এই শহর এই সময় I চিত্রপরিপার্শ্ব
পরিপার্শ্ব ও পরিপ্রেক্ষিত- দুটি বিষয়ই চিত্রকলায় গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রেমের মধ্যে রেখার জ্যামিতিক বিন্যাস এবং তা থেকে তৈরি হওয়া দৃষ্টিসন্নিবদ্ধতায় প্রকট হয় পরিপ্রেক্ষিত বা পার্সপেক্টিভের ধারণা; যা বিমূর্ততাকে জ্যামিতিক আকারে মূর্ত করে। একইভাবে শিল্পীর পারিপার্শ্বিকতাও চিত্রকর্ম গড়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বিদ্যমান দৃশ্যজগতের অভিঘাত তৈরি হয় শিল্পীর মনোজগতে।
পরিপার্শ্বের এই খেলা ফুটে উঠেছিল আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে প্রদর্শিত শিল্পী মহিউদ্দীন আহমেদের একক চিত্রকল্পে। যার শিরোনাম ছিল ‘ইমপ্রেশন অব সারাউন্ডিংস-ফাইভ’ বা ‘পরিপার্শ্বের প্রভাব-৫’। এতে স্থান পেয়েছিল প্রায় ৩০টি চিত্রকর্ম। এর চিত্রকর্মগুলোয় শিল্পীর আবেগ ও কল্পনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
নিজের ছবির বিষয়ে চিত্রকর মহিউদ্দীন আহমেদের বক্তব্য, ‘আমি আমার চারপাশের জগৎ দ্বারা প্রভাবিত এবং এই দৃশ্যমান পৃথিবীর তরঙ্গাভিঘাত প্রভাবিত বিক্ষুব্ধ আমার চেতনা, সেই সঙ্গে অবচেতন মনও। এবং সময়ের পরিক্রমায় ও অনুধ্যানে, এক উদ্ভাসন, যাকে আমি কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারি না, আমাকে ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে। এই প্রদর্শনীর চিত্রগুলো তাই আমার চারপাশের ফলস্বরূপ। সবাই বলে যে জীবন পুষ্পশয্যা নয়; কিন্তু আমার মতে, কাগজের এই ঢেউখেলানো ত্বকের মতোই, জীবনেরও রয়েছে উত্থান-পতন, তার মোহন সুন্দর কিছু মুহূর্ত আর অবশ্যই তার চোরাগোপ্তা এবড়োখেবড়ো গহ্বর, যা অতর্কিতে জীবনকেই দুমড়েমুচড়ে দিতে পারে, জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দিতে পারে। সেই সূত্রে মানবীয় মুহূর্তগুলোই আমি তুলে ধরতে চেষ্টা করি আমার ছবিগুলোতে।’
শিল্পী মহিউদ্দীন আহমেদ ১৯৭৬ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ থেকে ২০০৪ সালে চিত্রকলার ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ইতিমধ্যে তাঁর আটটি একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি তার নবমতম।
অন্যদিকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হলো মহানগরীতে। বছিলা ব্রিজ-সংলগ্ন ‘স্টুডিও ৪৮’-এর নিজস্ব গ্যালারি ও স্টুডিওতে আট দিনব্যাপী দলীয় এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিল ‘লাভ অ্যান্ড হোপ, হোপ অ্যান্ড লাভ’। নবীন ও প্রবীণ মিলিয়ে এতে ২০ জন চিত্রকরের কাজ প্রদর্শিত হয়েছে। অ্যাক্রিলিক, জলরঙ ও মিশ্র মাধ্যমে প্রকৃতি ও সমসাময়িক বিষয়, মানবাকৃতি বা মুখাবয়ব এবং লোকশিল্পসমৃদ্ধ চিত্রকল্প প্রদর্শিত হয়েছিল। অংশগ্রহণকারী চিত্রকরেরা হলেন রশিদ আমিন, রাশেদুল হুদা, আলপ্তগীন তুষার, অনুকূল মজুমদার, ফাহমিদা এনাম কাকলী, রাশেদ সুখন, নাজমুন নাহার কেয়া, ময়েজুদ্দিন লিটন, নারগিস আক্তার লতা, তারেক আমিন, সৌরভ চৌধুরী, মানিক বনিক, মনজুর রশিদ, খালেকুজ্জামান শিমুল, নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া, কাব্য কারিম, তাজরিয়ান তাবাসসুম, ফাহিম চৌধুরী, তর্পণ পাল ও শ্রীকান্ত রায় সুবীর।
স্টাফ রিপোর্টার
ছবি: সংগ্রহ