ফিচার I আম্রপরিচয়
আমের জগৎ বৈচিত্র্যময়। কিন্তু এই ফলের একেকটি জাত আলাদাভাবে চিনবেন কীভাবে? শুধু নাম দিয়ে? আকৃতি ও আবরণ সম্পর্কেও তো জানতে হবে। জানাচ্ছেন শিবলী আহমেদ
কোনটি কী আম চেনার জন্য বিক্রেতার ওপরই নির্ভর করতে হয় অনেকেরই। তাতে ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সে জন্যই আম চেনার উপায় জেনে নেওয়া ভালো।
ফজলি: আকারে বড়সড়। দীর্ঘ ও চ্যাপ্টা গড়ন। একটির ওজনই আধা কেজির ওপরে। পাকলে সবুজাভাব হলুদ। শাঁস হলুদ। আঁশ নেই। স্বাদে মিষ্টি। খোসা পাতলা।
ল্যাংড়া: প্রায় ডিম্বাকৃতি। পাকলে ঈষৎ হলুদ হয়। শাঁস হলুদ। খোসা পাতলা, বোঁটা চিকন। আঁটি বেশ পাতলা।
গোপালভোগ: মাঝারি গড়নের। কিছুটা লম্বা। প্রস্থে গোলাকার। ফলের উপরের দিকটা উঁচু। প্রতিটির ওজন ২০০ গ্রামের কিছুটা বেশি। বোঁটা শক্ত। পাকলে বোঁটার আশপাশে হলুদ বর্ণ হয়। বাকিটা কালচে সবুজ। আমে আঁশ নেই। শাঁস কমলাভাব। খোসা সামান্য পুরু। আঁটি পাতলা।
ক্ষীরশাপাতি: মাঝারি গড়নের। গোলাকার। একেকটির ওজন আড়াই শ গ্রাম ছাড়িয়ে যায়। বোঁটা মোটা ও শক্ত। আমের খোসা বেশ মসৃণ ও কিছুটা মোটা। পাকার পরও আমের নিচের অংশের রং সবুজ থাকে। আঁশহীন। শাঁস হলুদ। খোসা ছাড়ালেই শাঁস আঁটি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চায়। স্বাদে বেশ মিষ্টি।
রানিপছন্দ: ছোট আকৃতির। গোলাকার। বোঁটা শক্ত। পাকলে হলুদ হয়। আঁশ নেই। ত্বক মসৃণ। খোসা পাতলা। এটি কেটে খাওয়ার উপযোগী নয়। পাকা আমের খোসা ছাড়ালে আঁটি ছেড়ে শাঁস বেরিয়ে আসতে চায়। শ্বাসের রঙ কমলাটে। প্রতিটির ওজন প্রায় ১৬০ গ্রাম হয়।
হিমসাগর: পাকলে সবুজাভাব হলুদ। প্রতিটির ওজন ২০০ গ্রামের বেশি। ত্বক মসৃণ। খোসা মাঝারি ধরনের পুরু। আঁটিও মাঝারি। শাঁস গাঢ় হলুদ, প্রায় কমলাটে। আঁশ নেই।
কোহিতুর: মাঝারি গড়নের। বড়সড় একেকটির ওজন ৩০০-৫০০ গ্রামের মধ্যে। বোঁটা থেকে মাঝ বরাবর মোটা ও গোলাকার। কিন্তু নিচের দিকটা চিকন। খোসা মাঝারি পুরু। শাঁস হলুদ। আঁশ নেই।
বোম্বাই: মাঝারি গড়নের। একেকটির ওজন সাড়ে ৩০০ গ্রামের বেশি। লম্বায় ১১ সেন্টিমিটার, চওড়া ৮ সেন্টিমিটার। পেকে গেলেও সবুজ থাকে। শাঁস হলুদ ও শক্ত। আঁটি আঁশযুক্ত ও পাতলা। খোসা কিছুটা পুরু।
