ঘরে-বাইরে I নিসর্গশোভিত পাঠশালা
গ্রামেই এমন এক স্কুল, যেখানে শিশুরা বিকশিত হবে উদার ও বিশ্বজনীন শিক্ষায়। সেখানকার পরিবেশও গড়ে তোলা হয়েছে সেভাবে
ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের মায়ের নামে গঠিত ট্রাস্ট- সুফিয়া খাতুন ফাউন্ডেশন। এই সংস্থার একটি উদ্যোগ নাজমুল হাসান জাহেদ একাডেমি। উল্লেখ্য, প্রয়াত নাজমুল হাসান জাহেদ ছিলেন ফজলে হাসান আবেদের বড় ভাই। তার নামেই ২০১৮ সালে শুরু হয় নাজমুল হাসান জাহেদ একাডেমির কাজ।
শুরু থেকেই এই একাডেমি নিয়ে গতানুগতিক ধারার বাইরে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু করার ভাবনা ছিল। হবিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্রামের কামালখানি মহল্লায় এমন এক স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিল, যা গ্রামের তো বটেই, শহরেরও অন্যান্য স্কুলের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। গ্রামের অনেক পরিবারই মানসম্পন্ন শিক্ষার অভাবে সন্তানদের শহরে পাঠাতে বাধ্য হন। এই অবস্থার পরিবর্তন চেয়েছিলেন ফজলে হাসান আবেদ, গ্রামবাসী যেন ঘরের কাছেই উন্নত মানের শিক্ষা পায়, সে লক্ষ্যেই একাডেমিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
স্কুল প্রতিষ্ঠার চিন্তা মাথায় রেখেই স্থপতিরা শুরু করেন এর কাজ। যেহেতু বিদ্যালয়টিকে দেশের আদর্শ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আদল দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, তাই এতে উঠে এসেছে প্রকৃতির প্রতি সহনশীলতা আর ভালোবাসার বার্তা।
একাডেমি ভবনটি উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। উত্তরে রয়েছে খেলার জন্য উন্মুক্ত প্রান্তর আর পুকুর; দক্ষিণে চোরাবাগিচা নামের এক গাছে ঘেরা বিস্তৃত জলাধার। ভবনটির প্রতিটি শ্রেণিকক্ষই দক্ষিণমুখী; আর জানালা রাখা হয়েছে উত্তর-দক্ষিণ- দুদিকেই। এর ফলে সব সময়েই প্রাকৃতিক বাতাসের প্রবাহ থাকে, আর দিনের বেলায় সূর্যের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়। আলো-বাতাসের ব্যবস্থাটি প্রাকৃতিক হওয়ায় বিদ্যুতের অপচয় কমেছে। অন্যদিকে ব্যবহৃত হয়েছে সোলার প্যানেল। ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমানোর জন্য রয়েছে রেইন হার্ভেস্টিংয়ের ব্যবস্থা।
স্কুল নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে পরিবেশবান্ধব ইট। সাধারণত ইট তৈরি হয় ভূমির উপরিভাগের মাটি দিয়ে, ফলে উর্বর মাটি চলে যায় ভাটায়। এখানে যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে, তার প্রধান উপাদান সিমেন্ট, বালি ও পানি। এর ফলে পরিবেশ রক্ষা তো হচ্ছেই, পাশাপাশি ভবনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই ইট।
একাডেমির করিডর আর সিঁড়ির প্রস্থ যথেষ্ট চওড়া করে বানানো হয়েছে, যাতে আশপাশে উন্মুক্ত পরিবেশ বজায় থাকে। করিডরের রেলিং তৈরি করা হয়েছে পরিবেশবান্ধব কংক্রিট জালি দিয়ে, যেগুলো পুরো স্কুলটিতে আলো আর বাতাসের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করে। রয়েছে লাল ও হলুদ রঙের প্রাধান্য, যেন শিক্ষার্থীরা প্রাণচঞ্চলতা অনুভব করে। স্কুলের চারপাশে বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছ রোপণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভবনের প্রতিটি তলায়ই আছে বাগান।
পুরো একাডেমির ডিজাইন কনসালট্যান্ট রিরা আর্কিটেক্টস। স্থপতি রাহমা হাসান, তৌহিদুল রিফাত ও কামরুল ইসলামের নকশাতেই হয়েছে পুরো কাজ। তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্কুলের প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারে। একটি স্থাপত্য কীভাবে পরিবেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে পারে, সেই ধারণাটিও দেওয়া। একাডেমির নির্মাণে ছিল ব্র্যাক কনস্ট্রাকশন। চলতি বছরেই এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরুর আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থপতি তৌহিদুল রিফাত
অনুলিখন: আল মারুফ রাসেল
ছবি: রিরা পিডি