ফিচার I বাতানুkool বিপত্তি
তীব্র গরম, প্যাচপ্যাচে ঘাম আর বাইরের উষ্ণায়ন পেরিয়ে এসে একবার এসি ঘরে সেঁধিয়ে যেতে পারলেই যেন শান্তি! কিন্তু ত্বকের জন্য যে তা অস্বস্তির কারণ, জানা থাকা চাই
সকালে কাজে বেরোতেই তৈরি এসি গাড়ি, দিনভর অফিসে ঠান্ডা ঘরে কাটানো, কোথাও যেতে-আসতে সেই কুল কন্ডিশন্ড বাহন আর বাড়ি ফিরে ফের সেঁধিয়ে যাওয়া ঠান্ডা ঘরের আরামে—গরমের দিনে এই গল্প দারুণ সুখকর শোনায়। কিন্তু ত্বকে এর প্রভাব মোটেই প্রীতিকর নয়। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, যাদের রুটিনটা এমন, তাদের ত্বক কেমন যেন খাপছাড়া! বডিওয়াশ দিয়ে গোসল, তারপর ময়শ্চারাইজারের আদর, রাতে নাইটক্রিমের শুশ্রূষা যত চলুক না কেন, কিছুতেই মুখ থেকে বিবর্ণ শুষ্কতা যাচ্ছে না। কারণ, আসল শত্রু লুকিয়ে আছে প্রতিদিনকার ব্যবহার্য বাতানুকূল যন্ত্রখানায়!
ঠিক যে কারণে শীতকালে ত্বকে টান ধরে, ঠোঁট ফাটে, একই কারণে এসিতে ত্বক শুকিয়ে যায়। তবে শীতের সঙ্গে এই ঠান্ডার পার্থক্য একটাই। শীতের সময় ঘরের ভেতর আর বাইরের তাপমাত্রার বিশেষ তারতম্য হয় না বলে ত্বক মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু এয়ারকন্ডিশনারের ক্ষেত্রে পার্থক্য বেশি হয়ে যায়, ফলে বিপত্তি দেখা দেয় ত্বকে। এসির ঠান্ডা বাতাসে আর্দ্রতা একেবারেই থাকে না। আর এই শুকনো বাতাস ত্বক থেকে স্বাভাবিক আর্দ্রতা শুষে নিতে থাকে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ত্বকের একদম উপরের স্তর অর্থাৎ এপিডার্মিস। ত্বক কমনীয়তা হারায়, অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে ওঠে হাত, পা আর মুখমন্ডল। অকালে সূক্ষ্ম রেখা দেখা দেয়। দ্রুত বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে।
এসির ঠান্ডার সঙ্গে ত্বকের শত্রুতার কথা তো জানা হলো। কিন্তু তা এই নয় যে গরমে ঘেমে-নেয়ে একাকার হতে হবে। বরং কিছু সাধারণ গাইডলাইন মেনে চলা গেলে ত্বকের শুষ্কতা, বিবর্ণতা আর বলিরেখার মতো ক্ষতির মাত্রা অনেকটাই কমানো সম্ভব।
ঘরে
বাড়ির ভেতর এসি ঘরে থাকার ফলে যদি ত্বকে শুষ্কতার সমস্যা দেখা যায়, দাওয়াই একটাই—একটানা সেখানে না থাকা। এমনকি যারা দীর্ঘক্ষণ এসিতে থাকেন এবং ত্বকে কোনো সমস্যা নেই, তাদেরও একই নিয়ম মেনে চলা চাই। এয়ারকন্ডিশন্ড রুমে একটানা ৯ ঘণ্টার বেশি থাকা উচিত নয়। অন্যথায় ত্বকে সমস্যা দেখা দেবেই। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতামত আরও কঠিন। একটানা দু-তিন ঘণ্টার বেশি এসিতে থাকা একদম বারণ। যদি খুব গরম লাগে, তবেই এসি চালানো উচিত।
বাইরে
শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের কারণে অফিসে ত্বকের ক্ষতিটা বেশি হয়। কারণ, দিনের আট থেকে নয় ঘণ্টা সময় তো সেখানেই কাটে। অফিসের এসি বন্ধ করা সম্ভব নয়, সে জন্য কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার। এটা সম্ভব হলে ক্ষতির মাত্রা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।
পর্যাপ্ত পানি পান
ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান জরুরি। এসির ঠান্ডা বাতাস ত্বক আর চুলকে শুকনো করে ফেলে। কারণ, যন্ত্রটি আর্দ্রতা শুষে নেয়। এ শূন্যতা পূরণের জন্য বেশি করে পানি পান জরুরি।
ফেনাহীন ক্লিনজার
সাধারণ ফেসওয়াশের বদলে বেছে নেওয়া চাই ফেনাহীন অর্থাৎ সাবানযুক্ত ক্লিনজার। এটি ত্বকের লোমকূপ বড় করে দেয়। ফলে তা গলে আর্দ্রতা বেরিয়ে যায় এবং এসির ঠান্ডা বাতাস তা দ্রুত শুষে নিয়ে ত্বককে করে তোলে ম্যাড়ম্যাড়ে, শুষ্ক।
ময়শ্চারাইজার মাস্ট
অফিসে ডেস্কের ড্রয়ারে ময়শ্চারাইজারের বোতল রেখে দেওয়া যেতে পারে। এসির ঠান্ডা হাওয়ায় একটানা থাকলে ত্বক শুকনো হয়ে আঁশের মতো উঠতে শুরু করে, দেখা দেয় ফাটা ভাব। আর এ সমস্যা এড়াতে ফ্র্যাগরেন্স ফ্রি ময়শ্চারাইজার দারুণ দাওয়াই। মুখ ছাড়াও হাত, পা, কনুই, হাঁটু ও পায়ের পাতায় ময়শ্চারাইজার মাখতে ভুল করলে চলবে না।
ফেস মিস্ট
একটা ফেস মিস্ট রাখা যেতে পারে সঙ্গে। কাজের ফাঁকে দু-তিন ঘণ্টা পর মুখে স্প্রে করে নিলেই চলবে। খানিকটা সময় অপেক্ষা করে বাড়তি মিস্ট ব্লটিং বা টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে হালকা ময়শ্চারাইজার বা ফেস সিরাম মাখিয়ে নিলেই ত্বক দেখাবে তরতাজা।
হিউমিডিফায়ার
মুখের শুষ্কতা রুখতে এ যন্ত্রের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হয়। অফিস ডেস্কের এক কোণে রেখে দিলেই চলবে। বিকল্পও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ফুলদানিতে পানি দিয়ে তাতে টাটকা ফুল রেখে ডেস্কে বসানো যেতে পারে। ত্বক তো বটেই, মনও থাকবে তরতাজা।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
অফিসে যদি সেন্ট্রালাইজড এয়ারকন্ডিশন সিস্টেম না থাকে, তবে সেটির নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। এ ক্ষেত্রে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা যা, এসিরও তার কাছাকাছি রাখা চাই। তাপমাত্রা রাখতে হবে ২৫ থেকে ২৭ ডিগ্রির মধ্যে। জানা থাকা ভালো, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের নিজস্ব ব্যবস্থা আমাদের ত্বকে আছে। এটি ঘাম আর তেল নিঃসরণের মাধ্যমে বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে অভ্যন্তরীণ আর্দ্রতা বজায় রাখে। ঘরের তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৭ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে ত্বক বিনা বাধায় কাজ করতে পারে। মাঝেমধ্যে এসি বন্ধ করে ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক করে নিলেও উপকার মিলবে। ত্বক বাইরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবে। আর যদি এসি সেন্ট্রালাইজড হয়, তাহলে উপায় একটাই—অফিস থেকে বাইরে বেরিয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় হেঁটে আসা যেতে পারে খানিকটা সময়। আর এমন জায়গায় বসে কাজ করা চাই, যেন সরাসরি এসির বাতাস ত্বকের সংস্পর্শে না আসে।
যত্ন জরুরি
সপ্তাহে এক দিন অয়েল ম্যাসাজ করা চাই আপাদমস্তক। এর ফলে তেল ত্বক আর চুলের গভীরে ঢুকে যায় এবং ঠান্ডার রুক্ষতা থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া হাইড্রেটিং ফেশিয়াল করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। সঙ্গে নারিশিং মাস্কের নিয়মিত ব্যবহার ত্বককে রাখবে আর্দ্র। চুলের যত্নে জরুরি ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট।
জাহেরা শিরীন
মডেল: অথৈ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন