skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I শিল্পীরূপেণ

মিউজিক ও আর্টিস্টের লুক অবিচ্ছেদ্য। অনুরাগীরা গানের পাশাপাশি তাদের মেকআপেও মজে যায়। ফলে জনপ্রিয় শিল্পীদের কেউ কেউ বিউটি ট্রেন্ডের প্রতিভূ হয়ে ওঠেন। লিখেছেন আহমেদ বুবলি

সংগীতের সম্মোহন থেকে বাদ যায়নি ফ্যাশন বা সৌন্দর্যচর্চাও। ম্যাডোনা, ডেভিড বাওয়ি, টিএলসি, কোর্টনি লাভসহ অনেক আইকনের বিউটি লুকের দিকে তাকালে দেখা যাবে, তাদের সিগনেচার হেয়ার ও মেকআপ ব্যক্তিত্বের সমার্থক ছিল। এই আর্টিস্টদের কথা এলে অবশ্যই ম্যাডোনাকে কয়েক যুগের মধ্যে আলাদা করে নেওয়া যায়। জিগি স্টারডাস্ট হিসেবে বাওয়ি, সিগনেচার হেয়ারের সঙ্গে টিএলসি এবং কোর্টনি লাভের ব্লিচড বোনড হেয়ার ও রেড লিপস্টিকও রয়েছে। নামগুলোর সঙ্গে এদের সিগনেচার লুকও সামনে চলে আসে। তাদের এই স্টাইল ভক্তদের উপর দারুণ প্রভাব ফেলে। যখন যে শিল্পী জনপ্রিয় থাকেন, তখন তার সাজসজ্জাকে ট্রেন্ডি লুক হিসেবে ধরা হয়। সংগীতশিল্পীদের পোশাক আইডিয়া, হেয়ারস্টাইল বা মেকআপ সাধারণদের বেশ প্রভাবিত করে।
ভক্তরা পছন্দের তারকার পোশাক, মেকআপ, ট্যাটু কিংবা নিজস্ব ডিজাইন নিজেরা ব্যবহার বা প্রয়োগ করার মাধ্যমে শিল্পীর প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে। এমনকি কোনো কোনো জনপ্রিয় বিউটি লুক মিউজিক, অ্যালবাম কভার, মিউজিক ভিডিও দ্বারা অনুপ্রাণিত।
তারকারা কীভাবে মেকআপ নিচ্ছেন, আইমেকআপ বা লাইনার কীভাবে প্রয়োগ করছেন, লিপস্টিকের কালার, হেয়ার কাট ও বান কীভাবে করে নিচ্ছেন, এমনকি কোন উল্কি বা মেকআপ ব্র্যান্ড ব্যবহার করছেন, সেটি পর্যন্ত অনুকরণ করা হয়। এটি বেশ মজার ব্যাপার যে একটি আর্ট ফর্ম অন্যটিতে অবদান রাখতে পারছে।
ম্যাডোনার লুক সংগীতের জগতে এক অবধারিত প্রসঙ্গ। ফ্যাশন ও বিউটির কিংবদন্তি বলা যায় তাকে। তার পোশাক ও মেকআপ সেন্স, হেয়ারস্টাইল- সবকিছুই অনবদ্য। তিনি যা-ই পরতেন বা যে সাজই করে নিতেন, তা-ই ট্রেন্ড হয়ে যেত। আশির দশক থেকে পরবর্তী প্রায় ত্রিশ বছর এই পপসম্রাজ্ঞী প্রভাবিত করে রেখেছিলেন ওয়েস্টার্ন মিউজিক ও পপ কালচারকে। শুধু তা-ই নয়, ম্যাডোনার গ্রাউন্ডব্রেকিং মিউজিক যেমন সফল শিল্পীদেরও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, তেমনি তিনি মেকআপ, স্টাইল ও ফ্যাশনের ক্ষেত্রগুলোকেও প্রভাবিত করেছিলেন সমানতালে। আশির দশক ছিল বোল্ড কালার ও ওয়াইল্ড হেয়ারের সময়। তখন ম্যাডোনার লুকের টাইমলাইনে চোখ বোলালেই দেখা যাবে, সমকালীন ট্রেন্ডের উপর তার কতটা প্রভাব পড়েছিল। ম্যাডোনার রেড বোল্ড লিপ তো ক্ল্যাসিক মেকআপের মর্যাদা পেয়েছে, যা এখনো সমান জনপ্রিয়। সেই সঙ্গে সরু আইব্রাও, উজ্জ্বল রঙের আইশ্যাডো, মেসি হেয়ারে একেবারে পরিপূর্ণ মেকআপ লুক।
ম্যাডোনার মিউজিকের মতো তার স্টাইল ও মেকআপ দেশকালের সীমানা ছাড়িয়েছে। আশির দশকে তিনি আইকন হয়ে উঠেছিলেন, তার মধ্যে একটি বুনো ও কস্টিউম জুয়েলারি আর অভিনব পোশাকের সাজে মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্বের সমন্বয় ঘটেছিল।
রিহানা। উনিশ বছর বয়সে সংগীতজগতে তার আবির্ভাব। বিলবোর্ডে যার গান চৌদ্দবার টপলিস্টে ছিল। অসংখ্য পুরস্কার তার ঝুলিতে রয়েছে। সমানভাবে আরও কিছু মুগ্ধ করার মতো কাজ তিনি করেছেন। ফ্যাশন ও বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতেও তার সফল পদচারণ ঘটেছে। ব্র্যান্ডগুলো তার এ বিষয় কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রডাক্ট লঞ্চ করেছে। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও তিনি সুবিদিত। রিহানা সব সময় ফ্যাশনের পাওয়ার বুঝতে পেরেছিলেন, বিশেষ করে শেপ পারসেপশনের দিক থেকে। এ ক্ষেত্রে ম্যাডোনাই তার অনুপ্রেরণা। তার মতে, ম্যাডোনার ক্রমবিকাশের দিকে তাকালে দেখা যাবে, তিনি ক্লদিং স্টাইল, মেকআপ আইডিয়া ও মিউজিককে প্রতিবার সাফল্যের সঙ্গে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছিলেন। আর রিহানা নিজের সৌন্দর্য ও সংগীতকে সেভাবেই সমন্বয়ের চেষ্টা করেন। ফলে রিহানা মিউজিক ও বিউটি- দুদিক থেকেই আইকনিক। বোল্ড লিপ, ডার্ক আই, গ্লসি মেকআপে তিনি প্রমাণ করেছেন কীভাবে গাত্রবর্ণকে তোয়াক্কা না করে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে হয়। অনুরাগীরা তার নতুন নতুন মেকআপ কৌশলের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। তিনি ফ্যাশন ও বিউটিতে একটি পপুলার টেস্ট দিতে চেয়েছেন, একেবারে নতুন রূপে। বিশেষ করে রিহানা লিপস্টিক প্রয়োগে যে নিরীক্ষা করেছেন, তা বেশ সাড়া ফেলেছিল। এখন তো রিহানা স্টেজ শোতে কোন লুক নিয়ে আসছেন, তার জন্যই অপেক্ষা করে সৌন্দর্যপ্রেমীরা। তার একদিকে মাথা মোড়ানো হেয়ারস্টাইল মানুষ যেভাবে অনুসরণ করেছে, তা থেকেই বোঝা যায়, মিউজিশিয়ানরা বিউটি ওয়ার্ল্ডকে কতটা প্রভাবিত করেন।

লেডি গাগা

লেডি গাগা আর তার মেকআপ লাইন হাউস টেকনোলজিস পপতারকাদের রয়্যালটিতে উল্লেখযোগ্য। তার মেকআপ আর পোশাক প্রথাবিমুখ হলেও তিনি সৌন্দর্যজগতে একটি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তার বিউটি অ্যাকশনের একটি বিশাল ফ্যান বেজ রয়েছে। গাগার মেকআপ ভিন্ন এক আবেদন সৃষ্টি করেছে। শৈল্পিক সৃজনশীলতার জন্যই তার লুক বেশ জনপ্রিয়।
পপ সেনসেশন কাইলি মিনোগ। তার নিজস্ব একটি মেকআপ লাইন রয়েছে, ভক্তসংখ্যাও বিশাল। পপ ফ্যানরা তার লাইনটি দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত। গ্লসি ঠোঁট, হাইলাইটার ও কোমল চিকই মিনোগের সৌন্দর্যের হলমার্ক। যার অনুসরণ বিউটি লাভারদের মধ্যে প্রবলভাবে দেখা যায়।
হালের সেলিনা গোমেজের কথা না বললেই নয়। তার কোমল রূপ অনুরাগীদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। তবে তাকে বোল্ড লুকে দেখা যায় না বললেই চলে। সেলিনার লাইট মেকআপের স্নিগ্ধতার একটি আলাদা ভক্তশ্রেণি রয়েছে। বিশেষ করে টিনএজাররা তার নতুন লুকে প্রভাবিত হয় বেশি।
উল্লেখ্য, সৌন্দর্যের বাজারটি এখন শুধু নারীকেন্দ্রিক নয়। পুরুষ-সৌন্দর্যের একটি বড় অংশ মিউজিকনির্ভর। ছেলেরাও তাদের পছন্দের গায়কের অনুকরণে নিজেদের লুক তৈরি করতে পছন্দ করে। এ ক্ষেত্রে এলভিস প্রিসলি, জিম মরিসন, বব ডিলান, জর্জ মাইকেল, মাইকেল জ্যাকসন, জাস্টিন বিবার ও স্মিথ ন্যাচারালসের নাম অবধারিতভাবেই এসে যায়।

মডেল: বর্ণ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top