ফিচার I পথ থেকে দোকানে
ফুটপাতের খাবার দোকানে ঢুকতে শুরু করেছে। তা স্পর্শ করছে শহুরে অভিজাতদেরও
চা চাই
এই ভূখন্ডে চায়ের আসক্তি বিংশ শতাব্দীর দান। চা চাই! গুলশানের নতুন টংদোকান, তবে অভিজাত। গত বছরের ১৪ এপ্রিলের অর্থাৎ পয়লা বৈশাখে যাত্রা শুরু করেছে চা চাই। গুলশান অ্যাভিনিউর ব্রিউ অ্যান্ড বাইটস ক্যাফেকে তো নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই; তাদেরই উদ্যোগ এটা। বাঙালির চায়ের যে সংস্কৃতি দাঁড়িয়েছে, তাকে উদ্যাপন করতে আর ভিন্নমাত্রা দিতেই চাই’স। চাই’স মূলত টেক অ্যাওয়ে খাবারের কারবারি। হয় দাঁড়িয়ে খান, নয়তো নিয়ে যান। ফুটপাতে নিয়ন আলোয় তাদের প্রচারণা আর কার্গো কনটেইনারের আউটলেট দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ার উপায় রাখেনি।
চাই’স-এর মেনু এখন তিন ভাগে বিভক্ত—চা চাই, রোল চাই আর জুস চাই। তিন চাই-য়ের আবার পদ প্রকরণ অনেক। রং-চা, হারবাল-চা, দুধ-চা, বাদাম-চা, মসলা-চা, চকলেট-চা, মালটোভা-চা, মালাই-চা আর তান্দুরি-চা। এখানের হিট আইটেম শেষের পদটিই। কলকাতায় যেভাবে তৈরি হয়, এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। দাম ২০ থেকে ৭০ টাকার ভেতরে। সংগত হিসেবে পুরান ঢাকার বাকরখানিও রয়েছে তালিকায়—দাম ১৫ টাকা। কলকাতার বিখ্যাত রোলের আদলে এখানেও রয়েছে বিভিন্ন পদের ভেজিটেবল রোল, চিকেন রোল আর বিফ রোল। দাম ১৫৫ থেকে শুরু, শেষ ২৩৫ টাকায়। নানা পদেও রিফ্রেশিং জুস, সিজনাল ফ্রেশ জুস, স্মুদি আর মিল্কশেক রয়েছে জুস চাই-এর তালিকায়। ৬৫ থেকে ১৫০ টাকার ভেতরে সব আইটেম। আর রয়েছে কাশ্মীরি ফালুদা। দাম ১৫০ টাকা।
ঠিকানা: ১১২, গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা ১২১২। ফোন: ০১৭৯৮৭৭৯৯৯৯।
তানতাবা টি
ঢাকার মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের এক নিরিবিলি গলিতে এর অবস্থান। উদ্যোক্তা তানজিম আর তাবাসসুম মডেল জুটি। খুব বেশি দিন হয়নি এই দোকানের বয়স। নভেম্বরের ২৫ তারিখ আনুষ্ঠানিক শুরু। টংদোকান মানেই যে দেশি স্বাদের বাহারি চা, সেই কনসেপ্টের পুরো বাইরে এই দোকান।
চমৎকার ইন্টেরিয়র করেছেন তাবাসসুম। দেয়ালচিত্র, প্রপস, বসার জন্য রাস্টি উডেন বেঞ্চ, চেয়ার—সবই তার কীর্তি। দোকানের চায়ের তালিকায় তাকালে চোখে পড়ে মিন্ট, রাস্পবেরি, ক্র্যানবেরি, ম্যাংগো, পিচ, পমিগ্রেনেট, অ্যাপল, স্ট্রবেরি, ল্যাভেন্ডার, ক্যামোমিল, জেসমিন। সবই ফ্লেভার্ড টি। সার্ভ করা হয় ক্রিম চিজ দিয়ে। চায়ের দোকানে দুধ-চা না হলে তো আর হয় না। তাই রয়েছে কোকোনাট, স্যাফরন, নাটেলা, পিনাট বাটার। এগুলোর ওপরেও ভাসতে দেখা যায় ক্রিম চিজ। আর চা-এর সঙ্গে টা হিসেবে রয়েছে চিজি স্যুপ নুডলস, ব্রাউনি, মার্শমেলো কুকিজ আর চকলেট চিপস কুকিজ। এ ছাড়া রয়েছে হট চকলেট আর হট কফি। এগুলোর ওপরেও ভাসতে থাকে ক্রিম চিজ।
ক্রিম চিজ, ব্রাউনি, কুকিজ—সব তৈরি হয় ঘরেই। তানজিম বললেন, ‘মায়ের হাতে তৈরি হয় প্রতিদিন এগুলো। আর ফ্লেভার্ড সব চায়েরই উপাদান বাইরে থেকে আনা হয়।’
ঠিকানা: টি-৩৬, নূরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। ফোন: ০১৬৮৪৯৩৩৭৬৭।
ফুচকাওয়ালি
বাঙালির রসনায় বৈকালিক সুখের নাম ফুচকা। খানিকটা মুচমুচে ও কোমল। তৈরি হয় আলু, চটপটি, মরিচ, পেঁয়াজ, বিট লবণ আর ধনেপাতার পুর দিয়ে। যিনি প্রথম এই পদ আবিষ্কার করেন, সম্ভবত তিনি কাশীনিবাসী। ফুচকার বঙ্গাগমন নিয়ে গবেষণাও হতে পারে।
রাস্তার খাবার যখন দোকানে ঠাঁই নিচ্ছে, এটাই-বা বাদ পড়বে কেন! তাই বনানীর ফুড স্ট্রিট তথা ১১ নম্বর সড়কে হাজির ফুচকাওয়ালি। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে। শাফকাত নূর আর তার স্ত্রী এর উদ্যোক্তা। ভোজনরসিক স্থপতি যুগলের স্বপ্ন ছিল ফুড বিজনেসের, তারই প্রতিফলন এটি।
কেন ফুচকা? তারা জানালেন, কী খাবার দিয়ে শুরু করা যায়, ভাবতে ভাবতেই মাথায় আসে ফুচকার কথা। জনপ্রিয় কিন্তু এখনো আন-হাইজেনিক! তাই মাথায় আসে ফ্রেশ, হেলদি আর হাইজেনিক ফুচকা সার্ভ করার চিন্তা—সঙ্গে একটু টুইস্ট হিসেবে রইল ভিন্ন ফ্লেভার। বহু গবেষণা আর নিরীক্ষার পর ফুচকাওয়ালির এই মেনু দাঁড়িয়েছে।
ফুচকাওয়ালির ফুচকা হাতে তৈরি আর ভাজাও হয় ফ্রেশ তেলে। এমনকি যখন ফুচকার ভেতরে পুর ভরা হয়. তখনো হাতে থাকে গ্লাভস আর মাথায় থাকে ক্যাপ।
ফুচকাওয়ালির মেনুতে রয়েছে মুম্বাইয়া, পেশোয়ারি, বোলোনিজ, ইসান। মুম্বাইয়া হলো প্রথাগত ভারতীয় ঘরানার ফুচকা, চাটনি আর দইসহযোগে পরিবেশিত হয়। পেশোয়ারি হলো বিফ বা চিকেন দিয়ে তৈরি, চাটনি আর স্পেশাল সস দিয়ে পরিবেশন করা হয়। বোলোনিজ বিফ বা চিকেন দিয়ে তৈরি হয় আর ইতালিয়ান স্বাদ আনতে দেওয়া হয় হোয়াইট সস। ইসান হলো থাই ঘরানার ফুচকা। এ ছাড়া রয়েছে প্রথাগত ঢাকাইয়া ফুচকা, চটপটি। চিকপি চাট রয়েছে। সব ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। গলা ভেজানোর জন্য লাচ্ছি, প্লাম জুস আর লেমনেড। রয়েছে মুজ কেক ৭৫ থেকে ১২০ টাকার রেঞ্জে।
ঠিকানা: ১৫৩, রোড ১১, ব্লক ই, বনানী।
শাহি মুড়ি
কখনো মুড়ি খাননি এমন বাঙালি বিরল। এই অঞ্চলে মুড়ি কারও নৈমিত্তিক, কারও বা শখের খাবার। ঘরোয়া আড্ডায়, ইফতারে, একটু বৃষ্টির দিনে বা শীতের বিকেলে—খাবারটি অনেকেরই পছন্দ। আর যদি তা হয় রাস্তার ঝালমুড়িওয়ালার মাখানো, তবে তো কথাই নেই। তবে ফুটপাতের ঝাল মুড়ি আজকাল দোকানে ঢুকেছে। গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডের লেকের ধারে সেই নিদর্শন মিলছে।
পুরান ঢাকার অলিতেগলিতে যে মুড়িমাখা পাওয়া যায়, তা মিলবে এখানে। বসার ছোট্ট একটুখানি জায়গা, আর মুড়ি মাখানোর আয়োজন বেশ চোখে পড়ার মতো। দোকানের বয়স চার বছরের বেশি। সপ্তপদী মুড়ির কারবার এখানে। মসলা, ডিম, মুরগি, কোয়েল, গরুর কালা ভুনা, কবুতর, হাঁস ইত্যাদির মাখানো মুড়ি মিলবে। তবে হাঁস আগে অর্ডার করতে হয়, আর গরুর কালা ভুনার মুড়ি ভর্তা স্রেফ শুক্রবারে হয়। দাম শুরু ২৫ টাকা থেকে আর শেষ ৯০০ টাকায়! সবচেয়ে কম দামি যে মুড়ি ভর্তা এখানে, সেটাও এতই মসলাদার আর ভারী যে সেটা খেলেই মোটামুটি পেটে একটা জায়গার দখল নিয়ে রাখে কিছু সময়ের জন্য। এটা হলো বেসিক মুড়ি ভর্তা। অন্যগুলো উপকরণ আর পরিমাণের তারতম্য ঘটিয়ে তৈরি করা হয়। যেমন ১০০ টাকার মুরগি-মুড়ির যুগলবন্দি দুজন একসঙ্গে উপভোগ করতে পারে।
এখানে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের পানীয়, ফুচকা ইত্যাদিও। এ দোকানে রয়েছে মুড়ি পার্সেলের ব্যবস্থা। যারা হাঁস বা অন্য স্পেশাল অর্ডার করতে চান, তাদের জন্য ফোন নম্বর ০১৯১৩৭৬৭০৬২। আর ঠিকানা: বাড়ি ২, সড়ক ৪, মধ্যবাড্ডা, ঢাকা ১২১২।
আল মারুফ রাসেল
ছবি: ইন্টারনেট