skip to Main Content

ফিচার I টাইমলেস ফ্যাশন

পুত্রবধূ কিংবা জামাতা—যে-ই আসুক পরিবারে, তার সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক পরিচয় অবশ্যই বিশেষ। এমন দিনের পোশাক তাই গুরুত্বপূর্ণ। শ্বশুর, শাশুড়ি আর বাবা, মা—চারজনেই পরিপাটি, তবেই পরিপূর্ণতা। এক শতে এক শ

বাবা-মা হওয়ার পরে হাজার রকম স্বপ্ন থাকে সন্তানকে ঘিরে। এগুলোর মধ্যে বিয়েও একটি। ছোট ছোট হাতে জড়িয়ে ধরে যে সন্তান, সে-ই একদিন বড় হয়। তার হাত বুঝিয়ে দেওয়া হয় অন্যের হাতে। শুরু করে নতুন জীবন। দিনটি প্রত্যেক বাবা-মায়ের জন্যই বিশেষ। সেদিনে তাই তাদের জন্যও দরকার ওয়ারড্রোব প্ল্যান। আঞ্চলিক ঐতিহ্য, ধর্ম অনুযায়ী পোশাকের ভিন্নতা থাকলেও জীবনের এই বিশেষ দিনে স্নিগ্ধতাই কাম্য।
এখনকার মায়েরা বেশ আধুনিক। সন্তানের বিয়েতে তারা নিরীক্ষা করেন সাহসী রূপে। আবার কখনো কখনো চিরায়তেও হয়ে ওঠেন অপরূপা। বাবাও পিছিয়ে নেই। ঐকতানে তাদের উপস্থিতি উদার।
মায়ের জন্য
মা থেকে শাশুড়ি হয়ে ওঠার এই দিনের পোশাক হতে পারে শাড়ি, লেহেঙ্গা, আনারকলি স্যুট। চাইলে শারারাও হতে পারে। তবে যা-ই হোক, যেন পছন্দমতো হয়। তাতে মায়ের আত্মবিশ্বাস থাকবে শতভাগ। আনন্দও থাকবে মনজুড়ে।
শাড়ি
সর্বদাই ক্ল্যাসিক ও জনপ্রিয়। জামদানি, মিরপুর কাতান, রাজশাহী সিল্ক—যেকোনো একটি বেছে নেওয়া যেতে পারে। আবার কেউ কেউ নিজের বিয়ের শাড়ি পরে স্মৃতিমধুরতার সঙ্গে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে চাইলে, সেটাও সম্ভব। সাদামাটা রং বেছে নিতে হবে, এমন কিন্তু মোটেই না। শুধু কনের শাড়ির রংটি সচেতনভাবে এড়িয়ে গেলেই, ব্যস! অবশ্য এ কথা শুধু মায়ের নয়, সবার জন্যই প্রযোজ্য। শাড়ির সঙ্গে সোনার বা রুপার গয়না, সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারি এবং আরামদায়ক, স্টাইলিশ জুতা সাজ সম্পূর্ণ করে।
লেহেঙ্গা
নব্বইয়ের দশক থেকে এটি দেশের বিয়েতে যোগ হয়েছে। একদম নতুন মোটেই নয়। ইচ্ছা হলে আদিকালের এই পোশাকও বেছে নেওয়া যেতে পারে। লম্বা, ফ্লেয়ার্ড স্কার্ট; সঙ্গে মেলানো ব্লাউজ অথবা টপ। এর সঙ্গে কায়দা করে দোপাট্টার বাহার। বিয়ে আর রিসেপশনে ফরমাল লুক চাইলে হলুদ অথবা মেহেদি সন্ধ্যায় এমন পোশাক থাকতেই পারে। মাস্টারড ইয়েলো, অলিভ গ্রিন থেকে ফুশিয়া কিংবা বার্নট অরেঞ্জ—সবই সই।
আনারকলি স্যুট
ফ্লোর-লেন্থ ফ্রক-স্টাইল কুর্তা; সঙ্গে স্লিম-ফিট প্যান্ট এবং দোপাট্টা। আনারকলির শৈলী গ্রেসফুল ও ঐতিহ্যবাহী। তাই সব অনুষ্ঠানে মানাবে। সংগীত ও মেহেদিতে এটি আরামদায়ক ও স্টাইলিশ লুক তৈরি করবে।
সালোয়ার স্যুট, ঘারারা কিংবা শারারা
পাকা দেখা, আংটি বিনিময় কিংবা পানচিনির দিনে সালোয়ার স্যুট পরা যেতে পারে। সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারি বা মিরর ওয়ার্ক দিয়ে একে উজ্জ্বল করে তুললে বেশ আনুষ্ঠানিক পোশাক হবে। সংগীতের মতো আনুষ্ঠানিকতায় ঘারারা বা শারারার এলিগ্যান্ট ফ্লোয়িং প্যান্ট, ভারী এমব্রয়ডারি এবং হাঁটুর নিচে ফ্লেয়ার থাকলে, সব মিলিয়ে এটি হতে পারে গ্ল্যামারাস অপশন।
