skip to Main Content

এডিটর’স কলাম I দোটানা মানা

দোটানা কাজ করলে সম্পর্ক গড়ার আগেই ভেঙে দিতে হবে, ব্যাপারটি এমন নয়। সম্ভাব্য সমাধানের পথে হাঁটাই বরং বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক

বিয়ে। মানবজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ বন্ধন। জীবনের পথচলার এক তাৎপর্যপূর্ণ নবসূচনা। তাই একে ঘিরে কম-বেশি সবার মনে আবেগপূর্ণ অনুভূতি খেলা করে। আর সবার ক্ষেত্রে সেটি যে সুখকর, তা কিন্তু নয়। হোক নিজের কিংবা পারিবারিক পছন্দের, হবু জীবনসঙ্গী ঘিরে অনেকের মনে নানা দ্বিধা দোলা দিয়ে যায়। বিয়ে করার আগেই সেগুলো কাটিয়ে তোলা শ্রেয়। কেননা, দোটানায় ভোগা কল্যাণকর কিছু নয়।

দুই
বিয়ে মূলত দুজন মানুষের একসঙ্গে জীবনতরী পাড়ি দেওয়ার যাত্রা শুরুর সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা। তাই কোনো কারণে দ্বিধা কাজ করলে ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলাই উত্তম। এসব দ্বিধার নেপথ্য কারণ হতে পারে নির্বাচিত বর বা কনেকে পছন্দ না হওয়া; সংসারের দায়ভার সামলানো ঘিরে ভীতি কাজ করা; আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি থাকা; জীবনের নিশ্চিত রূপান্তর ঘিরে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা; ব্যক্তিস্বাধীনতা বিসর্জনের ভয় পাওয়া ইত্যাদি। কেউ কেউ আবার এসব লক্ষণ সজ্ঞাতে টের পান না; তবু মনের ভেতর চলতে থাকে বিবিধ উথালপাতাল। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, বিভিন্নভাবে বিয়ে ঘিরে দোটানা উঁকি দিতে পারে হবু বধূ বা হবু বরের চিন্তাজগতে। এগুলোর মধ্যে কিছু লক্ষণ মোটামুটি সর্বজনীন। যেমন বিয়ের সিদ্ধান্তটি হয়তো ভুল হতে যাচ্ছে—নিরন্তর এমন উদ্বেগে ভোগা; বিয়ে ও ভবিষ্যৎ ঘিরে সকল পরিকল্পনা বা আলোচনা এড়িয়ে চলা; দৃশ্যত অকারণে অসুস্থতাবোধ, মাথাব্যথা কিংবা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা; ভবিষ্যৎ সঙ্গী-সম্পর্কিত যেকোনো প্রসঙ্গে হঠাৎ বিরক্তি কিংবা হতাশা অনুভব করা; গড়তে যাওয়া সম্পর্কটি ঘিরে অহেতুক অতিরিক্ত চিন্তাভাবনায় ডুবে থাকা; নৈমিত্তিক কোনো কাজে মনোনিবেশ দুরূহ হয়ে ওঠা ইত্যাদি।

তিন
লক্ষণ বা কারণ যা-ই হোক, আগেভাগে তা শনাক্ত করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। তাতে ভবিষ্যতে ঝামেলা বাড়ার ঝুঁকি কমে। যদি বিয়ের সবকিছু পাকা হয়ে যাওয়ার পরও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তালগোল পাকাতে থাকে, তাহলে একটু সময় নিয়ে ভাবা ভালো। ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব না হলে কাছের কারও কাছে তা প্রকাশ করা উত্তম। নিশ্চয় কোনো সমাধান বেরিয়ে আসবে। দোটানা কাজ করলে সম্পর্ক গড়ার আগেই ভেঙে দিতে হবে, ব্যাপারটি এমন নয়। সম্ভাব্য সমাধানের পথে হাঁটাই বরং বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। সম্ভাব্য জীবনসঙ্গী কিংবা কাছের কারও পরামর্শ নিতে ইতস্তত বোধ করলে রয়েছে আরও সমাধান। বিশেষজ্ঞরা যার শুরুতে অগ্রাধিকার দেন নিজের যত্ন নেওয়ার প্রতি। তা ছাড়া সব আয়োজনে আন্তরিকভাবে অংশগ্রহণ, মাইন্ডফুলনেসের চর্চা ইত্যাদিও কাজে দিতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হওয়া শ্রেয়।

চার
প্রচলিত আছে, মাথাব্যথা করলে মাথা কেটে ফেলা বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নয়। বিয়েসংক্রান্ত ইতস্ততার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। শুরুর আগেই যবনিকা নয়; বরং দোটানা কাটানোই লক্ষ্য হওয়া উচিত। কেননা, সামাজিক প্রাণী হিসেবে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনের জন্য বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিরল ব্যতিক্রম বাদে, পরিণত বয়সের পর একাকী জীবন সাধারণত দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। বাকি সবকিছুর মতো বিয়ে তথা দাম্পত্যজীবনও অনেক ক্ষেত্রে শাঁখের করাত! তবু এর ইতিবাচক দিকের পাল্লাই সম্ভবত বেশি ভারী। কিন্তু এমন সম্পর্ক কোনো ধরনের দোটানার মধ্য দিয়ে শুরু করা মঙ্গল নয়।

পাঁচ
‘বিয়ে শেষ পর্যন্ত আবেগপ্রবণ বন্ধুত্ব সূচনার অভ্যাস’ বলেছেন আমেরিকান লেখক হারভিল হেনড্রিক্স। চোখের সামনে হয়তো বিভিন্ন দাম্পত্যসম্পর্কের নেতিবাচক উদাহরণের অন্ত নেই; তাই বলে বিয়ে তথা হবু জীবনসঙ্গীকে স্রেফ দ্বিধায় ভর দিয়ে সেই নিক্তিতে তুলে দেওয়া অনুচিত। আবার, অন্তরে বিচরণরত দ্বিধাকে অন্তস্তলে চাপা দিয়ে নতুন জীবনের সূচনা ঘটানোও শুভকর নয়। তাই বিয়ের আগে কাটিয়ে ওঠা চাই সকল দ্বিধা।

জীবন সুন্দর হোক সকল নবযুগলের। শুভকামনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top