skip to Main Content

ফিচার I কোভিড হ্যান্ডকেয়ার

অতিমারিতে অতি সাবধানতায় বিপন্ন হচ্ছে হাতের ত্বক। সে ক্ষেত্রে নিজেকে নিরাপদ রেখে কীভাবে যত্নে নেওয়া যায়? লিখেছেন নাজমুস সাকিব রহমান

‘খাওয়ার আগে হাত ধুতেই হবে, নইলে হবে নানান রোগ’— যুগ যুগ ধরে শিশুদের এ কথা বলে আসছেন আমাদের মায়েরা। বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতির বিস্তার মায়েদের জন্য একটু স্বস্তিই এনে দিয়েছে। বিশ্ববাসীর প্রতি ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজ করার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কেননা হাতের মধ্য দিয়ে শ্বাসতন্ত্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে।
ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়ার কারণে রুক্ষ হয়ে যায় ত্বক। অনেকের হাতের তালুতে দেখা দিচ্ছে সাদা সাদা ফোসকার মতো সমস্যা। অ্যালার্জি, নখ ফেটে যাওয়া তো রয়েছেই। যাদের ফাঙ্গাল ইনফেকশন (ছত্রাকজনিত সংক্রমণ) আছে, ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা তাদের জন্য বারণ। ক্যালিফোর্নিয়ার জুভিভ উইম্যানস অ্যান্ড পেডিয়াট্রিক ডার্মাটোলজির প্রধান হেইডি গুর্ডাজি বলেছেন, অতিরিক্ত পানি ব্যবহারে হাতে জ্বালাপোড়া বেড়ে যেতে পারে। তাহলে কীভাবে পরিষ্কার এবং সুস্থ রাখা যেতে পারে?
প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক
করোনাভাইরাসে বিদ্যমান পিএইচ-এর অপসারণে লেব খুব কার্যকর। কেটে বারবার ব্যবহারের ঝামেলা এড়াতে লেবুর রস বোতলে ভরে নেওয়া ভালো। এ ছাড়া পুদিনাপাতা, নিমপাতা ও তুলসীপাতা বেটে চার কাপ পানি মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে বানিয়ে নেওয়া যায় প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক স্প্রে। এগুলোয় মিশিয়ে নিতে হবে সামান্য বেকিং সোডা ও কর্পূর। হাত ধোয়ার পর এই জীবাণুনাশক ব্যবহার করলে ত্বক জ্বালা করবে না। থাকবে না জীবাণুও।
ময়শ্চারাইজার
হাত ধোয়ার পরপরই এটি লাগিয়ে নিতে হবে। যা ঘরেই তৈরি করা যায়। সে জন্য দরকার আধা কাপ মোম, আধা কাপ ভেজিটেবল গ্লিসারিন, আধা কাপ বাদাম বা জলপাই তেল, ২০ ফোঁটা পছন্দের অ্যাসেনশিয়াল তেল, ৪টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল, আধা কাপ গোলাপজল এবং বিটার ও পরিষ্কার জার।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল ও অ্যাসেনশিয়াল তেল ছাড়া সব উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে একটি পরিষ্কার স্টিলের পাত্রে অল্প আঁচে গরম করতে হবে। এবার পাত্রটি নামিয়ে হালকা ঠান্ডা করে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে, এক ঘণ্টা ফ্রিজে রাখার পর ভিটামিন ই ক্যাপসুল মেশালেই তৈরি হয়ে যাবে ময়শ্চারাইজার। এরপর কয়েকটি ছোট জারে ক্রিম রেখে দিয়ে প্রতিবার হাত ধোয়ার পর মেখে নিতে হবে এটি। উল্লেখ্য, ময়শ্চারাইজার যত ঘন হয়, তত বেশি কার্যকর।
অতিরিক্ত স্যানিটাইজার নয়
সাবান কিংবা পানি না থাকলে কমপক্ষে ৬০% অ্যালকোহল আছে এমন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। বেশিমাত্রায় এর ব্যবহার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। স্যানিটাইজারের মূল উপাদান অ্যালকোহল। ফলে এটি জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি অ্যালার্জি কমায়। কিন্তু শুষে নেয় ত্বকের স্বাভাবিক তেল উৎপাদন ক্ষমতা। এতে শুষ্ক বলিরেখা দেখা দেয়। আবার যেসব স্যানিটাইজারে অ্যালকোহল নেই, সেগুলোয় থাকে ট্রাইক্লোসান। এটি হাতের ত্বকের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। খুব সহজে এটি শোষিত হয়। ফলে তা রক্তে মিশে ক্যানসার, অ্যালার্জি ও হরমোনের সমস্যার কারণ হতে পারে। স্যানিটাইজার ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে প্রয়োজনীয়টাও মেরে ফেলে।
গরম পানি কি জরুরি?
ত্বক বিশেষজ্ঞ লরেন গান্ধীর মতে, শীতের সময় গরম পানি আঙুলে ভালো অনুভূতি দিলেও হাত পরিষ্কারে এটি প্রয়োজনীয় নয়। ঠান্ডা পানিও জীবাণু ধ্বংস করে। গরম পানির ব্যবহার শুধু শারীরিক অনুভূতির ব্যাপার। প্রকৃতপক্ষে হাতের বিপরীতে হাতের ঘর্ষণ ময়লা, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস দূর করে। ভেজা হাতে সাবান ফেনা করে প্রায় ২০ সেকেন্ড ঘষে নেওয়া যায়। এ সময় আঙুলগুলোর মধ্যে এবং নখের নিচে পরিষ্কার করে ধুয়ে দ্রুত শুকিয়ে নিতে হবে। এ জন্য ব্যবহার করা যায় টিস্যু কিংবা নরম শুকনা কাপড়।
গ্লাভস
ময়লা পানি ও ক্ষতিকর রাসায়নিক এড়াতে এর ব্যবহারই ভালো। ঘরের যেকোনো কাজ কিংবা বাগানের পরিচর্যায় বিশেষজ্ঞরা হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এতে হাতের ত্বক বাড়তি শুষ্কতা ও রুক্ষতা অথবা অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন থেকে সুরক্ষিত থাকবে। তবে দীর্ঘ সময় গ্লাভস ব্যবহার না করাই ভালো। কাজ শেষে হাত ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
এত সাবধানতার পরেও যেকোনো কারণে হাতের ত্বকে সমস্যা হতে পারে। কিংবা আগে থেকেও নানা ধরনের অস্বস্তি থাকতে পারে। এসব ক্ষেত্রে বাড়তি অথবা বিশেষ যত্নআত্তির প্রয়োজন। সে জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
মডেল: মারিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান ও ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top