ফিচার I ডুজ & ডোন্টস
মাসে অন্তত একবার ফেশিয়াল করার অভ্যাসটা গড়ে তুলতে পরামর্শ দেন সব বিউটি এক্সপার্টই। কিন্তু এর কার্যকারিতা ধরে রাখার উপায়গুলো তো জানতে হবে
অতিরিক্ত ব্রণ, তৈলাক্ত ভাব, হাইপারপিগমেন্টেশন ইত্যাদি থাকুক বা না থাকুক, সব ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচাতে আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক ধরে রাখার উদ্দেশ্যেও ফেশিয়াল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া এক্সফোলিয়েশন, বয়সের ছাপ রোধ—এমন অনেক সুবিধা রয়েছে ফেশিয়ালের। কিন্তু এর সব প্রভাব ধরে রাখতেও কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ কিছু করণীয় আর বর্জনীয় রয়েছে ফেশিয়ালের পর ত্বকে একই উজ্জ্বলতা দীর্ঘ সময় ধরে রাখার জন্য।
করণীয়
হাইড্রেশন
ফেশিয়ালের সুফল সবচেয়ে বেশি সক্রিয় রাখার জন্য ত্বকের হাইড্রেশন বজায় রাখতে হবে। অর্থাৎ কিছুক্ষণ পরপরই যথেষ্ট পানি পান করতে হবে। এর ফলে আপনার ত্বক ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা পাবে, বেরিয়ে যাবে টক্সিন। চেহারায় অটুট থাকবে উজ্জ্বলতা আর কোমল ভাব।
এক্সফোলিয়েশন
সত্য যে, ফেশিয়ালের সঙ্গে সঙ্গে এক্সফোলিয়েশন ক্ষতিকর। কারণ, তখন ত্বক খুব কোমল থাকে। তবে সপ্তাহান্তে কাজটি চলতে পারে। ফেশিয়াল-পরবর্তী ত্বকের সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখার জন্য। ঘরে বসেই সপ্তাহে এক দিন এক্সফোলিয়েট করে নিলে তা নতুনভাবে মরা চামড়া গজানো থেকে রোধ করবে। ত্বক নিস্তেজ হবে না। তবে তা করতে হবে ফেশিয়ালের তিন-চার দিন পর। খেয়াল রাখতে হবে, যে স্ক্রাবটা ব্যবহার করছেন, তার উপাদানগুলো যেন একটা মৃদু এক্সফোলিয়েশন উপহার দেয়।
ভিটামিন সি সেরাম
ফেশিয়াল করা নমনীয় মুখত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হতে পারে পরিবেশের দূষণকারী পদার্থগুলোর কারণে। প্রচন্ড তাপ আর বায়ুদূষণ সরাসরি রুক্ষ করে দেয় ত্বক। বলিরেখার উপদ্রব ঘটায়। ত্বক কুঁচকে দেয়। এক্সপার্টরা তাই ভিটামিন সি সেরাম ব্যবহার করতে বলেন। এটি শুধু ত্বকের রুক্ষতা দূর করে না, কোলাজেন বাড়িয়ে ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
পরিচর্যা প্রতিদিন
ফেশিয়ালের সুফল ত্বকে বজায় রাখতে অবিলম্বে তৈরি করে নিতে হবে একটি স্কিনকেয়ার রুটিন। এই কাজে নিজের বিউটি এক্সপার্টের সাহায্য নিতে পারেন। অর্থাৎ পরবর্তী ফেশিয়াল পর্যন্ত নিজ ত্বকের ধরন অনুযায়ী ঠিক করে নিতে হবে কী কী ব্যবহার করবেন। পদ্ধতিও নির্ধারণ করা চাই। সেই রুটিন মেনে চললেই পেতে পারেন সদ্য ফেশিয়াল করা মুখত্বকের মতোই উজ্জ্বলতা, অনেক দিন পরেও।
পরবর্তী ফেশিয়াল
