skip to Main Content

ফিচার I বড়দিনের ব্যঞ্জনে

উৎসবের খাবার মানেই বৈচিত্র্য। দেশ-বিদেশে সেটির ভিন্ন ভিন্ন রূপ। বড়দিনের খাবারেও থাকে রকমফের। কোথাও আমিষের পসরা, কোথাও আবার মিষ্টান্ন…

খ্রিস্টীয় বার্ষিক উৎসব বড়দিন। খ্রিস্টধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত দেশগুলোতে উৎসবটি ঘটা করে উদযাপিত হয়। তা ছাড়া বিশ্বের নানান দেশে কমবেশি খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা ছড়িয়ে আছেন। তারাও জাঁকজমকভাবে বড়দিন উদযাপন করেন। সেই রেশ পড়ে তাদের খাবারের মেনুতেও। তবে বিশ্বের নানান প্রান্তের ক্রিসমাসের খাবার এক নয়। যেমন বড়দিনে ফরাসিরা ‘কোকি সা-জ্যাক’ নামের একটি খাবার খায়। পদটির মূল উপকরণ শামুক। সেটির সঙ্গে মেশানো হয় কিছু ভেষজ ও পনির। এটি মূলত অ্যাপেটাইজার। তবে বড়দিনে এটিই ফরাসিদের মূল খাবার হয়ে ওঠে।
মেক্সিকান রসুইঘরে বড়দিনে চলে ‘চিলেস এন নোগাদার’ তৈরির আয়োজন। খাবারটি মূলত আমিষ। মূল উপকরণ মাংস। তাতে সঙ্গী হয় পিপার, আখরোট ক্রিম ও ডালিমের আস্তরণ। ক্রিসমাসে ইতালির খাবার মেনুতে মেলে সাত রকমের মাছের পদ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কালামারি, লিঙ্গুনি, চিংড়ি ইত্যাদি। ভেনেজুয়েলার পরিবারের ছেলেবুড়োরা মেতে ওঠেন ‘হালাকাস’ খাবারে। পদটি ভুট্টা ও কলাপাতায় মোড়া থাকে। বড়দিনেই এটি তৈরির চল। এই পাতুড়ির ভেতরে থাকে কিশমিশ, মরিচ, মাংসসহ আরও কিছু উপকরণ। রাশিয়ায় বড়দিনের বিশেষ খাবার জাকাস্কি। ইতালীয়দের মতো তারাও মাছের স্বাদে মাতেন এই উৎসবে। তবে সেগুলো লবণাক্ত। পনিরের সঙ্গে তা খাওয়া হয়। খাবারটি মূলত অ্যাপেটাইজার।
বড়দিনে ব্রাজিলে রয়েছে টার্কি রান্নার চল। সেটি হয় বেশ বড়সড়। শ্যাম্পেইন ও নানা রকম মসলাযোগে রান্না হয় খাবারটি। পদটির স্থানীয় নাম ‘সেইয়ে জে নাতাও’। আইটেমটি সে দেশে বেশ ঐতিহ্যবাহী। তা ছাড়া বড়দিনের আগের রাতে বিশেষ নৈশভোজের রীতি রয়েছে। তাতে থাকে চকলেট কেক, প্যানিটোন, লেমন টার্ট ইত্যাদি। তবে সে দেশের ধনীদের খাবার মেনুতে আরও পদ যোগ হয়। সেগুলোর মধ্যে কনডেন্সড মিল্কে তৈরি বিশেষ এক প্রকার মিষ্টি থাকে। অস্ট্রিয়ার খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরাও মিষ্টান্নে মেতে ওঠেন বড়দিনে। এই উৎসবে তারা স্পঞ্জ ও অ্যাপ্রিকট মিশিয়ে জাহাটর্টে নামের বিশেষ এক প্রকার খাবার তৈরি করেন, যেটি মূলত একধরনের বিশেষ মিষ্টি। ইথিওপিয়ায় বড়দিনে খাওয়া হয় ডোরো ওয়াট। একটি বড় থালায় সাজিয়ে পরিবেশন করা এই পদকে বলে ইঞ্জেরা। অনেকে ইঞ্জেরো নামেও চেনেন। এটি আটা ও মাখনের তৈরি বিশেষ পদ। ক্রিসমাস ডে ছাড়াও ইথিওপিয়ার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় খাবারটি প্রতিদিনই মেলে।
চিকেন ক্যান্ডি তৈরিতে পটু কানাডার বাসিন্দারা। বড়দিনে তা তৈরির ধুম পড়ে সে দেশে। পদটির নাম চিকেন বোনস ক্যান্ডি। তাতে যোগ হয় দারুচিনি। ফলে স্বাদটাও এই হার্বের মতো লাগে। ক্যান্ডির মাঝখানে থাকে ক্রিমি মিল্ক চকলেট। আর্জেন্টিনায় ক্রিসমাসে ভোজনরসিকেরা আমিষেই মাতেন। ‘বিতেল তোনে’ নামের একটি খাবার খান তারা। যদিও রেসিপিটি তাদের নিজেদের নয়, ইতালি থেকে ধার করা। ১৮ শতকের শেষ দিকে আর্জেন্টিনায় আসে এই আমিষ। তৈরি হয় বাছুরের মাংস দিয়ে। ডিশে সঙ্গী হয় কেইপার ও টুনা সস। জার্মানরা বড়দিনে বাড়িতে বাড়িতে তৈরি করেন স্তলেন পিঠা। শুকনা ফল ও বাদামের সঙ্গে ক্যান্ডিযোগে তৈরি হয় এটি। উপকরণে থাকে বাটারও। স্বাদে ভিন্নতা আনতে কিছু মসলাও যুক্ত করা হয় এ পিঠায়। শেষে চিনির আস্তরণ দিয়ে পরিবেশন করা হয়। পর্তুগালে ডিমের তৈরি এক পদ বড়দিনের জন্য নির্ধারিত থাকে। স্থানীয় নাম ‘স্তেলেল্যাম্প্রেরিয়া জিয়ো ভুস’। পদটি লম্বা আকারের হয়। স্বাদে মিষ্টি।
মাল্টায় বড়দিনের উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ এক প্রকার বাদামের পদ। নাম ‘এম্বিউলিতু চেস্টনাট’। ফিনল্যান্ডে ক্রিসমাসের মূল খাবার হালুয়া। তৈরি হয় গাজর দিয়ে। তাতে মেশে ভাজা ভাত, কাস্টার্ড ও ডিম। শুধু বড়দিনেই তা তৈরি হয়। পদটির স্থানীয় নাম ‘পোর্ককানালাটিকো’। রোমানিয়ায় বড়দিনের খাবার হিসেবে ‘চোরবা দে পেরিস্যুয়ারে’র খুব চল। পদটি খুব জটিল নয়। তবে সুস্বাদু। এটি মূলত মিটবল। খাওয়া হয় টক স্যুপে চুবিয়ে। ডেনমার্কে খাওয়া হয় রিসেলিমান। অ্যামন্ড ও চেরি দিয়ে তৈরি এই পদ মূলত পায়েস। এর মধ্যে বড়দিন উপলক্ষে বিভিন্ন উপহারসামগ্রী ডোবানো থাকে। বাচ্চাদের জন্য কিছু খেলনাও থাকে তাতে। তা ছাড়া বড়দিনের আগের রাতে বাড়িতে বাড়িতে বিশেষ খাবার রান্না হয়। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি পদ হলো রোস্ট, পর্ক, আলু সেদ্ধ ইত্যাদি। আইসল্যান্ডে খাওয়া হয় হাউয়িজেজট। ভেড়ার মাংসের এই পদ ধোঁয়ায় সেঁকে তৈরি করেন তারা। ইংল্যান্ডে মাংস ও ফল দিয়ে একটি পদ তৈরি হয় বড়দিনে।
ফিলিপাইনে ক্রিসমাস মেনুর অন্যতম অনুষঙ্গ বিবিঙ্গকা কেক। চাল, নারকেল ও পনির যোগে তৈরি। তা ছাড়া উৎসবের আগের রাতে ‘বুয়েনা’ নামের একধরনের নৈশভোজের আয়োজন করেন তারা। তখন শূকরের মাংস খাওয়া হয়। তা ছাড়া উৎসবের দিন কোকো বিন ও চিজ বল খান সে দেশের মানুষ। স্পেনে চলে ‘পাভো ত্রুফাদো দে নাভিদাদ’। পদটি মূলত ট্রুফেলের মধ্যে মসলা মাখা টার্কির মাংস। ভারতের খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা বড়দিনে নারকেলের কুকি তৈরি করে খান এবং আত্মীয়দের বিলান। পদটির নাম ‘কুলকুলস’। গ্রিসের লোকেরা সেদিন ‘চিকেন সুপা গোলে মোনোস’ নামের একটি আইটেম তৈরি করেন। খাবারটি মুরগির মাংস, লেবু ও ডিম যোগে তৈরি। সঙ্গে থাকে ভাত। বড়দিনে মাদাগাস্কারের খ্রিস্টানরাও ভাত খান। সেদিন তারা ‘আকোহো সি ভোয়েনিয়া’ নামের পদ তৈরি করেন। তাতে ভাতের সঙ্গে থাকে চিকেন-কোকোনাট স্টু। আইরিশরা ক্রিসমাসে খান গরুর মাংস। বেশ মসলা দিয়ে তা রান্না করেন। পোল্যান্ডে রয়েছে বিগোস খাওয়ার চল। এটি আমিষের পদ। তবে নানান পদের মাংসের সঙ্গে থাকে বাঁধাকপি ও মাশরুম।
ক্রিসমাসে জাপানিরা তৈরি করেন কেক। নাম ‘কুরিসুমাসু কেইকি’। যদিও এখন এর পাশাপাশি ফ্রায়েড রাইস খাওয়াও চালু হয়েছে এই উৎসবে, তবু জাপানে বড়দিনের মূল আকর্ষণ কেক। তৈরি হয় স্ট্রবেরি দিয়ে। সঙ্গে থাকে সাদা ক্রিম। ব্রিটেনে ক্রিসমাসে বেশ ভারী পদ খাওয়া হয়। উৎসবের মূল খাদ্য পরিবেশিত হয় লাঞ্চে। থাকে ক্র্যানবেরি সসযুক্ত টার্কি, শূকরের মাংস, সবজি, রেড ওয়াইন ও আলু সেদ্ধ। নিউজিল্যান্ডেও লাঞ্চের সময় বড়দিনের প্রধান খাবারগুলো খাওয়া হয়। তাদের ভোজ শুরু হয় টার্কি ও মুরগির মাংস দিয়ে। এরপর চা-চক্র। রাতে চলে বারবিকিউ পার্টি।
 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top