য বেছে নিতে সুবিধা হবে।
মিল-অমিল
হেয়ার মাস্ক ও ডিপ কন্ডিশনার—দুটোই খুব ঘন, ভারী পণ্য; যা চুলে ব্যবহৃত যেকোনো ডেইলি কন্ডিশনারের চেয়ে বেশি সময় রাখা যায়। ব্যস, মিল কিন্তু এটুকুই। শিকাগোর ম্যাক্সিন স্যালনের হেয়ারস্টাইলিস্ট রাভেন হুর্তাডোর মতে, চুলের জন্য হেয়ার মাস্ক অনেক বেশি কার্যকর মেরামতকারী হিসেবে কাজ করে, যা চুলে জরুরি আর্দ্রতা জোগায় এবং একদম গভীরে প্রবেশ করে। ডিপ কন্ডিশনার জাস্ট একটি পাতলা ফর্মুলা, যা চুলের বাইরের স্তরকে আবৃত রাখতে সক্ষম। এটিও আসলে একধরনের হেয়ার মাস্ক। নিউইয়র্কের হেয়ারস্টাইলিস্ট রোজারিও ক্যাভালক্যান্ট মনে করেন, হেয়ার মাস্ক এমন একটি পণ্য, যা ফর্মুলা ও উপাদানের ঘনত্বের ভিত্তিতে চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক আসলে একরকমের রিপেয়ারিং মাস্ক; যা চুলের আর্দ্রতা পূরণের পাশাপাশি বিভিন্ন রাসায়নিক পণ্য এবং হেয়ার ড্রায়ার বা স্ট্রেটনারের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে চুলের হারিয়ে যাওয়া অ্যামিনো অ্যাসিড ও লিপিড পুনরুদ্ধার করে। অন্যদিকে, ডিপ কন্ডিশনার হলো এমন পণ্য, যা মূলত চুলের শুষ্কতায় কাজ করে। মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, ডিপ কন্ডিশনার কখন ব্যবহার করা ভালো।
আর্দ্রতা বৃদ্ধির জন্য
যদি প্রধান উদ্বেগ চুলে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনা হয়, তাহলে প্রয়োজন একটি ডিপ কন্ডিশনার। ক্যাভালক্যান্ট মনে করেন, চুলের আর্দ্রতা পুনরুদ্ধারে ওমেগা-সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক তেল; যেমন আরগান, মারুলা তেলসহ পণ্যগুলো দারুণ কার্যকর। এই তেলগুলো পুষ্টিকর ফ্যাটি অ্যাসিড-সমৃদ্ধ; যা চুলকে সামলে রাখার ক্ষমতা, কোমলতা ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। আর হেয়ার মাস্ক কখন ব্যবহার করতে হবে, তা-ও জানা চাই।
গভীরে আর্দ্রতার জোগান
কিউটিকল শ্যাফট অব্দি ভরপুর হাইড্রেশনের জোগান দিতে হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি। হুর্তাডো মনে করেন, যখনই চুল নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে যায় এবং শুষ্ক বোধ করতে শুরু করে, তখনই গভীরে হাইড্রেটিং ট্রিটমেন্টের জন্য হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা চাই। যেহেতু হেয়ার মাস্কগুলো চুলের গভীরে প্রবেশ করে, তাই মাসে একবার বা দুবার ব্যবহারই যথেষ্ট।
ভঙ্গুর চুলের জন্য
যদি চুল প্রচুর ভাঙতে শুরু করে, তখন বুঝতে হবে, এতে খনিজ পদার্থের পরিমাণ খুব কম এবং পানিশূন্যতা রয়েছে। চুল তখন খুব নরমভাবে আঁচড়ানো চাই; পাশাপাশি একে শক্তিশালী করার জন্য পুষ্টিকর তেল ব্যবহার করতে হবে নিয়মিত। হেয়ার মাস্ক শুষ্কতা এবং মাথার ত্বকের চুলকানি প্রশমিত করতে সহায়ক। সর্বাধিক উপকার পেতে সপ্তাহে একবার বা দুবার ব্যবহারই যথেষ্ট। টি ট্রি, রোজমেরি ও পেপারমিন্টের মতো প্রাকৃতিক ডিটক্সিফাইং উপাদানসমৃদ্ধ মাস্ক সুস্থ চুলের বৃদ্ধির জন্য ফলিকলগুলোকে উদ্দীপিত করতে পারে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার দুটোই ব্যবহার করা যায়। যেমন চুলের কার্ল প্যাটার্নকে সুস্থ, সুন্দর রাখার জন্য। স্টাইলিং টুলের ব্যবহার, প্রক্রিয়াকরণ, এমনকি আবহাওয়ার কারণেও অনেক সময় কার্লগুলো নষ্ট হয়ে যায়। হারানো প্যাটার্ন ফিরিয়ে আনতে, ডিপ কন্ডিশনার অথবা হেয়ার মাস্ক—দুটোই ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যায়। হালকা ডিপ কন্ডিশনার চুলকে আর্দ্র রাখার জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করে। আবার ডিপ কন্ডিশনার ব্যবহার করলে কার্লগুলো বাউন্সি ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। নিয়মিত পরিচর্যায় একটি ডিপ কন্ডিশনারই যথেষ্ট। আর সপ্তাহে একবার মাস্ক ব্যবহার করা যেতেই পারে।
স্প্লিট এন্ডের সমস্যা হলে, ডিপ কন্ডিশনার বা হেয়ার মাস্ক—দুটোই সাহায্য করতে পারে। হেয়ারস্টাইলিস্টরা সর্বাধিক সুবিধা পেতে উভয় ধরনের পণ্য একসঙ্গে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমে চুলের প্রান্তগুলোতে পুষ্টি জোগাতে এবং গভীরভাবে মেরামতের জন্য হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা যাবে। এরপর সামগ্রিক পরিচালনা এবং জট ছাড়ানোর উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে হবে কন্ডিশনার।
আবার চাকচিক্য ও উজ্জ্বলতা বাড়াতেও ডিপ কন্ডিশনার ও হেয়ার মাস্ক—দুটোই কাজ করবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে একটি ডিপ কন্ডিশনার নিশ্চিতভাবে চুলের চাকচিক্য বাড়াবে। তবে অবশ্যই অতিরিক্ত পরিমাণে যেন ব্যবহার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা শ্রেয়। একটানা ব্যবহার না করে বরং মাঝে মাঝে একটি হেয়ার মাস্ক প্রয়োগ করলে ভালো ফল মিলবে। যদি চুল কালার করা থাকে, তাহলে বিশেষভাবে তৈরি রং রক্ষাকারী মাস্ক বা গ্লো হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা যায়। তাতে চুলের প্রাণবন্ততা ও আর্দ্রতা বজায় থাকবে। আবার অনেকে মনে করেন, রং বিবর্ণ হওয়া এবং বিচ্ছিন্নতা থেকে রক্ষা করার জন্য ডিপ কন্ডিশনারের বিকল্প নেই। সুবিধামতো বেছে নেওয়া যাবে সেটিও।

মডেল: আনসা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top