skip to Main Content

মনোজাল I সৌন্দর্যে সুখ-সংযোগ

বলা হয়ে থাকে, যে কনে সবচেয়ে সুখী, বিয়ের আসরে তাকেই বেশি রূপসী লাগে। এর নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ হেতু

রং, বর্ণ, দেশ; যা-ই হোক না কেন, বিয়ের কনেকে স্বভাবতই বেশ সুশ্রী লাগে। তা শুধু সাজপোশাক কিংবা নিখুঁত মেকআপের জন্য নয়; বরং নেপথ্যে রয়েছে আরও বেশি কিছু। এদিন অন্য রকম এক আলো তাকে ঘিরে ধরে। কিন্তু তা কি সব কনের ক্ষেত্রে? নিশ্চয়ই নয়। বিউটি এক্সপার্ট, মেকআপ আর্টিস্ট, ডিজাইনার ওয়্যার বা হেয়ারস্টাইলিস্টদের সাহায্যে তৈরি সাজ তো শুধু বাইরের আবরণ। যদি ভেতরে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বা ক্লান্তি চাপা থাকে, তাহলে সবচেয়ে নিখুঁত মেকআপও একজন কনের মুখের আঁধার ঢাকতে পারে না। যখন তার মুখে সত্যিকারের হাসি ফুটে ওঠে, চোখে খুশির ঝিলিক ছড়ায়, তখনই সৌন্দর্য সবার কাছে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয়।
আমাদের সমাজে বিয়ের আয়োজন মানেই রং, আতিথেয়তা আর কনের সাজসজ্জা নিয়ে অফুরান আলোচনা। কনে সেখানে চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। লাল শাড়ি, গয়নার ঝলক, চোখের কাজল কিংবা চুলের খোঁপায় গোঁজা টাটকা ফুল—সব মিলিয়ে সৌন্দর্যের বর্ণচ্ছটায় পূর্ণতা। তবে কনের এই অন্য রকম সৌন্দর্যের মূল উৎস তার অন্তস্তলের আনন্দ। ভালোবাসা পাবার, প্রতীক্ষা অবসানের কিংবা নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবার সেই আনন্দে সাবলীলভাবে তিনি হয়ে ওঠেন সুন্দরীতমা। পাশাপাশি তার অনন্য সাজপোশাক তো থাকেই। জানেন তো, ফ্যাশন মানে শুধু বাহ্যিক রূপ নয়; বরং নিজেকে নিয়ে ভালো লাগার একধরনের অভিব্যক্তি। একজন কনে যখন বিয়ের পোশাকের ফ্যাব্রিক বা রং বাছাই করেন, সেটি পোশাকের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না থেকে তার ব্যক্তিত্বেরও প্রতিফলন ঘটায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যে কনে নিজের পোশাক ও সাজে যত বেশি আত্মবিশ্বাসী, তাকে তত বেশি উজ্জ্বল আর আকর্ষণীয় দেখায়। মনের আনন্দ তার বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। মেকআপ, গয়না বা উজ্জ্বল পোশাকের তুলনায় এই সুখবোধই কাজ করে মূল নিয়ামক হিসেবে। কিন্তু এমনটা সবার ক্ষেত্রে ঘটে না কেন?
মনস্তত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজেকে গুরুত্ব দেওয়া কিংবা ভালোবাসা আমাদের মনে সুখ ও সৌন্দর্যের ভিত্তি তৈরি করে দেয়। নিজেকে ভালোবাসতে না পারলে মনে একধরনের নেতিবাচক আবেগের সংক্রমণ ঘটে, যা সৌন্দর্যের বিচ্ছুরণ ঘটানোর পথে তৈরি করে প্রতিবন্ধকতা।
সুন্দর হওয়ার বিষয়টি দুটি বড় ধারণার ওপর নির্ভরশীল। প্রথমত, পরিবার এবং চারপাশের মানুষকে ভালোবাসা, বিশ্বাস ও ক্ষমা করার চর্চা এবং দ্বিতীয়ত, নিজেকে নিজের রূপেই সম্পূর্ণভাবে ভালোবাসার প্রয়াসের ওপর। অন্যদিকে, ত্বকযত্নের একটি নীতিবাক্য হলো, প্রথমে নিজের বিশ্বাস করা চাই, ‘আমি সুন্দর’। মানসিক অবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখাকে অগ্রাধিকার দিতে পারলে সন্তুষ্টি অনুভব করা যায়। তারপর সেই সন্তুষ্টি বা তৃপ্তি প্রসারিত হবে সুখে, যা কনেকে উজ্জ্বল করে তুলবে। প্রচলিত আছে, মনের সুখ হলো সেই হাতের মতো, যেটি বাহ্যিক সৌন্দর্যের হাতল ধরে।