গোবিন্দভোগ: গোলাকার, কিছুটা চ্যাপ্টা প্রকৃতির। ওজন প্রায় সাড়ে ৩০০ গ্রাম। খোসা সামান্য পুরু। শাঁস লাল ও হলুদ মিশ্রবর্ণ। বেশ রসাল।
কুয়াপাহাড়ি: মাঝারি গড়নের ডিম্বাকৃতির। গড় ওজন ৩০০ গ্রাম। পাকলেও খোসার রঙ সবুজ থাকে। খোসা পুরু। শাঁস শক্ত, গাঢ় হলুদ বর্ণের। সামান্য আঁশ আছে।
সূর্যপুরী: ছোট আকারের। ডিম্বাকৃতি। ওজনও কম, গড়ে দেড় শ গ্রাম। পাকলে হলুদ হয়। শাঁস গাঢ় হলুদ ও আঁশযুক্ত। রসে ভরপুর।
আশ্বিনা: তির্যক। সামান্য চ্যাপ্টা গড়ন। ত্বক কালচে সবুজ। নিচের দিকটা চোখা। পাকলেও সবুজ থাকে। খোসা মাঝারি মোটা। শাঁস হলুদাভাব কমলা। কয়েকটির আবার কমলাটে লাল। একেকটি আমের ওজন আধা কেজির বেশি হয়। আঁটিতে আঁশ নেই।
গোলাপখাস: মাঝারি গড়নের ডিম্বাকৃতির। গড় ওজন ৩১৫ গ্রাম। ত্বক মসৃণ। পাকার আগে বোঁটার আশপাশের অংশ লাল হয়ে যায়। ত্বক হলুদ। পাকা আমের সুবাস অনেকটা গোলাপফুলের মতো। শাঁস কমলাটে। অত্যন্ত রসাল ও মিষ্টি।
কিষানভোগ: মাঝারি আকারের। গড় ওজন ৩০০ গ্রাম। গোলাকার। বোঁটার কাছে সামান্য গর্ত থাকে। ত্বক মসৃণ। পাকা ফল হলুদ। খোসা সামান্য পুরু। শাঁস হলুদ, মোলায়েম ও আঁশহীন।
গৌরজিত: ছোট আকারের। গড়ন তির্যক। নিচের অংশ সামান্য বাঁকানো। উপরের অংশের তুলনায় নিচের দিকটা সরু। পাকা ফলের রঙ হালকা হলুদ। ত্বক মসৃণ। খোসা পাতলা। শাঁস হলুদ ও মোলায়েম।
আলফাজ বোম্বাই: মাঝারি আকারের। গোলাকৃতি, তবে নিচের দিকটা সামান্য লম্বা। পিঠের চেয়ে পেটের দিকটা সামান্য উঁচু। পাকা আমের রঙ সবুজ ও হলুদ মিশ্রিত। খোসা পাতলা ও মসৃণ। শাঁস কিছুটা শক্ত, হালকা কমলা বর্ণের।
বৃন্দাবনী: ছোট আকারের। প্রায় ডিম্বাকৃতি। ত্বক মসৃণ, খোসা পাতলা। পাকা ফলের রঙ হলুদ। শাঁস হলুদ। আঁটিতে আঁশ নেই।
মিশ্রীকান্ত: লম্বা। নিচের দিকটা ধনুকের মতো বাঁকা। পাকা আমের রঙ সবুজ ও হলুদ মিশ্রিত। বোঁটার অংশে কিছুটা লালবর্ণ ধারণ করে। খোসা পাতলা। ত্বক মসৃণ। শাঁস হলুদ রঙের। আঁটিতে আঁশ নেই। এটি অতিরিক্ত মিষ্টি।
দুধসর: অনেকটা চ্যাপ্টা গড়নের, লম্বা। বড় ও ছোট- উভয় আকারের হয়। বড়টি পাকলে সবুজাভাব হলদে রঙ ধারণ করে। ছোটটি হলুদ হয়। খোসা পুরু। আঁটিতে আঁশ থাকে না। শাঁস হলুদ ও মোলায়েম।
