টেকট্রেন্ড I সেবা এবার অ্যাপে
শুধু কেনাকাটায় নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব সেবাই এখন মিলছে স্মার্টফোনে। কিছু অ্যাপের মাধ্যমে পাওয়া যাবে এই সুবিধা। লিখেছেন তৌহিদুল ইসলাম তুষার
মিলবে কাজের বুয়া
বাসায় ঠিক সময় কাজের বুয়া পাওয়া আজকাল কঠিন। তবে তা সহজ করেছে হ্যালোটাস্ক। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজের বুয়া হাজির হবে এক ক্লিকেই। ভিন্নধর্মী এই সেবা চালু করেন দুই ভাই মাহমুদুল হাসান লিখন ও মেহেদী স্মরণ। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ‘রোবট ডাকো’ নামে যাত্রা হলেও এখন এর নাম হ্যালোটাস্ক। অন ডিমান্ড ডেলিভারি দিয়ে শুরু। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে গৃহকর্মী সেবা চালু হয়। সেবাটির পরিসর দিন দিন বাড়ছে। কারণ, অ্যাপের মাধ্যমে সেবা নেবার প্রবণতা বেড়ে গেছে। অন ডিমান্ড এই সার্ভিসের শুরুটা হয়েছিল শুধু ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে। বর্তমানে ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরের পাশাপাশি মিরপুর, কল্যাণপুর, আগারগাঁও, উত্তরা, গুলশান, বনানী, মহাখালী, বসুন্ধরা, বারিধারা, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, মালিবাগ, মগবাজার, খিলগাঁও, বাসাবো, কমলাপুর এলাকায় গৃহকর্মী দিচ্ছে হ্যালোট্যাস্ক। বলা যায়, পুরান ঢাকা ছাড়া রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই সেবাটি পাওয়া যাচ্ছে। অনডিমান্ড গৃহকর্মী পেতে হলে প্রথমে গুগল প্লেস্টোর থেকে হ্যালোটাস্ক অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। এরপর সেটি ইনস্টল করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। অ্যাপেই বাসার লোকেশন জানানো চাই। তারপর সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অ্যাপের মাধ্যমে গৃহকর্মী ডাকা যাবে। এই সেবা নিতে হলে সার্ভিস চার্জ প্রতি ঘণ্টায় ১০০ টাকা খরচ পড়বে। প্রথম ঘণ্টায় বেজ ফি ৫০ টাকা বাড়তি নেওয়া হয়। অনেকে গৃহকর্মী ডেকে নিয়ে কাজ করান না, তাই ৫০ টাকা যাতায়াত হিসেবে একবারই নেওয়া হয়। এ ছাড়া তাদের রয়েছে ৭ দিন, ১০ দিন, ২০ দিন কিংবা ১ মাসের প্যাকেজ। অ্যাপটির অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ এবং https://bit.ly/2LXWPqm আইওএস সংস্করণ http://bit.ly/hellotaskIOS ঠিকানা থেকে ডাউনলোড করা যাবে। ওয়েবসাইট (www.hellotask.app) থেকেও পাওয়া যাবে সেবাগুলো।
সার্ভিস দেবে সেবা
‘সার্ভ উইথ লাভ’ মূলমন্ত্র নিয়ে দুই বন্ধু গড়ে তুলেছেন সেবাভিত্তিক একটি প্ল্যাটফর্ম। আদনান ইমতিয়াজ হালিম ও ইলমুল হক সজীব তৈরি করেছেন ‘সেবা ডট এক্সওয়াইজেড’। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় প্রায় সব সার্ভিস সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে। ইলেকট্রিশিয়ান, টিভি, ফ্রিজ মেরামতের টেকনিশিয়ানের খোঁজসহ ৮৬টির বেশি সেবার খোঁজ মিলবে। অ্যাপের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মে থাকা সার্ভিসগুলো খুঁজে নিতে পারবেন গ্রাহক। বুক করলেই নির্দিষ্ট সময় পৌঁছে যাবে দক্ষ সার্ভিস প্রোভাইডার। গুগল প্লেস্টোর ও অ্যাপল স্টোরে পাওয়া যাবে সেবা অ্যাপ। যারা অ্যাপে অভ্যস্ত নন, তারাও কল সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারবেন। ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে কল সেন্টার সাপোর্ট। তাদের আরেকটা প্রোডাক্ট ‘সেবা বন্ধু’। এটা হলো, ধরুন, আপনি এলাকার যেকোনো একটি দোকানে গিয়ে বললেন, আমাকে একটা টেকনিশিয়ান ডেকে দাও। তারা তখন ‘সেবা বন্ধু’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সার্ভিস প্রোভাইডারকে ডেকে দেবে। এটা মূলত রেফারেন্সভিত্তিক অ্যাপ। অর্থাৎ গ্রাহকেরা অন্য কারও কাছে চাইবেন। তারপর সেই তৃতীয় পক্ষ গ্রাহককে রেফার করে দেবে।
সব কাজের ‘হ্যান্ডিমামা’
হ্যান্ডিমামা হচ্ছে হ্যান্ডিম্যান ও মেইনটেন্যান্স সার্ভিসেসের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। এতে আছে ইলেকট্রিশিয়ান, কার্পেন্টার, ক্লিনার, পেইন্টার, প্লাম্বার, বাসাবাড়ি বদলের কর্মী ইত্যাদি। এখানে ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, কল সেন্টারের যেকোনো একটি মাধ্যমে সাহায্য নিয়ে এক মিনিটের মধ্যে বুকিং দিতে পারবেন। এরপর সর্বোচ্চ এক ঘণ্টার মধ্যে বাসায় হ্যান্ডিম্যান চলে যাবে। যদি অনলাইনে বুক করেন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কল সেন্টার থেকে ফোন করে বাসার ঠিকানা ও বৃত্তান্ত জেনে নেওয়া হবে এবং বাসায় হ্যান্ডিম্যান পাঠানো হবে। এর জন্য নিরাপত্তা ও দরদাম প্ল্যাটফর্ম থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, কল সেন্টার—সব মাধ্যমেই সেবা পাওয়া যাবে। এর একটি চ্যাটবট রয়েছে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্ডার নিতে পারবে।
সমাধানের সন্ধানে ‘ডিজিটাল মানুষ’
বাসার বিদ্যুৎ-সংযোগে সমস্যা? ইলেকট্রিশিয়ানের খোঁজ পাচ্ছেন না? অথবা পানির কলে সমস্যার কারণে অবিরাম পানি পড়ছে, কোনো প্লাম্বারের খোঁজ পাচ্ছেন না? সহজে সমাধান করে দেবে স্মার্টফোনের অ্যাপ ডিজিটাল মানুষ। এটির প্রধান উদ্যোক্তা খন্দকার মোহাম্মদ আলিফ, যিনি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেছেন। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছে অ্যাপটি। এর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সমস্যা, গ্যাস, স্যানিটারি, প্লাম্বিং, বাসার রং, তালা এমনকি গাড়ির যান্ত্রিক গোলযোগ ইত্যাদি সারানোর মিস্ত্রি খুঁজে পাওয়া যায়। মূলত এটি শ্রমিকদের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। এতে ঢাকা শহরের প্রায় সব এলাকার কর্মীদের পাওয়া যাচ্ছে। নির্দিষ্ট এলাকা ‘লোকেশন’ হিসেবে নির্বাচন করলে অ্যাপে চলে আসে সেখানকার শ্রমজীবীদের তালিকা। নাম, পরিচয়, ফোন নম্বরের সঙ্গে আছে তাদের ভোটার আইডি কার্ড নম্বর ও অভিজ্ঞতার তথ্য। অ্যাপে ‘কল’ বোতাম চাপলেই ফোনে আলাপ করা যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্মী এসে সমস্যা সমাধান করে দেবেন। পারিশ্রমিক ও অন্যান্য ব্যাপারে আলাপ করে নেওয়া যাবে। শুধু তা-ই নয়, এই অ্যাপের মাধ্যমে অনেকের জন্য তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মের জন্য ‘ডিজিটাল মানুষ’-এর ডাউনলোড লিংক: http://bit.ly/2G7Qw3D
বাড়িবদলের ‘ট্রাক লাগবে’
