কুন্তলকাহন I বৃষ্টিদিনের চুলে
বৃষ্টির দিনগুলোয় চুলের যত্নআত্তি অন্যান্য মৌসুমের থেকে আলাদা। স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখা থেকে সবকিছুতেই এ সময়ের প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সামলানোর চর্চা অব্যাহত রাখতে হয়
এই রোদ, এই বৃষ্টির খেলা শুরু হয়ে গেছে। এই সময়টায় চুলের চাই বাড়তি যত্ন। কেননা বর্ষার দিনগুলোতে প্রাকৃতিকভাবেই চুলের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
জেনে নিন বর্ষায় চুলের যত্নে বিশেষভাবে কী করা উচিত এবং কী উচিত নয়।
নিয়মিত চুল ধুতে হবে
অনেকের মধ্যেই এই ধারণা আছে যে বর্ষায় প্রতিদিন চুল ভেজানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু এ সময়েই রোজ চুল ধোয়া উচিত। কারণ, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় চুলের গোড়া ভিজে যায়। ভেজা চুলের গোড়ায় ফাঙ্গাস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে, বৃষ্টির পানিও চুলের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, এতে অ্যাসিড আর ময়লা থাকে; যা স্ক্যাল্পে চুলকানিসহ খুশকির সৃষ্টি করে। তাই প্রায় প্রতিদিনই চুল ধোয়া বাঞ্ছনীয়। বৃষ্টির পানিতে ভিজলে তো অবশ্যই। তবে যেসব শ্যাম্পু চুলকে শুষ্ক করে দেয়, সেগুলো এড়িয়ে চলুন। অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, হারবাল বা আয়ুর্বেদিক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার ব্যবহার করুন
শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। তবে সেটা হতে হবে প্রাকৃতিক। সহজ একটি পদ্ধতি হলো ৫০০ মিলি পানির সঙ্গে ২ টেবিল চামচ সাদা ভিনেগার মিশিয়ে শ্যাম্পু করার পরপরই ধুয়ে ফেলবেন। ভিনেগার দেওয়ার পর চুল আলাদা করে পানি দিয়ে ধোয়ার দরকার নেই। অবশ্যই কেমিক্যাল কন্ডিশনার ব্যবহারে সংযত থাকবেন। কারণ, এই ঋতুতে এটা চুলের জন্য ক্ষতিকর।
চুল দ্রুত শুকিয়ে ফেলতে হবে
ভেজা চুলে খুশকি হবার আশঙ্কা বেড়ে যায়। শুকানোর জন্য বারবার হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করলে চুলের স্বাভাবিক ময়শ্চার হারিয়ে যায় এবং ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। তাই ফ্যানের বাতাসে চুল শুকিয়ে নিতে হবে। এ সময়ে চুলে স্ট্রেটনার, কার্লিং মেশিন আর হেয়ার স্প্রেও কম ব্যবহার করা ভালো। ভেজা চুল আঁচড়াবেন না।
হট অয়েল হেয়ার ম্যাসাজ নিন
নারকেল তেল, অলিভ অয়েল বা অ্যাভোকাডো তেল চুলের জন্য খুবই উপকারী। চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালো করে তেল লাগান। এরপর ধুয়ে ফেলুন। চুল অনেক নরম হবে কিন্তু চিটচিটে দেখাবে না।
নিজের চিরুনি ব্যবহার করুন
এই ঋতুতে চুল পড়ে বেশি। সেটি এড়াতে ভেজা চুল আঁচড়াবেন না। আঁচড়াবেন মোটা ফাঁকা দাঁতের চিরুনি দিয়ে। কখনোই অন্যের চিরুনি ব্যবহার করবেন না অথবা নিজেরটি কাউকে ব্যবহার করতে দেবেন না। এতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়ে স্ক্যাল্পে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে
এ সময়টায় চুলের যত্নে খাবারের মেন্যুতে প্রোটিনের মাত্রা নিশ্চিত করুন। জাঙ্ক ফুড যেমন বার্গার, চিপস, পিৎজা এগুলো এড়িয়ে চলুন। দানাদার খাবার বেশি খান। যেমন— ছোলা, শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি, মটরশুঁটি ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রতিদিন নিয়ম করে বাদাম ও আমলকী খেতে পারেন। সঙ্গে পান করুন প্রচুর পানি। খাদ্যাভ্যাসে যোগ করুন ফল। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে ক্যাফেইনের মাত্রা কমিয়ে ফেলুন। প্রোটিনযুক্ত খাবার, শাকসবজি, ফলমূল খান এবং তেলতেলে খাবারকে না বলুন।
চুলের প্যাক ব্যবহার করুন
সপ্তাহে অন্তত এক দিন যেকোনো প্যাক ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। তবে প্যাক নির্ভর করবে চুলের ধরনের ওপর।
স্ট্রেইট চুল
চুলে প্রোটিন প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। মেহেদির সঙ্গে দু-তিনটি ডিমের কুসুম ফেটে, একটু মধু দিয়ে মিশিয়ে গোসলের আগে সারা চুলে মেখে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ান। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিন।
রঙিন চুল
চুলের রঙে কেমিক্যাল থাকে, যা ক্ষতিকর। রঙিন চুলের যত্নে তেলের সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিলিয়ে চুলের গোড়ায় মালিশ করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করুন। ডিপ কন্ডিশনারের পাশাপাশি সপ্তাহে একবার নিউট্রিলাইজার ক্রিমও ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্ষাকালে রঙিন চুলে হিট বা তাপ দেওয়া যাবে না।
কোঁকড়া চুল
মেথি ভেজানো পানি ছেঁকে তাতে পাকা কলা, বাদাম তেল মিশিয়ে চুলে দিয়ে আঁচড়ান। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করুন।
এ সময়ের হেয়ারস্টাইল: বর্ষায় অন্য যেকোনো হেয়ারস্টাইলের তুলনায় লুজ বান বা পনিটেইল আরামদায়ক। চুলের জন্যেও ভালো। এতে করে জট লাগবে না। একটু খোলা খোলা থাকায় ঘাম খুব একটা হবে না। চুল কেটে ছোট করে ফেলাটাও সুফল দিতে পারে এ সময়।
দৈনন্দিন সঙ্গী: ছাতা, রেইনকোট ও মোটা দাঁতের চিরুনি সব সময় ব্যাগে রাখুন।
সুরবি প্রত্যয়ী
মডেল: মাইশা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন