ফিচার I অফিসফেরত ত্বকে
অফিস শেষে ত্বকেও ক্লান্তি আসে। ধুলোময়লা তো জমেই। কিংবা মেকআপের ঝক্কিও থাকে। অফিস থেকে ফেরার পর তাই দরকার ত্বকের বিশেষ ও নিয়মিত যত্ন
আমরা অনেকেই পরিপাটিভাবে মেকআপ করে ঘর থেকে বের হই, কিন্তু ফিরে এসে সেটা পরিষ্কার করায় খুব একটা মনোযোগ দিই না। কেবল পানি আর ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়েই দায়িত্ব শেষ করি। ত্বকে এই অবহেলা সুখকর হয় না। তাই দিন শেষে ত্বকের যত্ন নেওয়াটা জরুরি। বিশেষ করে সপ্তাহে পাঁচ-ছয় দিন প্রায় ১২ ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি যখন আমরা বাইরে থাকছি, তখন ত্বকের সুস্থতা ও সৌন্দর্যরক্ষায় একটা রুটিন করে ফেলা উচিত।
সারা দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরতেই হয়। পরদিন আবার অফিস। সেখানে কাজের চাপ আর স্নায়বিক শ্রমের ফলে ক্লান্তি যেন ছাড়তেই চায় না। বাড়ি ফিরেও তো ঝক্কির শেষ নেই। এ সবকিছুর মধ্যে আলাদা করে বেশ খানিকটা সময় শুধু রূপচর্চার জন্য বের করা কঠিন। তবু দিনজুড়ে ত্বকে যে ধুলো-ময়লা, তেল, ঘাম জমে, তা ঠিকমতো পরিষ্কার করতেই হয়। অফিস শেষে ঘরে ফিরে তো বটেই, কর্মক্ষেত্রেও নিয়ম মেনে কিছু করতে পারেন, যা আপনার ত্বককে সুস্থ রাখবে।
বারবার মুখ ধোয়া: অফিসে একটানা কাজ থেকে কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে তিন-চারবার পানির ঝাপটা দিতে পারেন মুখত্বকজুড়ে। ক্লান্তি দূর হবে, অতিরিক্ত তেল থাকবে না। ফলে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা ও শঙ্কা কমবে। তাই সকালে বের হওয়ার সময় পানিরোধী কাজল, আইলাইনার ও মাসকারা ব্যবহার করতে হবে। বাসায় ফিরে ত্বকের ধরন অনুযায়ী যত্ন নিতে হবে। অফিসে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে এবং অফিস থেকে ফিরে সাবান দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে ফেলা জরুরি।
পরিমিত পানি পান: অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, কাজের চাপে থাকায় নিয়মিত পানি পান করতে ভুলে যান অনেকেই। অফিসের সময়টাতে পরিমিত পানি পান করা উচিত। কেননা পানির অভাব হলে সেটা ত্বকের উপরে প্রভাব ফেলে। ত্বকে শুষ্কতাজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ব্রণের উপদ্রব হতে পারে।
নিয়ম করে হাঁটা: কর্মজীবী নারীদের দিনের অধিকাংশ সময় কাটে চেয়ারেই। ফলে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। তাই প্রতিদিন অফিসে যাওয়া কিংবা ফেরার সময়ে কিছুক্ষণ হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। এতে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে, মেদ কমবে এবং ত্বক ভালো থাকবে। তবে রোদ থাকলে হাঁটার সময় ছাতা ও সানগ্লাস ব্যবহার করা জরুরি।
বাড়তি মেকআপ নয়: কর্মক্ষেত্রের মেকআপ হওয়া উচিত হালকা। তা ভারী হলে লোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্রণের সমস্যা বাড়ে। অফিসের পরে কোনো অনুষ্ঠান থাকলে সারা দিন ভারী মেকআপ ব্যবহার না করে সেটির প্রস্তুতি অফিসের পরেই নেওয়া ভালো।
ফেসপ্যাক ব্যবহার: সপ্তাহে অন্তত তিন দিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফেসপ্যাক লাগিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। খুব সহজে ব্যবহার করা যায় মুলতানি মাটি, চন্দন কিংবা অ্যালোভেরার প্যাক। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে অ্যালোভেরা জেল মুখে লাগিয়ে ঘুমালে ত্বক আর্দ্র হয়।
চোখের যত্ন: কর্মক্ষেত্রে অনেকেরই কম্পিউটারে দীর্ঘক্ষণ ধরে কাজ করতে হয়, ফলে চোখের ওপর চাপ বেশি পড়ে। ক্লান্তির ছাপও তাতে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। তাই নিয়মিত চোখের যত্ন নিতে হবে। প্রতিদিন সম্ভব না হলেও অন্তত তিন দিন আলু বা শসা গোল করে কেটে চোখের ওপর দিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ।
শরতে ত্বকের যত্ন: আবহাওয়া এই ঋতুতে আর্দ্র থাকে বলে আমরা অনেকে ভাবি, ত্বকে ময়শ্চারাইজারের দরকার নেই। কিন্তু এ সময় ত্বক প্রস্তুত হয় শীতের জন্য। তাই আর্দ্রতা ধরে রাখতে হবে। ময়শ্চারাইজিং ক্রিম বা লোশন ব্যবহারের মাধ্যমেই এটা সম্ভব। তবে তা হওয়া চাই ত্বকের ধরন অনুযায়ী।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন: শুরুতেই প্রয়োজন তেল-ময়লা তুলে ফেলা। তাই প্রথমে তুলার সাহায্যে টোনার দিয়ে মুখ মুছে ফেলতে হবে। তেলমুক্ত ক্লিনজিং ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে মুখ ধুতে হবে। আলতো করে মুখ মুছে ময়শ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া বাড়িতে আগে থেকে ফেসপ্যাক বানিয়ে ফ্রিজে রাখা যায়। শসা, আপেল, কমলার রস, চন্দন ও সামান্য টক দই দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করা যায়। এই প্যাকে শসার রস পরিমাণে বেশি রাখা দরকার। সম্ভব হলে প্রতিদিনই এটি ব্যবহার করা যায়।
মিশ্র ত্বকের যত্ন: প্রতিদিন টোনার ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। সপ্তাহে দুই দিনই যথেষ্ট। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমে যাবে। যেকোনো ম্যাসাজ ক্রিম দিয়ে প্রথমে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। এরপর হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মুখ মুছে নিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তৈলাক্ত ত্বকে কখনো হালকা গরম পানিও ব্যবহার করা যাবে না। এরপর বাড়িতে বানানো যেকোনো প্যাক লাগাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শসার রসের পরিমাণ স্বাভাবিক রেখে মৌসুমি ফল দিয়ে প্যাক বানাতে হবে। এটি ত্বকবান্ধব।
শুষ্ক ত্বকের যত্ন: এতে টোনারের প্রয়োজন নেই। প্রতিদিনের ব্যবহারের ক্লিনজিং ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ, ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে। গাজর, কলা, সামান্য মসুর ডাল ও টক দই মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই ভালো মানের ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা চাই।
কেবল মুখের ত্বকের যত্ন নিলেই হবে না, শরীরের সব অংশের সমান যত্ন নিতে হবে। আবার অনেকে ত্বকের পরিচর্যা করলেও সেটি অব্যাহত রাখতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত উপকার পাওয়া যায় না। তাই এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যাতে ত্বক সুস্থ ও সুন্দর থাকে। ঠিক যেমন প্রতিদিন নিয়ম করে আমরা কর্মক্ষেত্রে যাই।
সুরবি প্রত্যয়ী
মডেল: মিথিলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন