সেলিব্রিটি স্টাইল I বাঁধনহারা
সেই সঙ্গে আরও আত্মবিশ্বাসী, আরও পরিণত। কীভাবে? মন্ত্রটা কী? সম্প্রতি প্রেমে পড়েছেন তিনি। নিজের। তাতেই গড়ে উঠেছে তার আপন ভুবন। সেখানে বিষণ্নতার স্থান নেই একরত্তি। হ্যাঁ, আজমেরী হক বাঁধন। নিজেকে নতুন দীপ্তিতে উন্মোচন করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। এখন তো তার সহজাত সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে বারবার ঝলসে উঠছে অভিনয় প্রতিভার চমক। রেহানা মারিয়াম নূর কিংবা মুসকান জুবেরির মতো শক্তিশালী চরিত্রগুলোতে তার স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ে সেটাই প্রতিভাত। ২০০৬ সালের লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা থেকে সম্প্রতি কানের রেড কার্পেট, দেশের সীমানা বা তা পেরিয়ে, পর্দা বা পর্দার বাইরে বরাবরই নজর কেড়েছে বাঁধনের ভুবনভোলানো হাসি, প্রত্যয়ী চাউনি আর মেধার স্ফুরণ। নিজের শর্তেই কাটাতে চান জীবন। হয়ে উঠতে চান আদর্শ মা আর একজন ভালো মানুষ। ক্যানভাস স্টুডিওতে এসেছিলেন তিনি। মুখোমুখি জাহেরা শিরীন
কী রঙের পোশাক পরতে পছন্দ করেন?
বাঁধন: একসময় শুধু লালই আমার পছন্দ ছিল। কিন্তু এখন সব ধরনের রং এক্সপ্লোর করতে ইচ্ছা হয়। তাই লাল, সাদা, কালো—সবই পরা হয়।
কোন রং একেবারেই পছন্দ নয়?
বাঁধন: এ রকম কোনো রং নেই। স্থান-কাল-পাত্রভেদে সব রংই পরা হয়, যদি আমাকে সেটাতে মানায়।
একটা অ্যাকসেসরিজ, যা ছাড়া বাইরে বেরোন না?
বাঁধন: এমন না কিছু নেই। আমি যখন নরমালি বাইরে যাই, আমার আলাদা করে কিছুই পরা হয় না।
পছন্দের একটা ফ্যাশন ট্রেন্ড?
বাঁধন: ষাটের দশকের যেকোনো ট্রেন্ড আমার খুব পছন্দের। খুব ভালো লাগছে এটা আবার ফেরত আসছে ফ্যাশনধারায়।
এথনিক, না ওয়েস্টার্ন?
বাঁধন: এখন ওয়েস্টার্ন।
হিল না ফ্ল্যাট?
বাঁধন: যদিও হিলে বডি পশ্চাৎ চমৎকার দেখায়, শাড়ি বা যেকোনো পোশাকের সঙ্গে দারুণ মানায়। কিন্তু আমি ফ্ল্যাট ফ্যান। একদম দু ফিতার চপ্পলের কথা বলছি।
সবচেয়ে আরাম লাগে কোন পোশাকে?
বাঁধন: ট্রাউজার, টি-শার্ট। হ্যান্ডস ডাউন!
ওয়্যারড্রোবের এমন একটা পোশাক, যা সবচেয়ে বেশি পরা হয়েছে?
বাঁধন: আমার বাসায় পরার পোশাকগুলো। প্রতিটার একদম পয়সা পয়সা দাম উঠে গেছে এর মধ্যেই! হা হা।
ফ্যাশন আইকন?
বাঁধন: সে রকম করে কাউকে আসলে ফলো করা হয় না। আমার মনে হয় অন্যকে যেটাতে ভালো লাগছে, সেটাতে আমাকে না-ও মানাতে পারে। আর সেটাই স্বাভাবিক। তাই সে চেষ্টারও দরকার নেই।
বিশ্বজুড়েই বডি পজিটিভিটি নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আপনার মতামত?
