skip to Main Content

ফুড বেনিফিটস I আনারস

অভিজাত ফল। এটি কেবল দৃষ্টিনন্দনই নয়, স্বাদে, গন্ধে এবং পুষ্টিতে অসামান্য। নানা অসুখের দাওয়াইও বটে। রূপচর্চায়ও এর গুণপনা সর্ববিদিত

আনারসের আদি নিবাস ব্রাজিল কিংবা প্যারাগুয়ে। সুস্বাদু এই ফল অতীতে ছিল উৎসব-পার্বণের খাবার। মিষ্টিখাদ্য অপ্রতুল হওয়ায় রাজ-রাজড়াদের টেবিলে থাকত এটি। এমনকি একসময় অন্দরসজ্জার জন্য ভাড়া দেওয়া হতো। এমনটা ছিল মার্কিন মুলুকে। আনারস দিয়ে টেবিল সাজানোকে সে দেশে সৌভাগ্যের ব্যাপার মনে করা হতো। কিন্তু ফলটি এতই দুষ্প্রাপ্য ছিল যে টেবিল সাজাতে তা ভাড়া করে আনা ছাড়া উপায় ছিল না। অনুষ্ঠানে আনারসের উপস্থিতি দেখিয়ে পরে ফেরত দেওয়া হতো। সেখানে এমন রেওয়াজ ছিল।
ইউরোপে আনারস আসে কলম্বাসের হাত দিয়েই। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে প্রাচীন ও আদিম জনগোষ্ঠীর মৃতদেহের পাশে ফলটি পড়ে থাকতে দেখেছিলেন এই নাবিক। ১৪৯৩ সালের কথা। ভারতবর্ষে আনারস আসে পর্তুগিজদের মাধ্যমে। ১৫৪৮ সালে কেরালায়। পর্তুগিজরা একে ‘অ্যানানাস’ বলে। সে থেকেই ফলটির এরূপ বাংলা নাম। অ্যানানাস মানে চমৎকার ফল। খ্রিস্টান মিশনারিজের মাধ্যমে কেরালা থেকে তা মেঘালয়ে আসে। গারো পাহাড়ের খাঁজে শুরু হয় এর চাষ। বাংলায় প্রবেশ করে ১৯৪২ সালে। মধুপুর জেলার ইদিলপুরে। গারোরা মেঘালয় থেকে তা এনেছিল।
আমাদের দেশে কাঁচা ও পাকা- উভয় অবস্থাতেই এটি খাওয়া হয়। কাঁচা আনারসের চাটনি বেশ মুখরোচক। পাকা ফল দিয়ে জ্যাম, জেলি, স্কোয়াশ ও রস তৈরি হয়। আনারস থেকে অ্যালকোহল ভিনেগার ও সাইট্রিক অ্যাসিড উৎপাদন করে কিছু দেশ। রান্নায় ও স্যালাডে এর ব্যবহার আছে। রেড ইন্ডিয়ানদের ধর্মীয় উৎসবে অপরিহার্য ফল আনারস। এটি দিয়ে উন্নত মানের মদও প্রস্তুত হয়।
প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে আছে ৫০ কিলোক্যালোরি শক্তি, প্রোটিন ০.৬ ভাগ, খনিজ পদার্থ ০.৫ গ্রাম, শর্করা ১৩.১২ গ্রাম, ভিটামিন সি ৪৭.৮ মিলিগ্রাম, ০.১১ গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-২, সহজপাচ্য ফ্যাট ০.১২ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, লৌহ ১.২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০২ গ্রাম এবং আঁশ ১.৪ গ্রাম। এসব উপাদান শরীরের নানা ধরনের বালাই সারাইয়ের কাজ করে। হজমশক্তি বাড়ায়। পেটের প্রায় সব সমস্যা ও বদহজমে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত গ্রহণে ধীরে ধীরে হজমতন্ত্র উন্নত হয়। ফলটির ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হাড় গঠনে ভূমিকা রাখে। অস্থিসন্ধির সুরক্ষা দেয়। খালি পেটে কিংবা খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর, টানা এক মাস নিয়মিত আনারস খেলে ইউরিক অ্যাসিডজনিত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। দাঁত মজবুত রাখে। মুখের ভেতরের সংক্রমণ রোধ করে। শরীরের স্থূলতা কমায়। প্রাতরাশে নিয়মিত এর জুস পান করা যেতে পারে। কিংবা স্যালাডে রাখলেও উপকার মিলবে। আনারসের বিটা ক্যারোটিন রেটিনা সুস্থ রাখে। ভাইরাসজনিত ঠান্ডা, জ্বর ও কাশি সারায়। জ্বরের অন্যান্য উপসর্গও দূর করে ফলটি। নাক দিয়ে পানি ঝরা, গলাব্যথা ও ব্রঙ্কাইটিসে এটি ওষুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। কৃমিনাশে খালি পেটে খেতে হবে ফলটি। এর পানিতে দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি শরীর ফ্রি র‌্যাডিকেল থেকে সুরক্ষা দেয়। ফলে ক্যানসার কিংবা হৃদরোগের মতো জটিলতা কাছে ঘেঁষতে পারে না। আনারসে ব্রোলামিন নামের প্রোটিওলাইটিক এনজাইম আছে। উপাদানটি প্রোটিন ভাঙতে কার্যকর। এটি প্রদাহনাশী এবং শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।

