ফিচার I রঙবদলের মেকআপ
ত্বক, সময় আর আলো মেনে বদলে যায় মেকআপের রঙ। পাল্টে যায় লুক। কোন জাদুবলে!
চোখের সামনে কোনো কারসাজি ছাড়াই বদলে যাচ্ছে মেকআপ প্রডাক্টের রঙ, ত্বকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, সময় ও আলোর চাহিদামাফিক। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্যই কালার চেঞ্জিং মেকআপ গ্লোবাল বিউটি ট্রেন্ডে এখন ইন। প্রতিদিনই চলছে এটিকে নিয়ে নানান নিরীক্ষা।
কখন শুরু: সবচেয়ে পুরোনো কালার চেঞ্জিং মেকআপের খোঁজ পাওয়া যায় ১৯২০ সালে। ‘ট্যাঞ্জি’ নামে আমেরিকান একটি ব্র্যান্ড বাজারে আনে এক বিশেষ ধরনের লিপস্টিক। এরপর সত্তর ও নব্বইয়ের দশকে এই ট্রেন্ড ফিরে আসে মুড চেঞ্জিং আংটি এবং নেইলপলিশের মাধ্যমে। ২০১৭ সালে নতুনভাবে আবার আসে মেকআপের এই ট্রেন্ড, যা চলছে এখনো।
কীভাবে কাজ করে: রেড ২৭ নামের একটি ডাই ব্যবহার করা হয় কালার চেঞ্জিং কসমেটিকসে। এই ডাইয়ের সঙ্গে আমাদের ত্বকের ময়শ্চারের পিএইচ বিক্রিয়া হয়ে রঙের পরিবর্তন ঘটে। রেড ২৭ ফুড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদিত ওষুধ এবং কসমেটিকসের জন্য ব্যবহৃত একধরনের ডাই।
যতক্ষণ না পানির সঙ্গে এর কোনো যোগাযোগ ঘটছে, ততক্ষণ এটি বর্ণহীন এবং এর নিজস্ব উজ্জ্বল রঙের শেড ছাড়াই যেকোনো তেল বা ওয়্যাক্স বেজড প্রডাক্টের (যেমন লিপ বাম) সঙ্গে এটিকে মেশানো যায়। এই অবস্থা থেকেই পণ্যটি রঙ ধারণ করে। শেষ পর্যন্ত কোন শেডের হবে প্রডাক্টটি, রেড ২৭ এবং অন্যান্য ডাই ব্যবহারের পরিমাণের ওপর তা নির্ভর করে। কালার চেঞ্জিং একটি লিপস্টিক যখনই ঠোঁটের সংস্পর্শে আসছে, তখনই ডাই অনুযায়ী রঙ বদলাবে। সেই রঙ সবার ক্ষেত্রে এক হবে না। কোন কোন রঙে বদলাবে, সেটি নির্ভর করবে ঠোঁটের ময়শ্চারের পিএইচ-এর ওপর।
মেকআপ প্রডাক্ট: ত্বকের রঙের সঙ্গে যখন মেকআপের রঙ মিশে যায়, তখন তা আর মেকআপ থাকে না, বরং প্রাকৃতিক মনে হয়। ত্বকের ধরন, দিনের নির্দিষ্ট সময় এবং ঘরের আলোর ওপর নির্ভর করে বদলাবে আপনার কালার চেঞ্জিং মেকআপ প্রডাক্টের শেড।
লিপস্টিক: এই ধারার সাজপণ্যের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে লিপস্টিক সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামী যেসব ব্র্যান্ড কালার চেঞ্জিং মেকআপ নিয়ে কাজ করে, সেগুলোর পণ্যতালিকায় রয়েছে এই লিপস্টিক। ব্র্যান্ড শপগুলোতে কালার চেঞ্জিং লিপস্টিক টেস্টারও থাকে এবং সে অনুযায়ী কাস্টমাইজ করা হয়।
হাইলাইটার: দেখতে সাদা হলেও, একটু আলোর নিচে নিলেই কালার চেঞ্জিং হাইলাইটারের রঙ উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
ব্লাশঅন: ব্লাশঅনের শেড নিয়ে সবারই কোনো না কোনো অভিযোগ থাকে। তবে কালার চেঞ্জিং ব্লাশঅন এ ক্ষেত্রে সেরা আবিষ্কার।
চিক কালার: এই মেকআপের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, এটি মনমতো রঙ দেবে আপনাকে। চিক কালারের ক্ষেত্রেও এটি ঘটে। গ্লিটারের আলাদা চাকচিক্যের সঙ্গে চেঞ্জিং কালারের আবেদন চিক কালারকে করে তোলে আকর্ষণীয় এক মেকআপ প্রডাক্ট।
ব্রোঞ্জার: ত্বকে ‘সানকিসড গ্লো’ দেবে যেকোনো ব্র্যান্ডের কালার চেঞ্জিং ব্রোঞ্জার। মুখত্বকে ব্যবহারের ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে পরিবর্তনটা ধরা পড়বে।
নেইলপলিশ: কারও নেইলপলিশের রঙ পছন্দ করতে যদি কষ্ট হয়, তবে এটি আদর্শ একটি প্রডাক্ট। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কালার চেঞ্জিং নখরঞ্জনীগুলো বেশির ভাগই ফটোক্রোমিক হয়। যার মানে সূর্যের নিচে দাঁড়ালে এর একটি রঙ থাকে, ঘরে ঢুকলে পাল্টে যায় আরেক রঙে।
আইশ্যাডো: ডুয়োক্রোমাটিক শ্যাডোর এই পণ্যগুলো প্রতিটি পলকে নতুন রঙ ছড়ায়।
হেয়ার ডাই: চাইলে সারাটা দিন পার করে দেওয়া যায় এই থার্মোক্রোমিক হেয়ার ডাইয়ের রঙ বদলানো দেখতে দেখতে!
লিপ গ্লস: বেশির ভাগ লিপ গ্লসের বাইরের কৌটা স্বচ্ছ হয়ে থাকে। তবে আপাতদৃষ্টিতে বাইরে থেকে স্বচ্ছ হলেও ঠোঁটে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে আসে এর রঙিন শেড।
মেকআপ ব্রাশ: না, এই ব্রাশ ব্যবহার করলে মেকআপের রঙ বদলাবে না! কিন্তু ইউনিকর্ন কসমেটিকসের প্রথম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে বাজারে এসেছে পাঁচটি ব্রাশের এমন একটি সেট, যেগুলোর হাতলের রঙ বদলায়। হ্যালোউইনের থিম অনুসরণ করে মেকআপ ব্রাশের সেটটির প্যাকেজিং হয়েছিল কফিন স্টাইলে।
সুরবি প্রত্যয়ী
মডেল: নাজ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন