সেলুলয়েড I উমা
পরিচালক : সৃজিত মুখোপাধ্যায়
অভিনয় : যিশু সেনগুপ্ত, সারা সেনগুপ্ত, অঞ্জন দত্ত, অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল ঘোষ প্রমুখ।
সংগীত : অনুপম রায়, সুরঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায়
সিনেমাটোগ্রাফি : সৌমিক হালদার
মুক্তি ১ জুন, ২০১৮
দৈর্ঘ্য : ১০৭ মিনিট
বাবার সঙ্গে সন্তানের বিচ্ছেদ থেকে বন্ধুত্ব—এমনই এক গল্প নিয়ে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় উমা সিনেমাটি তৈরি করেছেন। কাহিনিটিকে একটি সংলাপে বেঁধে ফেলা যায়—‘এখনো এই শহরের কিছু মানুষের মধ্যে আবেগ রয়েছে, আমরা তাদের কাছে যাব।’ কারণ, উমা আসলে একটি ছোট মেয়ের সঙ্গে বাবার সম্পর্কের রূপক। অন্যদিকে কলকাতা শহরের প্রতিও ভালোবাসার আবেগ জড়িত। এভাবেই ব্যক্তির সঙ্গে একটি নগর ও সংস্কৃতির সম্পর্ক তুলে এনেছেন পরিচালক। চলচ্চিত্রটিতে উমার আগমন ও ইচ্ছাপূরণের গল্প রয়েছে। অন্যদিকে দুর্গাপূজা উৎসবের কাহিনিতে সৃজিত মিলিয়ে দিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের ওন্তারিয়োর বাসিন্দা ইভার স্বপ্নকেও। তার গল্পে যা বড়দিন আর উমাতে শারদীয় দুর্গোৎসব।
দুর্গাপূজা মানেই নস্টালজিয়া, আনন্দ। বাড়িতে নতুন ক্যালেন্ডার এলে সবাই দেখে নেয় উৎসবের তারিখগুলো। এই অভ্যাসকেই যেন চলচ্চিত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহার করেছেন সৃজিত। সুইজারল্যান্ডে বড় হওয়া উমার কাছে দুর্গাপূজার ক্যালেন্ডার নেই। কিন্তু সে বাবার কাছে শুনেছে কলকাতা শহরে দুর্গোৎসবের গল্প। তা ছাড়া সে জানে, তার মা থাকে কলকাতায়। ফলে পূজা এবং মাকে দেখার ইচ্ছা তার মধ্যে প্রবল হয়ে ওঠে। আপাতদৃষ্টে সিনেমাটি বাবা এবং মেয়ের মনে হয়। তবে কাহিনি যত এগিয়েছে, ততই তাতে যোগ হয়েছে শহরের সাধারণ মানুষ, এমনকি কলকাতা নগরীর আবেগ।
পরিচালক সিনেমার কিছু দৃশ্যে প্রচ্ছন্ন কিছু প্রশ্নও তোলেন—কলকাতা কি আবেগ হারিয়েছে? আবার পরের সিকুয়েন্সে তার উত্তর দেন তিনি। সে কারণেই, ক্যামেরার ছোট ছোট শটে ‘নকল’ পূজার আয়োজন করে শহরের আসল ছবিটিকে দর্শকের সামনে এনে দাঁড় করান সৃজিত। ঠিক যেমন এই চলচ্চিত্রে সিনে-পরিচালকের ভূমিকায় অঞ্জন দত্ত নিজের স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে দূরত্বের বিষয়টি উপলব্ধি করে উমার হাত ধরে। তাই সঠিক ও সুন্দর একটা ক্লাইমেক্স দিতে প্রায় মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। এসব ঘটনাকে ছোট ছোট দৃশ্য ধারণের মধ্য দিয়ে পরিচালক দেখিয়ে দেন ক্যামেরায়। যেমন, টলিউড ইন্ডাস্ট্রির গোবিন্দ অবলীলায় চেক ছিঁড়ে ফেলে। অন্যদিকে অসুর হয়ে আসা মহীতোষ দেখে নেয় নিজের ভেতরের নোংরা মানুষটিকে। আবার উমার চোখের দিকে তাকিয়ে বদলে যায় নামকরা গুন্ডা। নিজেকে পাল্টে ফেলে হিমাদ্রীর স্ত্রীর প্রেমিক ইন্দ্রনীল। এমনকি ধর্ম নিয়ে রাজনীতির বিষয়টিও এখানে বদলের সংকেত। এভাবে সৃজিত মুখোপাধ্যায় প্রতিটি ব্যাপারে বদলে যাওয়ার ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
পরিচালক কলাকুশলীদের কাছ থেকে সাবলীল অভিনয় তুলে আনার চেষ্টা করেছেন, বোঝাই যায়। অঞ্জন দত্ত, যিশু সেনগুপ্ত, অনির্বাণের ওপরই সিনেমার পুরো বিষয়টি নির্ভরশীল ছিল বলে মনে হয়। শিশুশিল্পী সারা সেনগুপ্তর অভিব্যক্তি অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক। শ্রাবন্তী, রুদ্রনীল যথাযথ। তবে টাইপড অভিনয় দর্শককে হতাশ করতে পারে। হতবাক করেছেন বাবুল সুপ্রিয়। অন্যদিকে সিনেমার শেষে শ্রাবন্তীর সংলাপে শহরের ন্যারেটিভ বেমানান মনে হয়। কেননা, পুরো চলচ্চিত্রে একটা শহরের আবেগের গল্প বলেছেন পরিচালক। সংলাপের মাধ্যমে সেটি বলবার ফলে বিষয়টি অনেকটা হালকা হয়ে গেছে।
উমা সিনেমার বড় প্রাপ্তি অনুপমের সংগীত। অন্যদিকে সৌমিক হালদারের ক্যামেরার কাজ অসাধারণ।
প্রিয়ঙ্কর অর্ঘ
কুইজ
১। উমার ভূমিকায় কে অভিনয় করেছেন?
[ক] শ্রাবন্তী
[খ] গার্গি সেনগুপ্তা
[গ] সারা সেনগুপ্তা
[ঘ] কোয়েল মল্লিক
২। এই সিনেমার জন্য কলকাতায় কি পূজার আয়োজন দেখানো হয়েছে?
[ক] দুর্গাপূজা
[খ] নকল পূজা
[গ] সরস্বতীপূজা
[ঘ] কালীপূজা
৩। চলচ্চিত্রটিতে সিনে-পরিচালকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কে?
[ক] অঞ্জন দত্ত
[খ] যিশু সেনগুপ্ত
[গ] ইন্দ্রনীল ঘোষ
[ঘ] অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়
গত পর্বের বিজয়ী
১. আফরিন সুলতানা, ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা।
২. রায়হান, উত্তরা, ঢাকা।
৩. সুস্মিতা পাল, হালিশহর, চট্টগ্রাম।