এই শহর এই সময় I স্বপ্ন ও নিসর্গ
জীবনের রূঢ় বাস্তবতা সব সময় শিল্পের মর্মে থাকবে, এমন নয়। কখনো কখনো পরাবাস্তবতাই চিত্রকলা ও আলোকচিত্রের অন্বিষ্ট হয়ে ওঠে। আবার কেউ কেউ বাস্তবতার ভেতরেও খুঁজে চলেন জীবনের অর্থ ও সৌন্দর্য।
ঢাকায় প্রদর্শিত একটি দলগত চারুকলা প্রদর্শনী এভাবেই স্বপ্ন, স্মৃতি ও সত্তার মধ্যকার স্বপ্নবাস্তবতার প্রকাশ ঘটিয়েছে চিত্র ও ভাস্কর্যে। অন্যদিকে গত মাসের সূচনাটা হয়েছিল এমন একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে, যেখানে স্থান পেয়েছিল জীবনের নৈসর্গিক স্পেসগুলো। ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গার অদ্ভুত সুন্দর কিছু নৈসর্গিক স্থানে যাপনের মুহূর্তকে ঢাকার শিল্পমনস্ক দর্শকের সামনে তুলে ধরেছিলেন আলোকচিত্রী শিবলী সিরাজ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে উঠে আসা একঝাঁক শিল্পীর দলগত চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে। ২৩ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলে। এখানে ফারহানা আফরোজ, ফারজানা ইসলাম, মনিদীপা দাশগুপ্ত, মুক্তি ভৌমিক, রেবেকা সুলতানা, মনিরা সুলতানা, রেহানা ইয়াসমিন, রিফাত জাহান ও শাইলা আখতারের চিত্রকলা এবং ভাস্কর্য প্রদর্শিত হয়েছে। অ্যাক্রিলিকে ফুটে ওঠা পক্ষিকুল ও নারীর আলাপের রূপকথাধর্মী রঙিন চিত্রকল্প, অলংকার ও পুষ্পশোভিত তরুণীর মুখের প্রেমময় প্রসন্নতা কিংবা অরণ্য ও মালভূমির মধ্যে খুঁজে পাওয়া স্বপ্নবাস্তবতা মূর্ত হয়ে উঠেছিল। পাশাপাশি মিক্সড মিডিয়ায় নিস্তব্ধ সুপার মুনের আলোয় চন্দ্রাহত হওয়ার কাব্যিক বিমূর্ত এক চিত্রকল্পও লক্ষ করা গেছে দলগত এই প্রদর্শনীতে। একই সঙ্গে মেটাল ও টেরাকোটায় কেউ কেউ নির্মাণ করেছেন নৌকার ও জলের আধারে শৈশবের স্মৃতির ভাস্কর্য, কেউবা পরিত্যক্ত বোতলের মধ্যেই ফুটিয়ে তুলেছেন স্বপ্নে দেখা কোনো পরিত্যক্ত বাড়ির ভাস্কর্য, কেউবা নেহাতই তিনটি মানবমূর্তি কমিউনিকেটিভ মুডের মধ্যেও নির্মাণ করতে চেয়েছেন তার ব্যক্তিগত ড্রিমসস্কেপের ভাস্কর্য। স্বপ্ন, নৈসর্গিক ও জীবন বাস্তবের আলো-আঁধারির নানা রঙে এই প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘কালারস’ আক্ষরিক অর্থেই সার্থক হয়েছে। প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন কবি রবিউল হোসেন ও চিত্রশিল্পী কনকচাঁপা চাকমা।
এই চিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ফ্রান্স, নৈসর্গিক ও অনন্ত : এক আলোকচিত্রীর অভিযাত্রা’ শীর্ষক শিবলী সিরাজের একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। ২০১৯-এর মার্চে শিবলী সিরাজ একটি তিন সপ্তাহব্যাপী অভিযাত্রায় ফ্রান্স ভ্রমণ করেন। গাড়ি ভাড়া করে তিনি মহাসড়ক এবং গ্রামাঞ্চলের পথেঘাটে ছুটে বেড়ান। ফ্রান্সজুড়ে তার এই ভ্রমণ, উত্তরের বেলাভূমি থেকে শুরু করে দক্ষিণে এবং সমুদ্র থেকে পাহাড়ে এককথায় ফ্রান্সের প্রকৃতির ছবিকে তিনি আলোকচিত্রের ফ্রেমে প্রকাশ করেছেন। আলোকচিত্রী শিবলী সিরাজের কথায়, ‘ক্যামেরার চোখ সেই দৃশ্যকে ধারণ করতে পারে, যা অনেক সময়ই আমাদের সাদা চোখে ধরা পড়ে না। তাই ক্যামেরায় কারও হাতযশ নির্ভর করে অপস্রিয়মাণ দৃশ্যের কতটা তিনি তার ক্যামেরার ফ্রেমে ধরে রাখতে পারছেন, তার ওপর। আমি সব সময়ই অনুপ্রাণিত হয়েছি আমার চিত্রগ্রহণ প্রয়াসে নতুনতর মাত্রা যোগ করতে। আর তা করতে গিয়েই, আমায় সবচেয়ে বেশি যা আকৃষ্ট করেছে তা হলো নিসর্গ। এই অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যই শুধু নয়, বরং প্রতি মুহূর্তে তার সতত-পরিবর্তমান লীলা আর মানুষের মনের গহিনে তার ব্যঞ্জনা ও প্রভাব আমাকে তাড়িত করে। আমরা সবাই নিসর্গ ভালোবাসি, কিন্তু নিসর্গও যে কখনো কখনো আমাদের সৃষ্টি করে তোলে, তা প্রায়শই ভুলে যাই। প্রকৃতির সৌন্দর্য সব চিত্রকরকে আকর্ষণ করে বিশেষত ফরাসি ইম্প্রেশনিস্ট বা অভিব্যক্তিবাদীদের, যারা একটি নতুনতর পন্থা, বলা উচিত একটি নতুন মাত্রা খুঁজে পেয়েছিলেন প্রকৃতিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে।’ জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সভাপতি রামেন্দু মজুমদার। আগস্টের প্রথম সপ্তাহব্যাপী এটি চলেছে লা গ্যালারিতে।
স্টাফ রিপোর্টার
ছবি: সংগ্রহ