সেলুলয়েড I দ্য ডোরস
পরিচালনা : অলিভার স্টোন
কাহিনি : অলিভার স্টোন ও জে. কিটম্যান হো
চিত্রনাট্য : র্যান্ডাল জনসন ও অলিভার স্টোন
সংগীত : দ্য ডোরস
অভিনয় : ভ্যাল কিলমার, ম্যাগ রায়ান, কেভিন ডিলন, ফ্রাঙ্ক হোয়েলি, মাইকেল ম্যাডসেন
মুক্তি : ১৯৯১
দৈর্ঘ্য : ১৪১ মিনিট
অলিভার স্টোন পরিচালিত ‘দ্য ডোরস’, চলচ্চিত্রটি মার্কিন রক ব্যান্ড, দ্য ডোরস-এর গায়ক এবং গীতিকার জিম মরিসনের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত। ব্যান্ডটির সূচনা ১৯৬৫ সালে, লস অ্যাঞ্জেলেসে। এটি সংগীতের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় রক ব্যান্ড হিসেবে স্বীকৃত।
মরিসন ১৯৪৩ সালে ৮ ডিসেম্বর ফ্লোরিডায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রকৃত নাম জেমস ডগলাস মরিসন হলেও তিনি জিম মরিসন নামেই খ্যাত।
এক প্রকার আলো-আঁধারি পরিবেশ দিয়ে ‘দ্য ডোরস’ চলচ্চিত্রের সিকোয়েন্স শুরু- কিছুটা হলুদ-লালচে রঙের আলো। কারও দেশলাইয়ের কাঠিতে মোম জ্বলে ওঠে। এর পরের দৃশ্যে শিশু মরিসনকে বাবা-মায়ের সঙ্গে কারে চড়ে নিউ মেক্সিকোর মরুপথ পাড়ি দিতে দেখা যায়, তখন আবহ সংগীত হিসেবে ‘রাইডার্স অন দ্য স্ট্রম’ গানটি বেজে ওঠে। সদ্য ঘটে যাওয়া একটি সড়ক দুর্ঘটনার পরবর্তী চিত্র তার শিশুমনকে বিচলিত করে। শৈশবে দেখা ওই বিভীষিকা তার মনে গাঢ় দাগ কাটে। ফলে সিনেমার অন্যান্য সিকোয়েন্সেও ট্রমার কিছু প্রতিফলন দেখা যায়।
প্যামেলা নামক এক নারীর সঙ্গে মরিসনের পরিচয় ঘটে। প্রথম দিনই তিনি প্যামেলাকে দার্শনিক ফ্রেডরিক নিৎসের কিছু উদ্ধৃতি শোনান। মরিসন প্রচুর মদ্যপান করতেন। লাইভ কনসার্টে প্রায়শই মাতলামি করে তুলকালাম পাকানোয় ছিলেন ওস্তাদ। একবার ‘দ্য এন্ড’ গানটির লাইভ কনসার্টে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এর জন্য তিনি এবং ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যকে আয়োজক কমিটির কাছে অপদস্থ হতে হয়। তা সত্ত্বেও পরবর্তী অডিও অ্যালবাম প্রকাশের জন্য নতুন প্রডাকশন হাউসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে দ্য ডোরসকে বেগ পেতে হয়নি।
এই চলচ্চিত্রে মরিসনের দ্বৈত সত্তা ফুটে ওঠে; অর্থাৎ তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় নিষ্প্রভ ও যথেষ্ট মার্জিত থাকলেও কখনো কখনো, বিশেষ করে অ্যালকোহল পানের পর উচ্ছৃঙ্খল এবং উন্মত্ত হয়ে যান। বিভিন্ন লাইভ কনসার্টে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দেন তিনি। এই চলচ্চিত্রের প্রায় শেষ অংশে তাকে আদালতে আসামির আসনে দেখা যায়। মদ্যপ অবস্থায় জনসমক্ষে মাতলামি ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনসহ আরও কিছু কারণে তাকে অভিযুক্ত করা হয়।
চলচ্চিত্রের শেষ সিকোয়েন্সে সেই আলো-আঁধারি পরিবেশেই মরিসনের জীবনের অবসান ঘটে! বাথটাবে শুয়ে থাকা তার নিথর দেহের ওপর মৃদু হলদে আলো ফোকাস দিচ্ছিল।
এর সিনেমাটোগ্রাফি মন্দ নয়। তবে সম্পাদনায় আরেকটু যত্নশীল হওয়া যেত। সিকোয়েন্স পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও উল্লম্ফন দেখা যায়। আধুনিক চলচ্চিত্রের লক্ষণ হিসেবে একে ধরে নেওয়া যেতে পারে। তবে সিনেমাটির প্রথম ছয় মিনিটের পরে (মরিসন তার বান্ধবী, প্যামেলার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে) মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ফিক্সড ভিডিও চিত্রটি এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ক্যামেরার কাজ হিসেবে বিবেচনার দাবি রাখে। সংগীত ব্যবহারে ব্যান্ডটির প্রকৃত সাউন্ডট্রাক থেকে ধার করায় এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা সমীচীন হবে না।
জিম মরিসনের ভূমিকায় ভ্যাল কিলমার ছিলেন বিশ্বস্ত ও অনবদ্য! এর মূল কারণ তার চেহারা, পোশাক, চুলের স্টাইল, দৈহিক গঠন, বাচনভঙ্গি, হাসি- প্রায় সবকিছুই ছিল সেই কিংবদন্তির মতোই। ভ্যাল কিলমার সম্ভবত এই ভুবনের একমাত্র অভিনেতা, যিনি অবয়ব ও দৈহিক গঠনগত সাদৃশ্যের সুবিধা কাজে লাগিয়ে যথার্থ অভিনয়ের মাধ্যমে কারও প্রকৃত সত্তাকে দর্শকদের মাঝে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। পাশর্^চরিত্রে এই ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যের ভূমিকা চলচ্চিত্রে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। এমনকি প্যামেলা চরিত্রে ম্যাগ রায়ানের অভিনয়ও যথেষ্ট দৃষ্টিনন্দন নয়।
প্রিয়ঙ্কর অর্ঘ
কুইজ
১. জিম মরিসনের ভূমিকায় অভিনয় করেন কে?
ক. র্যান্ডাল জনসন
খ. ভ্যাল কিলমার
গ. অলিভার স্টোন
ঘ. জিম করবেট
২. দ্য ডোরস সিনেমার পরিচালকের নাম কী?
ক. র্যান্ডাল জনসন
খ. জে. কিটম্যান হো
গ. অলিভার স্টোন
ঘ. ফ্রান্সিস বেকন
৩. দ্য ডোরস ব্যান্ড কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
ক. ১৯৬৫
খ. ১৬৮৪
গ, ১৯৯১
ঘ. ১৯৪৩
গত পর্বের বিজয়ী
১. নাফিজা দৌলা, বাড্ডা, ঢাকা, ২. সাদিয়া আক্তার বেবি, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম, ৩. রাইসা ইসলাম, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।