ফরহিম I স্মোকিং হট!
নারীর নেত্রসাজে ধ্রুপদি ধারা হলেও পুরুষের লুকে এখন জেঁকে বসেছে। অবাক হওয়ার মতো ঘটনা, তাই না?
কয়েক বছর আগের কথা। ৪১ মিলিয়নের বেশি মানুষ একটা বিষয়ই জানতে চেয়েছেন গুগল থেকে। ‘হাউ টু ডু আ স্মোকি আই?’ ক্ল্যাসিক এই আই মেকআপ লুকের জনপ্রিয়তা বুঝতে এই একটা জরিপই যথেষ্ট। নারীরা তো বটেই, পুরুষদের মাঝেও স্মোকি আই মেকআপ লুকের সম্প্রতি কদর রয়েছে বেশ। গেল কয়েক বছরের রানওয়ে আর রেড কাপের্টেই সেটা লক্ষণীয়। এই আইমেকআপের আধিপত্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও চোখ পড়ে। ফলে বিউটি ব্র্যান্ডগুলোও তৈরি করছে মেল আইমেকআপের উপযোগী বিউটি প্রডাক্ট। চার্লি চ্যাপলিন, জনি ডেপ, জের্যাড লেটো থেকে হালের হ্যারি স্টাইল আর শন ম্যান্ডেসের মতো তরুণ তারকাদের থেকে প্রভাবিত হয়ে অনেকেই চোখ সাজাচ্ছেন স্মোকি আই মেকআপে। গেল বছর হার্টথ্রব সংগীতশিল্পী জন মেয়ারকেও দেখা গেছে এই টেকনিকে চোখ সাজাতে, শ্যানেলের আই প্যালেট দিয়ে। ইনস্টাগ্রামের স্টোরিতে পোস্ট করা স্মোকি আই মেকআপ তৈরির সেই ভিডিও পুরুষদের মাঝে এর জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। টিকটকেও ট্রেন্ডিং এই মেকআপ।
স্মোকি আই মেকআপ কী? প্রধানত, ব্লেন্ডেড এবং ডিফিউজড আই মেকআপ লুক। একটি ব্লক কালারে নয়, কয়েক রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার করে সৃষ্টি করা হয়। এতে অভিনব ডাইমেনশন তৈরি হয় চোখে। দেখায় রহস্যমোদির। একটি রঙের আইশ্যাডো দিয়ে স্মোকি আই লুক তৈরি সম্ভব নয় তা নয়। সাধারণত আইশ্যাডোর লাইনগুলো ব্লেন্ড বা স্মাজ করে নিলেই চলে। কিন্তু কয়েক রঙের এবং টেক্সচারের শ্যাডো ব্যবহারে লেয়ার করে স্মোকি আই মেকআপ করা গেলে তাতে যে গভীরতা তৈরি হয়, সেটা বেশি ভালো দেখায়। ছবিতে সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে সে গ্র্যাডিয়েন্ট ফর্ম। ডার্ক থেকে ফেড আউট লুকে।
নারী বা পুরুষ—যার চোখেই করা হোক না কেন, স্মোকি আই মেকআপের মূলমন্ত্র ব্লেন্ডি, ব্লেন্ডিং এবং ব্লেন্ডিং। ব্লেন্ডিং যত ভালো হবে, স্মোকি মেকআপ তত সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে চোখে। এ ক্ষেত্রে ব্রাশের চেয়ে বড় বন্ধু আর হয় না। কত গাঢ় রং ব্যবহার করা হচ্ছে বা কোন রঙে রাঙানো হচ্ছে চোখ, তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সঠিক ব্লেন্ডিং টেকনিক। খেয়াল রাখতে হবে আরও কয়েকটি বিষয়। ল্যাশ লাইনের ধার ঘেঁষে সবচেয়ে বেশি গাঢ় হওয়া চাই মেকআপের রং। এতে সাজে সজীব ভাব থাকবে। চোখজোড়াই হয়ে উঠবে সাজের কেন্দ্রবিন্দু। শ্যাডো বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সাবধান! একসঙ্গে অনেকগুলো রং নিয়ে কাজ করলে পুরো মেকআপটাই ঘেঁটে যেতে পারে। ডিফাইনড স্মোকি লুক তৈরিতে তিনটির বেশি আইশ্যাডোর প্রয়োজন পড়ে না। তবে দক্ষতা জরুরি।
স্মোকি আই মেকআপই শুধু নয়, যেকোনো ধরনের সাজের আগেই হাত ভালো করে ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন। নইলে হাতে লেগে থাকা ঘাম, ধুলাময়লা মুখত্বকের সংস্পর্শে চলে আসবে অনায়াসে। ব্রণ, অ্যাকনের মতো সমস্যা সৃষ্টি করবে। চোখের মেকআপ হলেও আগে মুখের ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে। ক্লিনজিং, টোনিং আর ময়শ্চারাইজিং প্রয়োজন এ জন্য। তারপর পছন্দ অনুসারে বেজ মেকআপ সেরে নিতে হবে। আইমেকআপ শুরুর আগে চিকবোনের ওপর বাড়তি কিছু পাউডার দিয়ে রাখা ভালো। এতে করে আইশ্যাডো বা আইপ্রডাক্টগুলো বেজ মেকআপের ওপর পড়বে না; বরং পাউডারের ওপর পড়বে, যা পরবর্তীকালে ব্রাশ দিয়ে ঝেড়ে নিলেই চলবে। আই মেকআপের শুরুতে আইলিড প্রাইম করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কনসিলার ব্যবহার করেন অনেকেই। চোখের পাতার জন্য বিশেষভাবে তৈরি আই প্রাইমার মাখিয়ে নিতে পারলে সবচেয়ে ভালো। এতে করে আইশ্যাডো দীর্ঘ সময় টিকে থাকবে, রংটাও সুন্দর ফুটবে চোখে। আঙুল দিয়ে প্রাইমার মাখতে হবে আপার আইলিডে। পাতলা এক লেয়ারে। তারপর একটা কালো কাজল পেনসিল নিয়ে চোখের টাইটলাইনে বুলিয়ে নিতে হবে। ওয়াটারলাইনেও কাজল দিতে হবে। এবার আইশ্যাডো দেওয়ার পালা। গাঢ় কালো রঙা আইশ্যাডো ব্রাশে মাখিয়ে আইলিডে দিতে হবে। একদম ভেতরের কোণ থেকে বাইরের কোণ অব্দি। ব্লেন্ড করে নিতে হবে ভালো করে। চোখের পাতার ভাঁজ পর্যন্ত। চোখের নিচের পাতাতেও চওড়া করে আইশ্যাডো বুলিয়ে এরপর ভালোমতো ব্লেন্ড করতে হবে। যেন আগে ব্যবহৃত কাজল আর আইশ্যাডো ভালোভাবে স্মাজ হয়ে যায়। ছেলেদের ক্ষেত্রে রিভার্স স্টাইল স্মোকি আই চমৎকার দেখায়। যারা খুব বেশি মেকআপ করতে চান না, তাদের জন্য জুতসই অপশন এটি। এ ক্ষেত্রে আপার লিড প্রাইম করে তাতে নিউট্রাল রঙের আইশ্যাডো মেখে নিতে হবে। লোয়ার লিডের ওয়াটার লাইনে গাঢ় করে কাজল নেওয়া চাই। সেটা ব্ল্যাক বা ডার্ক ব্লাউন শ্যাডো দিয়ে স্মাজ করে নিতে হবে। ব্যস!
জাহেরা শিরীন
মডেল: হাসিন
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: ফারাবী তমাল