skip to Main Content

ফরহিম I দ্য চার্মি প্রিন্স

বিয়ের দিনটি নানা উদ্দীপনা ও ব্যস্ততার চাপে অনেক বরের জন্যই ভীষণ ক্লান্তিকর হয়ে উঠতে পারে। তা থেকে পরিত্রাণ পেতে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচর্যার এই পণ্যসম্ভার

বর-কনে—উভয়ের জন্য বিয়ের দিনটি আসে নানা স্বপ্ন ও পরিকল্পনা সঙ্গী করে। বহুদিন ধরে চলতে থাকা প্রস্তুতির পর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বর সাধারণত বিয়ের আংটি এবং নিজের স্যুট বা পোশাকের মতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো নিয়ে ভেন্যুতে পৌঁছান। কিন্তু এত পরিকল্পনার পরেও ছোটখাটো কিছু বিষয় দৃষ্টির বাইরে থেকে যায়, যা বিয়ের দিনের আনন্দকে কিছুটা হলেও ম্লান করতে পারে; বিশেষ করে অপ্রত্যাশিত কোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বরের কিছু পূর্বপ্রস্তুতি থাকা আবশ্যক। সেই প্রস্তুতির অন্যতম অংশ হতে পারে একটি সার্ভাইভাল কিট।
বিয়ের সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকে নানা মানসিক চাপ ও উত্তেজনা কাজ করা স্বাভাবিক। এর মধ্যে মাথাব্যথার মতো ছোটখাটো শারীরিক অসুস্থতাও দেখা দিতে পারে। শুধু বর নয়; তার সঙ্গে থাকা বন্ধু বা বরযাত্রীদেরও থাকতে পারে নানা প্রয়োজন। তাই আগে থেকে একটি ব্যাগে কিছু জরুরি জিনিস গুছিয়ে রাখলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সহজে সামাল দেওয়া সম্ভব। এই কিট বরের আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও সাহায্য করে।
আত্মবিশ্বাস
বিয়ের দিন বরকে দেখতে যাতে নিখুঁত লাগে, সে জন্য পোশাক ও সাজসজ্জার দিকে বিশেষ নজর রাখা দরকার। এ-সম্পর্কিত কিছু জরুরি জিনিস হাতের কাছে থাকলে সুবিধা হয়। বিয়ের দিন স্যুট বা শেরওয়ানিতে লেগে থাকা ধুলা বা সুতার কণা পরিষ্কার করার জন্য লিন্ট রোলার খুব কার্যকর, যা পোশাক নিমেষে পরিপাটি করে তোলে। জুতা চকচকে রাখার জন্য শু শাইন তোয়ালে রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকায় পায়ে অস্বস্তি হতে পারে; তাই অতিরিক্ত এক জোড়া আরামদায়ক মোজা সঙ্গে রাখা ভালো। সাজসজ্জা নিখুঁত রাখতে চিরুনি, হেয়ার জেল বা স্প্রে, ডিওডোরেন্ট, টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, মাউথওয়াশ ও লিপ বামের মতো জিনিসগুলো ব্যাগে থাকা জরুরি। অনুষ্ঠানের আগে নিজেকে সতেজ করে নিতে এগুলো কাজে দেবে। ছবি তোলার আগে মুখ থেকে অতিরিক্ত তেল মুছে ফেলার জন্য অয়েল ব্লটিং শিটও রাখা যেতে পারে। অনেক সময় শেরওয়ানির বোতাম ছিঁড়ে যায় কিংবা স্যুটের কোনো জায়গায় সামান্য সেলাইয়ের প্রয়োজন হতে পারে। একটি ছোট সেলাই কিট এ ধরনের সমস্যায় দারুণ কাজে দেয়। সঙ্গে কয়েকটি সেফটি পিন রাখাও বুদ্ধিমানের কাজ। গরমকালে বিয়ে হলে ঘামের কারণে কাপড় নষ্ট হতে পারে; তাই একটি পোর্টেবল ফ্যান ব্যাগে রাখলে যেকোনো সময় সেটির বাতাসে ঘাম শুকানো বরকে দিতে পারে প্রশান্তি।
স্বস্তি
