skip to Main Content

দেহযতন I লেগ ওয়ার্কআউট

চলাফেরার সময় শরীরের পুরো ভার পড়ে পায়ের ওপর। দেহের ভারসাম্য, স্থিতিশীলতা ও শক্তির মূল উৎস হিসেবেও কাজ করে এই অঙ্গ। দেহচর্চায় একে দেওয়া চাই গুরুত্ব

অনেকে ওয়ার্কআউটে শরীরের ঊর্ধ্বাংশের ওপর বেশি গুরুত্ব দিলেও নিম্নাাংশের ব্যায়াম উপেক্ষা করা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। লেগ ওয়ার্কআউটের মাধ্যমে কোয়াডস, হ্যামস্ট্রিংস, গ্লুটস ও ক্যাল্ভস পেশি শক্তিশালী হয়। ফলে শরীর আরও কর্মক্ষম ও ফিট থাকে। নিয়মিত লেগ ওয়ার্কআউট হাড় মজবুত করে, জয়েন্টের স্থিতিশীলতা বাড়ায় এবং ইনজুরির ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া এটি শরীরে টেস্টোস্টেরন ও হরমোন বাড়ায়, যা সামগ্রিক পেশি গঠনে সহায়তা করে।
যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য লেগ ওয়ার্কআউট অত্যন্ত কার্যকর। কারণ, এটি অনেক ক্যালরি পোড়ায়। সবশেষে, একটি পরিপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ শরীর গঠনের জন্য এই দেহচর্চা অপরিহার্য। তাই সুস্থ ও শক্তিশালী জীবনযাপনের জন্য লেগ এক্সারসাইজ নিয়মিত রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা ভালো।
লেগ ওয়ার্কআউটের আছে নানা ধরন। সেগুলোর মধ্যে কিছু ব্যায়ামের চর্চা বিগিনার থেকে শুরু করে প্রফেশনাল ফিটনেস অনুরাগী পর্যন্ত সবাই করতে পারেন।
লেগ কার্ল
এই এক্সারসাইজ মূলত পায়ের পেছনের অংশের পেশি, বিশেষ করে হ্যামস্ট্রিংস গঠনে সহায়ক। জিমে খুব পরিচিত ব্যায়াম এটি। অনেক ফিটনেস রুটিনেই অন্তর্ভুক্ত থাকে। এর মাধ্যমে পেশি দৃঢ় হয়, হাঁটুর কার্যকারিতা বাড়ে এবং আঘাতের ঝুঁকি কমে। সিটেড লেগ কার্ল ও লাইং লেগ কার্ল—দুভাবে এর চর্চা করা যায়। প্রথমটিতে চর্চাকারী বসে মেশিনে পা রাখেন এবং পা ভাঁজ করে নিচের দিকে টানেন। এটি হ্যামস্ট্রিংসের পাশাপাশি গ্লুটসেও চাপ ফেলে। অন্যদিকে, লাইং লেগ কার্লে শুয়ে থেকে একইভাবে পা নিচের দিকে ভাঁজ করতে হয়, যা হ্যামস্ট্রিংসকে আরও গভীরভাবে টার্গেট করে। এ ছাড়া আজকাল স্ট্যান্ডিং লেগ কার্ল মেশিনও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যেটি এক পা করে ব্যায়ামে সহায়তা করে। এই ব্যায়ামের নিয়মিত চর্চা কেবল হ্যামস্ট্রিংস নয়; পুরো পায়ের পেশি উন্নয়নে সহায়ক। যারা দৌড়বিদ, সাইক্লিস্ট বা ফুটবল খেলোয়াড়, তাদের জন্য এই দেহচর্চা ভীষণ উপকারী। হ্যামস্ট্রিংস দুর্বল হলে পায়ের গতি, ভারসাম্য ও ফোর্স কমে যায়। তাই লেগ কার্ল পেশি দৃঢ় করে খেলাধুলা ও দৈনন্দিন জীবনে কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফিটনেস কোচ জেফ ক্যাভালিয়ের বলেন, ‘যদি আপনি আপনার হ্যামস্ট্রিংকে অবহেলা করেন, তাহলে নিজেকে প্রকারান্তরে ভারসাম্যহীনতা ও আঘাতের জন্যই প্রস্তুত করছেন। পায়ের কোঁকড়ানো এই ব্যায়াম হাঁটুকে সুরক্ষা দেওয়া এবং পশ্চাদভাগের পশ্চার উন্নত করার জন্য সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত আইসোলেশন মুভগুলোর অন্যতম।’
অন্যদিকে ফিটনেস আইকন ও হলিউড তারকা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের ভাষ্য, ‘আপনি কেবল কোয়াডস প্রশিক্ষণ নিয়ে হ্যামস্ট্রিং ভুলে যেতে পারবেন না। এটি দেয়াল ছাড়াই একটি ঘর তৈরি করার মতো।’ তবে যেকোনো ব্যায়ামের মতোই লেগ কার্লের চর্চার সময় সঠিক ফর্ম বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ভুল ভঙ্গিতে অনুশীলন করলে হাঁটুর ওপর চাপ পড়তে পারে। তাই প্রশিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী শুরু করা শ্রেয়।
ডাম্বেল স্কোয়াট
এই কার্যকর ব্যায়াম পায়ের পেশি, গ্লুট (নিতম্বের পেশি), হ্যামস্ট্রিং ও কোয়াড্রিসেপস (ঊরুর সামনের অংশ) গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যায়ামটি সাধারণ স্কোয়াটের মতোই, তবে এতে অতিরিক্ত ওজন যোগ করতে ডাম্বেল ব্যবহার করা হয়। ফলে এটি শরীরের নিচের অংশের পেশিগুলোকে আরও শক্তিশালী ও টোনড করে তোলে। ডাম্বেল স্কোয়াটের চর্চার সময় দুহাত দিয়ে একটি ডাম্বল ধরে রাখা এবং শরীরকে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামিয়ে স্কোয়াট করা হয়। এই দেহচর্চা ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি মূল শক্তি এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের সমন্বিত কার্যক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত এর চর্চা করলে পায়ের পেশিগুলো শক্তিশালী হয় এবং হাঁটুর গাঁটে স্থিতিশীলতা আসে।
ডাম্বেল স্কোয়াটে ভারসাম্য ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা জরুরি। কারণ, ভুল ফর্মে এর চর্চা করলে পিঠ বা হাঁটুতে চাপ পড়তে পারে। কোর স্ট্যাবিলিটির উন্নতি এবং গ্লুটস ফার্ম ও টোনড করার পাশাপাশি ক্যালরি বার্ন করে ওজন কমাতে সাহায্য এবং স্পোর্টস পারফরম্যান্স উন্নত করতে ভূমিকা রাখে। সেলিব্রিটি ফিটনেস কোচ গানার পিটারসনের মতে, স্কোয়াট শুধু একটি ব্যায়াম নয়, এটি শক্তির প্রতি চর্চাকারীর অঙ্গীকারের পরীক্ষাও। তাই যারা শরীরের নিচের অংশ সুগঠিত করতে চান, তাদের জন্য ডাম্বেল স্কোয়াট একটি অপরিহার্য এক্সারসাইজ। নিয়মিত এর চর্চা করলে নিজেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
লেগ প্রেস
জনপ্রিয় এই জিম এক্সারসাইজ মূলত পায়ের পেশি, বিশেষ করে কোয়াডস, হ্যামস্ট্রিংস, গ্লুটস ও কাফ মাংসপেশি গঠনে সাহায্য করে। সাধারণত একটি লেগ প্রেস মেশিনে এর চর্চা করা হয়, যেখানে চর্চাকারী বসা অবস্থায় দুই পায়ে ভার উত্তোলন করেন। লেগ প্রেস চর্চাকালে শরীরের উপরিভাগ স্থির থাকে এবং শুধু পা দিয়ে ভার তোলা হয়; ফলে এটি পিঠ বা কোমরে অতিরিক্ত চাপ ফেলে না। তাই যারা স্কোয়াটে সমস্যায় পড়েন কিংবা কোমরের ব্যথায় ভোগেন, তাদের জন্য এই দেহচর্চা একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
ভারী ওজন নিয়ে নিয়মিত লেগ প্রেস করলে পায়ের পেশি ফুলে ওঠে, শক্তি ও আকার বাড়ে। জানা কথা, পা শক্তিশালী হলে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ হয়। তা ছাড়া এই এক্সারসাইজ শরীরের নিচের অংশের উন্নত রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সহায়ক, যা শরীরকে বিভিন্ন জটিলতা থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম। তবে ভুলভাবে এর চর্চা করলে হাঁটু ও কোমরে চাপ পড়তে পারে। তাই সঠিক ভঙ্গি ও ওজন নির্বাচন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
সাতবারের মিস্টার অলিম্পিয়াজয়ী আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার বলেন, ‘শক্তি শরীর থেকে আসে না; আসে ইচ্ছাশক্তি থেকে।’ এই উক্তি লেগ প্রেসের মতো এক্সারসাইজের জন্য খুবই প্রযোজ্য। কারণ, এটি শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি মানসিক দৃঢ়তারও পরীক্ষা। সঠিক নির্দেশনা ও ধারাবাহিক অনুশীলনের মাধ্যমে লেগ প্রেস হতে পারে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর দেহচর্চা, যা চর্চাকারীকে নিজ ফিটনেস টার্গেট অর্জনে সহায়তা করবে।
লেগ এক্সটেনশন
এটি একটি আইসোলেশন এক্সারসাইজ, যা মূলত কোয়াডস তথা ঊরুর সামনের পেশিগুলোর ওপর কাজ করে। এর চর্চা সাধারণত লেগ এক্সটেনশন মেশিনে বসে সম্পন্ন করা হয়, যেখানে চর্চাকারী হাঁটু থেকে পা সোজা করে তুলে আবার নিচে নামান। এই ব্যায়াম কোয়াডস পেশিকে নির্দিষ্টভাবে টার্গেট করে, ফলে পায়ের শক্তি ও আকার বাড়ে। অ্যাথলেট, বডিবিল্ডার ও ফিটনেস অনুশীলনকারীদের মধ্যে এই দেহচর্চা বেশ জনপ্রিয়। এটি হাঁটুসংযুক্ত পেশিগুলোর উন্নয়নে সাহায্য এবং পায়ের সামগ্রিক গঠন মজবুত করে। এ ছাড়া হাঁটুর চারপাশের পেশি উন্নয়নে ভূমিকা রাখে; তাই হাঁটুর স্থিতিশীলতা বাড়ে এবং ইনজুরির ঝুঁকি কমে। তবে অনুশীলনের সময় সঠিক ফর্ম ও নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি। অতিরিক্ত ওজন কিংবা ভুল ভঙ্গিতে লেগ এক্সটেনশন করলে হাঁটুর ওপর বাড়তি চাপ পড়ে, যা ইনজুরি ডেকে আনতে পারে। তাই ধীরে ধীরে ওজন বাড়ানো এবং পূর্ণ গতির বদলে নিয়ন্ত্রিত গতিতেই এই ব্যায়াম চর্চা করা মঙ্গল।
কানাডিয়ান পেশাদার বডিবিল্ডার এবং ২০০৮ সালের মিস্টার কানাডা প্রতিযোগিতার বিজয়ী ফিটনেস কোচ বেন পাকুলস্কি বলেন, ‘সঠিকভাবে চর্চা করা গেলে লেগ এক্সটেনশন হলো কোয়াডগুলোকে আলাদা করার অন্যতম সেরা উপায়। এর চর্চার সময় নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ এবং পেশি অনুভব করুন; তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে কখনো ফর্ম ত্যাগ করবেন না।’ তার এই উদ্ধৃতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শুধু ভারী ওজন তুললেই ব্যায়ামের উদ্দেশ্য পূরণ হয় না; বরং সঠিক ভঙ্গি ও মনোযোগসহকারে চর্চাই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। কোনো ফিটনেস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই লেগ এক্সটেনশনের চর্চা করা শ্রেয়।
ক্রিস হেমসওয়ার্থ ‘থর’ সিনেমায়, হিউ জ্যাকম্যান ‘উল্ভারিন’-এ, গাল গ্যাডট ‘ওয়ান্ডার ওম্যান’-এ, মাইকেল বি. জর্ডান ‘ক্রিড’-এ, হেনরি ক্যাভিল ‘সুপারম্যান’ ও ‘দ্য উইচার’-এ, জেনিফার লরেন্স ‘দ্য হাঙ্গার গেমস’-এ অভিনয়ের জন্য লেগ এক্সারসাইজে মনোনিবেশ করেছিলেন। কারণ, এসব ব্যায়াম স্ট্যামিনা, ফুটওয়ার্ক ও সামগ্রিক শক্তি অর্জনের এবং স্টান্ট সিনে অংশগ্রহণের জন্য সহায়ক। এসব ফ্যাক্ট লেগ এক্সারসাইজের মাহাত্ম্য প্রকাশের জন্য যথেষ্ট নয় কি!

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top