এই শহর এই সময় I সংস্কৃতির মেলবন্ধন
দেশের চারুশিল্পের একটি বড় আয়োজন দ্বিবার্ষিক এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের ১৮তম আসর শুরু হয় ১ সেপ্টেম্বর। শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে মাসব্যাপী দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক শিল্পকর্মের প্রদর্শনীতে থাকছে চিত্রকলা, ছাপচিত্র, ভাস্কর্য, আলোকচিত্র, স্থাপনা শিল্পসহ অন্যান্য মাধ্যম। আর চারুশিল্পের এ মহাযজ্ঞে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের শিল্পীরা। শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগে এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল-বিষয়ক সেল থেকে জানা যায়, এবারের আয়োজনে বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই, ভারত, কম্বোডিয়া, কানাডা, চিলি, চীন, কলম্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, মিসর, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, কুয়েত, লেবানন, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, নেপাল, মিয়ানমার, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, পেরু, পোল্যান্ড, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, সাইপ্রাস, ইংল্যান্ড, সিরিয়া ও ভুটান।
এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের এবারের আসরে দেশি-বিদেশি কিউরেটররা দেশ অথবা অঞ্চলভিত্তিক প্রদর্শনী কিউরেট করছেন। পাশাপাশি সেমিনার ও আলোচনার সংখ্যাও বেশি থাকছে এবার। এর মধ্যে ২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় সমসাময়িক চিত্রকর্মের ভাষা ও তার প্রকাশ নিয়ে আর্ট অ্যান্ড কনটেম্পরারি ন্যারেটিভস বিষয়ে সেমিনার। ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় চিত্রকলার শিক্ষা ও প্রসার নিয়ে আর্ট পেডাগোগি অ্যান্ড প্রমোশন শীর্ষক সেমিনার। অন্যবারের মতো এবারের বিয়েনালেও থাকছে পুরস্কারের ব্যবস্থা। মোট নয়টি পুরস্কার দেওয়া হবে। এর মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যমানের তিনটি গ্র্যান্ড প্রাইজ এবং তিন লাখ টাকা মূল্যমানের ছয়টি সম্মানসূচক পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের চিত্রকলাকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালে ১৪ দেশের অংশগ্রহণে যাত্রা শুরু হয় এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের। এবার দ্বিবার্ষিক এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের ১৮তম আসর। এশীয় ও এশীয় মহাসাগরীয় দেশের পাশাপাশি গেল আসরের মতো এবারও অংশ নিয়েছেন বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের দেশের প্রতিনিধিরা।
বনানীর যাত্রাবিরতিতে ৩০ আগস্ট আয়োজন করা হয় ওপেন মাইক ডে। যেখানে সমবেত হন একঝাঁক সৃজনশীল মানুষ। ওপেন মাইক বিশ্বব্যাপী সৃষ্টিশীল মানুষদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়। কারণ, শিল্পী ও শিল্পের স্বাধীন প্রকাশকে স্বাগত জানানো হয় এর মাধ্যমে। আর তাই যেকোনো মাধ্যমের শিল্পীরা এই প্ল্যাটফর্মে নিজেকে তুলে ধরতে বা প্রকাশ করতে পারেন। সঙ্গে উন্মুক্ততার আমেজ থাকায় শিল্প গ্রহণ করার মতন শ্রোতা ও দর্শকও তৈরি হয়। যাত্রাবিরতিও এ রকম এক চিন্তা থেকে ওপেন মাইক ডে উপলক্ষে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তাদের স্টুডিওতে। বাদ্যযন্ত্র, গান, কবিতা, ছোটগল্প কিংবা সৃষ্টিশীল যেকোনো উপস্থাপনাকেই স্থান দেওয়া হয় এই আয়োজনে। শহরের ব্যস্ত দিনে সান্ধ্যকালীন এক স্বস্তির খোঁজে অনেকেই হাজির হয়েছিলেন শিল্পের টানে। সব মিলিয়ে সেখানে এক প্রাণের বন্ধন তৈরি হয়। যেখানে ভুল করতে লজ্জা নেই, নিজেকে মেলে ধরতে সংকোচ নেই।
অন্যদিকে ২৬ জুলাই ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংগঠন’ আয়োজন করে ‘ইন্টার ইউনিভার্সিটি আনপ্লাগড সেশন ২০১৮’। যেখানে সংগীতের পসরায় মিলিত হয় একঝাঁক তরুণ প্রাণ। আয়োজনের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নর্থ সাউথ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম এবং বিশেষ অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. গিয়াস ইউ আহসান এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যবৃন্দ।
‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংগঠন’ বরাবরই বাংলার আবহমান সংস্কৃতি ও তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। তাই এবারের ‘ইন্টার ইউনিভার্সিটি আনপ্লাগড সেশন’ অনুষ্ঠানেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। পড়ন্ত বিকেলে সবাই যখন বর্ষা-যাপনে মত্ত, ঠিক তখনই সুরের ঝুলি নিয়ে উপস্থিত হন দেশের স্বনামধন্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক শিক্ষার্থী। প্রেমের গান, বৃষ্টির গান, তারুণ্যের গান, ভবের গান- সবই ছিল মঞ্চে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের ইস্ট ডেলটা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে আনপ্লাগড সেশন ছিল জমজমাট। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের বন্ধুবান্ধব ও অন্যান্য অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের ইস্ট ডেলটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেন লালনগীতি ‘এসব দেখি কানার হাটবাজার’। ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেন ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়’। এই সংগীতসন্ধ্যাকে আরও মোহনীয় করে তুলতে অংশগ্রহণ করে ‘ছায়াপথ’, ‘প্রজেক্ট নীল’ এবং অন্যান্য ব্যান্ড। সন্ধ্যার প্রথম ভাগেই ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংগঠন’-এর অনবদ্য পরিবেশনা উপস্থিত সবাইকে চমকে দেয়। এরপর একের পর এক মনভোলানো পরিবেশনা সবাইকে মুগ্ধ করতে থাকে। ক্রমেই এ মঞ্চ সংগীতপ্রেমীদের উচ্ছ্বাসের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে শুরু করে। আর সবাই যখন সুরের নেশায় আচ্ছন্ন, ঠিক তখনই উপস্থিত তরুণদের চাঙা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অতিথি ব্যান্ড ‘ডুব’। এরপর মঞ্চে আসে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী তপু। তিনি তার শিক্ষাজীবনের মজার গল্প আর স্মৃতিবিজড়িত অনুভূতিগুলো খুব সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেন। সন্ধ্যা আরেকটু গাঢ় হয়ে এলেই ব্যান্ড ‘মায়ানহর’ হাজির হয় লোকজ গান নিয়ে। অনুষ্ঠানে সব শেষে মঞ্চে আসে ব্যান্ড ‘বে অব বেঙ্গল’।
ছবি: সংগ্রহ