বিয়ের দিনের উদ্দীপনা এবং দীর্ঘস্থায়ী আনুষ্ঠানিকতার কারণে শারীরিক অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। তাই স্বাস্থ্য ও আরাম নিশ্চিতে কিছু জিনিস হাতের কাছে থাকা চাই। একটি প্রাথমিক চিকিৎসার কিট গুছিয়ে নেওয়া জরুরি। ছোটখাটো কাটাছেঁড়ার জন্য কয়েকটি ব্যান্ড-এইড, অ্যান্টাসিড ও ব্যথানাশক ওষুধ (যেমন প্যারাসিটামল) ওই কিটে থাকা চাই। অনেকের অ্যালার্জির সমস্যা থাকতে পারে; তাই যথোপযুক্ত ওষুধ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ অনুযায়ী রাখাও বুদ্ধিমানের কাজ। সারা দিনের ব্যস্ততায় শরীর সতেজ রাখা জরুরি; কেননা, ক্লান্তি পুরো দিনের আনন্দ নষ্ট করে দিতে পারে। তাই সঙ্গে পানির বোতল ও কিছু শুকনো খাবার বা স্ন্যাকস রাখা ভালো। এতে বর ও তার সঙ্গীরা ক্লান্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকবেন। দিনের বেলায় বা আউটডোর অনুষ্ঠান হলে ত্বক সুরক্ষিত রাখতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উত্তম। একইভাবে, সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে মশা তাড়ানোর স্প্রে কাজে আসতে পারে।
টিপস অ্যান্ড ট্রিকস
বিয়েতে অনেক ধরনের ব্যবস্থাপনার বিষয় থাকে। প্রযুক্তিগত সমস্যা বা অন্য কোনো কারণে পরিকল্পনা যাতে ভেস্তে না যায়, সে জন্য কিছু প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। পরিবার, বরযাত্রী এবং বিয়ের বিভিন্ন ভেন্ডরের ফোন নম্বর একটি কাগজে লিখে রাখা ভালো। ফোন হারিয়ে কিংবা ব্যাটারি ফুরিয়ে গেলে এই তালিকা কাজে দেবে। ফোনের চার্জার বা পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা আজকের দিনে আবশ্যক একটি কাজ। কারণ, অতিথিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বা ছবি তোলার জন্য ফোন সক্রিয় থাকার প্রয়োজন পড়বেই। অনুষ্ঠানের সময়সূচি ও ভেন্যুতে পৌঁছানোর দিকনির্দেশনার কাগজের একটি করে কপি সঙ্গে রাখা ভালো। মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট সংযোগের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করাই শ্রেয়। নিজের পরিচয়পত্র, ম্যারেজ লাইসেন্স বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ একটি ফাইলে গুছিয়ে রাখলে মানসিক শান্তি বজায় থাকে। বিভিন্ন ছোটখাটো প্রয়োজনে, যেমন ভেন্ডরদের বকশিশ দেওয়ার জন্য, সঙ্গে কিছু নগদ অর্থ রাখলে সুবিধা হয়।
মানসিক প্রস্তুতি
একটি সার্ভাইভাল কিট কেবল বস্তুগত পণ্যের সমষ্টি নয়, এটি মানসিক প্রস্তুতিরও অংশ। কিছু বিষয় মাথায় রাখলে বরের জন্য বিয়ের দিনটি আরও সহজ হয়ে ওঠে। দিনটি ভালোভাবে শুরু করার জন্য সকালে স্বাস্থ্যকর ও ভারী নাশতা খাওয়া জরুরি। অনুষ্ঠানের আগে মা-বাবা এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো যেতে পারে, যা মানসিক চাপ কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে। আংটি নিরাপদে রাখার দায়িত্ব বেস্ট ম্যান বা কোনো বিশ্বস্ত বন্ধুকে দেওয়া যেতে পারে। একইভাবে, ভেন্ডরদের টাকা দেওয়ার কাজ বা অন্যান্য ছোটখাটো ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও ভাগ করে দিলে বরের ওপর থেকে চাপ অনেকটা কমে যায়।
বর ও বারাত
এই প্রস্তুতি শুধু বরের একার জন্য নয়; বরং তার সঙ্গী বরযাত্রী বা বন্ধুদের জন্যও প্রযোজ্য। প্রায়শই দেখা যায়, বরের বন্ধুরা কোনো না কোনো ছোটখাটো জিনিস ভুলে যান; যেমন কাফলিঙ্কস, টাই পিন কিংবা ফোনের চার্জার। বরের সার্বিক প্রস্তুতি এই ছোটখাটো ঘাটতিগুলো সহজে পূরণ করতে পারে। একটি অতিরিক্ত টাই বা এক জোড়া মোজা, কয়েকটি বাড়তি সেফটি পিন কিংবা ব্যথানাশক ওষুধ শুধু বরের কাজে লাগে না; তার বন্ধুদেরও প্রয়োজনে আসতে পারে। এ ধরনের প্রস্তুতি বরকে দলের একজন নির্ভরযোগ্য নেতা হিসেবে উপস্থাপন করে এবং বন্ধুদের সঙ্গে তার বন্ধন আরও দৃঢ় করে তোলে।

 স্বর্ণা রায়
মডেল: নাহিদ খান
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top