skip to Main Content

ফিচার I অরগাঞ্জা

চীনে উদ্ভাবিত এই ফ্যাব্রিকের কদর এখন বিশ্বব্যাপী। ফ্যাশনের জগতে এর স্থানও আজ শীর্ষে। ব্যবহৃত হচ্ছে নারীর প্রায় সব ধরনের পোশাকে

বসন্ত ও গ্রীষ্মের বেশির ভাগ ট্রেন্ড আগে থেকে আঁচ করা যায়। কিন্তু অরগাঞ্জার ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ভিন্ন। হুট করে এসেই এখন সামার ট্রেন্ডের শীর্ষে এর অবস্থান।
অরগাঞ্জা ১০১
খুব হালকা ওজনের, শিয়ার, প্লেইন-উভেন ফ্যাব্রিক। অরগাঞ্জা মূলত সিল্ক থেকে তৈরি। এ ছাড়া সিনথেটিক ফাইবার যেমন পলিয়েস্টার, নাইলন, রেয়ন থেকে প্রস্তুত করা যায়। খাঁটি সিল্কের চেয়ে এ ধরনের অরগাঞ্জা বেশি টেকসই এবং সহজলভ্য হয়ে থাকে।
বেশির ভাগ সিল্ক ফ্যাব্রিকের মতো অরগাঞ্জার উদ্ভব হয়েছিল চীনে। দেশটি এখনো এর সবচেয়ে বড় উৎপাদক এবং রপ্তানিকারক। ইয়াংজি নদীর তীরে বিশেষত ঝেজিয়াং প্রদেশে বেশ কয়েকটি অরগাঞ্জা বুনন মিল রয়েছে। ভারত এর বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশ। বেঙ্গালুরুতে এক বিশেষ ধরনের মজবুত বুননের অরগাঞ্জা উৎপাদিত হয়। এ ছাড়া ইতালি ও ফ্রান্সও বেশ উৎকৃষ্ট মানের অরগাঞ্জা উৎপাদন করে।
অনেক বেশি পাতলা, সহজে কুঁচকে বা ছিঁড়ে যাওয়া থেকে মুক্ত, সুতি কাপড়ের মতো বায়ু শোষণের ক্ষমতা ইত্যাদি এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ ছাড়া অ্যাসিড ট্রিটমেন্টের জন্য এই ফ্যাব্রিকে একধরনের হালকা স্টিফনেস তৈরি হয়। তাই এটি অন্যান্য সিল্কের মতো ফ্লোয়ি নয়। ডিজাইনাররা এই গুণের জন্য অরগাঞ্জা দিয়ে গাউনের মতো স্কাল্পচারাল শিলুয়েট বানিয়ে আসছেন।
প্রায় সাত রকমের অরগাঞ্জা ফ্যাব্রিক আছে-
ক্রিস্টাল: জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত। এটি নরম এবং হালকা ওজনের। ক্রিস্টালের মতোই উজ্জ্বল। সিল্কের পাশাপাশি এখন সিনথেটিক ফাইবার দিয়েও এটি তৈরি হচ্ছে। ব্রাইডাল ওয়্যার এবং ইন্টেরিয়র ডেকোরেটিং ছাড়াও আরও অনেক কিছুতে ক্রিস্টাল অরগাঞ্জা ব্যবহৃত হয়।
মিরর: সাধারণত পলিয়েস্টার দিয়ে তৈরি হয়। অন্য সব অরগাঞ্জার চেয়ে এটি সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল এবং এতে খুব ভালোভাবে আলো প্রতিফলিত হতে পারে।
সাটিন: সাটিনের মতো মসৃণ এবং চকচকে, আবার অরগাঞ্জার মতো ক্রিস্প ড্রেপিংয়ের বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। প্রায় সব ধরনের পোশাক তৈরির জন্য উপযুক্ত।
ক্রাশড: সবচেয়ে ইউনিক কোয়ালিটির ফ্যাব্রিকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এর রিংকেলড বা কুঁচকানো টেক্সচারের জন্য এটি অন্য অরগাঞ্জা থেকে আলাদা।
শট: এই বিশেষ ধরনের অরগাঞ্জা বানাতে বিভিন্ন রঙের সিল্কের সুতা ওয়ার্প এবং ওয়েফ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মাল্টিকালারড ফিনিশ গোধূলি বা নর্দান আলোর মতো রঙের গ্রেডিয়েন্ট তৈরি করে।
এমব্রয়ডারড: ক্রিস্টাল বা মিরর অরগাঞ্জার ওপর সূচিকর্ম সংযোজন করে এই ফ্যাব্রিক তৈরি। এমবেলিশমেন্ট হিসেবে রাইনস্টোনস, সিকুইন, বিভিন্ন রকমের সুতা ব্যবহার করা হয়। যেকোনো ধরনের লাক্সারিয়াস পোশাক তৈরিতে এ ধরনের অরগাঞ্জা বেশি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।
প্রিন্টেড: একদম নতুন ধরনের অরগাঞ্জা হলেও এখন এটি অনেক বেশি জনপ্রিয়। ক্রিস্টাল, মিরর এবং ক্রাশড অরগাঞ্জার ওপর ডিজিটাল প্রিন্টের মাধ্যমে এটি তৈরি হয়। এই ফ্যাব্রিকে ফ্লোরাল প্রিন্ট সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এখন অবশ্য ক্যাজুয়াল ড্রেসে পোলকা ডট এবং ফ্রুট প্রিন্টের ব্যবহারও হচ্ছে।
স্টাইলিং
ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন ট্রেন্ডে অরগাঞ্জা আসার পর থেকে আমাদের এখানেও এই ফ্যাব্রিক দিয়ে অনেক ধরনের পোশাক তৈরি হচ্ছে। এথনিক এবং ওয়েস্টার্ন- দু ধরনেরই। গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হওয়ায় এখানে এর কাটতি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
শাড়ি
অরগাঞ্জা শাড়ির জয়জয়কার এখন সবখানে। গরমের উৎসবে এটি হতে পারে দারুণ চয়েজ। কারণ, এ শাড়ি খুবই হালকা এবং আরামদায়ক। একই সঙ্গে সিম্পলের ভেতর গর্জাস। এর আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে, এটি সব গড়নে ভালোভাবে মানিয়ে যায়। সঠিকভাবে ড্রেপিং করতে পারলে কার্ভি ফিগারের অধিকারীদের লাগবে স্লিম এবং স্লিম কাউকে লাগবে তুলনামূলক কার্ভি।
কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু ডিজাইনার এ শাড়িকে ট্রেন্ডে নিয়ে এসেছেন। প্রিয়াংকা চোপড়া, আনুশকা শর্মা, কারিশমা কাপুর, কারিনা কাপুর খান, কঙ্গনা রনৌতের মতো সেলিব্রিটিদের বিভিন্ন ফরমাল অনুষ্ঠান ও উৎসবে অরগাঞ্জা শিয়ার শাড়ি পরতে দেখা গেছে। মূলত তাদের মাধ্যমেই এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
বিভিন্ন ডিজাইনের অরগাঞ্জা শাড়ি পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি চলছে এমব্রয়ডারি ও ক্রিস্টাল অরগাঞ্জা ফ্যাব্রিকের শাড়ি। এমব্রয়ডারি শাড়িতে সুতা, পুঁতি, চুমকি, জরি, ক্রিস্টাল ও মুক্তার কাজ বেশ দেখা যাচ্ছে। আবার পার্টি ওয়্যার শাড়িগুলোতে এমবেলিশমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ফেদার, ফ্রিঞ্জ, রাফল ও নানা রকমের অ্যাপ্লিক ওয়ার্ক।
মিনিমালিস্টদের জন্য আছে ফ্লোরাল, ট্রপিক্যাল এবং ফয়েল প্রিন্টের অরগাঞ্জা শাড়ি। এ ধরনের কাপড়ের পাড়ে হালকা ও ভারী- এ দু রকমের লেসের কাজ করা হচ্ছে। শাড়িগুলো যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য মানানসই।
লেহেঙ্গা
ভারী ফ্যাব্রিকের লেহেঙ্গা ছেড়ে এখন সবাই ঝুঁকছে অরগাঞ্জা লেহেঙ্গার দিকে। আগে শুধু লেহেঙ্গার দোপাট্টা হিসেবে এর ব্যবহার দেখা যেত, এখন পুরো সেট তৈরি হচ্ছে এটি দিয়ে। মডার্ন ব্রাইডদের প্রথম পছন্দ অরগাঞ্জা লেহেঙ্গা। কারণ, স্টিফনেসের জন্য সহজেই মাল্টি লেয়ারের মাধ্যমে ভলিউম তৈরি করা যায়। এত কিছুর পরও এ ধরনের লেহেঙ্গা অনেক বেশি হালকা ও আরামদায়ক হয়। এখন সবচেয়ে বেশি চলছে ফ্লোরাল অরগাঞ্জা লেহেঙ্গা। এটি যেকোনো উৎসবেই মানিয়ে যায়। এ লেহেঙ্গা সেটের র্স্কাট ও দোপাট্টা ফ্লোরাল প্রিন্টের হয়ে থাকে। আপার হিসেবে সবচেয়ে ভালো মানায় ক্রপ টপ স্টাইল ব্লাউজ, পেপলাম টপ বা লং কুর্তি।
