skip to Main Content

ফুড বেনিফিটস I চিরকালের চেরি

জাপানের ঐতিহ্যবাহী ফল চেরি। বাংলাদেশের খাদ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে বহুদিন ধরেই। বিশেষ করে জ্যাম ও জেলি হিসেবে। কেক তৈরিতেও এর কদর আছে। স্যালাডে সহপদ হয়। মানুষের খাদ্যতালিকায় চেরি যোগ হয়েছে সম্ভবত প্রস্তর যুগে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা ইউরোপ ও এশিয়ার প্রাগৈতিহাসিক গুহাগুলোতে এ ফলের ফসিল পেয়েছেন। চেরির প্রথম লিখিত বর্ণনা মেলে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে; গ্রিক লেখক থিওফ্রাস্টাস রচিত ‘উদ্ভিদের ইতিহাস’ বইতে। সেকালেই গ্রিক লেখক ও চিকিৎসক ডিফিলাস মূত্রবর্ধক হিসেবে এই ফলের উপকারিতা বিষয়ে লিখেছেন।
প্রতি ১০০ গ্রাম চেরিতে ক্যালরি আছে ৬৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১৬ গ্রাম, ফোলেট ৪ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, ভিটামিন সি ৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ২ গ্রাম, ভিটামিন এ ৬৪০ আইইউ, পটাশিয়াম ২২২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৩ মিলিগ্রাম এবং ফসফরাস ২১ মিলিগ্রাম। এগুলো মানুষের শরীরের নানা ধরনের রোগ সারিয়ে স্বস্তি দেয়। যেমন ফলটি রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এতে ডায়াবেটিসের রোগীরা উপকার পায়। মূলত অন্যান্য ফলের চেয়ে চেরিতে গ্লাইসেমিক কম থাকে। এটি রক্তে শর্করার সঙ্গে সম্পর্কিত। ক্যানসার প্রতিরোধেও কার্যকর চেরি। কাজটি করে এই ফলে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন। বিশেষ করে সায়ানিডিন। এই উপাদান দেহকোষকে ক্যানসারে রূপান্তরিত হতে বাধা দেয়। হৃদপিন্ডের সুরক্ষাও দিতে পারে চেরি। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যাতে রক্তচাপের সমস্যা থেকে রেহাই মেলে। ফলটিতে ফাইটোস্টেরলও থাকে। যা মন্দ কোলেস্টেরল কমায়। হাড় ও অস্থিসন্ধির ব্যথানাশে কিংবা এসব স্থান ফুলে গেলে এটি খাওয়া যেতে পারে। পেশির প্রদাহ ও ব্যথাও দূর করে। অস্টিওআর্থ্রাইটিসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় চেরি। এ ফলে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন। এই উপাদানই মূলত ব্যথা উপশম করে।
এ ছাড়া রয়েছে কোরেসেটিন, যা শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি। এটিও ব্যথা উপশমে কাজে আসে। চোখের রোগ থেকেও সুরক্ষা মেলে। দৃষ্টিশক্তি উন্নত করার পাশাপাশি চেরির এই উপাদান চোখের শুষ্কতা ও প্রদাহ থেকে মুক্তি দেয়। সংক্রমণ থেকেও বাঁচায়। কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে চেরি। ডায়রিয়া ও বদহজমে পথ্যরূপে কাজ করে। আলঝেইমার সারায়। ফলটির অ্যান্টিঅক্সিডেন্টই এ রোগ থেকে মুক্তি দেয়। গেঁটেবাতের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। দিনে ১০-১২টি করে চেরি খেলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে।
মগজের কার্যক্ষমতা বাড়াতে পারে চেরি। কাজটি করে এতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন উপাদান। তা ছাড়া এ ফলের পলিফেনলও মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখে। চেরির সেরোটোনিন মেজাজ ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করে। স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তোলে ফলটি। যেসব শিক্ষার্থী পড়া মনে রাখতে পারে না, তারা এই ফল নিয়মিত খেলে উপকার পেতে পারে। ধূমপান ছাড়তেও চেরি সহায়ক। এটি শরীরকে ধীরে ধীরে নিকোটিন মুক্ত করে তুলতে সক্ষম। ফলটি মাইগ্রেন সারাতেও কার্যকর। কাজটি করে চেরিতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন ও বাইয়োফ্লাভোনয়েড উপাদান। নারী-পুরুষের যৌনতাও বাড়ায় চেরি। এর টেস্টোস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি করে। গর্ভাবস্থায় ভীষণ উপকারী চেরি। এটি ভ্রূণের ভেতর রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। ভালো ঘুমের নিশ্চয়তা দিতে পারে ফলটি। শুতে যাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে এর জুস পান করলে ভালো ঘুম হয়। চেরিতে প্রচুর মেলাটোনিন থাকে, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটিই স্বাস্থ্যকর ঘুম নিশ্চিত করে।
পেটের চর্বি ও ওজন কমাতে চাইলে খাওয়া যেতে পারে চেরি। ফলটি যেমন শরীরের ভেতরে উপকারী, তেমনি বাইরে। চেরির বিভিন্ন উপাদান কোষের ক্ষয় রোধ করে। ত্বকে বলিরেখা পড়তে দেয় না। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্যজনিত রোগ থেকে রক্ষা করে। চুলের ক্ষতি এবং ত্বকের কুঁচকে যাওয়া রোধেও সহায়ক।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top