ফিচার I পুষ্টিকর পৌষ
এ মাসে পাওয়া শাকসবজি ও ফলমূল স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর। বিশেষত ঠান্ডাজনিত রোগবালাই সারাইয়ে যথেষ্ট ফলপ্রদ। লিখেছেন শিবলী আহমেদ
পালংশাক: ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এসব উপাদান আর্থ্রাইটিস ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধের পাশাপাশি কোলন ও ত্বকের ক্যানসার সারায়। প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় এই শাক খেলে হাড় সুগঠিত হয়। এ ছাড়া কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে পালংশাক।
ফুলকপি: ভিটামিন এ, বি ও সি ছাড়াও এতে আছে ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার। এ সবজিতে আয়রনের পরিমাণ বেশি। তা রক্ত উৎপাদন করে। গর্ভবতী, শিশু ও কঠোর পরিশ্রমীদের সুস্বাস্থ্যের জন্য ফুলকপি বেশ উপাদেয়। চর্বি না থাকায় এই সবজিতে খারাপ কোলেস্টেরল নেই। পাকস্থলী, মূত্রথলি, প্রোস্টেট, স্তন ও ডিম্বাশয় ক্যানসার প্রতিরোধে ফুলকপি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শীতকালীন জ্বর, কাশি, সর্দি ও টনসিল সারায়।
মুলা: এতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেশি। এ ছাড়া শর্করা, চিনি, ফাইবার, স্নেহ, প্রোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়েসিন, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, ফোলেট, বিটা-ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও দস্তার আকর। এসব উপাদান নানা রোগের পথ্য। বিটা-ক্যারোটিন হৃদ্্রোগের ঝুঁকি কমায়। মুলা খেলে শরীরের ওজন কমে। আলসার ও বদহজম উপশমে ভূমিকা রাখে। কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরিতে বাধা দেয়। দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। ত্বকের সৌন্দর্যও ফুটিয়ে তোলে।
গাজর: শর্করা, চিনি, ফাইবার, স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন, বিটা ক্যারোটিন, লুটিন জিজানথেন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়েসিন, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, ফোলেট, ভিটামিন সি ও ই, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, দস্তা ও ফ্লুরাইডের উৎস গাজর। উপাদানগুলো শরীরের কোনো না কোনো রোগ সারায়। গাজর অন্ত্রের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। গাজরের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ব্যবহার করলে চামড়ার মরাকোষ দূর হয়।
টমেটো: এতে আছে শর্করা, চিনি, ফাইবার, স্নেহ, প্রোটিন, বিটা ক্যারোটিন, লুটিন জিজানথেন, থায়ামিন, নিয়েসিন, ভিটামিন বি, সি, ই ও কে, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও লাইকোপেন। ভিটামিন সি চুলের রুক্ষতা দূর করে। শীতজনিত রোগ সারায়। চর্মরোগ ও স্কার্ভি প্রতিরোধেও সক্ষম টমেটো। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে লড়ে। এ ফলের লাইকোপিন পেশি মজবুত করে।
শিম: আমিষের ভালো একটি উৎস শিম। এ সবজির বীজ ডাল হিসেবেও খাওয়া হয়। তাতে আমিষসহ প্রচুর পরিমাণে স্নেহ পদার্থ থাকে। আঁশসমৃদ্ধ হওয়ায় শিম পরিপাকে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়। সবজিটি খেলে ডায়রিয়া কমে। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে হৃদ্রোগ থেকে রেহাই দিতে পারে। পাকস্থলী ও প্লীহার শক্তি বাড়ায় শিম। লিউকোরিয়াসহ নারীর নানা ধরনের রোগ সারায়। এর ফুল আমাশয় রোগের পথ্য।
বাঁধাকপি: শর্করা, চিনি, ফাইবার, স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়েসিন, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি ও সি, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, লোহা, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও দস্তার উৎস বাঁধাকপি। ভিটামিন সি হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। আঁশজাতীয় খাবার হওয়ায় এটি শরীরের স্থূলতা কমায়। আলসার প্রতিরোধেও সক্ষম বাঁধাকপি। বিশেষ করে পাকস্থলী ও পেপটিক সারাইয়ে এর জুড়ি নেই।