শারারা-ঘারারা
উৎসবের পোশাকে শারারা আর ঘারারার জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ পোশাক দুটি তৈরি করতে প্রায়ই ভারী কাপড় ব্যবহার করা হয়। তবে এখন অরগাঞ্জা ফ্যাব্রিক দিয়ে নজরকাড়া ডিজাইনের শারারা ও ঘারারা বানানো হচ্ছে, যা গরমের ফেস্টিভ ওয়্যার হিসেবে একদম পারফেক্ট। এতে এমবেলিশমেন্ট হিসেবে আছে পুঁতি চুমকি পাথর জরির ব্যবহার।
সালোয়ার স্যুট
অরগাঞ্জা দিয়ে তৈরি হচ্ছে সালোয়ার স্যুট। লেহেঙ্গার মতো আগে সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে দোপাট্টা হিসেবে এটি বেশি পরা হতো। এখন এই আউটফিটের সেট বানাতে অরগাঞ্জার ব্যবহার হচ্ছে। শিয়ার ফ্যাব্রিক বলে ফোর পিস হিসেবে এটি বেশি ভালো। এই ফোর পিসে বটম এবং ইনার হিসেবে থাকে অন্য কাপড়ের সালোয়ার। আর অরগাঞ্জা ব্যবহার করা হয় সাধারণ বা শ্রাগ স্টাইল কামিজ ও দোপাট্টা বানাতে।
গাউন
সামার ট্রেন্ডে ব্রেকআউটের আগে পশ্চিমে শুধু বিয়ের লাক্সারিয়াস গাউন বানাতেই অরগাঞ্জা ব্যবহার করা হতো। বিশেষ করে ব্রাইডাল ভেইলে। এই ফ্যাব্রিক বল গাউন এবং এ-লাইন ড্রেস বানানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এ ছাড়া অরগাঞ্জা দিয়ে এইচ-লাইন, মিডি, টি-লেন্থ, মারমেইড, ট্রাম্পেট- প্রায় সব স্টাইলের গাউন বানানো যায়। সাধারণত অরগাঞ্জা অপেক বা অস্বচ্ছ ফ্যাব্রিক যেমন সাটিন, সিল্ক, জর্জেটের ওপর লেয়ারিং করা হয়। ইভনিং গাউনের গন্ডি ছাড়িয়ে এখন অনেক ক্যাজুয়াল স্টাইল গাউনেও অরগাঞ্জার ব্যবহার হচ্ছে।
স্কার্ট
গরমে আরামদায়ক পোশাকের তালিকায় একটা অরগাঞ্জা স্কার্ট রাখা যেতেই পারে। বৈচিত্র্যময় এই স্কার্ট কেবল ফেস্টিভ ওয়্যার নয়, ক্যাজুয়াল ওয়্যার হিসেবেও চমৎকার। এক রঙের স্কার্টের সঙ্গে জোড় বাঁধতে পারে কালারফুল টপস, শার্ট বা টি-শার্ট। আর প্রিন্ট স্কার্টের সঙ্গে এক রঙের টপ পরা যেতে পারে। বিপরীত ফ্যাব্রিক যেমন সাটিন, কটন, জর্জেটের আপার ওয়্যার যেমন পরা যায়, তেমনি অরগাঞ্জা অন অরগাঞ্জাও খুব ভালো দেখায়।
টপস
কয়েক বছর ধরে ‘সি থ্রু’ ট্রেন্ড খুব চলছে। অরগাঞ্জার চেয়ে আরামদায়ক শিয়ার ফ্যাব্রিক আর হতেই পারে না। এ জন্য দু বছর ধরে সামার ক্যাজুয়াল টপসের দুনিয়ায় এর আনাগোনা শুরু হয়েছে। নানা ডিজাইনের অরগাঞ্জা টপস পাওয়া যাচ্ছে। যেমন ক্রপ টপ, শর্ট শার্ট, র‌্যাপ টপ, পেপলাম ইত্যাদি। এগুলোর ইনার হিসেবে স্লিভলেস কামিসোল বা ট্যাংক টপ, ব্রালেট পরা যায়। আবার কিছু টপসের নিচে আগে থেকে অপেক ফ্যাব্রিকের লেয়ারিং করা থাকে। অরগাঞ্জা টপসের আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে এর স্লিভ এবং নেকলাইন। নানা স্টাইলের ওভারসাইজ পাফ স্লিভ এবং বো নেকলাইনের ব্যবহার বেশ চোখে পড়ছে।

 ফাহমিদা শিকদার
মডেল: বর্ণ,অন্তরা ও আনসা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: আদ্রিয়ানা এক্সক্লুসিভ
ছবি: তাহের বিন সালেক
লোকেশন: উনান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top