skip to Main Content

ছুটিরঘণ্টা I সিটি অব ভাস্কো দা গামা

সমুদ্র, পাহাড়, প্রাচীন গির্জা আর প্রাসাদের শহর লিসবন। এখানে তাই পর্যটকদের ভিড়

পর্তুগালের রাজধানী শহর ও বৃহত্তম নগরী লিসবন, যা আটলান্টিক মহাসাগর ও টাগুস নদীর তীরে অবস্থিত। শহরটি মূলত সাতটি বড় বড় পাহাড়ের মনোরম নিসর্গে গড়ে উঠেছে। তাই অনেকের কাছে এটি সেভেন হিল সিটি নামেও পরিচিত।
লিসবনের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় গ্রাসায় অবস্থিত, যেখান থেকে পুরো লিসবন ৩৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত দেখা যায়। এটি পৃথিবীর প্রাচীন একটি শহর। ইতিহাস বলে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের পরে লিসবনের স্থান; যা ইতালির রোম শহরেরও আগে স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমানে এই শহরে ৬ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। বিশ্বের ৯৭টির বেশি দেশের মানুষ এখানে বসবাস করে। ফলে এই নগরী সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ।
খ্রিস্টপূর্ব ৩৭০০ অব্দে প্রথম এখানে জনবসতি গড়ে উঠেছিল, তাই এই শহরে অসংখ্য প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে। ইউনেসকো কর্তৃক স্বীকৃত ১৫টির বেশি বিশ্বঐতিহ্যের স্থান রয়েছে পর্তুগালে। তাই প্রতিবছর প্রায় ১৮ মিলিয়ন মানুষ পর্তুগাল ভ্রমণ করে।
এখানে অনেক ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তা ছাড়া দুনিয়ার যে অল্পসংখ্যক রাজধানী শহরে সমুদ্রসৈকত রয়েছে, লিসবন সেগুলোর একটি। সিটি সেন্টার থেকে মাত্র ২০ কিমি দূরে সৈকতের অবস্থান, যা মাত্র ১৫/২০ মিনিটের পথ, ট্রেনে কিংবা কারে।
আলফামা হলো লিসবনের প্রাচীন ও পুরোনো একটি এলাকা, যেটি ১৭৫৩ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প ও জলোচ্ছ্বাসের পরেও টিকে রয়েছে। প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভিড় জমায় এখানকার সরু রাস্তা ও প্রাচীন জনপদ দেখার উদ্দেশ্যে।
জেরোনিমোস মনস্ট্রি মূলত ভাস্কো দা গামার সমাধিস্থল। এটি একটি বৃহৎ গির্জা বা প্রার্থনাস্থল, যা দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত। ষোড়শ শতকে নির্মিত এই সমাধিস্থল বা গির্জাটি একটি বিশ্বঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃত।
১৪৯৮ সালে ভাস্কো দা গামার ইন্ডিয়ার উদ্দেশে যাত্রাকে স্মরণ করে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল এবং এর বেশির ভাগ অর্থের জোগান এসেছিল উপমহাদেশের মসলা-বাণিজ্য থেকে। লিসবন সিটি সেন্টার থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত এবং বাস অথবা ট্রামে করে ১৫/২০ মিনিটে পৌঁছানো যায় সেখানে। ক্যাস্টেলো ডি সাও জর্জ লিসবনের প্রাণকেন্দ্রে, পাহাড়ের পাদদেশে আলফামার পাশে অবস্থিত। এই রাজপ্রাসাদ পর্যটকদের প্রধান একটি আকর্ষণ। এখান থেকে লিসবনের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যায়। খুব কাছ থেকে টাগুস নদীর সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সামান্য দূরে তাকালে আটলান্টিকের নীল জলরাশির দেখা মিলবে।
বেলেম টাওয়ার নামে পরিচিত এই দালান লিসবনের একটি সেরা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি নির্মিত হয়েছে ১৫১৫ থেকে ১৫২১ সালের মধ্যে। এই টাওয়ার টাগুস নদীর মাঝে গড়ে উঠেছিল সমুদ্রগামী নৌযান পর্যবেক্ষণ করার জন্য। আবিষ্কারের যুগের সেরা একটি নিদর্শন হিসেবে ইউনেসকো এটিকে বিশ্বঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ১৯৮৩ সালে।
লিসবন ওশেনারিয়াম হলো ইউরোপের সেরা ও বিশ্বের বৃহৎ একটি অ্যাকোয়ারিয়াম। ১৯৯৮ সালের লিসবন এক্সপোতে এটির উদ্বোধন হয়েছিল। রহস্যময় নানান সামুদ্রিক প্রাণীর এক কৃত্রিম অভয়ারণ্য, বিশেষ করে আটলান্টিক, ভারত, প্রশান্ত ও আর্কটিক মহাসাগরের জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ একটি অ্যাকোয়ারিয়াম। পাশে রয়েছে ইউরোপের সর্ববৃহৎ সেতু ভাস্কো দা গামা ব্রিজ, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ কিলোমিটার।

লিসবনের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ে লেখক

তা ছাড়া ট্রাম ২৮ রাউন্ড ভ্রমণের মাধ্যমে লিসবনে পুরাতন শহর আলফামাসহ বৃহৎ পাঁচটি পাহাড় ভ্রমণ করা যায়। সিটি সেন্টারে রয়েছে সান্তা জাস্তা একটি লিফট, যার নকশা করেছেন আইফেল টাওয়ারের নকশাবিদ। এই লিফট থেকে লিসবন পুরো ৩৬০ ডিগ্রি ভিউতে দেখা যায়। এ ছাড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে প্রাচীন গির্জাসহ অসংখ্য ঐতিহাসিক, নান্দনিক ও দর্শনীয় স্থান।
পর্তুগালের আলগ্রাভ, অ্যালেনত্যজুসহ অনেক এলাকা সপ্তম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত মুসলিম শাসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তাই কমবেশি লিসবন ও পর্তুগালের সব জায়গায় মুসলিম নিদর্শন ও বিভিন্ন ইসলামি নাম দেখতে পাওয়া যায়।

 মো. রাসেল আহম্মেদ
প্রবাসী লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী; সদস্য, ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন
raselcml@gmail.com
ছবি: লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top