সাজসারাই I ব্লু রে রুখতে
ডিজিটাল দুনিয়ায় বসবাস মানেই ক্ষতিকর নীল রশ্মির মোকাবিলা। কিন্তু ত্বক বাঁচানোর উপায় কী? লিখেছেন সারাহ্ দীনা
ঘুমের সময় ছাড়া সারা দিন নানা কারণে চোখ চলে যায় মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। করোনাকালের অফিস জীবন কিংবা অনলাইন ক্লাস- স্ক্রিনে চোখ না রেখে উপায় কোথায়! কাজ শুরু মানেই ডিভাইসের স্ক্রিন আর কি-বোর্ড। অফলাইন এখন অনেকটাই অফলাইফ। প্রযুক্তি জীবনকে যথেষ্ট সহজ করেছে। একই সঙ্গে বিরূপ প্রভাবের গল্পও কম নয়। ত্বকে স্ক্রিনের প্রভাব তেমন ইতিবাচক নয়।
২০১৯ সালের একটি গবেষণায় জানা যায়, একজন মোবাইল ডিভাইস ইউজার দিনে অন্তত ১৫০ বার ফোনটির স্ক্রিনে চোখ রাখেন। সময়ের হিসাবে বলতে হবে অন্তত ৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট কাটে ব্লু রে নিঃসরণকারী ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে। এটাই শেষ নয়। স্মার্টফোন ইউজারদের ২০ শতাংশ সাড়ে চার ঘণ্টা ব্যস্ত থাকে যন্ত্রটির সঙ্গে। এর বাইরে অফিস ওয়ার্ক অথবা অনলাইন ক্লাসের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার তো আছেই। একজন কর্মজীবী ৮ ঘণ্টার ওয়ার্ক আওয়ারে কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে থাকার কারণে যে পরিমাণ নীল রশ্মি তার ত্বক ছুঁয়ে যায়, এই উপাদান ঠিক ততটাই থাকে মধ্য দুপুরের প্রখর রোদে। ৭ মিনিট পর্যন্ত দুপুরের রোদ পোহালে তাতেই ত্বকে ট্যানিংয়ের আশঙ্কা দেখা দেয়। ২০ মিনিটে এর ক্ষতির পরিমাণ কতটা হতে পারে, তা অনুমান করা যায় সহজেই। ইউভিএ বা ইউভিবি লাইটের থেকেও নীল রশ্মি ত্বকের গভীরে বেশি দূর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে।
ত্বকের লাবণ্যে জোয়ার-ভাটার টান তৈরিতে বেশ খানিকটা ভূমিকা রাখে ব্লু রে। এর প্রধান উৎস সূর্যের প্রখর রোদ হলেও সব থেকে বেশি প্রভাবিত করে যান্ত্রিক স্ক্রিন। তা ছাড়া ইনডোর এলইডি লাইট তো আছেই। নীল আলোর স্পর্শে হাইপারপিগমেন্টেশন যেমন বাড়তে পারে, তেমনি দ্রুত হতে পারে এজিং। অর্থাৎ অল্প বয়সেই বার্ধক্যের ছাপ।
ব্লু লাইট কিন্তু অদৃশ্য নয়। শুধু যে স্কিনেই এর প্রভাব, তা-ও নয়। এলইডি অথবা ডিভাইসের স্ক্রিনের মোলায়েম সাদা আলোই ব্লু লাইট। ত্বকের পাশাপাশি রেটিনার সংবেদনশীলতাতেও প্রভাব বিস্তার করে এটি। রাতে ঘুম না হওয়ার বড় কারণ এই আলো। নীল আলো আমাদের ঘুমের জন্য কার্যকরী হরমোন মেলাটোনিনের ওপরে প্রভাব বিস্তার করে। তাই স্লিপ হাইজিনের তালিকায় সেলফোন দূরে রাখার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে সবার ওপরে।
স্কিন রিপেয়ার প্রসেসকেও বিভ্রান্ত করে ব্লু রে। এতে ত্বকের ক্লান্তি বাড়ে।
নীল আলোর ক্ষতিকর এই দিক নিয়ে হতে হবে সচেতন। কেননা, প্রযুক্তিনির্ভরতার এই যুগে কোনোভাবেই আলো নিভিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। নিত্যদিনের জীবনযাপনে ডিভাইসের ব্যবহার অপরিহার্য।
ডিভাইসের রয়েছে নানান রকমফের। স্মার্ট টিভি, ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, মোবাইল ফোন- যেটাই রোজকার জরুরি, সেটার সেটিং অপশন দেখা দরকার। অ্যাপলসহ নামী ব্র্যান্ডগুলোর ডিভাইসে এখন থাকছে নাইট মুড। এই অপশন চালু করলে নীল আলো বিচ্ছুরণের পরিমাণ কিছুটা কমবে। নতুন ডিভাইস কিনে নেওয়ার সময় কোনোভাবেই ডার্ক মুড ফিচারের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ নয়। যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। স্মার্ট টিভির স্ক্রিন থেকে আসা ব্লু রে-তে সর্বনিম্ন ক্ষতি হওয়ার কারণ, টিভি স্ক্রিন সাধারণত বেশ খানিকটা দূরে থাকে দর্শকের ত্বক থেকে।
ডিভাইস ব্যবহারের আগে নিজের একটুখানি যত্ন নেওয়া জরুরি। সানস্ক্রিন তো আছেই ড্রেসিং টেবিলে। ইনগ্রেডিয়েন্টসে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যায়। মিনারেল সানস্ক্রিন ত্বককে রাখবে ব্লু রে থেকে সুরক্ষিত। সঙ্গে যদি থাকে আয়রন অক্সাইডস, তাহলে আরও ভালো। জিংক অক্সাইড আর টাইটেনিয়াম অক্সাইডের চেয়ে নীল আলো থেকে আয়রন অক্সাইডের সুরক্ষাবলয় বেশি কার্যকর।
প্রকৃতি তার কোকোয়া আর ভিটামিন সি ও ই-তে দিয়ে দিয়েছে ব্লু রে-কে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। ভিটামিন সি ব্যবহারেও ত্বকে তৈরি হবে সুরক্ষাবলয়। এর মলিকুল বেশ সূক্ষ্ম হওয়ার কারণে সহজেই ত্বকের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। যা ভেতর থেকে ত্বককে নীল আলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। সব থেকে কার্যকর সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব, যদি একই সঙ্গে ভিটামিন সি-এর সঙ্গে ই-কে পাওয়া যায়। এই দুই উপাদান যৌথভাবে ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করে। টুগেদারনেসে এরা দারুণ। ত্বকে পলিমারের ব্যবহারে ব্লু রে-কে বাধা দেওয়া যায়। এটি কাজ করে সানস্ক্রিনের মতো। ছাতা হয়ে ত্বককে নীল আলোর আগ্রাসন থেকে রক্ষা করে।
ব্লু রে শিল্ড কিনতে পাওয়া যায়। টেক শপিং লিস্টে এটাও রাখা যেতে পারে।
মডেল: নাজ
ছবি: সৈয়দ অয়ন
মেকওভার: পারসোনা