রসনাবিলাস I পেয়ালা ক্যাফে
ব্যতিক্রমী কফিশপ। নামে তো বটেই- খাবারে, পরিবেশনেও। অভ্যন্তরও মনভোলানো গুলশান ২-এর ডিএনসিসি মার্কেটের নিচতলায় এক সারি দোকানের মধ্যে একটি ক্যাফের নাম দেখে থমকে দাঁড়াতে হয়। ‘পেয়ালা ক্যাফে’। কফিশপের নাম। বাংলায়। বেশির ভাগই তো ইংরেজি, নয় ইতালিয়ান নাম। প্রবেশের পরও চমক। ঝাঁ-চকচকে ৫৫০ বর্গফুটের ছোটখাটো একটি জায়গা মনোরমভাবে সজ্জিত। অধিকন্তু কফির সুবাস লোভাতুর করে তোলে। অভ্যন্তর বেশ আন্তরিক, আড্ডার উপযোগী। সজ্জা ও পরিবেশন ভঙ্গিতে আন্তর্জাতিকতার ছাপ আছে। তা ছাড়া এখানকার কফি কিংবা চায়ের সঙ্গে দেশি মসলার নিখুঁত সংমিশ্রণ ক্যাফেটিকে অন্য রকম করে তুলেছে। কফির নামেও রয়েছে বাংলার ব্যবহার। পেয়ালা স্প্রেসো, পেয়ালাচিনো, পেয়ালা লাতে ইত্যাদি। বিভিন্ন রকম কফি ও চা পাওয়া যায় এখানে।
আমাদের দেশে কফি চাষ শুরু হয়েছে বেশ ক’বছর হলো। পাহাড়ি অঞ্চল ছেড়ে এখন উত্তরবঙ্গেও চলছে কফি চাষের তোড়জোড়। আর তাই পেয়ালা ক্যাফেতে ব্রাজিল ও ইন্ডিয়ান কফি ছাড়াও পানকারীরা স্বাদ নিতে পারবেন দেশি কফিরও। অন্যান্য কফিশপের মতো শুধু কফিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি পেয়ালা ক্যাফে, রয়েছে হরেক রকম চায়ের বন্দোবস্ত। সেসবের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে এখানকার ‘মসলা চা’ ও ‘চকলেট চা’। ২২ রকম উপাদানের সমাহারে তৈরি হয় এক কাপ মসলা চা। পেয়ালা ক্যাফের অন্যান্য চায়ের একটি হচ্ছে ‘রাস্তার চা’। রাস্তাঘাটে মানুষ যে ধরনের চা পান করে, এটি তারই একটি মার্জিত রূপ।
চা-কফি ছাড়াও পেয়ালা ক্যাফেতে মেলে প্রায় ২১ প্রকারের সালাদ। এখানকার চা-কফিতে তো বৈচিত্র্য রয়েছেই, পাশাপাশি মেন্যু চার্ট সমৃদ্ধ হয়েছে হরেক রকম সুস্বাদু ডেজার্ট, স্ন্যাকস ও র্যাপের মাধ্যমে। তবে র্যাপ ও সালাদেই এ ক্যাফের বিশেষত্ব বেশি। জাপানি টেরিয়াকি চিকেন থেকে শুরু করে সিঙ্গাপুরের চিকেন স্যাটায়ার, গরুর মাংস ভুনা থেকে পেয়ালা চিকেন, মসলাযুক্ত টফু, আলু টিক্কিসহ বেশ কিছু ব্যতিক্রমী আমিষ ও নিরামিষের পদের সম্ভার রয়েছে। আমিষ ও নিরামিষ পদগুলোকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা হয়, ব্যবহার্য চামচগুলোও পৃথক। তবে ওই ২১ প্রকার সালাদের সব যে একই দিনে পাওয়া যাবে, তেমন নয়। প্রতিদিন বিভিন্ন আইটেম ঘুরেফিরে আসে। সুতরাং, নিত্যনতুন ফ্লেভারের উপস্থিতি সব সময় অনিবার্য এখানে। এ কারণেই পেয়ালা ক্যাফেতে যাদের দীর্ঘদিনের আনাগোনা রয়েছে, তারা বেশ ভালোভাবেই জানেন যে এই ক্যাফের সালাদ কিংবা ডেজার্ট গড়পড়তা কিছু না। যেদিন যাবেন, সেদিন কী কী সালাদ বা র্যাপস আইটেম থাকবে, সেটি জেনে যেতে হবে এই ক্যাফের ফেসবুক পাতা থেকে।
দাদির সেমাই, গোলাপজামুন কেক, রেড ভেলভেট, ক্রেপ কেক, লেমন লোফ, নিউটেল, ওরেও মুজ ইত্যাদি ডেজার্ট খেতে এখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে ভোজনরসিকদের আনাগোনা। ডেজার্ট আইটেমগুলোর মধ্যে যেটির নাম উল্লেখ না করলেই নয়, সেটি হচ্ছে ছয় স্তরবিশিষ্ট নিউট্রেলা কেক। মুখে দিলেই স্বাদের বিস্ফোরণ। খুব কোজি প্রিমিয়াম হওয়ার কারণে পেয়ালা ক্যাফের ডেজার্টের চাহিদা তুঙ্গে।
তৃপ্তির সঙ্গে উদর পূর্তির জন্য পেয়ালা ক্যাফের একটি র্যাপই যথেষ্ট। শতভাগ ঘরোয়া পরিবেশ থাকায় এখানে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়েও আসেন। তরুণদের অবসর কাটানো কিংবা অল্প দামে নানা স্বাদের নানা পদ উপভোগ করার জন্য এই ক্যাফে আদর্শ বটে। এখানে আগতদের প্রায় ৫০ শতাংশ তরুণ-তরুণী। বিদেশিদের নজরও এড়ায়নি এ ক্যাফে। কারও কারও আবার নিয়ম করে প্রতিদিন একবার করে এখানে আসা চাই-ই।
কেবল নামের মধ্যেই বাঙালিয়ানা সীমাবদ্ধ না রেখে, প্রকৃত অর্থেই বাংলাকে ধারণ করে পেয়ালা ক্যাফে। পয়লা বৈশাখ কিংবা বিভিন্ন দেশীয় উৎসবের সময় তাদের মেন্যু ও সাজসজ্জায় থাকে বাঙালি সংস্কৃতির ছোঁয়া। এসব দিবসে দেশি কুজিন ও রেসিপির ফিউশন ফ্লেভার থাকে সেখানে।
এই কফিশপের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হচ্ছে দ্রুত পরিবেশন। মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে হাজির হয়ে যাবে পছন্দের পদটি। বিভিন্ন পদকে স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু রাখার জন্য সব সময় তাজা খাবার পরিবেশন করা হয় এখানে। সকাল নয়টায় খোলা হয় এর দরজা। কারণ, এখানে রয়েছে ব্রেকফাস্টের আয়োজন। কফি আর চায়ের সাইজ অনুযায়ী নাম- বড় পেয়ালা ও মেজ পেয়ালা। আসলে এসব কেবল আনিস আহমেদের নিজের ভাবনার ফসল। যিনি এম জি এইচ গ্রুপের কর্ণধার। এসব তথ্য সেদিন দিচ্ছিলেন তাদের এম জি এইচ রেস্টোর্যান্টের হেড অব বিজনেস শাহীন মোহাম্মদ সামিউল হক।
গুলশান ২ ছাড়া পেয়ালা ক্যাফের কোনো শাখা এখন নেই। তবে খুব শিগগির ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় শাখা ছড়াবে।
শিবলী আহমেদ
ছবি: পেয়ালা ক্যাফে ও ক্যানভাস