বাবার জন্য
শেরওয়ানি
শুধু বরের পোশাকই শেরওয়ানি হতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। বাবার জন্যও বেছে নেওয়া যেতে পারে এই পোশাক। কুর্তা ও চুড়িদার ট্রাউজারের ওপর লেয়ার করে নেওয়া সম্ভব। ক্ল্যাসিক লুক তৈরি হবে। মাখন রঙা, ধূসর, নেভি ব্লু অথবা ছাই—খুশিমতো যেকোনোটি বেছে নেওয়া যেতে পারে।
কুর্তা-পাজামা + জ্যাকেট
আধুনিক ও স্টাইলিশ পছন্দ। মেহেদি থেকে বিয়ের মূল অনুষ্ঠান পর্যন্ত সব পর্বে ব্যবহার উপযোগী। কুর্তা আর জ্যাকেটের কালার কম্বিনেশন করা যেতে পারে।
স্যুট
ফরমাল, ক্লোজ-কলার জ্যাকেট বনেদি লুক এনে দিতে সক্ষম। রিসেপশন অনুষ্ঠানে বাবা টেইলরড স্যুট পরতে পারেন। ফ্যাব্রিক বাছাইয়ে সচেতনতা জরুরি। ফাইন কোয়ালিটিতে লাগবে দুর্দান্ত।
বাছাই কৌশল
বাবা-মায়ের পোশাকের রং ও স্টাইল নির্বাচন করতে দম্পতি এবং পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করলে ভালো। তাতে পুরো অনুষ্ঠানে রঙের সংগতি বজায় রাখা যাবে। সন্তানের বিয়ে মানে হাজার রকম দায়িত্ব। এসবের মাঝে নিজের জন্য শপিংয়ের ভাবনা খানিকটা মুশকিল মনে হতে পারে। সে জন্য সহজ কিছু কৌশলে সিদ্ধান্ত নিলে আনন্দঘন আবহে ওয়্যারড্রোব প্ল্যানিং সম্ভবপর।
বিয়েতে শুরু থেকে শেষ—নানা রকম পর্ব থাকে। একাধিক আয়োজনের জন্য তাই ভিন্ন ভিন্ন রং বেছে নেওয়া যেতে পারে। এ জন্য পরিবারের সবাই মিলে অনুষ্ঠান কবে, কোথায়, কখন; তা নিয়ে পরিকল্পনা করে নিতে পারেন। সে অনুযায়ী পোশাক সংগ্রহ কিছুটা সহজ হতে পারে। একইভাবে অনুষঙ্গ নিয়েও পরিকল্পনা রাখা সম্ভব। মা নেকলেস, ইয়াররিং, চুড়ি, আরামদায়ক জুতা এবং রিস্ট ওয়াচ দিয়ে সাজ সম্পূর্ণ করতে পারেন। বাবা পকেট স্কয়ার, পাগড়ি, ঘড়ি, টাই—এসব নিয়েই তৈরি হন; তাই ওয়্যারড্রোব প্ল্যানিং বিস্তারিত হওয়া জরুরি। কোথা থেকে কী কিনবেন, তা ঠিক করে নেওয়ার পাশাপাশি গুছিয়েও রাখতে পারেন আয়োজনের পর্ব অনুযায়ী আলাদা করে।
বিয়ের দিনে বাবা-মায়ের পোশাক কেমন হতে পারে, তা নিয়ে পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন সন্তান। বর্তমান সময়ের চাহিদা আর বাবা-মায়ের স্টাইল মিলিয়ে তাদের জন্য পোশাক পরিকল্পনা করতে পারেন। তাতে পারিবারিক আনন্দের মুহূর্ত যেমন তৈরি হবে, তেমনি আজন্ম লালন করার মতো স্মৃতিও হয়ে থাকবে। একই রঙের নানা শেড বেছে নিতে পারে পুরো পরিবার। আবার চাইলে দুই বেয়াই এবং দুই বেয়াইন মিলিয়ে পরতে পারেন। এমন হলে প্রকাশ পাবে পারিবারিক ভালোবাসা। অতিরঞ্জন অত্যাবশ্যক তো নয়ই; বরং পরিপাটিতেই লাগবে দারুণ।
আবেগের ঘনঘটা এদিন মন ছুঁয়ে থাকে। তাই সবই হোক সহজ আর স্বাচ্ছন্দ্যময়। তাতেই প্রশান্ত হবে হৃদয়। পোশাকে সাজে অসাধারণ হয়ে হাসি থাকুক বাবা-মায়ের মুখে। আনন্দে আর্দ্র হোক চোখ।

 ফ্যাশন ডেস্ক
মডেল: নুসরাত আনোয়ার ও নুমের ইনাম
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: সাফিয়া সাথী
জুয়েলারি: ড্যাজেল বাই সোনিয়া
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top