সেলুলয়েড I মাটির প্রজার দেশে
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : ইমতিয়াজ আহমেদ বিজন
প্রযোজনা : আরিফুর রহমান
সংগীত পরিচালক : অর্ক মুখার্জি
সংগীত : সাত্যকী ব্যানার্জি
সিনেমাটোগ্রাফি : রামশ্রেয়াস রাও, অ্যান্ড্রু ওয়েসম্যান
অভিনয় : জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রোকেয়া প্রাচী, মাহমুদুর অনিন্দ্য, শিউলি আখতার জারিন, চিন্ময়ী গুপ্ত, মনির আহমেদ প্রমুখ।
মুক্তি : ২৩ মার্চ ২০১৮
দৈর্ঘ্য : ৮৮ মিনিট
মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি বলেছেন, অভিনেতা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে কথা বললে তা এক রকম অর্থ প্রকাশ করে। আবার যন্ত্রটি শিল্পীর মাথার ওপরে রাখা হলে ভিন্ন মানে দাঁড়ায় বা ক্যামেরা মুখের নিচে নিয়ে এলে তার অর্থ পরিবর্তিত হতেও পারে। মাটির প্রজার দেশে চলচ্চিত্রে ক্যামেরার কাজে ভিন্ন ভিন্ন অর্থদ্যোতনা সৃষ্টির প্রয়াস লক্ষণীয়। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলের শটে দৃশ্যায়নে গতিশীলতার সঞ্চার লক্ষ করা যায়। আমবাগানের ভেতর সূর্যরশ্মির খেলা, গমখেত, পালকি যাত্রা, বিয়ের শাড়ির লাল আঁচলের তরঙ্গ ক্লোজআপ এবং লং শটে ধারণের নিরীক্ষায় পরিচিত দৃশ্যরাশি হয়ে উঠেছে অসাধারণ। বলা যেতে পারে, কখনো কখনো সেসব মন্তাজের সূচনা করেছে। একটামাত্র গান হলেও পুরো চলচ্চিত্রের সংগীতায়োজন, আলোক প্রক্ষেপণ এবং চারপাশের বস্তুরাশির ওপর ক্যামেরা সঞ্চালনের নানান টেকনিক্যাল প্রকাশভঙ্গিতে পরিস্ফুট হয়েছে সিনেমাটিক গতি। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন ইমতিয়াজ আহমেদ বিজন।
নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, বাল্যবিবাহ, ১০ বছর বয়সী এক শিশুর আকাক্সক্ষা এবং প্রচলিত মূল্যবোধের বাইরে মানবিক বোধের জাগরণই এই কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে। শিশু জামাল মায়ের সঙ্গে কোনো এক প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করে। একদিন তার বাল্যবন্ধু ও খেলার সঙ্গী লক্ষ্মীর হঠাৎ বিয়ে হয়ে যায়। জামালও চলে যায় অন্য গ্রামে। তার লেখাপড়ারও সমাপ্তি ঘটে। মা ফাতেমা একটি বাড়িতে ঝিয়ের কাজ নেয়। জামাল সেই পরিবারের ছোট মেয়ের ফুটফরমাশ খাটে। মেয়েটি তারই সমবয়সী, স্কুলে পড়ে। জামালেরও লেখাপড়ার আগ্রহ জাগে। কিন্তু পিতৃপরিচয়হীন শিশুকে স্কুলে ভর্তি করতে চায় না সেখানকার শিক্ষক। ফাতেমা নিজের পরিচয়ে সন্তানকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে এলে বিপত্তির শুরু হয়। শিক্ষকের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। সিনেমায় ফ্লাশব্যাকে কোনো ঘটনা দৃশ্যায়িত না হলেও দর্শকদের বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না। অতঃপর কাহিনির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটতে থাকে। অতীত মা-সন্তানের জীবনকে এলোমেলো করে দেয়। অবৈধ সম্পর্কের সূত্র ধরে ফাতেমাকে নিগৃহীত হতে হয়। শাস্তিস্বরূপ তাকে আটকে রাখে নির্জন এক ঘরে। রাতে, অন্ধকারে ফাতেমাকে মুক্ত করে জামালকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায় রাজ্জাক হুজুর।
সামাজিক আইন, প্রচলিত ধর্মীয় মূল্যবোধ- এসব তুচ্ছ করে মানবিক হয়ে ওঠার গল্পই এই সিনেমার প্রাণবিন্দু। কাহিনি চমকপ্রদ নয়, বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজজীবনে প্রতিদিনের স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই সাধারণ গল্পই পরিচালকের উপস্থাপন-দক্ষতায় হয়ে উঠেছে গতিময়। আপাতবিচ্ছিন্ন টুকরো টুকরো দৃশ্যের সংযোজন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভিমুখ হওয়ায় গল্পে কোথাও শিথিলতা সৃষ্টি হয়নি।
মাটির প্রজার দেশে- পরিচালকের ভাষায় নির্যাতনের শিকার, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবাই মূলত মাটির প্রজা। নামটিও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কাহিনির অন্তর্নিহিত ভাব ও ব্যঞ্জনাকে পরিস্ফুট করে তুলেছে পারিপার্শ্বিক আবহ, ভূপ্রকৃতির উপস্থাপনা, কস্টিউম ডিজাইন এবং অভিনয়শৈলী। গ্রামীণ দৃশ্যপট এই চলচ্চিত্রে যেভাবে দেখানো হয়েছে, তা ভিন্ন এক মাত্রা সৃষ্টি করেছে।
সিনেমাটি বাংলাদেশে মুক্তি পায় ২০১৮ সালের ২৩ মার্চ। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, শিকাগোর দক্ষিণ এশীয় চলচ্চিত্র উৎসব, ইতালির কারাওয়ান, ইন্দোনেশিয়ার রয়্যাল বালি চলচ্চিত্র উৎসবসহ ২০টির বেশি উৎসবে অংশ নেয়। এগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশীয় চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শক জরিপে সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার পুরস্কার অর্জন করে।
প্রিয়ঙ্কর অর্ঘ
কুইজ
১ এই সিনেমায় কয়টি গান আছে?
[ক] ৩টি
[খ] ১টি
[গ] ৪টি
[ঘ] একটিও না
২ জামালের মায়ের নাম কী?
[ক] ফাতেমা[খ] শিউলি আখতার
[গ] রোকেয়া প্রাচী
[ঘ] জারিন পারভীন
৩ মাটির প্রজার দেশে সিনেমার সংগীত পারিচালক কে?
[ক] ইমতিয়াজ বুলবুল
[খ] এন্ড্রু কিশোর
[গ] আলাউদ্দীন আলী
[ঘ] অর্ক মুখার্জি
গত পর্বের বিজয়ী
১। তুষার বিশ্বাস, মিরপুর, ঢাকা ২। তারা সাংমা, গাজীপুর, ঢাকা ৩। সাইদ তুহিন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