skip to Main Content

ফিচার I টি টাইমিং

সময় মেনে চা পানই ভালো। কেননা এটি ক্যাফেইনের ধারক। তরল হওয়ায় শরীরে এর ভালো কিংবা মন্দ প্রভাব পড়তে বেশি সময় লাগে না

জীবন ‘দেহঘড়ি’ মেনে চলে। খাদ্য সেটির মূল রসদ। কিন্তু মানুষ যেমন সব সময় ভরা পেটে থাকে না, তেমনি খালি পেটেও থাকে না। এদিকে একেকটি খাবার হজম হওয়ার সময়ও ভিন্ন। আবার খাদ্যদ্রব্যের একটি উপকরণ আরেকটি উপকরণের সঙ্গে মিশে বিষক্রিয়াও ঘটাতে পারে। পরিপাক ক্রিয়াটি বেশ জটিল। একে খুব সাবধানে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

খাবারের সামান্য দোষে শরীরে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তরল খাবারগুলো অনিষ্ট ঘটাতে খুব কম সময় নেয়। ফলে এজাতীয় খাদ্য পানে চাই বেশি সতর্কতা। তরল খাবারগুলোর মধ্যে পানির পরেই বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ পান করে চা। এটি অসময়ে খাওয়ার বদভ্যাস আছে অনেকেরই। আবার মন-মর্জির ওপরও এই পানীয় প্রভাব ফেলে। ফলে তা পান করা চাই ঘড়ির কাঁটা দেখে।
শুরু করা যাক দুধ-চায়ের কথা দিয়ে। এটিকে এড়িয়ে চলতে বলেন চিকিৎসকেরা। তবু যারা অভ্যস্ত, তাদের উচিত হবে সময় বুঝে তা পান করা। সকালে উঠেই দুধ-চা পান স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কেননা সে সময়ে পেট খালি থাকে। এ অবস্থায় চা পেটে গেলে গ্যাস ফর্ম হতে পারে। তবে সকালের নাশতা খাওয়ার পর পান করা যেতে পারে। কোনো সময়েই খালি পেটে দুধ-চা পান স্বাস্থ্যবান্ধব নয়। এমনকি লিকার চা-ও নয়। কেননা তা পাকস্থলীতে চাপ ফেলে। তবে লিকার চা পানের সঠিক সময় হলো ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের পর। তাহলে খালি পেটে কোন চা? উত্তর হলো— অর্গানিক। ফলে ঘুম থেকে উঠে এ চা পান বেশ স্বাস্থ্যসম্মত। মেদ ঝরানো হরমোনকে এটি উসকে দেয়। ব্যায়ামের আগে এ চা পানে এনার্জি বাড়ে। এমনকি খালি পেট ছাড়া অর্গানিক চা পানে খুব একটা উপকার মেলে না।
রাতে খাওয়ার পর কিংবা ঘুমানোর আগে কোনো ধরনের চা পানই স্বাস্থ্যবান্ধব নয়। এতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। দিনে ভরা পেটে চা পানের ক্ষেত্রে খাদ্য গ্রহণের ২০ থে

কে ৩০ মিনিট পর চা পান করা ভালো, তার আগে নয়। দুপুরের খাওয়ার ঠিক এক ঘণ্টা পর চা পানের সঠিক সময় বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা, চায়ের আছে অম্ল উসকে দেওয়ার ক্ষমতা। রাতে যদি চা পান করতেই হয়, তাহলে খাদ্য গ্রহণের অন্তত দুই ঘণ্টা পর পান করা স্বাস্থ্যসম্মত। তা পানেরও দুই ঘণ্টা পর ঘুমাতে যাওয়া উত্তম।
শরীর ছাড়াও মেজাজ-মর্জির ওপর চায়ের প্রভাব আছে। এ ক্ষেত্রে একেক চায়ের ভূমিকা একেক ধরনের। যেমন সকালটা সুন্দরভাবে শুরু করতে পারলে অনেকেরই দিন ভালো কাটে। অন্যথায় মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। তাই সকালে মসলা চা পান করা যেতে পারে। কারণ, এটি সংবেদনকে উদ্দীপ্ত করে খুবই দ্রুত। ফলে ক্লান্তিও কাটে। তাই সকালের শুরুতে কিংবা বিকেল বেলায় সারা দিনের ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে এই চা বেশ কার্যকর। উপভোগ্য তো বটেই।
সাদা চায়ের এর বিশেষ গুণ হচ্ছে, তা হতাশা দূর করতে পারে। মানসিক বিষণœতায় ভুগতে থাকা মানুষের জন্য এটি যেন পথ্য। একইভাবে গ্লানি কাটিয়ে ওঠার জন্য পান করা যেতে পারে গ্রিন টি। এতে থায়ানিন নামের অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা মগজে মেজাজ নিয়ন্ত্রণকারী রাসায়নিক পাঠায়। তাই মেজাজ খারাপ হলেও এ চা পান করা যেতে পারে। শীতজনিত ক্লান্তি কিংবা স্যাঁতসেঁতে বর্ষার অবসাদ কাটাতে পান করা যেতে পারে গ্রিন জিঞ্জার টি। এটি শরীরকে ভেতর থেকে গরম করে।
সারা দিনই যদি মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখার ইচ্ছা থাকে, সে ক্ষেত্রে দিন শুরু করা যেতে পারে মিন্ট আইসড গ্রিন টি দিয়ে। পুদিনা যোগে এই চা পান করলে মেজাজ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবু যদি আকস্মিক কোনো ঘটনায় স্নায়ুতে চাপের সৃষ্টি হয়, সে ক্ষেত্রে পান করা যেতে পারে তুলসী চা। এই পানীয় স্ট্রেস দূর করে। মেজাজ যখন শিথিল হবে, তখন ফুরফুরে ভাবটা ধরে রাখতে পান করা যেতে পারে আইসড হোয়াইট টি।

এটি নিমেষেই ক্লান্তি দূর করে মন চনমনে করে তোলে। তবে অতিরিক্ত চা মন-মেজাজের ওপর বিপরীত প্রভাব ফেলে। বিষণ্ন করে দেয়, উত্তেজনা বাড়ায়, হৃৎস্পন্দন দ্রুত করে। সময়-অসময় মেনে দিনে তিন কাপের বেশি চা পানকে নিরুৎসাহিত করেন বিশেষজ্ঞরা। তা ছাড়া মাথাব্যথা করলে অনেকে চা পানের মাধ্যমে নিরাময় খোঁজেন। কিন্তু অতিরিক্ত চা পানের ফলে হিতে বিপরীত হয়ে মাথা ঘোরানো শুরু হতে পারে। শরীরে অতিরিক্ত ক্যাফেইন প্রবেশের কারণে এমনটা হয়।

দৈনিক ৪০০-৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন শরীরে সয় না। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চা পানেরও কুফল রয়েছে। এতে গর্ভপাতের আশঙ্কা ছাড়াও শিশুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার ঝুঁকি থাকে। গর্ভাবস্থায় ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করা উচিত হবে না। দীর্ঘ যাত্রায় চা পান না করাই ভালো। কেননা, অতিরিক্ত চা মূত্রবর্ধক। অনেকক্ষণ আগে বানিয়ে রাখা লিকার চা-ও পান করা ভালো নয়। তাতে লিভারের ক্ষতি হতে পারে।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top