এতে শিরা-ধমনির প্রাচীরে রক্ত জমে না। ফলে শরীরে সঠিকভাবে তা প্রবাহিত হতে পারে। রক্ত পরিষ্কার রেখে হৃৎপিন্ডের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে ফলটি। এতে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ সহজ হয়। ফলটির ব্রোলামিন হাঁপানি ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আনারস অ্যাসপিরিনের বিকল্প হিসেবেও গণ্য। বাতের ব্যথায় আরোগ্য মেলে। এই ফলে থাকা ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, জিঙ্ক, কপার, ফোলেট প্রজননক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আঁশজাতীয় ফল হওয়ায় এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। তবে মিষ্টত্বের কারণে খেতে হয় নির্দিষ্ট মাত্রায়, চিকিৎসকের পরামর্শে। মোশন সিকনেস থাকলে, ভ্রমণের দিন সকালে খালি পেটে পাকা আনারস খেয়ে যাত্রা শুরু করা যেতে পারে। তাতে অস্বস্তি থাকবে না, বমি ভাবও চলে যাবে। এটি জন্ডিস রোগের পথ্য। সাইনোসাইটিসের সঙ্গে লড়ে। দীর্ঘকালের কোষ্ঠকাঠিন্যের নিরাময় চাইলে আনারস খাওয়া যেতে পারে। ক্ষুধা বাড়ানোর কাজেও ফলটির সুনাম আছে।
শরীরের অভ্যন্তরীণ রোগ সারাইয়ের পাশাপাশি রূপচর্চায়ও কাজে লাগে আনারস। ত্বকের তৈলাক্তভাব দূর করতে এবং ব্রণনাশে এই ফলের কদর আছে। এটির প্রোটিন চামড়ার মৃতকোষ দূর ও ত্বক কুঁচকে যাওয়াও প্রতিরোধ করে। আনারসের ভিন্ন আরেকটি ব্যবহার আছে। এর পাতা ও বর্জ্য ব্যবহার করে প্রাকৃতিক আঁশ তৈরি করা হয়। তা থেকে বানানো হয় সুতা, কাপড় ও পোশাক। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় এই ফলের আঁশ ব্যবহার করে হস্তশিল্পের প্রসার ঘটেছে।
এ ফলের অনেক গুণ। কিন্তু ভয়াল রূপও আছে। তাই বাছবিচার করে খেতে হয়। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রকট, তারা খালি পেটে আনারস খেলে অসুস্থ হতে পারেন। গর্ভাবস্থায় এই ফল খেতে চিকিৎসকেরা নিষেধ করেন। এর ব্রোলামিন উপাদান জরায়ুকে নমনীয় করে। ফলে মিসক্যারেজের আশঙ্কা তৈরি হয়। আনারস খেলে অনেকের অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। ফুসকুড়ি ও চুলকানি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top