বাসা বদলাচ্ছেন? এ বাসার মালামাল অন্য বাসায় নিতে হবে, এ জন্য ট্রাক দরকার। ঘরে বসে ট্রাক খোঁজা আর নির্দিষ্ট রেটে পরিবহনের ব্যবস্থা নিয়ে এসেছে ‘ট্রাক লাগবে’ অ্যাপ। প্রতিদিনই এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। শুরুটা অন্য সব অ্যাপের মতো হলেও ধীরে ধীরে ভালো প্ল্যাটফর্মে রূপ নিয়েছে। ৭ ফুট উচ্চতার এক টনের পিকআপ ভ্যানে প্রাথমিক ভাড়া ৭৫০ টাকা, আর প্রতি কিলোমিটারে ৬০ টাকা। পরিবহন শুরুর পর প্রথম দুই কিলোমিটারে কোনো ভাড়া যোগ হবে না, তৃতীয় কিলোমিটার থেকে ভাড়া বাড়তে থাকবে। রয়েছে সিকিউরিটির সুবিধাও। শুধু ট্রাক খোঁজা কিংবা ভাড়া করাই নয়, অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা জানতে পারবেন পণ্য বা মালামাল বহনকারী ট্রাকটি কোথায় অবস্থান করছে। এতে নিরাপত্তাও নিশ্চিত হচ্ছে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ট্রাক ভাড়া করা যাচ্ছে। ট্রাকমালিক বা চালকেরা সহজে ভাড়া খুঁজে পাচ্ছেন।
অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মের জন্য ‘ট্রাক লাগবে’-এর ডাউনলোড লিংক- https://goo.gl/6PHwsZ।
বাসা খোঁজার পিবাজার
পছন্দের বাসাবাড়ি বা সম্পত্তি খুব সহজে খুঁজে পাবেন পিবাজার অ্যাপের মাধ্যমে। অ্যাপটি এনেছে দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন রিয়েল এস্টেট মার্কেটপ্লেস পিবাজার ডট কম। এটি ব্যবহার করে খুব সহজে পছন্দমতো বাড়ি, জমি কিংবা অফিস স্পেস কেনাবেচা অথবা ভাড়া দেওয়া-নেওয়া করা যায়। এখানে একজন মালিক শুধু ড্রপডাউন মেন্যু সিলেক্ট করেই ছবিসহ প্রপার্টির বিস্তারিত তুলে ধরতে পারেন। বিক্রি করতে পারেন অথবা ভাড়া দিতে পারেন। অন্যদিকে একজন ক্রেতা কিংবা ভাড়াটে খুঁজে নিতে পারেন বাসা কিংবা অফিসটি। এ ছাড়া বেশ কিছু নতুন ফিচার এই অ্যাপে যুক্ত করা হয়েছে। যেমন ফেভারিট অপশন, পছন্দের প্রপার্টি খুঁজে না পেলে রিকয়ারমেন্ট পোস্ট, প্রপার্টি আইডি দিয়ে সার্চ অপশন ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে পিবাজার ডট কমের যাত্রা শুরু। দেশজুড়ে এর রয়েছে ৬০ হাজারের বেশি প্রপার্টি, ৩৫ হাজার বাড়িওয়ালা, ১৫০০টি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এবং ২০০ প্রপার্টি এজেন্ট। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রপার্টি বাজার। পিবাজার অ্যাপটি ডাউনলোড করতে ভিজিট করুন https://goo.gl/F783Ol ঠিকানায়। এ সম্পর্কে আরও জানা যাবে ফেসবুকের www.facebook.com/pbazaarltd লিংকে।
অনলাইনে বাসা ও অফিস
বাসাভাড়ার অনলাইন সেবা চালু করলো দেশের সবচেয়ে বড় আবাসনবিষয়ক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বিপ্রপার্টি ডটকম। বিপ্রপার্টি ডটকম দেশের সবচেয়ে বড় রিয়েল এস্টেট মার্কেটপ্লেস, যেখানে ভাড়া বা বিক্রির জন্য বর্তমানে লক্ষাধিক প্রপার্টির তথ্য রয়েছে। অ্যাপটির মাধ্যমে প্রপার্টি কেনাবেচার পাশাপাশি ভাড়া দেওয়া ও নেওয়া যায়। সবচেয়ে সহজ উপায়ে গ্রাহকের পছন্দমতো। হাজারো প্রপার্টি সমৃদ্ধ ডেটাবেজ নিয়ে বিপ্রপার্টি ডটকম ন্যূনতম এক সপ্তাহের মধ্যে ভাড়াটেদের চাহিদামাফিক বাসা খুঁজে দিতে সক্ষম। বাসা ভাড়া পাওয়ার এই সেবা মিলবে বাড়ির মালিক প্রথম মাসের প্রাপ্য ভাড়ার ৫০ শতাংশ বিপ্রপার্টিকে চার্জ হিসেবে দিলেই। বর্তমানে ঢাকার পাঁচটি এলাকা—বনানী, গুলশান, নিকেতন, বারিধারা ও বসুন্ধরায় সুবিধাটি রয়েছে। বিপ্রপার্টির ওয়েবসাইট (www.bproperty.com) ব্রাউজ করে বাসার সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে চাহিদামাফিক বাসা খুঁজে নেওয়া যায়।
ছবি: ইন্টারনেট