ফিচার I পরিষ্কারক খাদ্যানুষঙ্গ
কেমিক্যালের চেয়ে খাদ্যদ্রব্যে থাকা অম্লীয় বা ক্ষারীয় উপাদানগুলো বেশি নিরাপদ। সেসব দিয়েও ঘরের জিনিসপত্র পরিষ্কার করা যায়
কখনো কখনো খাদ্যবস্তুগুলো পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। কাঁসা ও পিতলের তৈজস সাফ করতে তেঁতুলের ব্যবহার কমবেশি সবারই জানা। এখন অবশ্য এ ধাতুদ্বয়ের ব্যবহার কমে এসেছে। সে জায়গা পেয়েছে প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামিন ইত্যাদি। এগুলো পরিষ্কার করতেও কাজে লাগছে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য। খাবারের অম্লীয় কিংবা ক্ষারীয় উপাদানই পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। লেবু, টমেটো, বেকিং সোডা, লবণ, দই, ভিনেগার, কোমল পানীয়, পেঁয়াজ, মাখন ও অলিভ অয়েল- এই খাবারগুলো হরহামেশাই ব্যবহৃত হয় পরিষ্কারক হিসেবে।
লেবু
লেবুর রসের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে পিতলের জিনিসপত্র পরিষ্কার করা যায়।
কেটলি পরিষ্কার করতে চাইলে এর ভেতর কয়েক টুকরা লেবু ফুটিয়ে ঘণ্টাখানেক রেখে দেওয়া যেতে পারে। তারপর ধুয়ে ফেললেই হবে।
কড়াইয়ের পোড়া দাগ তুলতে ডিশ ওয়াশিং সোপের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে পরিষ্কার করা যায়।
কাচের তৈজসপত্র পরিষ্কার করতে তিন ভাগ লেবুর রসের সঙ্গে এক ভাগ পানি মিশিয়ে স্প্রে করলেই চকচকে হয়ে উঠবে।
বেকিং সোডা
রুপার জিনিস পরিষ্কারে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পানির সঙ্গে দ্বিগুণ সোডা মেশাতে হয়।
সিঙ্ক পাইপ পরিষ্কার করতে অল্প বেকিং সোডা ছড়িয়ে লেবু মেশানো গরম পানি ঢেলে দেওয়া যেতে পারে।
লবণ
চপিং বোর্ড সাফ করার জন্য মোটা দানার লবণ বোর্ডের ওপর ছিটিয়ে লেবু ঘষতে হয়। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে নিলে বোর্ড পরিষ্কার হয়ে যাবে।
কার্পেটের দাগ তুলতে চাইলে লবণের সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে নোংরা জায়গায় ঘষে দেওয়া যেতে পারে। তারপর ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করে নিলেই হবে।
লোহার পাত্রে লবণ ছিটিয়ে শুকনা কাপড় দিয়ে ঘষে নিলে পরিষ্কার হয়। স্টেইনলেস স্টিলও এভাবে সাফ করা যায়।
ইস্ত্রিতে বাদামি দাগ পড়লে একটি ব্রাউন পেপারের ওপর লবণ ছিটিয়ে সেটি ঘষে নিলে দাগ চলে যাবে।
লবণ ও বেকিং সোডার মিশ্রণ ফ্রিজের ভেতরের দাগ দূর করতে পারে।
ভিনেগার
ভিনেগারে কাপড় ডুবিয়ে তা দিয়ে কাঁচি পরিষ্কার করা যায়। স্টেইনলেস স্টিলও এভাবে ঝকঝকে করা সম্ভব।
সমপরিমাণ ভিনেগার ও জলপাই তেল মিশিয়ে কাঠের আসবাব থেকে দাগ দূর করা যায়।
দেয়াল থেকে বলপয়েন্ট কলমের দাগ দূর করতে ভিনেগার ব্যবহার করা যেতে পারে।
মাইক্রোওয়েভ আভেন পরিষ্কার করতে চাইলে সামান্য ভিনেগারের সঙ্গে এক কাপ পানি মিশিয়ে ভেতরে সাফ করে নেওয়া যায়।
বেকিং সোডা মিশ্রিত ভিনেগারে রুপার জিনিসপত্র ডুবিয়ে রাখলে পরিষ্কার হয়।
সোডাজাতীয় পানীয়
রান্নার পাত্রে তেল চর্বি জমলে তাতে সোডাজাতীয় পানীয় নিয়ে কিছুক্ষণ গরম করলে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এই পানীয়তে কাপড় ভিজিয়ে তা দিয়ে গাড়ির কাচ পরিষ্কার করা যেতে পারে।
মরচে পড়ার স্থানে সোডা পানীয় ঢেলে তারপর অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে ঘষলে মরচে দূর হয়।
এটি দিয়ে ঘরের টাইলসও পরিষ্কার করা যায়।
কমোড পরিষ্কারের কাজে আসে এই পানীয়।
মাখন
বয়ামের স্টিকার তুলতে সেটির ওপর পিনাট বাটারের প্রলেপ দিলে কিছুক্ষণ পর সহজেই তোলা যাবে।
কোনো আসবাবে আঠা লেগে গেলে তা তুলতে সেই স্থানে মাখন মেখে দেওয়া যেতে পারে।
ছুরি দীর্ঘকাল ব্যবহৃত না হলে কোনো কিছু কাটার সময় তা আটকে আটকে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ছুরিতে মাখন মাখালে তা মসৃণ হয়।
অলিভ অয়েল
আসবাবপত্রে চকচকে ভাব আনতে অলিভ অয়েলের সঙ্গে সামান্য অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে তা নরম কাপড়ে নিয়ে আসবাবে ঘষে দেওয়া যেতে পারে।
ধাতুকে মরিচামুক্ত রাখতে তা অলিভ অয়েল দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করেন অনেকে।
পেঁয়াজ: ফ্রাইপ্যান থেকে পোড়া দাগ তুলতে সেটিতে পেঁয়াজকুচি ও গরম পানি দিয়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিতে হয়। এরপর পরিষ্কার করলে দাগ উঠে যায়।
টমেটো: এর সসের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে তামার তৈজস পরিষ্কার করা যেতে পারে।
দই: ধাতব তৈজসপত্র ও শোপিসে মরচে পড়লে টক দই দিয়ে ঘষা যেতে পারে। দইয়ে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড মরচে দূর করে।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট