এডিটরস কলাম I সুস্থতার কথামালা
সেহরি ও ইফতার আরেকটু স্বাস্থ্যকরভাবে আমরা উপভোগ করব সংযমের এই দিনগুলোতে
এমন একটা সময়ে সিয়াম সাধনার দিনগুলোয় প্রবেশ করছি আমরা, যখন করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে। মৃতের সংখ্যাও ঊর্ধ্বগামী। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই এ জন্য যে এরই মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ রোগটি মোকাবিলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। প্রতিকারের উপায়গুলোও রপ্ত হয়েছে। তদুপরি, এটা বেশ স্বস্তিকর যে রোজার এই মৌসুমটা বাংলাদেশ মৌসুমি ও দেশীয় ফলে ভরে উঠছে। মুখরোচক খাবার ছাড়া বাঙালির সেহরি ও ইফতার চলে না। বিশেষত, ইফতারের টেবিল মানেই হলো ভাজাপোড়ার প্রদর্শনী। গত বছরের রমজানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় এই অভ্যাস থেকে আমরা অনেকটাই বের হতে পেরেছি, তাতে লাভই হয়েছে। ওই এক মাসে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের বদৌলতে আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেড়েছে। এবার যেহেতু আগের তুলনায় ভাইরাসটির প্রকোপ বেশি, এ ব্যাপারে আমাদের আরও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি মনে করছি। সেহরি ও ইফতার আরেকটু স্বাস্থ্যকরভাবে আমরা উপভোগ করব সংযমের এই দিনগুলোতে।
দুই
কী আমরা খাব, একটু আগের প্রসঙ্গ থেকেই তা বুঝতে পারা গেছে নিশ্চয়। তবু বলি, মৌসুমি ফলের এই সময়টা খাদ্যতালিকায় পুরোপুরি কাজে লাগাতে না পারলে আফসোসই হবে। কারণটা শরীরই জানিয়ে দেবে। যেমন ধরুন, এখন তরমুজের মৌসুম। এই ফলে যে পরিমাণ মিনারেল ও খাদ্যপ্রাণ রয়েছে, তার বিকল্প অন্য কিছুতে নেই। আমরা তো ইফতারের সময় তৃষ্ণার্ত হয়ে বিভিন্ন রকমের পানীয় গ্রহণ করি। তরমুজ থাকলে সেগুলোর দরকারই হয় না; বরং এটি অন্যান্য পানীয়র চেয়ে বহুগুণে স্বাস্থ্যকর। রোজার কারণে শরীরে পানির যে ঘাটতি হয়, তরমুজ সেটি পুষিয়ে দেওয়ার অব্যর্থ দাওয়াই। ত্বক আর চুলের জন্যও ভালো। বোঝাতে চাইছি, ফল যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনি দেহসৌন্দর্যেও সুরক্ষা দেয়। অন্যান্য ফল, যেমন আনারস, পেয়ারা, বেল ইত্যাদিও স্বাস্থ্যকর। কলা তো বারো মাসেই মেলে। এখন পাওয়া যাচ্ছে কাঁচা আম। এর জুস বানিয়ে খেলে ভিটামিন সির ঘাটতি মিটবে। এটা কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রতিরোধেও সহায়ক। এগুলোর বাইরে মাল্টা, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফল, চেরি, কমলা, আঙুর ইত্যাদি মিলছে দেশে। চাষও হচ্ছে। তাই এগুলোকে আজকাল আর বিদেশি ফল হিসেবে দেখা হচ্ছে না। সারা দিন অভুক্ত থাকার এই দিনগুলোতে এসব ফল শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়, যেকোনো রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে সবকিছুই পরিমিত খাওয়া দরকার। এবং জানা প্রয়োজন কোনটির সঙ্গে বা পরে কী খেতে হয়।
তিন
শুধু ফলের কথা বলছি কেন। ভাজাপোড়ার বাইরে ইফতারের অনুষঙ্গ হিসেবে আমরা দুধ-কলা-ভেজা চিড়া তো খাই-ই। থাকে সেদ্ধ ছোলাও। অনেক সময় তা ভেজেও নেওয়া হয়। তবে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর হলো, ছোলা ভিজিয়ে অঙ্কুরোদ্গমের পর খাওয়া। এটি যেমন পুষ্টিকর, তেমনি ইমিউনিটি বাড়াতে সহায়ক। একই পদ্ধতিতে মুগও ফার্মেন্টেড করা যেতে পারে। মনে রাখা দরকার, করোনাজনিত বাস্তবতায় সুস্থতার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। তবে খাঁটি সরিষার তেল কিংবা অলিভ অয়েল পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে। সহজে হজম হয়, এমন খাবারই ভালো। কৃত্রিম যেকোনো খাদ্য বর্জন করা জরুরি। এমনকি বাজারের খোলা খাবারও। ফ্রিজের বরফ-ঠান্ডা খাদ্য একেবারেই নয়।
চার
অনেকেই ইফতারের পর হালকা বিশ্রাম নিয়ে সেহরি পর্যন্ত জেগে থাকেন। ফলে রাতের প্রায় পুরোটাই নির্ঘুম কেটে যায়। এমনটি অস্বাস্থ্যকর। আমাদের শরীর একটা ঘড়ির মতো, যাকে ঠিকঠাক চলতে দিতে হয়। নইলে তা বিগড়ে যাবেই একসময়। এমনিতেই সুনিদ্রা শরীরকে ঠিক রাখে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বাড়ায়। সেহরির সময় যেহেতু জেগে উঠতে হবে, তাই বছরের আর সব দিনের চেয়ে আগেই ঘুমিয়ে পড়া দরকার। অন্তত ছয় ঘণ্টা যাতে ঘুমানো যায়। সুনিদ্রা না হলে যতই পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করি না কেন, তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শরীরে, ত্বকেও। রাত জাগলে চুলও ঝরে যায়। ক্লান্তির ছাপ পড়ে চেহারায়। অন্যদিকে সারা দিনের কাজগুলো স্বস্তির সঙ্গে করা যায় না। দিনের পর দিন এমনটি শরীরের জন্য অশেষ ক্ষতিকর।
পাঁচ
শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার আর সুনিদ্রার মধ্যে সুস্থতার বিষয়টি সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরচর্চাও প্রয়োজন; অন্তত আধঘণ্টা। দিনে অন্তত দুবার শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামটি করুন। পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত রাখুন সব সময়। এতে দেহ ও মন- দুটোই সুস্থ ও প্রফুল্ল থাকবে। উৎসবও উপভোগ্য হয়ে উঠবে।