skip to Main Content

সেলুলয়েড I টেস্ট অব চেরি

পরিচালক ও প্রযোজক : আব্বাস কিয়োরোস্তামি
সিনেমাটোগ্রাফি : হোমায়ুন পাভের
অভিনয় : হোমায়ুন এরশাদি, আফশিন খোরশিদ বখতিরি, সাফার আলী মুরাদি, আবদুলরহমান বাঘেরি
দৈর্ঘ্য : ৯৫ মিনিট
ইরানি চলচ্চিত্রকার আব্বাস কিয়োরোস্তামির ‘টেস্ট অব চেরি’ একজন ব্যক্তির আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে জীবনে ফিরে আসার গল্প নিয়ে নির্মিত। মূলত চেরি ফলের স্বাদ গ্রহণের আকাক্সক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে তিনি প্রত্যাবর্তন করেন অপার সম্ভাবনাময় জীবনে।
মি. বদি মধ্য বয়স্ক। আত্মহত্যার পরে তাকে সমাহিত করার কাজটি সম্পাদন করতে পারে এমন কোনো ব্যক্তির সন্ধানে তেহরানের শহরতলি এবং প্রায়শই দূরের নির্জন এলাকায় গাড়ি চালিয়ে ঘুরে বেড়ান। বিনিময়ে তিনি প্রচুর অর্থের অফার দেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে গাড়ি চালানোর সময় নিজেই বলেন, তিনি আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছেন এবং ইতিমধ্যে কবরও খোঁড়া হয়েছে। মৃত্যুর পরে তার সৎকারের জন্য কাউকে প্রয়োজন। কেন আত্মহত্যা করতে চান, সে আলোচনা তিনি করেন না।
প্রথমে একজন তরুণ লাজুক কুর্দি সেনাকে কাজটি করতে বলেন, কিন্তু সে রাজি না হয়ে বদির গাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। দ্বিতীয় ব্যক্তি একজন আফগান সেমিনারিস্ট। তিনি আত্মহত্যা সম্পর্কে ধর্মীয় আপত্তি থাকার কারণে কাজটি করতে অস্বীকৃতি জানান। তৃতীয়জন আজারি, ট্যাক্সিডারমিস্ট। তিনি বদিকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক। কারণ, তার অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসার জন্য অর্থের প্রয়োজন। তবে তিনি বদির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। বলেন, তিনিও অনেক আগে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মালবেরির স্বাদ গ্রহণ করে তার বাঁচতে ইচ্ছে হয়েছিল। আজারি বদিকে প্রতিশ্রুতি দেয়, সকালে তাকে মৃত অবস্থায় দেখলে সমাহিত করবে। কিন্তু সেই রাতে বজ্রপাত শুরু হয়। আজারি মাদার আর্থ ও তার বিধান সম্পর্কে একটি বক্তৃতা করেন এবং বলেন, চেরির স্বাদ ছাড়াই তিনি আত্মহত্যা করবেন কি না। অতঃপর চেরিগাছের নিচে বদির চেতনায় জাগ্রত হয় জীবনের প্রতি তীব্র আকর্ষণ। দৃশ্য চিত্রায়ণে চেরিগাছটিও যেন হয়ে উঠেছে স্বতন্ত্র একটি চরিত্র।
কিয়োরোস্তামির এই চলচ্চিত্রে কথোপকথনগুলো খুব দীর্ঘ, রহস্যময় এবং মায়াবী। তবে দৃশ্যায়নের অত্যন্ত মন্থরতার কারণে কিছুটা একঘেয়েও বটে। বদির গাড়ি দীর্ঘ সময় ধরে বর্জ্যভূমি, উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের যান্ত্রিক কোলাহলমুখর এলাকা অতিক্রম করে। নির্জন পাহাড়ি অঞ্চলের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়। যেকোনো দুটি চরিত্রকে একই শটে খুব কমই দেখা যায়। এসব মন্থর, জনবিরল দৃশ্যায়নের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির মানসিক উদ্বেগজনিত বাস্তবতাও ফুটে উঠেছে। তা ছাড়া পারিপার্শ্বিক আপাত-সম্পর্কহীন দৃশ্যগুচ্ছের মন্তাজ এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন প্লে গ্রাউন্ডে খেলোয়াড়দের সারিবদ্ধ কসরত। শেষ দৃশ্যে পাহাড়ি পথে একদল সৈনিকের লংমার্চ, যাদের কয়েকজনকে সবুজ প্রকৃতির মধ্যে গল্পে মেতে থাকতে দেখা গেছে। চিত্রায়িত সিকোয়েন্সে রয়েছে গতির অবসরও।
চলচ্চিত্রটির ডিফেন্ডারসহ অনেকেই কিয়োরোস্তামির নীরবতা, প্যাসিভিটি, ধীরগতি, নিষ্ক্রিয়তার চলচ্চিত্রিক শিল্পের গভীরতা স্বীকার করেছেন। তবে অমনোযোগী দর্শকেরা অস্থির হয়ে উঠবে বলেও অনেকে মনে করেন। কিন্তু কিয়োরোস্তামির সময়সত্তা মেনে নিলে এবং প্রধান চরিত্রের অস্তিত্বের দ্বিধা থেকে নিজেকে মুক্ত করলে সিনেমাটির তাৎপর্য অনুধাবন করা সম্ভব।
চলচ্চিত্রটিতে একটি ট্রাম্পেট ও লুই আর্মস্ট্রংয়ের ১৯২৯ সালে করা সেন্ট জেমস ইনফার্মারি ব্লুজ-এর রূপান্তরিত মিউজিক রয়েছে। তা ছাড়া একমাত্র সংগীত হলো আফগান গায়ক আহমেদ জাহেরের Khuda Bowad Yaret (May God be your protector), , যেটি সিনেমার প্রায় ৩৮ মিনিট পরে একটি রেডিওতে বাজানো হয়।
১৯৯৭ সালে টেস্ট অব চেরি মুক্তি পায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি প্রদর্শিত হলে সমালোচক এবং দর্শকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। চলচ্চিত্র-বিশ্লেষক রজার এবার্ট দ্য শিকাগো সান-টাইমসে একটি পর্যালোচনায় এটিকে ‘উদ্বেগজনকভাবে বিরক্তিকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এত সমালোচনা সত্ত্বেও সিনেমাটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তির বছরই সম্মানজনক পাম দ’র জিতে নেয়। একাধিক সমালোচক এটিকে একটি মাস্টারপিস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ২০১২ সালের সাইট অ্যান্ড সাউন্ড জরিপে ছয়জন বিশ্লেষক এবং দুজন পরিচালক সমকালীন সেরা ১০টি চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি বলে উল্লেখ করেছেন।
টেস্ট অব চেরির মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন হোমায়ুন এরশাদি। অন্যান্য চরিত্র রূপায়ণে ছিলেন আফশিন খোরশিদ বখতিরি, সাফার আলী মুরাদি প্রমুখ। প্রত্যেকের অভিনয়শৈলী অত্যন্ত সাবলীল। মেকআপ বা পোশাকেও বাড়তি কোনো চাকচিক্য নেই, রয়েছে কাহিনির পরিপ্রেক্ষিত, গতি ও পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে সামঞ্জস্য।
 প্রিয়ঙ্কর অর্ঘ

কুইজ
১। সিনেমাটি কোন চলচ্চিত্র উৎসবে সম্মানজনক পুরস্কার জিতে নেয়?
ক. অস্কার
খ. রেইনবো
গ. কান
ঘ. বলিউড
২। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন কে?
ক. আবদুলরহমান বাঘেরি
খ. আফশিন খোরশিদ বখতিরি
গ. সাফার আলী মুরাদি
ঘ. হোমায়ুন এরশাদি
৩। চেরি ব্যতীত আর কোন গাছের নাম এখানে রয়েছে?
ক. আখরোট
খ. মালবেরি
গ. কফি
ঘ. স্ট্রবেরি

গত পর্বের বিজয়ী
১. মুক্তা, নাজিরপাড়া, চট্টগ্রাম। ২. নাজিয়া আক্তার, ধানমন্ডি, ঢাকা। ৩. সুমাইয়া পারভীন, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top