নাক ফজলি: গড়ে ৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। নিচের দিকটা সামান্য বাঁকা। যেন সুচালো হয়ে নাক বেরিয়ে আছে। আঁটি লম্বা। পাকা আমের ত্বকে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের মিশ্রণ দেখা যায়।
হাঁড়িভাঙ্গা: এই আমের তিনটি প্রজাতি হয়। প্রথমটি গোলাকার ও ছোট। দ্বিতীয়টি গোলাকার ও বড়। তৃতীয়টি ছোট ও লম্বাটে। প্রথমটির গড় ওজন প্রায় আড়াই শ গ্রাম। দ্বিতীয়টি পাকলে বোঁটার ধারে লাল বর্ণ ধারণ করে। সব ধরনের হাঁড়িভাঙ্গা আমের খোসা পাতলা, ত্বক মসৃণ। খোসা ছাড়ানোর পর যে শাঁস পাওয়া যায় তা হলুদ। কিন্তু আঁটিসংলগ্ন শাঁস কমলা। আঁটিতে আঁশ নেই।
সীতাভোগ: আকারে ছোট। ডিম্বাকৃতি। গড় ওজন ১৫০ গ্রাম। ত্বক মসৃণ। পাকা ফলের রঙ গাঢ় হলুদ। খোসা পাতলা। শাঁস হালকা কমলাটে, শক্ত। আঁটি ছোট। আঁশ নেই।
মোহনভোগ: গোলাকৃতির। ওজনে একেকটি সাড়ে ৫০০ গ্রামের বেশি হয়। ত্বক মসৃণ। পাকলে হলুদ হয়। খোসা সামান্য পুরু। শাঁস হলুদাভাব।
বোগলাগুটী: গোল গড়ন। আঁটি আঁশযুক্ত। খোসা পাতলা। পিঠের চেয়ে পেটের অংশ বেশি উঁচু। শাঁসের রঙ কমলা।
আড়াজম্মা: লম্বাটে। নিচের অংশ ধনুকের মতো কিছুটা বাঁকা। পাকার পর সামান্য হলুদ হয়। বোঁটা শক্ত। খোসা পুরু। আঁশ কমলা।
রাজভোগ: লম্বা গড়নের। কাঁধ থেকে নিচের অংশ গোলাকার। পাকলে গাঢ় হলুদ হয়। খোসা পাতলা। ত্বক মসৃণ। শাঁস মোলায়েম ও হলুদ।
লতা: পুরোপুরি গোল এটি। বোঁটার অংশ কিছুটা গর্ত দেখা যায়। ত্বক মসৃণ। খোসা খুবই পাতলা। শাঁস মোলায়েম, হালকা হলুদ বর্ণের। আঁটি পাতলা ও আঁশহীন। পাকলে বোঁটার পাশে হালকা হলুদ দেখা যায়।
চিনি ফজলি: লম্বা। চ্যাপ্টা গড়নের। একেকটির ওজন প্রায় ৪০০ গ্রাম হয়। পাকলে গাঢ় হলুদ বর্ণ ধারণ করে। খোসা একেবারেই ফিনফিনে পাতলা। শাঁস মোলায়েম ও হলুদ।
কালীভোগ: গড়ন লম্বা। তবে আগা ও গোড়া গোল। পাকা আমের বোঁটার ধারে লাল মিশ্রিত হলুদ বর্ণ দেখা যায়। খোসা পাতলা। শাঁসের রঙ কমলা। আঁটি লম্বা ও পাতলা। তাতে কোনো আঁশ নেই।
দুধকুমার: লম্বা। নিচের দিকটা সুচালো। কাঁধের তুলনায় পেট মোটা। পাকা আমের বোঁটার ধারে হলুদ রঙ দেখা যায়। ত্বক মসৃণ। খোসা পাতলা। শাঁস মোলায়েম ও হলুদ বর্ণের।
গিড়াদাগী: ছোট আকারের। পাকলে হলুদ হয়। বোঁটা শক্ত। খোসা পাতলা। শাঁসের রঙ গাঢ় কমলা। খোসা ছাড়ালে আঁশ এমনিতেই আঁটি ছেড়ে চলে আসে।
ফোনিয়া: ফলটি দেখতে তির্যকভাবে ডিম্বাকৃতির। নিচের দিকটা সুচালো। পাকলে হলুদ হয়। খোসা পাতলা। শাঁস মোলায়েম।
ভাদুরিয়া কালুয়া: লম্বা গড়নের। পিঠের চেয়ে পেটের অংশ মোটা। নিচের দিকটা সামান্য ধনুকাকৃতি। ত্বক মসৃণ নয়। পাকলে কালচে সবুজ হয়। খোসা পুরু। খোসা ছাড়ালে হলুদ শাঁস দেখা যায়। আঁটির দিকের শাঁস কমলা রঙের।
বিড়া: ছোট আকৃতির, গোলাকার। পাকা আমের বোঁটার ধারে হালকা হলুদ রঙ দেখা যায়। খোসা অত্যন্ত পাতলা। শাঁসের রঙ কমলা। আঁটি খুবই ছোট। তাতে আঁশ থাকে না।
পদ্মমধু: ছোট গড়নের, গোলাকার। পাকলে বোঁটার আশপাশে লাল হয়ে যায়। ত্বকের রঙ লাল মিশ্রিত হলুদ। খোসা পাতলা। শাঁসের রঙ কমলা।
মিছরিদানা: লম্বা। উপরের দিকটা চওড়া ও চ্যাপ্টা। পাকলে বোঁটার আশপাশে লাল বর্ণ হয়। ত্বকের রঙ লাল মিশ্রিত হলুদ। খোসা পাতলা। শাঁস কমলা রঙের। আঁটি লম্বা ও চ্যাপ্টা। তাতে আঁশ নেই।
মনোহরা: ছোট আকৃতির। নিচের দিকটা সামান্য বাঁকা। পাকলে হলুদ হয়। খোসা পাতলা। শাঁসের রঙ কমলা।
আম্রপালি: দেখতে লম্বাটে। নিচের দিকটা বাঁকা। আম্রপালি দুই জাতের হয়। ছোট আকারের জাতটির গড় ওজন ১৭০ গ্রাম। বড়টি ২৫০ গ্রাম। আম্রপালি পাকলে ঈষৎ হলুদ বর্ণ ধারণ করে। ত্বক মসৃণ, খোসা পাতলা। এই আমে আঁশ নেই।
চৌষা: মধ্যম আকৃতির হয়। গড় ওজন ২৪০ গ্রাম। আমের গড়ন লম্বা। পিঠের অংশের চেয়ে পেটের অংশ স্ফীত। নিচের দিকটা বেঁকে গিয়ে একদম শেষ প্রান্ত ভোঁতা হয়ে যায়। পাকলে সবুজ মিশ্রিত হলুদ বর্ণ ধারণ করে। খোসা পাতলা। শাঁস হলুদ।
শ্যামলতা: মাঝারি গড়নের লম্বা আকৃতির। পিঠের চেয়ে পেট সামান্য উঁচু। নিচের দিক বাঁকানো। পাকলে লাল মিশ্রিত হলুদ বর্ণ ধারণ করে। আঁটি লম্বা ও মোটা। শাঁসের রঙ কমলা।
মধুমনি: ডিম্বাকৃতির। পিঠের চেয়ে বুকের অংশ উঁচু। নিচের দিকটা সামান্য বাঁকানো। খোসা সামান্য মোটা। আঁটিতে আঁশ নেই।
এই লেখার তথ্যগুলো মাহবুব সিদ্দিকী রচিত ‘আম’ বই থেকে সংগৃহীত। আম নিয়ে তিন পর্বের লেখার এটি শেষ পর্ব।