ফোকাস I অনিন্দ্য বিলাসী আবাস
রোদ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্য পশু থেকে রক্ষা পেতে আদিম মানুষের প্রয়োজন ছিল গৃহ। ঘর বানানোর কৌশল আয়ত্ত না হওয়ায় সে সময় গুহাই হয়ে উঠেছিল মানুষের বাসস্থান। পরে এ কৌশল আয়ত্তে আসে। নিরাপত্তার ও নিজ গোত্রের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে ঘরগুলো পাশাপাশি যুক্ত হতে থাকে। তৈরি হয় অনুভূমিক সমাজের। ঘর থেকে যাতে বেশি দূরে যেতে না হয়, সে জন্য রান্নাঘর, শৌচাগার—সবই এলো কাছাকাছি। আরাম-আয়েশের তাগিদে ঘর ভরতে থাকল আসবাবে।
মাটির মেঝে বিবর্তিত হতে হতে সিমেন্টের মেঝে ও মোজাইক পার হয়ে এসে ঠেকল টাইলসের চাকচিক্যে। চার দেয়ালের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উপাদান আর সজ্জায়ও এলো পরিবর্তন। বাদ থাকল না ছাদও। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ সামাল দিতে একেকটি বাড়ি শুধু অনুভূমিক থাকল না; শুরু হলো আকাশের দিকে ওঠা। হলো উল্লম্ব সমাজের বীজপত্তন। এমনকি সমাজের উপাদানগুলোও আবর্তিত হতে লাগল একেকটি ইমারতকে ঘিরে। ঘর কিংবা বাড়ির চাহিদা মেটাতে নাগরিক জীবনে জায়গা করে নিলো অ্যাপার্টমেন্ট। সেখানে মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা অনুযায়ী যোগ হয় নানা উপাদান। আর এই উপাদানের বহুমাত্রিকতায় অ্যাপার্টমেন্টগুলো হয়ে ওঠে লাক্সারি-আলট্রা লাক্সারি। এভাবেই একেকটি ইমারত যেন একেকটি মহল্লায় রূপ নিল। সেখানে একবার ঢুকে পড়লে যেন না বেরোলেও চলে। কিন্তু ভালোর মাত্রা বেশি হলে যা হয় আরকি। একেকটি দালান আরেকটির সঙ্গে ঠেসাঠেসি করে তৈরি হলো কংক্রিটের জঙ্গল। হাউজিং জ্যামে আকাশ ঢেকে গেল। তখনই মানুষের মনে হলো, শুধু বিলাসী হলেই চলবে না, খেয়াল রাখতে হবে ‘গ্রিন’-এর দিকেও। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের দিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি পায়ের নিচের মাটিও যেন শক্তপোক্ত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখাও জরুরি হয়ে পড়ল। প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে যতটা বিলাসী হয়ে ওঠা যায়, মানুষ সেই প্রক্রিয়ার দিকেই ঝুঁকে পড়ল। ইমারত নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোরও কষতে হলো নতুন করে ছক। জন্ম হলো ‘আলট্রা লাক্সারি’র। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের ইমারত নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও ছোটার চেষ্টা করছে আলট্রা লাক্সারির ছক মেনে। কিন্তু সবাই কি পারছে? না। প্রতিযোগিতায় বেশির ভাগই পিছিয়ে পড়ছে। এগিয়ে যাচ্ছে গুটিকয়েক। এটিই নিয়ম। বাংলাদেশে যে কয়টি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে গেছে, সেগুলোর মধ্যে ‘শান্তা হোল্ডিংস’ অন্যতম। নির্মাণে আলট্রা লাক্সারি নিয়ে কাজ করছে তারা।