মাসে একবার ফেশিয়াল ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। কারণ, ঘরে যত্ন নেওয়ার সুফলকে অনেক গুণে বাড়িয়ে তোলে এই প্রফেশনাল ট্রিটমেন্ট। তাই একটি ফেশিয়ালের ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যেই বুক করে ফেলুন একই কাজের পরবর্তী দিনক্ষণ। এতে ত্বকের স্বাভাবিক পরিবর্তনের চক্র ও প্রভাব বজায় থাকবে। তবে প্রতি মাসে একবার ফেশিয়াল যাদের সম্ভব হয়ে ওঠে না, তারা কমপক্ষে তিন মাসে একবার ফেশিয়াল করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নইলে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা বাসা বাঁধতে শুরু করবে অচিরেই।
বর্জনীয়
স্টিম কিংবা জিম
মনে হতে পারে, ফেশিয়ালের পর একটা স্টিম বাথ নিলে আপনার স্পা-এর অনুভব পরিপূর্ণ হবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই ফেশিয়ালের জন্য ত্বকে পরিমিত স্টিম ব্যবহার করা হয়ে গেছে। এই বাড়তি পরিচর্যা ত্বকে জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে। একইভাবে ফেশিয়ালের পরপরই জিমে গেলে গরম কিংবা ঘাম সদ্য এক্সফোলিয়েটেড ত্বকে র্যাশ কিংবা লালচে ভাব তৈরি করতে পারে।
ওয়্যাক্স, শেভ কিংবা রিমুভাল
অনেক সময় একই সঙ্গে সব সৌন্দর্যসেবা নিতে গিয়ে ফেশিয়ালের পাশাপাশি আমরা ওয়্যাক্সিং কিংবা লেজার হেয়ার রিমুভালের অ্যাপয়েন্টমেন্টও করে ফেলি। এতে বাড়তে পারে বিড়ম্বনা। প্রায় সব ফেশিয়ালেই এক্সফোলিয়েশন আর পিল অফ মাস্ক ব্যবহার করা হয়, যাতে ত্বকের পুরোনো মরা কোষগুলো ঝরে যায় এবং ত্বকের নতুন কোষ বেরিয়ে আসে। তাই ফেশিয়ালের সঙ্গে সঙ্গে হেয়ার রিমুভাল বেছে নিলে ত্বকে অতিরিক্ত এক্সফোলিয়েশন ঘটতে পারে, এমনকি ত্বকে আসা সদ্য উজ্জ্বলতা নষ্ট হতে পারে। এই ক্ষতি এড়াতে ফেশিয়ালের ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর যেকোনো হেয়ার রিমুভাল ট্রিটমেন্টে যাওয়া ভালো।
সূর্যের তাপ
সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বকরক্ষার চেষ্টা তো প্রতিদিনই জরুরি। ফেশিয়ালের পরের ত্বক ক্ষতিকর এই রশ্মি নিজের মধ্যে দ্রুত শুষে নেয়। ফলে মেলানোমার ঝুঁকি বেড়ে যায় আর ত্বক কুঁচকে যায় অল্প সময়েই। ফেশিয়ালের পর অবশ্যই এমন একটা সানস্ক্রিন কিংবা ময়শ্চারাইজার লাগাতে হবে, যাতে এসপিএফের মাত্রা কমপক্ষে ৩০।
ব্রণ খোঁটানো
ব্রণ উঠতেই অনেকে তাতে খোঁচাখুঁচি করেন। ফলে ব্রণের দাগ মুখে স্থায়ী হয়ে পড়ে। ফেশিয়ালের পরের ত্বকে এর প্রভাব পড়ে আরও বেশি। কারণ, ব্যাকটেরিয়ার দ্রুত সংক্রমণ। ফেশিয়ালের সময়ই ত্বকের যত ব্রণ কিংবা ব্ল্যাকহেডস রয়েছে, তা পরিষ্কার করে ফেলা হয়। যদি তা না করে ওভাবেই রেখে দেওয়া হয়, তবে বুঝতে হবে সেটা উঠিয়ে ফেলার মতো পর্যায়ে এখনো পৌঁছায়নি। তাতে খোঁটাখুঁটি করলে শুধু ক্ষতিই হবে ত্বকের।
রেটিনলযুক্ত পণ্য
ফেশিয়ালের কমপক্ষে এক সপ্তাহের মধ্যে কোনো পিল বা রেটিনলযুক্ত প্রডাক্টের ব্যবহার বর্জনীয়। এগুলো ফেশিয়াল-পরবর্তী সংবেদনশীল ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। তা ছাড়া ফেশিয়ালের সময় মুখত্বকে স্বাভাবিক নারিশিং অয়েল ধরে রাখা কিংবা যথাযথ ময়শ্চার তৈরি করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা তৈরি করে রাখা হয়।
শিরিন অন্যা
মডেল: মায়িশা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন