ফিচার I অন্য কোথাও
প্রথাছুট বিয়ে। নিজের শহর ছেড়ে দূরে। অন্য কোনো স্থানে, মনোরম ঠিকানায়। অনেকেই নিচ্ছেন এই রোমাঞ্চের স্বাদ
আগে বলা হতো, পুবের বোধনে নাকি পশ্চিমের মুক্তি! তাই পশ্চিমারা এদিকে এসে ওরিয়েন্টালিজমের চর্চা করে গেছেন। এখন কলিকাল! আকাশসংস্কৃতি এবং বিশ্বায়নের প্রভাবে পশ্চিমা ধাঁচেই সব ভাবতে ও করতে শিখেছে পুবের মানুষ। ডেস্টিনেশন ওয়েডিং তেমনই একটি সংস্কৃতি।
ডেস্টিনেশন ওয়েডিং হলো দূরে কোথাও গিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা। হানিমুনের কম্বো প্যাকেজও ঢুকে যেতে পারে এর ভেতরে। খুব কাছের আত্মীয়, বন্ধুদের নিয়ে ঘরোয়া আয়োজনই হলো এর মুখ্য উপাদান। শুরুতে পশ্চিমা তারকারা বিয়ের যাবতীয় গোপনীয়তা বজায় রাখতেই এর আয়োজন করত! সেখান থেকে ভ্রমণপ্রিয়, রোমান্টিক মানুষদের ভেতর এই চর্চা শুরু হয় মূলত দুটো কারণে। প্রথমত, মানুষ কম থাকায় খরচাপাতির ব্যাপারটা কম হয়। দ্বিতীয়ত, সেখানে যাওয়া অতিথিদের অধিকাংশই নিজের খরচ নিজে বহন করেন!
ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের অন্যতম সুবিধা হলো প্রথামাফিক বিয়ের ঝামেলা থেকে দূরে থাকা যায়। চাহিদামতো সবকিছুই করার সুযোগ থাকে। বিয়ের অনুষ্ঠানের পর আরও থাকা এবং ঘোরাঘুরির ব্যবস্থাও করা যায়। থাকতে পারে পছন্দমতো থিম। জবরজং সাজে না সেজে, গতানুগতিক প্রথার বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে। বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় বাড়ানো-কমানো যায়।
আমাদের এখানে ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের জন্য গাজীপুরের রিসোর্টগুলো পছন্দ করেন অনেকে। এরপরেই কক্সবাজার। বাংলাদেশের প্রথম ডেস্টিনেশন ওয়েডিং ওখানেই হয়েছিল। ২০১০ সালে ক্যানভাস সেটাকে ফলাও করে ছেপেছিল। তবে আশপাশের দেশে গিয়েও এ ধরনের বিয়ে কম হচ্ছে না। থাইল্যান্ড বা ভারতেও যাচ্ছে। জেনে রাখা ভালো, যে দেশেই বিয়ে হোক না কেন, স্থানীয় পর্যটন দপ্তর আর বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের জন্য কোর্টে যেতে হয়। (যদি না দেশে আইনি ব্যাপারটা আগেই সমাধা হয়)।
ওয়েডিং ফর ডামিস বইয়ের লেখক মার্সি এল ব্লুম ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ ধরনের বিয়েতে খুব কাছের প্রিয় মানুষজন ছাড়া কেউ আমন্ত্রিত থাকে না, তারা জড়ো হয় একটা ছোট্ট কিন্তু সুন্দর সামাজিক উৎসবে, অবকাশ যাপনের জন্য।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, নিউইয়র্কে ২০০ জন মানুষের এক বেলার খাবারের খরচের থেকেও কম খরচে ৪ দিনের ডেস্টিনেশন ওয়েডিং পরিকল্পনা করা সম্ভব।
সাধারণত নিয়ম হলো, নিমন্ত্রিত অতিথিরাই নিজেদের যাতায়াত, থাকা আর খাওয়ার খরচ বহন করেন। এ ধরনের বিয়ে সবার জন্য নয়; বিশেষ করে যারা নিজেদের কমফোর্ট জোনের বাইরে যেতে চান না। যাদের কাছে আত্মীয়রাই সব, তাদের জন্য তো নয়ই। কারণটা অর্থনৈতিক, পারিবারিক। এ ছাড়া সময়সাপেক্ষও।
পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ
বাংলাদেশে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং শুরু হয়েছে কয়েক বছর ধরে। এ দেশের বিয়ের সামাজিক রীতি-নীতি ডেস্টিনেশন ওয়েডিংবান্ধব নয়। কারণ, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-প্রতিবেশী, অফিস সহকর্মী, বন্ধুবান্ধবসহ হাজার মানুষ না এলে যেন অনুষ্ঠান খোলতাই হয় না। তাই অনেকে আলাদা দুটো অনুষ্ঠান করে থাকেন। একটা জনারণ্য ছেড়ে দূরে, আরেকটা আত্মীয়স্বজনের জন্য শহরে, বড় কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করে। আত্মীয়স্বজন নিয়ে রিসোর্টে ওঠার নজিরও আছে এ দেশে।
ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের সব সার্ভিস আয়োজন করার জন্য বেশ কিছু ওয়েডিং প্ল্যানার কাজ করছেন। অনলাইন ঘাঁটলেই তাদের নাম-ঠিকানা মেলে। মধ্যস্বত্বভোগীর দ্বারস্থ না হয়ে যারা নিজেরাই অ্যারেঞ্জ করতে চান, তাদের জন্য রিসোর্টগুলো রয়েছে। গাজীপুরের ‘ছুটি’সহ আরও কিছু রিসোর্ট ডেস্টিনেশন ওয়েডিং আয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা করে। এ ছাড়া কক্সবাজার জোনে রয়েছে রয়েল টিউলিপ, লং বিচ ও মারমেইড রিসোর্ট।
আল মারুফ রাসেল
ছবি: ড্রিম ওয়েভার