জলপাই: এ ফলে আছে খাদ্যশক্তি, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন এ, সি ও ই। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ফলটি ভরপুর। জলপাই খেলে কোলেস্টেরল কমে। ফলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। ভিটামিন ই থাকায় ফলটি খেলে ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস হয়। এতে ক্যানসার কোষ বাড়তে পারে না। মনোস্যাচুরেটেড চর্বি থাকায় জলপাই প্রদাহবিরোধী। হাড় ক্ষয় সমস্যায় এ ফলের তেল ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত জলপাই খেলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার কমে। পিত্তরস ভালোভাবে কাজ করে। ফলে পিত্তে পাথর জমতে পারে না। শরীরে আয়রনের জোগান দিতে পারে ফলটি। ভিটামিন এ থাকায় জলপাই খেলে চোখ সুরক্ষিত থাকে। জীবাণুর আক্রমণ, চোখ ওঠা ও চোখের পাতায় ইনফেকশনজনিত সমস্যা দূর হয়। এর ভিটামিন সি সর্দি-কাশির দাওয়াই। এমনকি রক্তে চিনির ভারসাম্য বজায় রেখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে জলপাই। ত্বক ও চুলের যত্নেও কাজে লাগে। এর তেল মাখলে চুলের গোড়া শক্ত হয়। ভিটামিন ই ত্বক মসৃণ করে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে চামড়ায় যে ক্ষতি হয়, তা সারাই করতে পারে জলপাই।
বরই: এ ফলে আছে শকর্রা, আমিষ, চর্বি, থায়ামিন, নিয়েসিন, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন এ, বি ও সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, জিংক ও সোডিয়াম। ভিটামিন সি গলার ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে। টনসিলাইটিস, ঠোঁটের কোণে ঘা, ঠান্ডার কারণে জিভে লালচে ব্রণের মতো হয়ে ফুলে যাওয়া এবং ঠোঁটের চামড়া ওঠা রোধ করে। বরইয়ের রস অ্যান্টি-ক্যানসার। এই ফল টিউমার সেল এবং লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়ে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের দাওয়াই বরই। ডায়রিয়ায় ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। মুটিয়ে যাওয়া, রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা এবং ব্রঙ্কাইটিস সারায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। সর্দি কাশি থেকে সুরক্ষা দেয়। মানসিক দুর্বলতা কাটায়। হজমে উপকারী। হাড় শক্ত ও মজবুত করে। বরইয়ের আয়রন ও ফসফরাস রক্ত উৎপাদন ও সঞ্চালন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে। মাংসপেশি শক্তিশালী করতে এ ফলের ভূমিকা আছে। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না বরই। ত্বক কোমল রাখে এবং রোদে পোড়া দাগ দূর করে।
সফেদা: এতে আছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন এ, বি ও সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, কপার ও আয়রন। ত্বক ও হাড়ের ইমিউনিটি গড়ে তোলে সফেদা। চুল ও দাঁতের জন্যও উপকারী। মেটাবলিক ফাংশন ভালো রাখে। ক্যানসার প্রতিরোধ করে। কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় সফেদার বীজের নির্যাস কিডনির পাথর সারাতে ব্যবহৃত হয়।
ডালিম: এ ফলে আছে শর্করা, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ও ভিটামিন সি। ডালিম হৃদ্পি-ের সুস্থতা নিশ্চিত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কুষ্ঠরোগ সারাইয়েও উপকারে আসে। তা ছাড়া ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, হজমশক্তি বাড়ায় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে।
আমলকী: ক্যারোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন সি এর ভালো উৎস আমলকী। এ ফলের রস যকৃৎ, পেটের পীড়া, হাঁপানি, কাশি, বহুমূত্র, অজীর্ণ ও জ্বর নিরাময়ে বিশেষ উপকারী। জন্ডিস, বদহজম ও কাশি সারাইয়ে কাজে লাগে। এ ছাড়া আমলকী খেলে স্কার্ভি, আলসার, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস, ক্ষুধামান্দ্য দূর হয়। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে, গলা ব্যথা ও ঠান্ডা দূর করতে, হৃদ্রোগের ঝুঁকি, রক্তের সুগার ও শরীরের চর্বি কমাতেও আমলকী কার্যকর। হাড় মজবুত করার পাশাপাশি রক্ত পরিষ্কার রাখে ফলটি। চুলের যত্ন ও খুশকি দূর করতে আমলকীর ব্যবহার আছে।
ছবি: ইন্টারনেট