একটি ইমারতকে আলট্রা লাক্সারির আওতায় আনতে বেশ কিছু উপাদান ও বিষয়ের ওপর জোর দিতে হয়। এর মধ্যে পাঁচটি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ। বাতাস, সূর্যালোক, পানি, মাটি ও গ্রিনারি। শান্তা হোল্ডিংস তাদের ইমারত নির্মাণে এসব বিষয়ের প্রতি ভীষণ গুরুত্ব¡ দিয়ে থাকে। নগরীর গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের ভবন তৈরির কাজ করছে শান্তা হোল্ডিংস লিমিটেড। দেশ-বিদেশের নামকরা আর্কিটেক্টদের প্রচেষ্টায় তৈরি হয় ভবনগুলো। এহসান খান, নাহাস আহমেদ খলিল, মো. রফিক আজম ও ইসতিয়াক জহিরের মতো স্বনামধন্য আর্কিটেক্টরা কাজ করেন শান্তা হোল্ডিংস লিমিটেডে। ভবন তৈরির বিষয়ে বিদেশি পরামর্শকদের সঙ্গে কথা বলে নেন তারা। নির্মাণে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়কেও প্রাধান্য দিয়ে থাকে শান্তা। পাশাপাশি ভবনে আলো-বাতাসের চলাচল নিশ্চিত করতে এবং ল্যান্ডস্কেপ বিষয়ে মাথা খাটান তাদের প্রধান স্থপতি।
আলট্রা লাক্সারিয়াস একেকটি ফ্লোরের বিস্তার ১৬,০০০ বর্গফুটও হতে পারে। এতে ডাবল ও ট্রিপল হাইট এন্ট্রান্স থাকে। আন্তর্জাতিক মানের সুইমিংপুল থাকে এতে। ভবন তৈরির উপাদানগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন উপাদানই আমদানি হয়। শতভাগ নিরাপদ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার সংযুক্তি ঘটে ভবনের নকশায়। যে টাইলগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ইউরোপ থেকে আসে। জিম ইকুইপমেন্টগুলো আমেরিকান, প্রিকোর ও লাইফফিটনেস ব্র্যান্ডের।
আলট্রা লাক্সারিয়াস ভবনের বড় পরিসরের প্রার্থনালয়ও থাকে। বসার জায়গাসহ বারবিকিউ পার্টি করার ব্যবস্থা থাকে ছাদে। এ ছাড়া শিশুদের খেলাধুলার জায়গাও থাকতে হয়। এসব থাকলেই ষোলোকলা পূর্ণ হয়। এ বিষয়ে শান্তা হোল্ডিংসের সেলস অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসের জেনারেল ম্যানেজার শিহাব আহমেদ বলেন, একেকটি আলট্রা লাক্সারিয়াস অ্যাপার্টমেন্টকে শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেই চলে না। এর একটি রিসেল ভ্যালুও থাকা চাই। ভবিষ্যতের চিন্তা করেই আলট্রা লাক্সারিয়াস অ্যাপার্টমেন্টের জন্য একটি ভালো লোকেশন প্রয়োজন হয়। আগামী প্রজন্ম কোন অঞ্চলে বসবাসের জন্য আগ্রহী হবে, সে বিষয়ে চিন্তা করেই লোকেশন সিলেক্ট করা হয়। তা ছাড়া বসবাসের জন্য ভালো প্রতিবেশী একটি বড় ফ্যাক্ট। সমমনা মানুষেরা যাতে পাশাপাশি থাকতে পারেন, সেদিকে লক্ষ রাখা হয় আলট্রা লাক্সারিয়াস ভবনের ক্ষেত্রে। সিকিউরিটিকেও একটি বড় ইস্যু হিসেবে দেখা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আলট্রা লাক্সারিয়াস ভবন যে ভূমিমালিকের ভূমির ওপর করা হচ্ছে, তার মানসিকতা পরখ করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে সেখানে ভবন তৈরি হবে কি হবে না। খেয়াল রাখা হয় ইনহাউস ডিজাইন ও স্ট্রাকচারের দিকে। বিদেশি ইলেকট্রো মেকানিক্যাল কনসালট্যান্টদের মাধ্যমে ভবনের বিদ্যুৎ বণ্টন নিশ্চিত করা হয়। সয়েল কন্ডিশনের সঙ্গে জুতসই হিসাব-নিকাশের মাধ্যমেই ভবন নির্মাণে হাত দেওয়া হয়। তাই ভূমিকম্প অথবা অগ্নিসংযোগের ঝুঁকি শূন্যে নামিয়ে রাখার আশা করা যায়। শিহাব আরও বলেন, বিল্ডিং কোড শতভাগ ফলো করতে হয় বলে আমরা অভিজ্ঞ স্থপতিদের কাছে যাই। ভবনের প্রতিটি ফ্লোর নির্মাণের পর প্রকৌশলী এসে খতিয়ে দেখেন, নির্ধারিত নকশা অনুসরণ করা হয়েছে কি না। যদি না হয়, তাহলে সার্টিফিকেট পাওয়া যায় না। ফলে আমরা মেনে চলি।