অনেকে অল্প বয়সে নিজের সম্পর্কে সীমিত বিশ্বাস গড়ে তুলতে শুরু করেন। এটি আদতে সমস্যা বা ভুল নয়। অনেক সময় চারপাশ এমনটাই ভাবতে শেখায়। নিজের প্রতি সন্তুষ্টি বা বিশ্বাসের অভাব নিয়ে যে জীবনযাপন, তা জীবনকে একরকম ভারসাম্যহীন করে তোলে। অথচ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য আবেগগত ভারসাম্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে নিজের অপূর্ণতাগুলোকে আলিঙ্গন করা জরুরি। ত্রুটিগুলোর ওপর মনোযোগ দেওয়ার বদলে সেগুলো গ্রহণ করা এবং ভালোবাসতে শেখা আবশ্যক। সামাজিক মানদণ্ড ও প্রত্যাশাকে অতিক্রম করে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে পারলে তা মনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শক্তি হিসেবে কাজ করে। কীভাবে? সুখ ও সৌন্দর্য আসে মানসিক চাপের প্রতি স্থিতিস্থাপক প্রতিক্রিয়া থেকে। খুশি থাকলে শরীর এন্ডোরফিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যা আমাদের ভালো বোধ করায়। তখন চারপাশে যা-ই ঘটুক, তাতে মনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে না। এর আরেকটি সহাবস্থান আছে। কেউ যখন খুশি থাকেন, নিজের যত্ন নেওয়াও তার কাছে সহজ হয়ে ওঠে। স্বাভাবিকভাবে সুন্দরতা প্রকাশ হয়। চারপাশের লোকজন সিগ্ধ সৌন্দর্যে হয় মুগ্ধ। পরিবর্তনের আভাস লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। কারণ, তখন ত্বক এমন এক উজ্জ্বলতা বিকিরণ করে, যা কোনো মেকআপ বা ত্বকযত্নের পণ্য দিয়েও সাধন করা সম্ভব নয়।
বিয়ের কনের বেলায়ও একই ব্যাপার প্রযোজ্য। হয়তো তা একটু বাড়তি মাত্রাতেই। বিয়ের মতো সামাজিক চাপপূর্ণ সময়ে যেসব কনে মনের অস্থিরতা দমাতে পারেন না কিংবা আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগেন, তারা হারাতে পারেন স্বাভাবিক সৌন্দর্য। মানসিক যত্ন নেওয়া তাই জরুরি। কনে যদি অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হন, তাহলে ঘনিষ্ঠ কারও সঙ্গে কথা বলা কিংবা প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। একটি শান্ত ও সুখী মনই সত্যিকার অর্থে সৌন্দর্যের ভিত্তি তৈরি করে দেয়। শাড়ি-গয়নার ভিড় এড়িয়ে ভালো থাকাও প্রয়োজন। কারণ, একজন সুখী কনে কেবল নিজের জন্যই নয়; চারপাশের জন্যও আনন্দের উৎস। তার হাসি, উচ্ছ্বাস ও আত্মবিশ্বাস বিয়ের পুরো অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলে। যখন নিজের মনের ভেতর থেকে আলো ছড়ান, তখনই তিনি হয়ে ওঠেন সবচেয়ে সুন্দর। যারা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য বার্তা হলো, মেকআপ, শাড়ি, গয়না—এসব নির্বাচনের আগে নিজেকে ভালোবাসতে শুরু করাও কম জরুরি নয়। কারণ, হ্যাপি ব্রাইডই হতে পারে প্রিটি ব্রাইড।

 রত্না রহিমা
মডেল: নিকি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top