কুন্তলকাহন I চুল থেকে অ্যাকনে
কেবল ত্বকে দূষণের কারণে নয়, চুল এবং স্ক্যাল্পের ময়লা থেকেও হতে পারে ব্রণ। তবে রয়েছে সমাধান
পিম্পল, ব্রণ কিংবা অ্যাকনে এমন অতিথি, যেগুলো বিনা নোটিশে এসে উপস্থিত হয়। কোনো বড় অনুষ্ঠান কিংবা পার্টির আগে এসবের আবির্ভাব ঘটতে পারে। তবে এগুলোর উৎপত্তির কারণ হিসেবে নিজের খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস, ফাস্ট ফুড, ভাজা-পোড়া কিংবা নতুন ব্যবহৃত এমন কোনো স্কিনকেয়ার প্রডাক্টকে দোষারোপ করার আগে ভেবে নিতে হবে, চুলই এর কারণ নয় তো?
বেশ কিছু গবেষণায় এই ব্যাপারে সত্যতা পাওয়া গেছে যে ত্বকের অ্যাকনের কয়েকটি কারণের মধ্যে একটি হলো চুল। চুল কিংবা মাথার ত্বকের ময়লা বা খুশকি খুব সহজেই স্কিনের সংস্পর্শে আসতে পারে। তাই প্রতিনিয়ত ত্বকে যে পিম্পল হচ্ছে, তা চুলের কারণেও হতে পারে, এমন আশঙ্কা ব্যাপক। তবে এর থেকে মুক্তি পেতে হলে যে সব চুল ফেলে দিতে হবে এমন নয়, কিছু ছোটখাটো ভুল এড়িয়ে চললে রেহাই মিলবে।
ব্যায়ামের পর
শরীরচর্চার পর যে ঘামের সৃষ্টি হয়, তা চুলে জমে থাকা ময়লা কিংবা খুশকির স্তরের সঙ্গে মিশে যায়। এই ঘাম মাথা থেকে মুখের ওপর গড়িয়ে পড়লে তখন এসব জমে থাকা ময়লা ত্বকে মিশে যায় এবং ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি ঘটায়। এই সমস্যা এড়াতে ব্যায়াম শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই গোসল করতে হবে এবং খুব ভালোভাবে স্ক্যাল্প ধুয়ে নিতে হয়। এতে জমে থাকা ময়লা আর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটাতে পারবে না।
চুল খুলে ঘুম
এই গরমে চুল ময়লা হয়ে যায় খুব সহজেই। প্রতিদিন তা ধোয়া হলেও ঘাম এবং ধুলাবালির কারণে চুল বেশ ময়লা এবং তেলতেলে অনুভূত হয়। এমন অবস্থায় চুল ছেড়ে ঘুমালে এই তেল-ময়লা ঘুমের মধ্যে চুলে লেগে যেতে পারে। তাই সব সময় ঘুমানোর আগে হালকা একটা বেণি কিংবা খোপা বেঁধে নিলে চুল ত্বকের সংস্পর্শে আসবে না এবং ব্রণের আশঙ্কাও কমে যাবে।
পণ্যের সঠিক ব্যবহার
চুল সুস্থ রাখতে কিংবা হেয়ারস্টাইলিংয়ের জন্য নানা ধরনের হেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার করা হয়। তবে যেকোনো প্রডাক্টই ব্যবহার করতে হবে সঠিক উপায়ে। হেয়ার মাস্ক, কেয়ার স্প্রে কিংবা হেয়ার ব্লিচ—এসবের কোনো উপাদান যেন একদমই ত্বকের সংস্পর্শে না আসে, সে বিষয়ে লক্ষ রাখা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, একটি হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করা হবে। এটা চুলে সরাসরি নয়, চিরুনিতে কিংবা হাতে স্প্রে করে তারপর চুলে মাখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই পরবর্তী পর্যায়ে খুব ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেওয়া দরকার। হেয়ার প্রডাক্ট বাছাই করতেও হতে হবে সতর্ক। কিছু প্রডাক্টে এমন সব উপাদান রয়েছে, যেগুলো ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। সেসব এড়িয়ে চলাই ভালো। চেষ্টা করতে হবে পানি কিংবা গ্লিসারিন বেসড প্রডাক্ট বেছে নিতে। এতে সেগুলো ত্বকের সংস্পর্শে এলেও বেশি ক্ষতি করবে না।
ব্যাঙস হেয়ার কাট
স্ক্যাল্প থেকে নিঃসৃত ন্যাচারাল অয়েল মাথার সব চুলে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তাই মুখের ওপর কোনো চুল থাকলে তা থেকেও এই তেল ত্বকে যেতে পারে এবং তার মাধ্যমে অ্যাকনের ব্যাকটেরিয়া তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। চুলে ব্যাঙস কাটার ফলে কিছু চুল সব সময়ই কপালের ওপর পড়ে থাকে এবং এর ফলেও অ্যাকনে দেখা দিতে পারে। তাই বলে ব্যাঙস কাটা যাবে না এমন নয়। এটি নিয়েই বিভিন্ন ধরনের হেয়ারস্টাইল করা যেতে পারে। ব্যাঙস ক্লিপ দিয়ে আটকে রাখা যাবে। আর যদি তা ছাড়াও থাকে, তবে কিছুক্ষণ পরপরই কপালের ওই অংশ ওয়েট টিস্যু দিয়ে মুছে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যদি ত্বক খুব বেশি অ্যাকনেপ্রবণ হয়, তবে এই হেয়ারকাট এড়িয়ে চলাই ভালো।
অনুষঙ্গ
অনেকেই চুলে বিভিন্ন রকমের হেয়ার অ্যাকসেসরিজ ব্যবহার করে। হতে পারে রোদ থেকে বাঁচার জন্য ক্যাপ কিংবা স্টাইলিংয়ের ব্যান্ডানা। এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, এগুলো কোনোটাই যেন খুব আঁটসাঁট হয়ে মাথায় না বসানো হয়। খুব শক্ত করে এসব পরলে হেয়ারলাইনের পোরগুলো বন্ধ হয়ে তা অ্যাকনের কারণ হতে পারে। তাই যে অ্যাকসেসরিজই ব্যবহৃত হোক, তা যেন ত্বকের শত্রু হয়ে না দাঁড়ায়। নিয়মিত এসব হেয়ার অ্যাকসেসরিজ ধুতে হবে, তাতে এসবে আটকে থাকা চুলের তেল, ময়লা কিংবা খুশকি ত্বকের ক্ষতি করতে পারবে না।
নিয়ম মেনে গোসল
অনেক ডার্মাটোলজিস্ট পরামর্শ দিয়ে থাকেন রাতে ঘুমানোর আগে চুল ধুয়ে গোসল করার। এতে নতুন করে ময়লা জমাট বাঁধার সময় পায় না। কারণ, ঘুমের সময় চুল কখন ত্বকের সংস্পর্শে চলে আসবে, টের পাওয়া যাবে না। তাই চুল পরিষ্কার করে নিয়ে ঘুমানোর বিকল্প নেই। গোসলের সময়ে চেষ্টা করতে হবে আগে চুল ধুয়ে নিতে, তারপর শরীর। কারণ, হেয়ার প্রডাক্টস কিংবা চুলের ময়লা এসে গায়ে জমে থাকে। তবে শরীর ধুয়ে নিলে সেই ময়লা চলে যায়। এতে পিঠ কিংবা গলায় অ্যাকনে হওয়ার আশঙ্কা কমে।
শিরীন অন্যা
মডেল: জুঁই
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দিন