ইভেন্ট I বাংলা উৎসব
গানে গানে এক হয়ে গেল দুই বাংলা। দুই বাংলার সীমানা মুছে ‘বাংলা উৎসব’ এক করে দিলো বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গকে। কলকাতার নজরুল মঞ্চে গত ৪ থেকে ৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হলো বাংলা উৎসব। এর মূল আয়োজক ছিল বাংলাদেশের বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। সহযোগিতায় ছিল ঢাকা ব্যাংক, পশ্চিমবঙ্গের বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, বন্ধন ব্যাংক ও নাথিং বিয়ন্ড সিনেমা।
৪ জানুয়ারি সকালে কলকাতার নজরুল মঞ্চ-সংলগ্ন এলাকায় দুই বাংলার সংগীতশিল্পী ও বিশিষ্টজনদের নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই উৎসবের সূচনা হয়।
নজরুল মঞ্চে ‘বাংলা উৎসবের প্রথম দিন বাংলা সংগীতে অবদানের জন্য লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট স্বীকৃতি দিয়ে সম্মানিত করা হয় সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন ও আরতি মুখোপাধ্যায়কে। এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘যেকোনো প্রাপ্তি আনন্দের। আমি এই আনন্দটা দুই বাংলার মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।’ আরতি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এটা সত্যিই এক অসাধারণ ব্যাপার। আমাকে ভালোবেসে এই পুরস্কার দিয়েছে, এর থেকে বড় আনন্দের কিছু নেই। অনেক জায়গায় আমি পুরস্কার পেয়েছি, কিন্তু এটা আমার কাছে একটা বিশেষ উপহার।’
দুই বাংলা উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বাংলা গান সব সময় কথা বা বাণী বা লিরিক নির্ভর, সুরনির্ভর নয়। কয়েকটা কথায় যদি বাংলা গানের ইতিহাস বলতে হয়, তাহলে বলবো চর্যাপদ বা চর্যাগীতির মতো রাগ-রাগিণী আমরা সংরক্ষণ করতে পারিনি। মোটামুটি জয়দেবের গীতগোবিন্দ থেকে বাংলা গানের পথচলা শুরু। তবে ইতিহাস বলছে কীর্তন থেকেই বাংলা গানের শুরু। এরপর রামপ্রসাদের টপ্পা, পরে অতুলপ্রসাদ, রবীন্দ্র-নজরুলের মতো ব্যক্তিরা বাংলা গানের মধ্যে আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন। একত্র করেছেন পাশ্চাত্য সুর, গজল বা অন্য রাগ-রাগিণী। মোটামুটি অনেক পরে সলিল চৌধুরীর সময় থেকে সুরকার গীতিকার বিষয়টা আলাদা হয়েছে। আবার এখনকার প্রজন্মদের মধ্যে বাংলাব্যান্ড অনেকটা প্রভাবিত হচ্ছে।’
এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। এ ছাড়া সূচনাপর্বে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, বাংলাদেশের বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের, বন্ধন ব্যাংকের মহাপরিচালক চন্দ্রশেখর ঘোষ, চলচ্চিত্র পরিচালক অরিন্দম শীল প্রমুখ।
উৎসবের প্রথম দিন বাংলার ষড়ঋতুর রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন লোপামুদ্রা মিত্র। আধুনিক বাংলা গান পরিবেশন করেন শুভমিতা। রবীন্দ্রসংগীতের ডালি নিয়ে শ্রোতাদের আবিষ্ট করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। জীবনমুখী গানে শ্রোতাদের মন জয় করে নেন নচিকেতা চক্রবর্তী। সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার ও অনুপম রায়ের গানেও মুগ্ধ হন শ্রোতারা।
এ ছাড়া সংগীত পরিবেশন করেন ফাহমিদা নবী, শুভমিতা ও প্রবুদ্ধ কর।
দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৫ জানুয়ারি এই উৎসবে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন লাইসা আহমদ লিসা, জয়তী চক্রবর্তী, অদিতি মহসিন ও বুলবুল ইসলাম, পুরোনো দিনের বাংলা গান গেয়ে শোনান ইফফাত আরা দেওয়ান, নজরুলগীতি পরিবেশন করেন খায়রুল আনাম শাকিল ও ইন্দ্রানী সেন, লোকগানে শ্রোতাদের মন জয় করে নেন চন্দনা মজুমদার, বাউলগান পরিবেশন করেন গৌতম দাস বাউল। সবশেষে পারফর্ম করে বাংলাদেশের ব্যান্ড চিরকুট।
তৃতীয় দিন আধুনিক ও বাংলা চলচ্চিত্রের গান পরিবেশন করেন রূপঙ্কর, ইমন চক্রবর্তী, সামিনা চৌধুরী ও এন্ড্রু কিশোর। তালবাদ্য পরিবেশন করেন পন্ডিত বিক্রম ঘোষ, গোপাল বর্মন, মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ। বাংলা রাগপ্রধান গান পরিবেশন করেন পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী।
এই উৎসবে দুই বাংলার বেশ কিছু নতুন প্রতিভাকে সংগীত পরিবেশনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা হলেন কলকাতার আকাশ ভট্টাচার্য ও অঙ্কিতা বসু এবং ঢাকার মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য ও ডলি মন্ডল।
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
ছবি: অতনু সিংহ