বাঁধন: ব্যাপারটা নিয়ে আসলে কথা বলা দরকার। আমি নিজেই এর ভুক্তভোগী। জেনেটিক্যালি আমার মাথায় চুল কম। যা নিয়ে আমি খুব কমপ্লেক্সে ভুগতাম। প্রতিদিন উইগ পরতাম একসময়। ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় ফরসা মানেই সুন্দর। আউটডোর শ্যুট, লাইটিংয়ের জন্য যখন আমার ত্বকরং ম্লান হতে শুরু করল, তখন আমি নানাভাবে চেষ্টা করতে শুরু করলাম নিজের ফর্সা ত্বক ধরে রাখার জন্য। বেশির ভাগ সময়েই ভারী চকি মেকআপ করে থাকতাম। আবার যখন ওজন বাড়তে শুরু করে, আমার ইনসিকিউরিটিগুলোও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করে। কিন্তু একসময় যখন বোধোদয় হলো যে একজন মানুষ হিসেবে আমি যা নিয়ে জন্মেছি, তার পুরোটাই আমার। নিজেকে নিয়ে লজ্জাবোধের কিছু নেই, হীনম্মন্যতারও নেই কিছু। এই যে এখন আমি আমার বডিকে টোনড রাখছি, সেটাও আমার জন্যই। এখন সব কাপড় অনায়াসে মাপে হয়, ভালো লাগে সেটা। কিন্তু বছর কয়েক পরে যদি সেটা ইচ্ছা না করে, তা-ও পছন্দের কারণেই হবে। অন্যদের খুশি রাখার জন্য বা সামাজিক চাপে পড়ে নয়। কেউ খাটো, মোটা, কালো বলে তাকে আমরা বিদ্রুপ করতে পারি না। কষ্ট দিতে পারি না সেই মানবিক বোধের চর্চা সবার করা দরকার ছোটবেলা থেকেই।
আপনার সৌন্দর্যের রহস্য?
বাঁধন: আমার স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস আর সততা। এগুলোই আমার চেহারায় প্রতিফলিত হয়।
পছন্দের বিউটি ট্রিক?
বাঁধন: স্বাস্থ্যকর খাবার আর নিয়মিত ব্যায়াম।
লিপস্টিক না লিপগ্লস?
বাঁধন: লিপস্টিক।
পছন্দের লিপকালার?
বাঁধন: লাইট, ন্যুড শেডেরগুলো।
আপনার বিউটি রুটিন?
বাঁধন: আগে খুব রুটিন করে চর্চাটা করা হতো। ফর্সা থাকবার ভূত চেপেছিল যে মাথায়! হা হা। কিন্তু এখন বাঁধাধরা নিয়মে না করলেও সঠিকভাবে যত্ন নিয়ে কাজটা করি। মেকআপ রিমুভিং মাস্ট। সেরাম বা ময়শ্চারাইজার নিয়মিত ব্যবহার করি। কারণ, সময় পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের শুষ্কতা বাড়ছে। তাই ত্বক যেন সুস্থ থাকে, সেদিকে বেশি খেয়াল করি। প্রচুর পানি পান করি। সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়ামও।
হেভি কাভারেজ না শিয়ার কাভারেজ?
বাঁধন: ওই যে বললাম, আগে ভারী মেকআপ করতাম খুব। হা হা। এখন হালকা মেকআপ করে স্বচ্ছন্দে থাকাটাই আমার প্রায়োরিটি।
মাস্ট হ্যাভ বিউটি প্রডাক্ট?
বাঁধন: লিপস্টিক আর কাজল।
ব্যাগে কোন মেকআপ প্রডাক্টগুলো থাকেই?
বাঁধন: বাইরে গেলে মেকআপ না করাটাই আমার অভ্যাস। কিন্তু ফুল অন রেডি হয়ে কোথায় যাওয়ার সময় ব্যাগে কমপ্যাক্ট পাউডার আর লিপস্টিক থাকবেই।
কোন বিউটি ব্র্যান্ড বেশি ব্যবহার করা হয়?
বাঁধন: মেকআপের ক্ষেত্রে আমার পছন্দ আসলে পাল্টায়। এখন যেমন ববি ব্রাউনের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করছি। কমপ্যাক্ট পাউডারের ক্ষেত্রে ম্যাকই আমার অলটাইম ফেবারিট। লিপস্টিকের ক্ষেত্রেও ম্যাকই বেশি ব্যবহার করা হয়। আইশ্যাডো প্যালেট, ব্লাশন যখন যে ব্র্যান্ডেরটা ভালো লাগে, সেটাই নিয়ে নেওয়া হয়।
নিজের চুল নিজে কেটেছেন কখনো?
বাঁধন: হ্যাঁ। মারও খেয়েছি মায়ের কাছে সে জন্য। হা হা হা। ছোটবেলায় চুল কাটা বারণ ছিল। আর আমার সামনের দিকে চুল কেটে রাখাটা খুব পছন্দ ছিল। তাই নিজেই কেটেছিলাম। মাকে বলেছিলাম, এটা এমনি এমনি হয়ে গেছে। মিথ্যাটা বলেই ফেঁসে গিয়েছিলাম।
পছন্দের খাবার?
বাঁধন: মিষ্টি। এমনও হয়েছে বাসায় মিষ্টি নেই, আমি পানিতে চিনি গুলিয়ে সেটা খেয়ে নিয়েছি। হা হা।
ওটস না পরোটা?
বাঁধন: পরোটা, প্র্যাকটিক্যালি! আর ওটস, সেটাও প্র্যাকটিক্যালি, কিন্তু অনেকটা বাধ্য হয়ে।
সফট ড্রিঙ্ক না স্মুদি?
বাঁধন: স্মুদি।
রিল লাইফে মুসকানি জুবেরী চমৎকার রান্না করতেন। রিয়েল লাইফে বাঁধনের রান্না কেমন?
বাঁধন: আমি যে কাজই করি, যত্ন এবং মনোযোগের চেষ্টা থাকে। মনোযোগ দিয়ে রান্না করলে সেটা তো ভালোই হওয়ার কথা। হা হা। আর আমি বিক্রমপুরের মেয়ে। এই অঞ্চলের মেয়েদের রান্নার সুনাম আছে কিন্তু। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি রান্না করে নিজেই খেয়ে ফেলি।
এপার বাংলা না ওপার বাংলা, কোথায় কাজ করতে ভালো লাগল?
বাঁধন: এখন পর্যন্ত আমার সবচেয়ে ভালো কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে ‘রেহানা মারিয়াম নূর’ এ অভিনয় করার সময়। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের পরিচালনায়। পুরো পথচলাটা আমার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। কিন্তু স্মরণীয় থাকবে আজীবন। আমি সৌভাগ্যবান, এমন একটা কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছি। আর কাজ নিয়ে এখন আমি আরও এক্সপ্লোর করতে চাই। নিজের অভিনয়ের দক্ষতা ঝালাই করে দেখতে চাই, দক্ষতাও বাড়াতে চাই। এখন আমি আসলে নানান ধরনের কাজ চাই। হোক তা এপার বাংলায় বা ওপার বাংলায়।
সোশ্যাল মিডিয়ার থেকে পাওয়া নেতিবাচকতা কীভাবে সামাল দেন?
বাঁধন: আমি একদমই সামাল দিই না। আমি আসলে দেখিই না। যারা আমাকে নিয়ে ভালো কথা বলেন তারাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ইয়োগা না জুম্বা?
বাঁধন: ইয়োগা।
সকালে তাড়াতাড়ি ওঠা হয়, নাকি বেলা করে ঘুমানো পছন্দ?
বাঁধন: বরাবরই সকালে ওঠা হয়। স্টুডেন্ট লাইফে নিজের পড়াশোনার জন্য, বাচ্চা হবার পর তার পড়াশোনার জন্য, শুটিংয়ের জন্য আমাকে তাড়াতাড়িই উঠতে হয়।
নিজেকে কীভাবে স্মরণীয় রাখতে চান?
বাঁধন: একজন ভালো মানুষ হিসেবে।
যদি সৃষ্টিকর্তাকে প্রশ্ন করার সুযোগ মেলে!
বাঁধন: এত বিভেদের কী দরকার ছিল পৃথিবীতে, তা জানতে চাইব।
সম্প্রতি কিসে ঝোঁক বেড়েছে?
বাঁধন: নিজের প্রেমে পড়ার। হা হা হা।
জীবনে পাওয়া সেরা উপদেশ?
বাঁধন: নিজেকে ভালোবাসো।
এখন অব্দি পাওয়া সেরা উপহার?
বাঁধন: উপহার বলব কি না জানি না, তবে জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমার মেয়ে।
ফার্স্ট ক্রাশ?
বাঁধন: সেটা তো অনেক ছিল। আমি ভীষণভাবে শাহরুখ খানকে পছন্দ করতাম। তাকে চিঠিও লিখেছি। এখন আমার ক্রাশ জাস্টিন ট্রুডো।
আপনি কি আবেগপ্রবণ?
বাঁধন: ভীষণ রকম। আমি খুব অভিমানী। আমার সবার সঙ্গে অভিমান।
ঢাকার পছন্দের ব্যাপার?
বাঁধন: সব, সবকিছুই। ঢাকায় থাকতেই আমি ভালোবাসি।
একটা ফিকশনাল ক্যারেক্টার যার সঙ্গে প্রেম করতে চান?
বাঁধন: আমার প্রেমের ব্যাপারটা খুব কনফিউজিং। সম্পর্ক নিয়ে এত ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছি যে ইদানীং জানিই না পার্টনার হিসেবে বা প্রেম করার জন্য আমি কেমন মানুষ চাইতাম বা এখন চাই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মেয়েদের প্রতি আমার পছন্দ তৈরি হয় তাড়াতাড়ি। হা হা।
একটা মিথ্যা বলেন?
বাঁধন: আমি খুব সাহসী।
একটা শব্দ যা খুব বেশি ব্যবহার করা হয়?
বাঁধন: ফালতু। হা হা।
ক্যারিয়ারের মেমোরেবল মোমেন্ট?
বাঁধন: ডেফিনেটলি ‘রেহানা মারিয়াম নূর’ চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার। সেদিন যেভাবে আমি সম্মানিত হয়েছি, আমাদের কাজ যেভাবে প্রশংসিত হয়েছে, সেটা।
মডেল: অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন
স্টাইলিং ও কনসেপ্ট: নুজহাত খান
আর্ট ডিরেকশন: দিদারুল দিপু
জুয়েলারি: আমিসে
ফুডওয়্যার: স্টিভ ম্যাডেন
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দীন