যতটা সম্ভব মেইনটেইন্যান্স ফ্রি করে নির্মাণ করা হয় একেকটি আলট্রা লাক্সারিয়াস ভবন। দৃষ্টিনন্দন করতে গ্রাউন্ড ফ্লোরে কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না রেখে সেটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে বেজমেন্টে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে করা হয়েছে নান্দনিক লন ও বাগান, যা গৃহে প্রবেশের অভিজ্ঞতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। শিশুদের খেলার জায়গা এবং বড়দের বিশ্রামের স্থান। লাউঞ্জ, লাইব্রেরি, জিম, বিলিয়ার্ড রুম—সব মিলিয়ে কাস্টমারদেরকে একটি বিলাসী আবাস দিয়েছে শান্তা হোল্ডিংসের এ ধরনের অ্যাপার্টমেন্ট। রয়েছে ছাদবাগানও।
আলট্রা লাক্সারিয়াস অ্যাপার্টমেন্টের কাস্টমাররা মূলত গ্লোবাল কাস্টমার। বাইরের দেশের চাকচিক্য দেখে তারা অভ্যস্ত। দেশে তা খোঁজেন। এ বিষয়ে শিহাব বলেন, আমরা বায়ারদের সাইকোলজি বুঝতে চেষ্টা করি। সেই অনুযায়ী প্রোপার্টি তৈরি করি। তারা ভালো জায়গায় ইনভেস্টের পাশাপাশি সেই পরিমাণ ফিডব্যাকও চান। আমরা সেদিকে লক্ষ রাখি।
শান্তা হোল্ডিংস থেকে আলট্রা লাক্সারিয়াস অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন মেটাডোর কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর সগিরুল আলম। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোর ডিজাইন খুব সুন্দর। ওরা সুপার লোকেশন সিলেক্ট করে। তাদের কাস্টমার হ্যান্ডেলিংয়ের যে ক্যাপাবিলিটি, সেটা খুব ভালো। তারা তাদের কাস্টমারদের বিষয়ে যত্নশীল। অলওয়েজ পজিটিভ। যা প্রমিস করে সেটা রাখে। আমি শান্তাকে রিকমেন্ড করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, শান্তায় হোম ফিলিংসটা আছে। আলো-বাতাসের ব্যবস্থা, বারান্দা, রুমের সাইজ—সবই ভালো। ওদের ডিজাইনের লে-আউট বেশ ম্যাচিওর। খুব ব্যালেন্স করে ডিজাইন করা। আমার যেটা মনে হয়েছে, ল্যান্ড ওনারের ক্ষেত্রেও শান্তা খুব সিলেকটিভ।
শান্তা হোল্ডিংস লিমিটেডের বেশ কিছু আলট্রা লাক্সারিয়াস প্রজেক্ট সম্পন্ন হয়েছে। কিছু কিছুর কাজ এখনো চলছে। কিছু কাজ আসন্ন। নর্দান লাইটস, জালালাবাদ হাউস, দ্য সেরেনিটি, চিত্রা, লেক হাউস, দ্য ল্যান্ডিং ১০৪, দ্য ল্যান্ডিং ১৪১, দ্য এলতানিন এবং দ্য আলনেয়ার—এই ভবনগুলোর নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দ্য রিগ্যাল, স্প্লেন্ডর, বানসারি, দ্য সাঙ্কটাম, লাক্স, জেন, স্বপ্ননীড়, আইরি, আলুদ্রা, স্টারভিল, দ্য আলটেয়ার, লা বিজু ও লুমিয়ারের কাজ চলমান। এ ছাড়া শিগগিরই নুনিতা ও ম্যাগনোলিয়া নামের দুটি আলট্রা লাক্সারিয়াস ভবনের কাজ শুরু করছে শান্তা হোল্ডিংস লিমিটেড।