এই শহর এই সময় I মঞ্চ ও গ্যালারি
পুরোনোকে বিদায় জানিয়ে রমনা বটতলায় সংগীত আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শহুরে বাঙালির বর্ষবরণ উদযাপিত হলো। চৈত্রসংক্রান্তি আর পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয়েছিল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে ‘রবিরাগ’-এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গত ১১ এপ্রিল রাজধানীর গণগ্রন্থাগারে শওকত ওসমান মিলনায়তনে রবীন্দ্রনাথের গান ও নৃত্যের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হয় চৈত্রকে। বৈশাখকে আমন্ত্রণ জানিয়ে শিল্পীরা সমবেত ও একক কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন। পাশাপাশি রবীন্দ্রগীতিতে ছিল নৃত্য পরিবেশনা। রবিরাগ সভাপতি আমিনা আহমেদ ও পরিচালক সাদি মহম্মদের নেতৃত্বে এটি উদযাপিত হয়। আরও কিছু সান্ধ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বৈশাখের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় সাংস্কৃতিক বাঙালি। আসে পয়লা বৈশাখের সকাল। স্বাগত জানানো হয় ১৪২৬ কে।
অন্যদিকে, পবিত্র রমজান মাস এসে গেল। উপলক্ষে চালু হয়ে যাওয়া হাটবাজারের থিম সামনে রেখে আঁলিয়স ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হলো প্রতিযোগিতামূলক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। ঢাকার চকবাজারের ইফতারের হাটের বেশ কিছু ফটোগ্রাফ ছিল এই প্রদর্শনীতে। ছিল ঈদুল আজহার আগের গরুর হাটের ছবি। মানুষের সমাগম, লেনদেন, কেনাবেচা ইত্যাদির আলোকচিত্রগুলো বাংলাদেশের প্রাণস্পন্দনকে তুলে ধরেছিল দারুণভাবে। এই প্রদর্শনী মূলত ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের কর্মচারীদেরই। আয়োজন তাঁদের ক্যামেরাই কথা বলেছে এই। প্রদর্শনী ও আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিল আঁলিয়স ফ্রঁসেজ দো ঢাকা।
ফেলে আসা এপ্রিলের একেবারে শেষে এই শহরের এই সময় আরও একবার ফিরে দেখল উপমহাদেশের সেই বিচ্ছেদপর্বকে। ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হলো ‘সময়’ প্রযোজিত ‘ভাগের মানুষ’ নাটকটি। এটি ছিল ১৮০তম মঞ্চ প্রদর্শনী। উর্দু কথাসাহিত্যিক সাদত হাসান মান্টোর ছোটগল্প ‘টোবাটেক সিং’কে বাংলায় নাট্যরূপ দিয়েছিলেন মান্নান হীরা। আলী যাকেরের নির্দেশনায় সেই নাট্যরূপ ৪ বছর বাদে আরও একবার মঞ্চস্থ হলো। সাতচল্লিশে ভাগ হয়ে যাওয়া পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানের মানসিক হাসপাতালগুলোর মধ্যে খবর পৌঁছায়, ‘পাগল’দের যার যার দেশে ফিরে যেতে হবে।
মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং ‘উন্মাদনা’য় আক্রান্ত মানুষের মধ্যেও সাম্প্রদায়িক বিভাজন টানা হয়। হিন্দু ও শিখ পাগল এবং মুসলমান পাগল— এই বিভাজনেও হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান কনসেপ্ট কার্যকর হয় ‘পাগল’দের মধ্যে। অথচ এসব মানুষের কাছে হিন্দুস্তান-পাকিস্তান শব্দগুলো অপরিচিত। এইসব রাষ্ট্রীয় কারসাজির বিরুদ্ধে ‘পাগল’রাও প্রতিবাদ জানায়। টোবাটেক সিং-এর এই আখ্যান আবার নতুন করে মঞ্চে দৃশ্যমান হলো। ইতিহাস কথা বলে উঠল।
এপ্রিলে এ শহরে নানা আয়োজনে যে কটি চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আঁলিয়স ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে ‘রূপময় বাংলা’ শিরোনামে শিল্পী সুমন কুমার সরকারের চতুর্থ একক জলরং চিত্র প্রদর্শনীটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জলরং দিয়ে আঁকা ৩০টি চিত্রকর্ম এতে প্রদর্শিত হচ্ছে। এই ছবিগুলোতে প্রকৃতির সরল সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়েছে। বরেন্দ্রের লালমাটির সন্তান সুমন কুমার সরকার চিরায়ত বাংলার দৃশ্যাবলি ও সৌন্দর্য জলরঙে সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছে রঙের ব্যবহারে, কম্পোজিশনে। এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের পেইন্টিং, ওরিয়েন্টাল আর্ট এবং প্রিন্টমেকিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সুশান্ত কুমার অধিকারী।
স্টাফ রিপোর্টার
ছবি: সংগ্রহ